E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: সকলের প্রকল্প

গণতান্ত্রিক কাঠামোয় স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন কাজে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্ব আবশ্যক।

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৫:৫৮

তূর্য বাইনের ‘কৌশল, তবে আত্মঘাতী’ (১৮-৮) শীর্ষক প্রবন্ধ অনুসারে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ নিয়ে কিছু কথা। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে নেওয়া এই প্রকল্পে প্রথমেই যে প্রশ্নটি উঠে আসবে তা হল— ৭৩ এবং ৭৪তম সংবিধান সংশোধন অনুযায়ী, শহরে ওয়র্ড কমিটি এবং গ্রামের ক্ষেত্রে গ্রাম সংসদ, গ্রামসভার মতো স্তর থাকলেও তাকে দৃঢ় ভাবে কার্যকর না করে অন্য রকম ভাবনায় সরকারকে যেতে হল কেন? নতুন এই প্রকল্পে জনগণ তাঁদের নিজস্ব বুথ বা পাড়ার সমস্যার কথা নির্ধারিত শিবিরে সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরবেন দ্রুত সমাধানের আশায়। কিন্তু কত জন মানুষ অকপটে সব সমস্যার কথা বলবেন? অভিজ্ঞতা বলে, সাধারণ মানুষ প্রশাসন অথবা জনপ্রতিনিধিদের কাছে কোনও প্রশ্ন উত্থাপন করলে উল্টে অসংখ্য প্রশ্নের সম্মুখীন হন অথবা যথাযথ উত্তর পান না। সেই কারণে তাঁরা নীরব থাকাই শ্রেয় ভাবেন।

মানুষের সরাসরি সরকারকে বলার এই কর্মসূচিকে সার্বিক সাফল্যের জায়গায় নিয়ে যেতে হলে শাসককে বিরোধী দল এবং স্থানীয় বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব দিয়ে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। গণতান্ত্রিক কাঠামোয় স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন কাজে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ও প্রতিনিধিত্ব আবশ্যক। দুর্ভাগ্যের কথা, ক্রমশ রাজ্য ছাড়িয়ে দেশের রাজনীতিতেও সরকার আর দল সমার্থক হয়ে যাচ্ছে। তাই সরকার আর বিরোধীদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বটুকুই পড়ে থাকে কোনও গঠনমূলক কাজ ছাড়াই। মানুষের গণতান্ত্রিক রায়কে মর্যাদা দিলে শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রই শক্তিশালী হয়, অভ্যন্তরীণ সমন্বয় বজায় থাকে। এই দিকগুলি বিবেচনা করলে সকল দল ও মতের প্রকল্প হয়ে উঠতে পারে ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’।

আব্দুল জামান নাসের, চন্দননগর, হুগলি।

রণকৌশল

শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভারতের রাজনীতি এখন ক্ষমতায় টিকে থাকার রণকৌশল মাত্র। নির্বাচন এলেই সব দল নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে কল্পতরু হয়ে ওঠে। তূর্য বাইনের ‘কৌশল, তবে আত্মঘাতী’ প্রবন্ধটি এ ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক। অতীতে আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া জনজাতিদের ক্ষেত্রে সঙ্গত কারণেই নানা প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হত। আর এখন সবাইকে নগদ অর্থ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা। পশ্চিমবঙ্গে আবার এ সবের সঙ্গে আছে বিবিধ ‘শ্রী’-সহ সদ্য মুক্তি পাওয়া পরিযায়ীদের অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থা। নিঃসন্দেহে, উপরোক্ত প্রকল্পের রূপায়ণে অসংখ্য মানুষ উপকৃত হন। কিন্তু এটাও ঠিক যে, সব সরকারি বদান্যতা শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক ভোটব্যাঙ্ক অটুট রাখারই নব নব কৌশল। ভোট মিটলে কোটি কোটি যুবক-যুবতীর চাকরি, কালো টাকা উদ্ধার, অ্যাকাউন্টে পনেরো লক্ষ টাকা অনুদানের প্রতিশ্রুতির সলিল সমাধি ঘটে। মূল লক্ষ্য তো শুধুমাত্র ক্ষমতা দখল।

সমস্যা হল— প্রথমত, নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তদের আজ পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে। কর্মবিমুখ এই মানুষগুলি যে দেশের সম্পদ উৎপাদনের হাতিয়ার, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কান্ডারি, সেই দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হতে পারছে না প্রশাসন! দ্বিতীয়ত, এই দানসত্রের অপরিমেয় অর্থে যদি কোনও শিল্প-বাণিজ্য বা সংগঠিত কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলা যেত, তা হলে শিক্ষিত যুবক-যুবতী থেকে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান হত। আজীবন সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হত না। দেশ তথা রাজ্য তাতে আর্থিক ভাবেও অগ্রসর হত অনেকখানি।

সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪।

দুর্নীতি-চিত্র

তূর্য বাইনের প্রবন্ধটির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। নির্বাচন আসতেই জনগণের জন্য নতুন নতুন প্রকল্প নিয়ে হাজির হওয়া এখন অনেক রাজনৈতিক দলের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজ্য সরকার ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ নামে বুথভিত্তিক নতুন প্রকল্পে, বুথপিছু দশ লক্ষ টাকা করে বরাদ্দ হওয়ায়, আশি হাজার বুথে খরচ হবে আট হাজার কোটি টাকা। যে সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করতে পারে না, সেই সরকার নিজের দলের রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এত টাকা খরচ করে কী করে!

১৯৭৩ সালের পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী ১৯৭৮ সালে বাম সরকার দ্বারা এ রাজ্যে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত রাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। এটির উদ্দেশ্য এক দিকে যেমন ছিল ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা, তেমনই অন্য দিকে এর মাধ্যমে স্থানীয় শাসনে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফলে স্থানীয় স্তরে কোনও সমস্যার সমাধানে বা জনকল্যাণমূলক কাজে এলাকার প্রকৃত সুবিধাভোগীদের সোজাসুজি অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়, স্থানীয় মানুষ পান সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারও। ভূমি সংস্কার সাধারণ মানুষকে তাঁদের সম্মান ও মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়েছিল। কাজের বিনিময়ে খাদ্য এবং আরও সব জনমুখী প্রকল্প সার্থক ভাবে রূপায়ণ করা হয় এই পঞ্চায়েত ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে।

আশ্চর্য বিষয় হল, এখনও পঞ্চায়েতি রাজ এই রাজ্যে চালু আছে, তবে কেন নতুন নতুন প্রকল্প আমদানি করে জনগণের দুয়ারে যেতে হচ্ছে সরকারকে? আমরা দেখেছি কী ভয়ানক দুর্নীতি পঞ্চায়েত ব্যবস্থার কাঠামোয় একেবারে ঘুণ ধরিয়ে দিয়েছে। ২০২০ সালে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আমপানের পর ব্যাপক দুর্নীতির ছবি সামনে এসেছিল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ বণ্টন নিয়ে। অনেকেই পরবর্তী কালে এই চুরির টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু সরকার সেই দুর্নীতিগ্রস্তদের নাম প্রকাশ করেনি। আবাস যোজনা ও একশো দিনের কাজে টাকা নয়ছয় করা নিয়ে শাসক দলের নেতানেত্রীদের অনেকেই অভিযুক্ত। যে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থা এক দিন মানুষের সম্মান মর্যাদা ফিরিয়ে দিয়েছিল, ক্ষমতা দিয়েছিল, তার অন্তর্জলি যাত্রা কি তবে আসন্ন?

দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা।

বর্জ্য-নগরী

জহর সরকার ‘লন্ডন নাহয় না-ই হল’ (১২-৯) প্রবন্ধটিতে কলকাতার কুশ্রী এলাকাগুলি নিয়ে লিখেছেন। কিন্তু একটি বিশেষ স্থানের বর্ণনা প্রবন্ধে অনুল্লিখিত থেকে গিয়েছে। রাজাবাজারে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাসবিহারী প্রাঙ্গণে বিজ্ঞান কলেজে এক বিশাল বর্জ‍্যস্তূপ গড়ে উঠেছে। তা-ও আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত এক ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানের যাত্রাপথে। এই পত্রলেখক স্বয়ং তার সাক্ষী। বৃষ্টিস্নাত এক দিনে বর্জ্যস্তূপের পাশ কাটিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের এক সভায় যাওয়ার সময় কর্দমাক্ত এবং অভাবনীয় এক পিচ্ছিল পথে এই পত্রলেখকের পদস্খলন ঘটে। পরিণামে ব‍্যথাজর্জর অবস্থায় হাসপাতাল গমন, এবং গৃহবন্দিত্ব।

প্রবন্ধকার তাঁর প্রবন্ধে হকার সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন। হকার কোথায় নেই? সাংবাদিক হওয়ার সুবাদে এ দুনিয়ার নানা জায়গায় যাওয়ার সুযোগ ঘটেছে। হকার দেখেছি লন্ডনের অভিজাত অক্সফোর্ড স্ট্রিটে, প্যারিসের মেট্রো স্টেশনে, বা ওয়াশিংটনে হলোকস্ট মিউজ়িয়মের কাছে। এঁরা বেশির ভাগই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান, না হলে লাতিন আমেরিকান। আর নয়তো বাংলাদেশি। কিন্তু বঙ্গীয় হকারদের মতো এত উচ্ছৃঙ্খল এবং বিশৃঙ্খল কেউ নন। পুলিশকে এঁরা ভয় পান এবং সরকারি নির্দেশে ভোটযন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হন না। তা ছাড়া বর্জ্য প্লাস্টিকের নীচে বসে এঁরা কেউই ব্যবসা করেন না।

এ দিকে কলকাতার হকারদের জন‍্য ২০২৬-এর ভোটের আগেই পাকাপোক্ত পরিকাঠামোর ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে সংবাদে প্রকাশ। এই সংবাদ সত্য হলে এ বার থেকে আমরা হাঁটার জন‍্য রাজপথ, যার ৪ শতাংশ মাত্র গাড়ি চলাচলের জন‍্য উন্মুক্ত। অবধারিত ভাবে পথ-দুর্ঘটনা বাড়বে এবং মৃত্যুপথযাত্রীর সংখ্যাও ক্রমবর্ধমান হয়ে উঠবে। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের হাহাকার করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না।

প্রশান্ত কুমার বসু, কলকাতা-৩।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Democracy Opposition Government

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy