সম্প্রতি বানতলা চর্মনগরীতে নিকাশিনালা সাফাইয়ের কাজে তিন শ্রমিকের অসহায় মৃত্যুর সংবাদ ‘নর্দমার গর্তে নেমে মৃত ৩’ (৩-২) পড়ে মনে এল ব্রিটিশ কবি উইলিয়াম ব্লেকের বিখ্যাত কবিতা ‘দ্য চিমনি সুইপার’-এ বিবৃত বীভৎস এক শ্রমের কাহিনি। অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডের একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায় ছিল শিশুশ্রম প্রথা। অর্থাভাবে দরিদ্র মা-বাবা শিশুপুত্রদের বিক্রি করে দিতেন কারখানার মালিকদের কাছে। অভুক্ত, অর্ধনগ্ন এই শিশুদের কাজ ছিল কলকারখানার উঁচু চিমনিগুলোর ভুসোকালি পরিষ্কার রাখা। এই উদ্দেশ্যে তাদের ফেলে দেওয়া হত চিমনির উপরিভাগ থেকে। পড়ে গিয়ে অথবা সারা দেহে ঝুলকালি মাখার ফলে অচিরেই বহু শিশুর মৃত্যু ঘটত। যারা টিকে থাকত, শ্বাসজনিত সমস্যার কারণে তাদের যন্ত্রণা থেকে যেত জীবনভর।
নর্দমার অন্ধকূপের বিষবাষ্পে হতদরিদ্র শ্রমিকদের অসহায় আত্মসমর্পণে উঠে এল অনুরূপ দৃষ্টান্ত। এক দিকে মৃত্যুর চোখ রাঙানি, অপর দিকে অর্থপ্রাপ্তির আশা— এই দোলাচলের সঙ্গেই চলে নিয়মমাফিক নিকাশিনালা পরিষ্কারের কাজ। উপরন্তু, কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতা এবং ঠিকাদার ও পুরসভার দায় ঠেলাঠেলিতে মৃত্যুর উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও দোষীদের শাস্তিদানের বিষয়টিও ফিকে হতে থাকে। পেশাগত সুরক্ষা বিধি কাগজে-কলমে আছে, কিন্তু এ দেশে তা মেনে চলার বাধ্যবাধকতা নেই। নজরদারির এ-হেন অনুপস্থিতিই ডেকে আনে মৃত্যুর এমন বীভৎস রূপ।
ভোট আসে ভোট যায়। রাজনৈতিক উত্তাপের মাঝে বিলীন হয়ে যায় তরতাজা প্রাণগুলো। অনস্বীকার্য যে, যার যায় তারই যায়। দৈনন্দিন দিনলিপিতে সন্তানহারা পরিবারগুলির যন্ত্রণা আরও দীর্ঘায়িত হয়। ‘ম্যানহোল’ নামকরণেই যেখানে অমর্যাদা, সেখানে পূতিগন্ধময় নালায় এ-হেন মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে ‘সুরক্ষার দায়’ (৫-২) সম্পাদকীয়ের ভাষা ধার করে বলাই যায়— দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে পরের দুর্ঘটনা কেবল কয়েক মাস, বা বছরের অপেক্ষা।
সুপ্রতিম প্রামাণিক, আমোদপুর, বীরভূম
বিকল্প পথ কই
কলকাতার বানতলা চর্মনগরীর নর্দমা পরিষ্কার করতে গিয়ে তিন শ্রমিকের মৃত্যুর মতো দুঃখজনক ঘটনাই নয়, এর আগেও ধারাবাহিক ভাবে সেপটিক ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে গিয়ে দরিদ্র অসহায় সাফাইকর্মীদের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর আমরা পড়েছি। কিন্তু আজও এ বিষয়ে সরকারি ভাবে কোনও সুরাহা হয়নি। আমরা জানি, জৈব পদার্থ পচে বিষাক্ত গ্যাস, বিশেষত মিথেন জাতীয় গ্যাস তৈরি হয় যা আবার জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। এখন আমাদের দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে যতটা উন্নতি হয়েছে, তাতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ওই গ্যাস কুয়ো বা গর্ত থেকে নিষ্কাশন করে তাকে অন্য কাজে ব্যবহার করা কি যায় না? তবে সেই পথে হাঁটা হয় না কেন? কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম মহাশয় বলেছেন, শ্রমিকরা আবেগে ‘ও আমার কিছু হবে না’ বলে নিজেরাই ঝাঁপিয়ে নেমে পড়েন। তার পর তিনি উঠে না এলে তাঁকে উদ্ধার করার আশায় আর এক জনও নেমে পড়েন। এ ভাবে অনেকের প্রাণ যায়।
কিন্তু আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আইএলও অনুমোদিত সনদে কাজের পরিবেশ বিষয়ে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে। আমাদের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি তা মেনে নিতে চাইছে কই?
তপোময় ঘোষ, কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
অর্থনীতির ভিত
প্রসেনজিৎ বসুর ‘চাকরি নেই, ক্রয়ক্ষমতাও নেই’ (৫-২) শীর্ষক প্রবন্ধটি দেশের সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে খুবই প্রাসঙ্গিক। সমগ্র দেশ জুড়ে চড়া মূল্যবৃদ্ধির আবহে সাধারণ মানুষ এমনিতেই নাজেহাল। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমছে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ, এমনকি কর্মরত মানুষের মজুরিও ক্রমহ্রাসমান। সেখানে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের পেশ করা বাজেটে আয়কর দাতাদের ছাড়ের পরিমাণ বাড়িয়ে মানুষের ভোগব্যয়ের চাহিদা বৃদ্ধির যে আশার কথা শোনানো হচ্ছে, তার ফলাফল নিয়ে যথেষ্টই সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়। কেননা, সমীক্ষায় দেখা যায়, রোজগারের তুলনায় দরিদ্র মানুষের ভোগব্যয় শতাংশের হিসাবে ধনীদের থেকে বেশি।
প্রবন্ধে তাই যথাযথ ভাবেই আলোচিত হয়েছে, এ ক্ষেত্রে একশো দিনের কাজের দৈনিক মজুরি বৃদ্ধি ও গ্রামোন্নয়ন খাতে ব্যয়বরাদ্দ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। বর্তমানে ব্যক্তিগত আয়করের নতুন পরিকাঠামোয় বার্ষিক সাত লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কর ছাড় ছিল, এক ধাক্কায় তার পরিমাণ বারো লক্ষ টাকা করাতে এর লাভ তুলতে পারবেন বেশির ভাগ সরকারি কর্মচারী, যাঁদের সংখ্যা প্রায় এক কোটি। সামগ্রিক ভাবে নতুন করকাঠামোয় সুবিধা পাবেন সাড়ে পাঁচ কোটির কাছাকাছি মানুষ, যাঁরা অধিকাংশই উচ্চবিত্তের পর্যায়ে পড়েন। তবে দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে এঁরা যতই কম হোক না কেন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের এই রাজস্ব ক্ষতির সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত নয়। কিন্তু বর্তমান সরকারেরও উচিত, শুধুমাত্র পূর্বতন সরকারের দোষ না খুঁজে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং বড় শিল্পপতি বা অতি ধনীদের উপর উচ্চ হারে কর আরোপের ব্যবস্থা করা, যা একমাত্র পারে ভারতীয় অর্থনীতির ভিত শক্ত করতে। সস্তার রাজনীতি ছেড়ে যত তাড়াতাড়ি সরকারের এই বিষয়ে কাণ্ডজ্ঞান ফিরে আসে, ততই সাধারণ মানুষের মঙ্গল।
অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি
বিপজ্জনক
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে-তে আমাদের এয়ারপোর্ট সিটি আবাসনের একদম সামনে একটি দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিন জন প্রাণ হারালেন। বহু দিন ধরে যে আশঙ্কার কথা আমরা প্রশাসনকে জানিয়ে এসেছিলাম, সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। এখানে ট্র্যাফিক সিগন্যাল থাকা সত্ত্বেও সেটি কাজ করে না। ট্র্যাফিক কন্ট্রোল-এর দায়িত্বে যাঁরা থাকেন, তাঁরা অনেক সময়েই মোবাইলে ব্যস্ত থাকেন। বেশ কিছু ট্রাক ‘নো পার্কিং’-এ দাঁড়িয়ে থাকে। অনেক সময় এমনও হয় যে, দু’-তিন লাইন করে ট্রাক দাঁড়ায় এবং পথচারীদের মাঝরাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে হয়। দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রতি মুহূর্তে থাকে। রাত সাড়ে আটটার পরে বীভৎস জ্যাম লেগে যায়। রাস্তা পেরোনো কঠিন হয়ে পড়ে। এই ভাবে কয়েক ঘণ্টা কাটে। অথচ, যে দিন দুর্ঘটনা ঘটল, তার পরের দিন একই রাস্তা থেকে জ্যাম উধাও। এতেই বোঝা যায় যে, একটা কৃত্রিম জ্যাম তৈরি করা হয়।
দুর্ঘটনার পরে সার্ভিস রোড-এ ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা চাইলেও সরাসরি বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে-তে উঠতে পারব না। এখানে যে বাস স্টপটি আছে (এয়ারপোর্ট সিটি বাস স্টপ), সেখানে নামা-ওঠা খুব অসুবিধাজনক হয়ে উঠেছে। এখানে বেশ কিছু আবাসনে কয়েক হাজার মানুষের বাস। আগে সরাসরি ফ্লাইওভারে উঠতে পারা যেত। এখন অনেকটা ঘুরে যেতে হবে। এতে মানুষের অসুবিধা হবে। এ ছাড়া সার্ভিস রোডে বহু গাড়ি দু’দিকে পার্ক করা থাকে। ফলে রাস্তা সরু হয়ে যায় এবং চলাচলে অসুবিধা হয়। রাতে আলো না থাকায় রাস্তাটি আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। হাই মাস্ট পোল থাকা সত্ত্বেও তা জ্বলে না। টিমটিম করে কয়েকটি আলো জ্বলে মাত্র। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন— ১) সিগন্যালটিকে সচল করা হোক, ২) এয়ারপোর্ট সিটি ফেজ় ওয়ান-এর সামনে থেকে ব্যারিকেড তুলে দেওয়া হোক, ৩) সার্ভিস রোড থেকে বেআইনি পার্কিং তুলে দেওয়া হোক, ৪) ফ্লাইওভারে ওঠার মুখে হাই মাস্ট জ্বালানোর ব্যবস্থা করা হোক, এবং ৫) ডিউটিরত ট্র্যাফিক কর্মীদের সঠিক ভাবে ডিউটি করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হোক, যাতে এ রকম ঘটনা আর না ঘটে।
সমীর বরণ সাহা, কলকাতা-৮১
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)