সুমন কল্যাণ মৌলিকের ‘শুধু আবেগে কাজ হবে কি’ (৮-২) উত্তর-সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্র। প্রবন্ধে বর্তমান বইমেলা, বাংলা বইয়ের বাজার ও পুস্তক শিল্পের করুণ ছবিখানি যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় বাঙালি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতা। নিজস্বী নিতে ব্যস্ত মানুষদের ভিড়ে বইমেলায় এ বারে প্রথম হোঁচট খেলাম যখন দেখলাম রাশি রাশি মুদ্রিত বইয়ের পাশে বইমেলার কাগজের মানচিত্রটি আর নেই। পিডিএফ-এর দাপটে বাংলা পুস্তক শিল্প কোণঠাসা, এ দিকে হাতে ম্যাপের অভাবে মোবাইলে চোখ বুলিয়ে ইলেকট্রনিক ম্যাপ দেখে বইমেলায় পথ খুঁজে বার করা বড়ই কষ্টদায়ক।
প্রবন্ধকার উল্লেখ করেছেন সরকার থেকে অধিকাংশ পাঠ্যপুস্তক ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হয় বলে পাঠ্যপুস্তকের বাজার এখন সহায়িকানির্ভর। বাজারচলতি নামী প্রকাশনা সংস্থার সহায়িকা বিজ্ঞাপনী চমকে নিজেদের বাজার বজায় রাখতে পারে। কিন্তু বিদ্যালয় শিক্ষা বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকার কারণে বিলক্ষণ জানি, ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা সর্বভারতীয় বোর্ডের ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়গুলির জন্য, এমনকি আমাদের রাজ্য বোর্ডের ইংরেজি মাধ্যমে যারা লেখাপড়ায় আগ্রহী তাদের জন্য উপযুক্ত সহায়িকা বাজারে তেমন ভাবে নেই। যেটুকু আছে তা দিল্লির প্রকাশনা সংস্থাগুলির উপর নির্ভরশীল। আমাদের রাজ্যে যাঁরা পুস্তক শিল্পকে নিজেদের রোজগারের পথ হিসেবে দেখেন, তাঁরা কেন এই ক্ষেত্রগুলিতে ব্যবসা বাড়ানোর প্রয়াস করছেন না তা বুঝতে পারি না। এখানকার প্রকাশকরা ইংরেজি মাধ্যমের উপযুক্ত সহায়িকা প্রকাশ করতে পারলে তাঁদের মুনাফা আশা করি কম হবে না। কিন্তু প্রবন্ধকারের সঙ্গে সহমত হয়ে বলি শুধু আবেগে কিছুই হবে না, দরকার বাস্তব চিন্তা এবং তার উপযুক্ত প্রয়োগ।
বেকারত্বের এই দুঃসময়ে বইকে ভালবেসে বইকে নিয়ে রুটিরুজির ব্যবস্থা হলে তা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক হয়ে উঠবে তরুণ প্রজন্মের কাছে।
অনির্বিত মণ্ডল, ইছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
আশা এখনও
সুমন কল্যাণ মৌলিকের ‘শুধু আবেগে কাজ হবে কি’ শীর্ষক প্রবন্ধে পরামর্শ, জানতে হবে প্রকাশনা শিল্পের বনিয়াদি কথাগুলো, হতে হবে পেশাদার। প্রকাশনা জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে ‘প্রিন্ট-অন-ডিমান্ড’ (পিওডি) এবং ‘সেলফ পাবলিশিং’। আজকের যুগে সব লেখকের স্বপ্ন, ছাপা অক্ষরে প্রকাশিত নিজের লেখা বইমেলায় সুলভে কিনে অনেক পাঠক পড়বেন। আজকের ডিজিটাল প্রযুক্তি ও বাজারব্যবস্থা বলছে, এ আর কী এমন চাওয়া। বিশ্বকর্মার প্রযুক্তি, গণেশের বাজার, লক্ষ্মীর অর্থ ও শ্রী মিলে তৈরি আজকের বইমেলা হাজির করেছে নবকলেবরে সব সহজে পেয়েছি-র আসর। দ্রুত গতির তাড়ায় বর্তমানে প্রথমে স্বাভাবিক ভাবে কিছু ভুলত্রুটি হবে। কিন্তু বিশ্বাস, শীঘ্র এই বইবাজার অন্য বাজারের মতো নিজেকে সংশোধন করে নেবে। এটাই উল্লিখিত ‘পেশাদার’ হওয়ার মূল শর্ত।
‘প্রিন্ট-অন-ডিমান্ড’ ব্যবস্থাকে শক্তি জোগাচ্ছে ডিজিটাল প্রিন্টিং টেকনোলজি। ছাপাখানার জন্য অল্প জায়গা, বাঁধাইয়ের অনেক কাজ যন্ত্রে হওয়া, তুলনামূলক অল্প খরচ, প্রয়োজনমতো অল্প বই ছাপা, কাস্টমাইজ় বই ছাপা, ইন্টারনেটের মাধ্যমে বইয়ের দ্রুত পণ্যায়ন ইত্যাদির সমবায়ে ঝকঝকে ছাপা বই পড়তে পারছেন পাঠক। অর্থের সঙ্গে সময় ও শ্রমের সাশ্রয় হচ্ছে। এই ব্যবস্থায় কিছু দুর্বলতাও লক্ষণীয়। কাগজের গুণমান, মনের মতো হরফ বাছাই, ফাঁকা জায়গার ব্যবহার, শিল্পসুষমা, বানান, কনটেন্টে নিষ্ঠার অভাব ইত্যাদি, যা প্রথম সংস্করণে হয়ে থাকে। এর জন্য দায়ী প্রধানত মুদ্রণশিল্পে শ্রমবিভাজনে গুণমান হ্রাস ও তাড়াহুড়ো করা। অনস্বীকার্য, আগের প্রজন্মের মানুষজন এই যাবতীয় ব্যাপারে অনেক নিষ্ঠাবান ছিলেন। যদিও তাতে অনেক সময় বেশি লাগত। বিশেষ করে লেখার মূল বিষয় ও প্রুফরিডিং-এর ক্ষেত্রে অগ্রজদের সারস্বত জ্ঞান অনেক উন্নত ছিল। আগে লেখক অনেক যত্নবান ছিলেন নিজের সৃষ্টি গ্রন্থ রচনায়। এখন কোথাও পিডিএফ-এর মতো সফটকপি থেকে ফটোকপি মেশিনে ছাপা হচ্ছে। তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে এই বিবর্তনে অবক্ষয়ের শিকার হয়েছে গ্রন্থনির্মাণের প্রতি ক্ষেত্র।
আবার এই তীব্র প্রতিযোগিতায় কিছু আশঙ্কা আছে। যেমন বর্তমানে যন্ত্রের দাম, দক্ষ কারিগরের পারিশ্রমিক, মেধাশ্রমিকের প্যাকেজ বা চুক্তিমাফিক পারিশ্রমিক ইত্যাদি প্রতি ব্যাপারে প্রথম দিকে খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কিছু দিন বাদে দেখা যাবে এই ব্যবস্থার দৌলতে খরচ বেশ কমে যাচ্ছে। পুরনো ছাপাখানার যুগ থেকে কম্পিউটার প্রযুক্তির যুগে কম্পোজ় করার আঙ্গিক ও চরিত্র বদলে গেছে। ধীরে ধীরে অনেক লেখক কম্পোজ়-এর কাজ শিখে গিয়েছেন। নিজে এডিটিং-এর কাজ করছেন সহজে। নিজের আয়ত্তে থাকছে কনটেন্ট। বর্তমানে এঞ্জিনিয়ারিং গ্র্যাজুয়েটরা বিশেষ করে সেলফ পাবলিশিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। প্রকাশনার জগতে এখন কর্মসংস্থানের বাজারে এঁদের চাহিদা বাড়বে। আগামী দিনে এমন প্রশিক্ষিত শিক্ষার্থীর জোগান বাড়লে প্রকাশনার খরচ কমবে।
বইবাজারে অন্যতম অভিযোগ, বইমেলায় এত ভিড় হচ্ছে, কিন্তু বই বিক্রি কম। তার পরিবর্তে ই-বুক অডিয়ো-বুক বাড়ছে ইত্যাদি। গ্রন্থাগারগুলিতেও পাঠক নেই। দূর ভবিষ্যতে কী হবে জানি না, কিন্তু আগামী বেশ কয়েক দশক ছাপা বই পড়বেন পাঠক, এ কথা বলা যায়। অবশ্যই বই পড়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন, দিনের অধিকাংশ সময়টাই দৃশ্য-শ্রাব্য মাধ্যম ছাপা বই পড়ার সময় নিয়ে নিচ্ছে। তা ছাড়া কাজের বাজার দারুণ অস্থির, নতুন উদ্যোগে ঝুঁকি বাড়ছে, শিক্ষার মান কমছে, শিক্ষার জগতে দুর্নীতি বাড়ছে, সরকার প্রকাশনা জগতে প্রভাব বাড়াচ্ছে ইত্যাদি। তা সত্ত্বেও প্রতি বছর বইমেলা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে। এ সবের নেপথ্যে আছে বাঙালির আবেগ। এই আবেগকে ঘিরে সবাই মিলে চেষ্টা করলে নিশ্চয়ই কাজ হবে।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
আগে প্রবন্ধ
‘শুধু আবেগে কাজ হবে কি’ শীর্ষক প্রবন্ধটিকে সাধুবাদ জানাই। এখনকার উঠতি লেখক-লেখিকাদের গল্প-উপন্যাসের বাজার খুব ভাল। পাঠক-পাঠিকাদের কাছেও এঁদের খুব চাহিদা। তবে নতুন প্রজন্মের লেখক-লেখিকাদের এক বড় অংশ প্রায় শৈশব থেকেই যে কলম হাতে তুলে নিচ্ছেন, এটা দেখে বড় অস্বাভাবিক লাগে। তাঁরা প্রথমেই গল্প-উপন্যাস দিয়ে নিজেদের লেখকজীবন শুরু করেন, প্রবন্ধ রচনার ধারপাশ দিয়েও যান না। একটি প্রবন্ধ রচনার জন্য যে অনুসন্ধান, গবেষণা ও সর্বোপরি মস্তিষ্ক চালনার পরিশ্রম করতে হয়, সেটাও তাঁরা করতে রাজি নন। গল্প-উপন্যাস-কবিতা অপেক্ষাকৃত কম পরিশ্রমের কাজ বলে তাঁরা মনে করেন। বইমেলায় ভিড় বেশি গল্প-উপন্যাসের স্টলে। লিটল ম্যাগাজ়িনের প্যাভিলিয়নের টেবিলগুলিতে প্রবন্ধ-নিবন্ধের রাজত্ব। সেখানে সব শ্রেণির পাঠকের ভিড় চোখে পড়ে না। এ খুব বেদনাদায়ক প্রবণতা।
সুগত মিত্র, কলকাতা-৮৯
বেপরোয়া
একটু রাতের দিকে এক্সাইড থেকে শিয়ালদহ আসার পথে বেকবাগান মোড়ে, অর্থাৎ লা মার্টিনিয়ার স্কুলের মোড়ে, বাসগুলি এত জোরে বাঁক নেয় যে জেমস বন্ডের ছবিও ভয় পাবে! বাসের বেপরোয়া গতির অন্যতম কারণ এক শ্রেণির যাত্রী, যাঁরা চালককে ক্রমাগত নানা মন্তব্যে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। ড্রাইভাররা অতিমানব নন। তাঁদের বিরক্তি বাস চালানোর ক্ষেত্রে পড়ে। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে এই শ্রেণির যাত্রীদের অবদানও কিছু কম নয়।
শঙ্খমণি গোস্বামী, কলকাতা-১২২
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)