Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Animals

সম্পাদক সমীপেষু: এত পশুপ্রেম!

এই দেশে মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়, ফ্রিজে গোমাংস আছে সন্দেহে।

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২০ ০০:২৭
Share: Save:

ভারতবাসী এত পশুপ্রেমী হয়ে গেছে দেখে খুব আনন্দ পেলাম। যে দেশের শৈশব শুরু হয় চটি দিয়ে পোকামাকড় মেরে, কৈশোর শুরু হয় ফড়িং-এর ডানা ছিঁড়ে, কুকুরের লেজে কালীপটকা বেঁধে, অনাবশ্যক ভাবে কুকুর বিড়াল গরু ছাগল পিটিয়ে, ব্যাঙের গায়ে ঢিল মেরে, সেই দেশে এত পশুপ্রেম! যে দেশে খেত উজাড় করে, বাড়িঘর ভেঙেচুরে, মানুষজনকে আছড়ে মারে হাতির দল; হাতির আঘাতে মৃত্যুর জন্য যে দেশে সরকাির ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়, সেই দেশে এক হস্তিনীর প্রতি মানুষের আবেগে চোখে জল চলে এল।

এই দেশে মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়, ফ্রিজে গোমাংস আছে সন্দেহে। বিধর্মী হওয়ার অপরাধে ট্রেন থেকে ছুড়ে ফেলা হয় কিশোরকে। মৃত গরুর চামড়া ছাড়ানোর অপরাধে চার দলিত যুবককে এমন মারা হয় যে শুধু মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য তারা ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য হয়। ভিন্ জাতে বিয়ে করার অপরাধে নিজের পরিবারের মেয়েকে যারা মেরে ফেলতে কসুর করে না, সেই দেশের আমজনতার এই মানসিক উন্নয়নে রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর মশাই পর্যন্ত আশ্চর্য হয়ে যেতেন!

ভাববেন না, হাতিটিকে যে ভাবে মারা হল আমি তাকে সমর্থন করছি! না, করছি না, ধিক্কার জানাই এ কাজকে। একই সঙ্গে জানতে চাই, হাতির আক্রমণে ওই অঞ্চলে হয়ে যাওয়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। কী কারণে ওই মানুষগুলো এমন নৃশংস পদ্ধতি অনুসরণ করল। হাতি যে ফসল নষ্ট করে তার বদলা নিতে, না এমনিই আমোদ পেতে। হাতি হত্যার যেমন বিচার চাই, তেমনই বিচার চাই পথেঘাটে ঘটে যাওয়া সব পশুপাখি নির্যাতনের। আর হ্যাঁ, বিচার চাই সব নরহত্যার।

পার্থ নন্দী

শেওড়াফুলি, হুগলি

সুবিধাবাদ

কেরলে হাতির হত্যা নিঃসন্দেহে নৃশংস, কিন্তু ভেবে দেখতে গেলে, আমরা কে এই অপরাধ করিনি! আমাদের লালসা চরিতার্থ করার জন্য অসংখ্য পাঁঠাকে দৈনিক হত্যা করা হয়, ডানা ঝটপট করে বাঁচতে চাওয়া মুরগিকে বঁটির ফলায় ধড়-মুন্ডু আলাদা করে ফেলা হয়! মাছের প্রাণও আমরা নিত্য হরণ করি। এ ছাড়াও শুয়োর, গরু, হরিণ, খরগোশ, পায়রা, কত কিছুকেই খুন করি, জিভের আরামের জন্য। সেই সব প্রাণীদের বাঁচার অধিকার নেই?

সে নিয়ে কিন্তু আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত বা ব্যথিত হই না, খুব স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে ধরি। অর্থাৎ আমরা চরম ভণ্ড আর সুবিধেবাদী। নিজের প্রয়োজনে যখন হত্যা করব, তার সপক্ষে ‘খাদ্য শৃঙ্খল’ ইত্যাদি তত্ত্ব খাড়া করে নেব। আসলে, যাতে আমরা আজন্ম অভ্যস্ত, তাকে পাপ হিসেবে গণ্য না করাটাও আমাদের মজ্জাগত!

বর্ণালী রায় মিত্র

কলকাতা-৩১

বন দফতর

কেরলের হাতি হত্যার ক্ষেত্রে কি সংশ্লিষ্ট বন দফতরের একটুও দায় নেই? হাতিটির ময়নাতদন্তে জানা গেছে, মারা যাওয়ার অন্তত দু’সপ্তাহ আগে সে জখম হয়। যে হাতি দু’সপ্তাহ আগে লোকালয়ে ঢুকে পড়ল, তার কোনও খবর বন দফতরের কাছে এল না কেন? এ ছাড়াও, দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের চাষিরা বুনো শুয়োরদের উৎপাত থেকে জমির ফসল বাঁচাতে, জমিতে ও জঙ্গলে বোম বা পটকা রাখে— এই তথ্য নিশ্চয়ই তাদের কাছে ছিল। তা হলে এত দিন কেন এ প্রথা বন্ধ করার উদ্যোগ দেখা যায়নি?

প্রণয় ঘোষ

কালনা, পূর্ব বর্ধমান

সলমন খান

কেরলে হাতি হত্যার প্রতিবাদে হলিউড টলিউডের শিল্পীমহল সরব। কয়েক বছর আগে নিছক আমোদের তাগিদে সলমন খান সহ হলিউডের কয়েক জন অভিনেত্রী যখন কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা করেছিলেন, তখন এঁদের কত জন প্রতিবাদ করেছিলেন?

প্রদীপনারায়ণ রায়

শক্তিপুর, মুর্শিদাবাদ

হাতির মন

আনন্দবাজার পত্রিকার ৪-৬ তারিখে প্রকাশিত একটা ছবিতে দেখলাম, কেরলের মারা যাওয়া হাতির দেহ সরানো হচ্ছে দুটো হাতির সাহায্যেই। হাতিরা তীব্র অনুভূতিপ্রবণ হয়, তাদের স্মৃতিশক্তিও খুব প্রখর। এই ঘটনার বিরূপ প্রভাব ওদের উপর পড়তে বাধ্য। তার চেয়ে ক্রেন ব্যবহার করা যেত না?

কথামৃতা দত্ত

কলকাতা-৬

বিস্ফোরক ফাঁদ

বিস্ফোরক দিয়ে বন্য পশু মারার ঘটনা নতুন নয়। আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার কথা জানাই। বাঁকুড়ার দারকেশ্বর নদীর ধারে বনজঙ্গলে ঘেরা একটি গ্রামে আমার বাড়ি। সেখানে সন্ধে হলে শিয়ালের হুক্কাহুয়া ডাক শোনা যেত এবং প্রায়ই বুনো শুয়োর, শেয়াল খাবারের খোঁজে গ্রামে ঢুকে পড়ত। মাঝে মাঝে শেয়াল গ্রামের লোকের দু’একটা হাঁস-মুরগি নিয়ে চলে যেত।

হঠাৎ এক দল যাযাবর মানুষ গ্রামের প্রান্তে অস্থায়ী বাসা বানিয়ে থাকতে শুরু করল। তাদের মেয়েরা ভিক্ষে করে বেড়াত। পরে জানা গেল, ভিক্ষেটা ছলনা। তারা খাবারের সঙ্গে বোমা জঙ্গলে রেখে আসত রাতের বেলায়। শেয়ালেরা সেই খাবার খেলে, মুখ ফেটে চৌচির হয়ে মারা পড়ত। পরের দিন সেই যাযাবরেরা মরা শেয়ালের চামড়া ছাড়িয়ে নিয়ে যেত। সাত দিনেই সব শেয়াল শেষ।

আমার এখন ভেবে খুব আশ্চর্য লাগে, গ্রামের এক জনও এই কাজে আপত্তি করেনি। বরং ভাবত ‘বেশ করেছে। শেয়াল বড্ড হাঁস চুরি করে খেয়ে যায়।’

জয়শ্রী কুন্ডু পাল

কলকাতা-৭৫

ভিতরের রাক্ষস

এক সুপারহিট হিন্দি সিনেমার শেষে নায়ক ভিলেনকে ট্র্যাক্টরের সাইলেন্সার পাইপে মুখ ঢুকিয়ে দিয়ে দম বন্ধ করে মেরে ফেলে। তার মা-কেও শ্বাস নিতে না দিয়ে খুন করেছিল ভিলেন। ভিডিয়ো গেম-এ মানুষ মারার কম্পিটিশন হয়। ভার্চুয়াল শত্রুকে ঝাঁঝরা করে দেওয়ার আনন্দ পাওয়া যায় স্ক্রিনে ‘ফ্যাচাৎ’ করে রক্ত ছিটকে এলে।

হয়তো আমাদের মনের পরিস্থিতিটা বাঙালির পেটের গন্ডগোলের মতো। আগে গ্যাস অম্বল চলে যেত সামান্য জোয়ান কিংবা আমলকিতে। এখন ওযুধের ডোজ় বেড়েই চলেছে। আগে যতটা বীভৎসতা আমাদের বিনোদন জোগাত, এখন তার চেয়ে বেশি দরকার হয়। মোরে আরও আরও আরও দাও প্রাণ। এ ‘প্রাণ’ রবিঠাকুরের প্রাণময়তা নয়, এ হল প্রাণ কেড়ে নেওয়ার ভয়ঙ্কর আনন্দ।

শুধু বিনোদন কেন, বাস্তব দুনিয়ায় হত্যালীলা কি কম মুখরোচক? যখন হেডলাইন হয় ‘‘কাশ্মীরে চার জন জঙ্গি হত, শহিদ তিন সেনা জওয়ান’’, তখন আমরা চার-তিন’এ ম্যাচ জেতার তৃপ্তি নিয়ে পাশবালিশ জড়িয়ে শুতে যাই না? নির্বাচনে লাশ পড়ে, আমরা যে দলের সমর্থক তাদের কর্মীর লাশ পড়লে সমাজমাধ্যম বা রাস্তাঘাটে প্রতিবাদে ফেটে পড়ি, আর যদি ভিন্ন রাজনৈতিক মতের কারও হত্যা হয়, তখন নিহতের স্ত্রীর বুকফাটা ক্রন্দন, তার মায়ের হাহাকার দ্রুত স্ক্রল করে পালিয়ে মনকে প্রবোধ দিই, ‘‘ওদের আমলে কী হয়েছিল?’’ যখন একটা মানুষকে পিটিয়ে মারা হয়, উপড়ে নেওয়া হয় চোখ, তখন আমরা গোষ্ঠী খুঁজি। বলি, ‘‘অত সালে ওরা এত লোককে মেরেছিল, তার বেলা?’’

তাই আনারসে বাজি ভরে হাতিকে খাওয়ানো, কুকুরকে পিটিয়ে মারা, বাঁদর ভাম উদবেড়ালকে বিষ দেওয়া, বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আমাদের ভেতরের রাক্ষসটার, বাইরের পৃথিবীতে হেঁটেচলে বেড়ানো।

অরিন্দম শীল

সাতগেছিয়া, পূর্ব বর্ধমান

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Animals Elephant Kerala
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE