Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: অপরিহার্য হলে তবেই

দুর্দান্ত অধ্যাপক মোরিয়ারটি-র তাড়া খেয়ে হোমস স্টেপনি গ্যাস চেম্বারে লুকিয়েছেন। পালাবার জন্য সতর্ক হোমস তৈরি।

শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

‘নাটকে সিগারেট’ পত্রটি (১-১) পড়লাম। নাটকে সিগারেট খাওয়া অপরিহার্য না হলে পরিহার করাই ভাল। প্রত্যক্ষ ভাবে সিগারেটের ভূমিকা থাকলেই মঞ্চে ধূমপান চলতে পারে। একটা উদাহরণ দিই। ১৯১১ সাল নাগাদ রচিত উইলিয়াম জিলেট-এর ‘শার্লক হোমস’ নাটকের শেষ দৃশ্য। দুর্দান্ত অধ্যাপক মোরিয়ারটি-র তাড়া খেয়ে হোমস স্টেপনি গ্যাস চেম্বারে লুকিয়েছেন। পালাবার জন্য সতর্ক হোমস তৈরি। বাইরের দরজাটা খুলে যেতেই টুক করে তিনি ঘরের আলো নিভিয়ে দিলেন। মঞ্চ একেবারে অন্ধকার। সেই নিকষ কালো অন্ধকারে শুধু জ্বলজ্বল করছে ধূমপানরত হোমসের সিগারেটের আগুন। মোরিয়ারটি বা তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ কেউ ঘরে ঢোকেনি। কেবল বাইরে থেকে অধ্যাপকের চিৎকার শোনা গেল, ‘সিগারেটটিকে অনুসরণ করো।’ কয়েক মুহূর্তের নিদারুণ উত্তেজনা, তার পরেই জ্বলে উঠল আলো। দেখা গেল, জ্বলন্ত সিগারেটটি একটি জানালার চৌকাঠে রেখে অন্য একটি গরাদহীন জানালা দিয়ে চতুর হোমস পালিয়েছেন। হোমসের চাতুর্যময় পরিত্রাণ দেখে দর্শককুল তৃপ্ত। ‌‌‌‌এই দৃশ্যটি সিগারেট ছাড়া অভিনয় সম্ভব নয়। (উল্লিখিত ‘শার্লক হোমস’ নাটকের সূত্র: এলমার রাইস-এর ‘দ্য লিভিং থিয়েটার’ নামক গ্রন্থের মণীন্দ্র রায় কর্তৃক বাংলা অনুবাদ ‘চিরজীবী রঙ্গালয়’। পৃষ্ঠা ২৩-২৪)

রঞ্জিত কুমার দাস

বালি, হাওড়া

অতীত, বর্তমান

‘দুশ্চিন্তা অমূলক’ (৫-১) শীর্ষক পত্র প্রসঙ্গে আমার এই চিঠি। পত্রলেখক ভারতের ঐতিহ্যের কথা তুলে ধরেছেন। আমরা বিশ্বাস করি এবং জানি এই ভারতের মাটিতেই গৌতম বুদ্ধ, মহাবীর এবং চার্বাকেরা তাঁদের নাস্তিকতার চর্চা করতেন। প্রাচীন ভারতের জনমানব তাঁদের গ্রহণ করেছেন। কিন্তু প্রাচীন ভারত দিয়ে বর্তমানের বিচার করা যুক্তিপূর্ণ বলে মনে করি না। এই ভারতই শক-হূন পাঠান মোগল আশ্রয় দিয়েছে ও আপন করে নিয়েছে। কিন্তু এ কথাও সমান ভাবে সত্য যে, সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী ২০১৮-তেই ভারতে সবচেয়ে বেশি ধর্মীয় হিংসার ঘটনা ঘটেছে। আর নাসিরুদ্দিন শাহ যে হেতু এই বর্তমান সময় নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন, সে হেতু ওঁর দুশ্চিন্তা অমূলক বলে মনে হয় না।

ওয়াসিম আক্রাম মণ্ডল

গোপাল নগর, নদিয়া

বাধ্য হয়ে

‘দুশ্চিন্তা অমূলক’ চিঠিতে পত্রলেখক এমন একটা ভাব প্রকাশ করেছেন যেন, সনাতন (হিন্দু) ভারতবাসীদের এই স্বাভাবিক বাসভূমিতে চার্বাক-নাস্তিকেরা বহিরাগত কেউ। এবং সনাতন (হিন্দু) ভারতবাসীরা তাঁদের অনেক দয়া-দাক্ষিণ্য এবং উদারতা দেখিয়ে এই দেশে বসবাসের জায়গা করে দিয়েছেন। পত্রলেখক ভুলে গিয়েছেন এই দেশটা যতটা সনাতনীদের ততটাই চার্বাক-নাস্তিকদেরও। কারও দয়া-দাক্ষিণ্যের ওপর

চার্বাক-নাস্তিকদের অস্তিত্ব নির্ভরশীল নয়, কখনও ছিলও না। দলে ভারী হলে গলার জোর হয়তো বাড়ে, কিন্তু দেশের মালিকানা এসে যায় না হাতে।

উনি এক জায়গায় লিখছেন, “পরবর্তী সময়ে ঈশ্বরের অস্তিত্বে সন্দিহান বুদ্ধদেবকে অবতার বলে মেনে নিতে বৈদিকদের কোনও অসুবিধা হয়নি।” আহা রে! কত উদার (হিন্দু) সনাতনীরা!

আসলে বিষয়টা হল, ভয়ঙ্কর বর্ণপ্রথা-দূষিত তথাকথিত হিন্দুধর্ম যখন অত্যাচারিত সাধারণ মানুষের দ্বারা পরিত্যক্ত হয়েছিল, তখন খোলামেলা ধর্ম হিসাবে বৌদ্ধ-জৈন ধর্মের বিকাশ ঘটে (বস্তুত হিন্দুধর্মের প্রতিবাদী ধর্ম হিসাবে) এবং পরবর্তী কালে রাজ-রাজড়াদের পৃষ্ঠপোষকতায় যখন পুনরায় হিন্দুধর্ম তার জমি বিস্তারে সচেষ্ট হয়, তখন বুদ্ধের মতো অমন ব্যক্তিত্বকে বাদ দিয়ে হালে পানি পাওয়া যাবে না বুঝেই, তাঁকে জবরদস্তি আত্মসাৎ করেন সনাতনীরা।

ইন্দ্রনীল মণ্ডল

পাণ্ডব নগর, দিল্লি

বিজ্ঞান কংগ্রেস

এ বছর ১০৬তম বিজ্ঞান কংগ্রেস বসেছে জালন্ধরে লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটিতে। এই সমাবেশে অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জি.নাগেশ্বর রাও হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ‘গীতা’য় উল্লিখিত দশাবতারের বর্ণনা দিয়ে বোঝাতে চাইলেন, ডারউইনের বিবর্তনবাদের থেকে এই দশাবতার তত্ত্ব অনেক ভাল। কারণ ডারউইনের বিবর্তনবাদে শুধু মানুষের বিবর্তন আর এই দশাবতার তত্ত্বের ভিত্তিতে জলজ প্রাণী (মত্স্য অবতার) থেকে বিবর্তনে এল রাম, কৃষ্ণ ও আরও জ্ঞানী মানুষ।

শুধু তা-ই নয়, তিনি দাবি করলেন, কৌরবদের জন্ম স্টেম সেল থেকে, বিষ্ণুর সুদর্শন চক্র ক্ষেপণাস্ত্র আর রাবণের পুষ্পক রথ নিয়ে অন্তত ২৪ ধরনের নানা মাপের বিমান ছিল।

এ ভাবে চলতে থাকলে বিজ্ঞান কংগ্রেস এক দিন ধর্মীয় বা শাস্ত্রীয় সভায় পরিণত হবে। এ ধরনের শিক্ষিত মানুষদের প্রসঙ্গে বিদ্যাসাগর কী বলেছেন দেখা যাক।

আলেকজ়ান্দ্রিয়া জয় করে আরব সেনাপতি যখন আলেকজ়ান্দ্রিয়ার গ্রন্থাগারটি নিয়ে কী করবেন জানতে চাইলেন, তখন খলিফা ওমর উত্তর দিয়েছিলেন, ‘‘ওখানকার বইপত্রে যা আছে, যদি কোরানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হয় তা হলে কোরানই যথেষ্ট, তাদের আর দরকার নেই। যদি না হয়ে থাকে, তবে ওগুলো ক্ষতিকারক, সুতরাং ধ্বংস করে দাও।’’ এ কথার প্রসঙ্গ টেনে বিদ্যাসাগর তদানীন্তন শিক্ষিত সম্প্রদায়ের গোঁড়ামির কথা বলেছেন, ‘‘এ কথা বলতে আমি লজ্জাবোধ করছি যে ভারতবর্ষের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের গোঁড়ামি আরবের থেকে কোনও অংশেই কম নয়। তারা বিশ্বাস করে যে, তাদের শাস্ত্রগুলো গড়ে উঠেছে সর্বজ্ঞ ঋষিদের মধ্য থেকে এবং সে জন্যই তা অভ্রান্ত হতে বাধ্য। যখন কোনও আলোচনা বা তর্ক বিতর্কের মধ্য দিয়ে ইউরোপীয় বিজ্ঞান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নতুন কোনও সত্য তাদের সামনে তুলে ধরা হয় তখন তারা হাসে এবং উপহাস করে। ইদানীং ভারতবর্ষের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে এ রকম একটি অনুভূতি প্রকাশ পাচ্ছে যে যখন তারা নতুন কোনও বৈজ্ঞানিক সত্যের কথা শোনে যার আভাস হয়তো তাদের শাস্ত্রে রয়েছে তখন সেই সত্যের প্রতি সম্মান দেখানোর পরিবর্তে তারা উল্লসিত হয় এবং তাদের নিজেদের কুসংস্কারগ্রস্ত শাস্ত্রের সম্পর্কে শ্রদ্ধাবোধ দ্বিগুণ হয়ে যায়।’’

বিদ্যাসাগরের মৃত্যুর ১২৮ বছর পরেও ১০৬তম বিজ্ঞান কংগ্রেস এ কথা সত্য করে দেখিয়ে দিচ্ছে, আমরা কোন পথে এখনও চলেছি।

নরেন্দ্রনাথ কুলে

কলকাতা-৩৪

নিন্দুকেরা

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে গিয়ে বিরাট কোহালির ভারত ২-১ ব্যবধানে সিরিজ় জিততেই নিন্দুকেরা বলতে শুরু করেছে, স্টিভ স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নার থাকলে ফলাফল এমনটা হত না। অথচ এরাই বল বিকৃতি কাণ্ডে স্মিথ ওয়ার্নারদের কড়া শাস্তির দাওয়াই দিয়েছিল। ক্রিকেট বরাবরই অঘটনের খেলা বলে বিবেচিত, কিন্তু ইদানীং সমালোচকরাও যদি অঘটনের খেলায় মেতে ওঠেন, তা হলে তো খুবই মুশকিল!

প্রণয় ঘোষ

কালনা, পূর্ব বর্ধমান

কেন নিজস্বী?

বাংলা ভাষাকে মর্যাদা দিয়েই বলছি, আনন্দবাজার পত্রিকায়, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে নিজেই নিজের ছবি তোলাকে ‘নিজস্বী’ লেখা হয়, তার পরিবর্তে ‘সেলফি’ লিখলে কি খুব ভুল হবে? কারণ এই কাগজ ছাড়া, অন্য সব জায়গায় সবাইকে তো ‘সেলফি’ই তুলতে দেখি। এখনও পর্যন্ত কাউকে ‘নিজস্বী’ তুলতে দেখিনি। কাউকে দেখিনি, কথোপকথনে ‘সেলফি’র বদলে ‘নিজস্বী’ শব্দটি ব্যবহার করছেন!

মিজানুর রহমান

প্রান্তিক, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cigarette Theatre
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE