Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

অরণ্য, পাহাড়, পশুপাখি, নদীর জল, সূর্যের আলো, বায়ুমণ্ডলের বাতাস সবই কিনে নেওয়ার যে কর্পোরেট চক্রান্ত চলছে, তাতে কিন্তু শামিল হয়ে আছে রাজনৈতিক দল এবং ভাববাদী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো।

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০০:১০
Share: Save:

সভ্যতার ধাত্রী নদী

‘আত্মবলির মিছিল, দেশ নির্লিপ্ত’ (১২-৩) শীর্ষক জয়া মিত্রের লেখা এবং তাপস বিশ্বাসের ‘গঙ্গার জন্য সংগ্রাম’ (২০-৩) শীর্ষক চিঠির প্রেক্ষিতে কিছু কথা বলতে চাই।

জয়া মিত্র লিখছেন, ‘‘এই যে গঙ্গা নদী যাকে বলা হয় ভারতবর্ষের শুধু ভূগোল নয়, সংস্কৃতিরও জীবনরেখা, তার সুস্থতা রক্ষার জন্য অনশনে প্রাণ দিচ্ছেন একের পর এক সন্ন্যাসী, হিন্দু ধর্মের ধ্বজাধারীদের তাতে কিছু এসে যায় না।’’ আবার লিখছেন, ‘‘সরকারি তরফ থেকে কেউ কোনও বার্তা নিয়ে এদের সঙ্গে দেখা করছে না পর্যন্ত, বিরোধী পক্ষও নয়।’’ আসলে খেলাটা অন্য কোথাও। অরণ্য, পাহাড়, পশুপাখি, নদীর জল, সূর্যের আলো, বায়ুমণ্ডলের বাতাস সবই কিনে নেওয়ার যে কর্পোরেট চক্রান্ত চলছে, তাতে কিন্তু শামিল হয়ে আছে রাজনৈতিক দল এবং ভাববাদী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। এদের পরস্পরের সঙ্গে এক অমোঘ বোঝাপড়া আছে। ধর্মের গ্রন্থে বা তাদের আজেন্ডায় প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষা করার কোনও বিজ্ঞানভিত্তিক দাওয়াই নেই। তাই তা নিয়ে ধর্মের ধ্বজাধারীরা ভাবিতও নয়। সরকার পক্ষ বা বিরোধী পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর আজেন্ডায় আবার পরিবেশ রক্ষার কোনও শপথ প্রকাশ পায় না। দুই পক্ষেরই হয়তো টিকি বাঁধা রয়েছে কর্পোরেট দুনিয়ার কাছে। তাদের প্রণামী বা অনুদান নিয়েই তো এদের মৌরসিপাট্টা।

এদের এক দল সাড়ম্বরে গঙ্গার বুকে প্রদীপ ভাসাবে, কিংবা হাজার হাজার লিটার দুধ গঙ্গার জলে ঢেলে (যা গঙ্গার জলে বাড়তি দূষণই ঘটায়) গঙ্গাকে শোধন করার এক অবৈজ্ঞানিক হুজুগ তৈরি করবে। অপর দিকে রাজনৈতিক দলগুলো এই প্রকল্পকে গুরুত্ব দিয়ে উৎসব-মোচ্ছবের মোড়কে জনগণকে মাতিয়ে দেবে। কাজের কাজ কিছুই হবে না। হিমালয়ের বরফগলা জলে পুষ্ট অনেক উপনদীর জল সমৃদ্ধ গঙ্গা অববাহিকায় ৪০ কোটিরও বেশি মানুষ বসবাস করেন, তাঁদের কোনও উপকারে আসবে না ওই সব প্রকল্প। নদীর অবিরল ধারা সরকারের ঘোষিত নীতি, অথচ হিমালয়-সহ সারা দেশ জুড়ে বড় বড় বাঁধ ব্যারেজ, তটবন্ধন করে নদীকে ব্যবসায়িক ভাবে ব্যবহার করার অনুমতি ইত্যাদির মাধ্যমে নদীকে মেরে ফেলার চক্রান্তই আজ বহমান।

গত ১৪ থেকে ১৬ মার্চ যমুনা নদী বাঁচানোর উদ্দেশ্যে অনেকগুলি বিজ্ঞান সংগঠন ও পরিবেশ আন্দোলন কর্মীদের সঙ্গে ‘নদীর জন্য পদযাত্রা’য় অংশ নিয়ে এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। নদিয়ার হরিণঘাটা বাজার থেকে সেই যাত্রাপথ শুরু করে তিন দিনে পৌঁছয় গোবরডাঙায়। ‘যমুনা’ নামে এই বাংলায় যে এক সময় একটি নদী ছিল, ছিল তার বিস্তীর্ণ এক অববাহিকা, তা-ই আমরা জানতাম না। এখন তা কচুরিপানায় ভর্তি মজে যাওয়া নিচু জমি বিশেষ। ত্রিবেণীর কাছে গঙ্গা থেকে তার উৎসমুখ এবং মোহনা গাইঘাটার চারঘাটায় ইছামতী নদীতে। যমুনার উৎসমুখের উল্টো দিকে, গঙ্গার পশ্চিম পাড়েও যমুনার জোড়া আর একটি নদী ছিল সরস্বতী, সেটা চিরতরে মুছে গিয়েছে ভূপৃষ্ঠ থেকে। যমুনারও উৎসমুখ ও মোহনা আজ নিশ্চিহ্ন। কোথাও নদীর রেখাটুকু পর্যন্ত নেই। ১৯১৯ সালে প্রথম ও শেষ বারের মতো পুরো যমুনা অববাহিকায় সংস্কার করতে বাধ্য হয়েছিল ব্রিটিশ শাসকরা। গোবরডাঙার জমিদার গিরিজাপ্রসন্নের নেতৃত্বে হাজারও মানুষ সে দিন পথে নেমেছিলেন যমুনাকে বাঁচাতে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সম্প্রতি শুরু হয়েছে যমুনা নদী সংস্কার। যদিও উৎসমুখ এবং মোহনা মুখে বাদ দিয়েই এই সংস্কার চলছে। সংস্কারের পর যা পাওয়া যাবে, তা অবশ্যই বহমান নদী নয়, বদ্ধ জলের কোনও ঝিল বা হ্রদ। স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, তাঁদের বেশির ভাগই এটাকে খাল বলেই জানতেন। সেই পদযাত্রার পথে বিভিন্ন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে ছাত্রদের সঙ্গে যমুনা নদী নিয়ে আলোচনার সুযোগ হয়েছিল। দুঃখের বিষয়, ভূগোলের পাঠ্যক্রমে তারা নদীর গতিপথ সম্পর্কে পড়ে বটে, তবে জনজীবনে নদীর সার্বিক ভূমিকা সম্পর্কে তারা ঠিকমতো ওয়াকিবহাল নয়। যমুনা নদীকে তারা চেনে না। নদী যে শুধুমাত্র বয়ে চলা জলের ধারা নয়, এ এক সম্পূর্ণ বাস্তুতন্ত্র, যা সমগ্র পৃথিবীর জীববৈচিত্রের ধারক ও বাহক; নদী হল মানুষের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সভ্যতা বিকাশের মূল আধার— সে তথ্য তারা পাঠ্যক্রমের কোথাও পায়নি।

আলোচনার শেষে স্বামী আত্মবোধানন্দজির ছবি দেখিয়ে ছাত্রদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, তারা তাঁকে চেনে কি না। না, কেউ চিনতে পারেনি। অথচ কোনও সাধু বা সাধ্বী যখন মন্দির নির্মাণের জন্য বা গোমাংস ভক্ষণের বিরুদ্ধে হুঙ্কার ছাড়েন, বার বার তাঁর ছবি দেখতে দেখতে সকলেই তাঁকে চিনে যাই। বেফাঁস আলাপ করা কোনও রাজনৈতিক নেতা বা মস্তান সকলের কাছে পরিচিত মুখ। স্বামী নিগমানন্দ, অধ্যাপক জি ডি আগরওয়াল, সন্ত গোপাল দাসজি, এবং আত্মবোধানন্দজি সকলেই অপরিচিত থেকেই নিঃশেষ হয়ে যান। মিডিয়ার আলো এঁদের উপর পড়ে না।

পরিশেষে বলি, প্রকৃতি ও পরিবেশকে দেখার দু’টি দৃষ্টি আছে। প্রেমিকের দৃষ্টি, ধর্ষকের দৃষ্টি। প্রথমটি আমাদের ‘উপভোগ’ করতে শেখায়, পরেরটি ‘ভোগ’ করতে শেখায়। মুনাফালোভী কর্পোরেট কালচার আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশকে ধর্ষকের দৃষ্টিতে দেখতে শেখায়। যেনতেন প্রকারেণ সমস্ত নিঃশেষ করে, ছিবড়ে করে, মুনাফা লাভই হয়ে ওঠে প্রধান উদ্দেশ্য। প্রকৃতি ও পরিবেশকে আমাদের দেখতে হবে প্রেমিকের দৃষ্টিতে। সমগ্র দেশে বয়ে চলা অসংখ্য ছোট-বড় নদনদী খালবিল, জলাশয়, পুকুর ইত্যাদি বাঁচানোর লক্ষ্যে এবং মূলত নদী ব্যবহারের চালু ধারণা ও পদ্ধতির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতেই হবে নিজেদের বাঁচার তাগিদে। ছাত্রদের পাঠ্যক্রমে নদী ও জলাশয়ের প্রকৃত উপযোগিতা সম্পর্কে বিশদ সিলেবাস যুক্ত হওয়া ভীষণ জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর ইস্তাহারে পরিবেশ বাঁচানোর বিজ্ঞানভিত্তিক কার্যক্রম যুক্ত না হলে কখনওই এই দুরূহ কাজ সম্পন্ন ও তদারকি সম্ভব নয়। তা না হলে আজকের সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় জয়া মিত্র, তাপস বিশ্বাস ও আমাদের মতো দু’চার জন পরিবেশ সচেতন কর্মী সমাজের চোখে হয়ে যাব ফাউখাটা কর্মী, অথবা রাষ্ট্রের চোখে হব মাওবাদী কর্মী।

সাধন বিশ্বাস

কলকাতা-১২২

স্বচ্ছ?
‘স্বচ্ছ ভারত’ বলে অনেক প্রচার চলছে। কিন্তু একটি অঞ্চলে অভিযানটি সফল হয়নি বোধ হয়— সুন্দরবন অঞ্চলের একটি জায়গা— নাম: জামতলা, থানা: কুলতলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে অবস্থিত। ব্যক্তিগত কাজের জন্য ২৫-৩ তারিখে সকালের দিকে জামতলার বিএলআরও অফিসে যেতে হয়েছিল। বাস থেকে নেমে শৌচাগারের খোঁজ করতে, অনেকে আনাচে-কানাচের জায়গা এবং নদীর ধার দেখিয়ে দিল। কারণ সাধারণ শৌচাগার বলে ওখানে কিছু নেই। যদিও ওখানে বাজার, স্কুল, কলেজ ও একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। লজ্জায় নিজেকে সংযত রাখলাম। ভাবলাম, অফিসে নিশ্চয় সাধারণ শৌচাগার আছে। কিন্তু হায় ভারত! কয়েক জনকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, অফিসের মধ্যে শৌচাগার আছে, কিন্তু সেটা জনগণের ব্যবহারের জন্য নয়, শুধু অফিসের কর্মচারীদের জন্য। এমনকি অফিসে পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। ভাবলাম কর্মচারীদের বলে টয়লেট ব্যবহার করব, কিন্তু বলব কাকে? বেলা ১১টায় অফিস তালাবন্ধ। চারিদিকে অস্বচ্ছ পরিবেশ এবং যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগের নিদর্শন। প্রশ্ন, এই অঞ্চলে, বিশেষ করে সরকারি অফিসের চারিপাশে, ‘স্বচ্ছতা’ থাকবে না কেন?
মুক্তারাম গায়েন
কলকাতা-১৪৪

টিকিটে বাংলা
পশ্চিমবঙ্গে যে রেলের টিকিট পাওয়া যায়, তার অনেকগুলিতেই নেই বাংলা ভাষা। সাধারণ রেলযাত্রীদের সুবিধার্থে টিকিটে বাংলা ব্যবহার করা হোক।
জয়দেব দত্ত
কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution Ganga Pollution Politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE