Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: তাঁর হারমনিকা

গত ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ দিনটি ছিল সুরকার রাহুল দেবের সংগীতদলের সেই মুহূর্তে সর্বজ্যেষ্ঠ সদস্য ভানু গুপ্তের ৮৫তম জন্মদিন।

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:১৩

হারিয়ে গেল আর একটি নক্ষত্র। মনে পড়ে ‘শোলে’ ছবিটির সেই বিখ্যাত হারমনিকার সুরটি। সিনেমায় বিগ-বি’কে একাকী বাজাতে দেখা গেলেও, নেপথ্যের বাদক ছিলেন ভানু গুপ্ত (ছবিতে)। ‘শোলে’ ছবির এই হারমনিকার সুর, সুরকার রাহুল দেব বর্মনের সঙ্গে, হারমনিকা-বাদক ভানু গুপ্তকেও অমর করে রাখবে। ১৯৩২ সালে রেঙ্গুনে জন্ম ভানুর। সেখানকার ব্রিটিশ নাবিকদের কাছ থেকে হারমনিকা বাজানোর প্রথম পাঠ নেওয়া। জাপানি দোভাষী হিসাবে কর্মজীবন শুরু, খুব কম বয়সে, বর্মাতেই। ১৯৫৬ সালে কলকাতা ফিরে আসা। কলকাতা ক্রিকেটে প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি এক সময়। সুরকার সলিল চৌধুরীর অনুপ্রেরণায় তাঁর গিটার শেখা। শচীনকর্তা, মদনমোহন, ও পি নায়ার প্রমুখের সঙ্গে কাজ করলেও, সুরকার রাহুল দেব বর্মনের সঙ্গে কর্মজীবনের অধিকাংশটাই জুড়ে ছিলেন (‘তিসরি মঞ্জিল’ ছবি থেকে)।

গত ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ দিনটি ছিল সুরকার রাহুল দেবের সংগীতদলের সেই মুহূর্তে সর্বজ্যেষ্ঠ সদস্য ভানু গুপ্তের ৮৫তম জন্মদিন। বয়সজনিত কারণে তিনি বিগত তিন-চার বছর পাকাপাকি ভাবে পরিবারের সঙ্গে ছিলেন মুম্বইতে। শারীরিক অসুস্থতার জন্য বেশ কয়েক দিন হাসপাতালে ছিলেন ২০১৭-র শেষ দিকে। এ বছর জানুয়ারি মাসে এই দিকপাল যন্ত্রশিল্পীর প্রয়াণে আমরা হারালাম ‘পঞ্চম’ অধ্যায়ের আর এক মহান ব্যক্তিত্বকে।

অভিজিৎ দাস কলকাতা-৭৫

লোভ, রাজনীতি

মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী গত ২ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-যুব সমাবেশে বলেছেন: ‘লোভ সংবরণ করা রাজনীতির বড় হাতিয়ার। যারা লোভ সংবরণ করতে পারে, তাদের আমি সবচেয়ে ভালবাসি’ (‘একা লড়েই বিজেপিকে হারাবেন...’, ৩-২)। লোভে যে পাপ এবং পাপে যে মৃত্যু এই নীতিবাক্য যুগ যুগ ধরে প্রচলিত। সেই সঙ্গে এ-কথাও সত্য যে লোভ শুধু লোভীর বিপদ নয়, চার পাশের মানুষজনেরও বিপদ ডেকে আনে। বেশ কিছু দিন ধরে মুখ্যমন্ত্রী এই ধরনের উপদেশ তাঁর দলের কর্মী ও নেতাদের দিয়ে আসছেন। সারদা ও নারদ কেলেঙ্কারি তো আছেই, তার সঙ্গে লোভজাত দলীয় সংঘর্ষ মুখ্যমন্ত্রীকে নিশ্চয় উদ্বিগ্ন করছে।

কিন্তু আমাদের দেশের রাজনীতি যে পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে, সেখানে লোভ সংবরণ করার সম্ভাব্যতা অবশ্যই এক প্রশ্নচিহ্নের মুখে। আগেকার দিনে যাঁরা রাজনীতি করতেন, বিয়ের বাজারে তাঁরা ছিলেন অপাঙ্‌ক্তেয়। সে অবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। কারণ আজকের রাজনীতি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত। এটি কম খরচে বেশি আয়ের ক্ষেত্র। যাঁদের পুঁজি আছে, তাঁরা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তা বিনিয়োগ করেন কারণ মুনাফার সম্ভাবনা সেখানে আছে।

রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জিত হলে নায়ক-গায়ক-কবি-লেখক-বিজ্ঞানী-বুদ্ধিজীবী নতজানু হতে বাধ্য। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতার সেই সরল শিশুটির মতো অবলীলাক্রমে বলা যায় না: ‘রাজা তোর কাপড় কোথায়?’ ক্ষমতা যার নেই, ক্ষমতাবান সম্বন্ধে তার ভয় আছে। আবার সেই ভয়কে পুঁজি করে ক্ষমতাবান ক্রমাগত অন্যায় ও দুর্নীতির অতলে নিমজ্জিত হতে থাকে।

স্বাধীনতার পর থেকে লোভ সংবরণ করার মন্ত্র যে ভারতের রাজনৈতিক নেতারা বর্জন করেছেন, তার অজস্র দৃষ্টান্ত দিবালোকের মতো স্পষ্ট। নির্বাচনের আগে প্রার্থীকে তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব দিতে হয়। সে হিসাব ঠিক কি না, তার চুলচেরা বিচার হয় না। সংসদের উভয় কক্ষের সদস্যদের আ্যফিডেভিট থেকে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে তাঁদের আয় বেড়েছে গড়ে শতকরা ৩০০ ভাগ। কোথা থেকে অর্জিত হল এই সম্পদ? অম্বেডকরের চিন্তায় ভবিষ্যতের এই রেখাচিত্র ধরা পড়েছিল। তাই তাঁর চিন্তায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কে টি শাহ ও এইচ ভি কামাথ ১৯৪৮ সালে আইনসভায় বলেছিলেন— মন্ত্রিত্ব গ্রহণের সময় ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব দিতে হবে; মন্ত্রিত্ব ত্যাগের সময় ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব দিতে হবে; যদি
দেখা যায় মন্ত্রিত্ব ত্যাগের সময় সম্পদের পরিমাণ বেশি তা হলে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে; সে ব্যাখ্যা যুক্তিসংগত না হলে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী
জানেন ক্ষমতা মানুষকে আত্মহারা ও পাগল করে; নিরঙ্কুশ ক্ষমতা তাকে অমানুষ করে। ক্ষমতার লোভ বড় আগ্রাসী, সংক্রামক। বিশেষত জনগণেশ যদি এ সম্বন্ধে উদাসীন হয়, তা হলে সে লোভ আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে।

দিলীপ মজুমদার কলকাতা-৬০

চোখে আঙুল

পত্রলেখক তপন দে-র ‘শিশির ভাদুড়ি’ (৩-২) শীর্ষক পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বলি, সাংবাদিক জয়ন্ত ঘোষালের সাম্প্রতিক লেখাগুলো কোনও মতেই অসহিষ্ণুতার প্রকাশ নয়। উনি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ক্রমাগত করে চলা ভুলগুলো চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দিচ্ছেন মাত্র। চিঠি-লেখক লিখেছেন, জয়ন্তবাবুরা মোদীজিকে ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু যে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তির— হোন না তিনি প্রধানমন্ত্রী— সমালোচনা করা তো তাঁকে ভয় পাওয়া বা তাঁর সম্পর্কে অসহিষ্ণুতার পরিচায়ক নয়!

তা ছাড়া, এই সরকার কী দিয়েছে? নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি, পেট্রল ডিজেল ও ভরতুকিযুক্ত বা ভরতুকিহীন রান্নার গ্যাসের নিরন্তর মুল্যবৃদ্ধি (বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম অর্ধেক হওয়া সত্ত্বেও), ব্যাংক ডাকঘরের সুদে ক্রমাগত হ্রাস, আয়কর হারের ঊর্ধ্বগতি, বিমুদ্রাকরণ বা আধার-যোগের কারণে ক্রমাগত হয়রানি (তাতে কার কতটা লাভ ক্ষতি হল তা আজ প্রমাণিত), পরবর্তী প্রজন্মের কাজের সুযোগে ক্রমাগত হ্রাস, ইত্যাদি। নাহয় অন্য বৃহত্তর বিষয়গুলো বাদই দিলাম, যেমন উগ্র ধার্মিক ও জাতীয়তাবাদী অসহিষ্ণুতা, বিরুদ্ধ-মতাবলম্বীদের হেনস্তা, চিন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে নিরন্তর অবনতি, চাষি এবং খেটে খাওয়া মানুষের সমস্যার নিরন্তর বৃদ্ধি...

কেউ বলতে পারে, আগের সরকারের আমলে দুর্নীতি বেশি ছিল। কিন্তু শাসক দলের নেতা, মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগগুলোর তো কোনও তদন্তই হতে দেওয়া হচ্ছে না, যা কিনা বিরোধী দলের নেতানেত্রীদের বেলায় হচ্ছে।

সৌমিত্র রায় ই-মেল মারফত

তথ্য নয়, তত্ত্ব

অনুষ্টুপ আয়োজিত আশিস নন্দীর বক্তৃতায়, অনিন্দ্য ঘোষের মতো, আমিও ‘উৎসাহী শ্রোতা’ ছিলাম (‘হিংস্রতার আলোচনা’, সম্পাদক সমীপেষু, ২-২)। কিন্তু চিঠি-লেখকের লক্ষ করা উচিত ছিল, বক্তৃতার শিরোনাম ছিল ‘হিংসা এখন’ নয়, ‘হিংসার স্বরূপ’। শুরুতেই বক্তা এ-ও বলেন, তাঁর প্রচেষ্টা হল হিংসার কতকগুলো বিশ্লেষণসূত্র পেশ করা, যাতে শ্রোতারা আধুনিক হিংসার চরিত্র নিজেরাই বিশ্লেষণ ও অনুধাবন করতে পারেন (পরিশেষে বলেন, যে-যে সূত্রগুলো কারও কাছে অগ্রাহ্য, সেগুলো বাদ দিয়ে অন্যগুলো প্রয়োগ করতে)। অর্থাৎ, তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য তথ্যের পরিবেশন নয়, তত্ত্বের উন্মোচন। তাই চিঠি-লেখক যখন ‘তথ্যের সমাহার’ চান, বা কাশ্মীর-নন্দীগ্রামের উল্লেখ প্রত্যাশা করেন, ভুল করেন। আশিস একাধিক গণহত্যার উল্লেখ করেন শুধুমাত্র বিশ্লেষণের কাঠামোটা বোঝাতে ও সাম্প্রতিক হিংসার স্বরূপটা ব্যাখ্যা করতে।

আধুনিক বাঙালিরা যে বর্ণসংকর ভাষায় কথা বলেন আমি তার ঘোর বিরোধী। তাই আমিই মঞ্চে উঠে বক্তাকে ইংরেজিতে বলতে অনুরোধ করি। পরিভাষার অভাব এর একটা বিরাট কারণ। আশিস নন্দী বাংলা ভালই জানেন, কিন্তু ছাত্রাবস্থা থেকে যিনি প্রবাসী, তাঁর ইংরেজি বক্তৃতা কি এতই অস্বাভাবিক?

মণীশ নন্দী রেসটন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

Bhanu Gupta Harmonica player Passed Away
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy