Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: নেতাজির সেই পথ

আক্ষেপের বিষয় হল প্রজাতন্ত্র দিবসটি খুব ধুমধাম করে রাজধানী দিল্লিতে পালিত হয়, তুলনায় নেতাজির জন্মদিন শুধুমাত্র জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমেই শেষ হয়।

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৫:২৩
Share
Save

প্রতি বছর আমরা মাত্র দু’দিনের ব্যবধানে দু’টি ঐতিহাসিক দিবস পালন করি। ২৩ জানুয়ারি, সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন। যিনি দেশবাসীকে বলতে পেরেছিলেন, তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। দেশমাতৃকার স্বাধীনতার জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। অন্য দিকে, ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি স্বাধীন ভারতের সংবিধান কার্যকর হয়েছিল। এই দিনটিকে ভারতে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসাবে পালন করা হয়। ওই দিনটি থেকে ভারত উত্তরাধিকার সূত্রে কোনও রাজনৈতিক পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার নীতিকে বর্জন করে এবং ঘোষণা করে যে, ভারতীয় নাগরিকদের রাজনৈতিক পদে বসতে গেলে সাধারণ জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে।

কিন্তু আক্ষেপের বিষয় হল প্রজাতন্ত্র দিবসটি খুব ধুমধাম করে রাজধানী দিল্লিতে পালিত হয়, তুলনায় নেতাজির জন্মদিন শুধুমাত্র জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমেই শেষ হয়। খুব কম জায়গাতেই তাঁর আদর্শ ও স্বদেশ সম্পর্কে তাঁর চিন্তা-ভাবনাগুলি আলোচিত হয়। কংগ্রেস রাজত্বে সুভাষ ছিলেন উপেক্ষিত। বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর তাঁর জন্মদিনকে ‘পরাক্রম দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে, নেতাজি সম্পর্কিত গোপন তথ্যকে জনগণের সামনে উন্মুক্ত করা হয়েছে, দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে মূর্তি বসানো হয়েছে। নিন্দুকেরা বলেন বিজেপি সুভাষচন্দ্রকে তুলে ধরেছে স্বাধীনতা আন্দোলনে কংগ্রেসের অবদানকে ছোট করার জন্য। অনেকে বলেন সুভাষচন্দ্রকে গুরুত্ব দেওয়ার মধ্যে লুকিয়ে আছে আরও মানুষকে তাদের ধর্মীয় রাজনীতির কাছে টানার কৌশল। যা-ই বলা হোক না কেন, সুভাষচন্দ্রের প্রতি কেন্দ্রের শাসক দলের ভক্তি ও শ্রদ্ধা তখনই খাঁটি হয়ে উঠবে যখন নেতাজি প্রদর্শিত পথে তারা রাজনীতি ও অর্থনীতিকে চালনা করবে। তাঁর জন্মদিনটি যেন শুধুমাত্র পতাকা উত্তোলনের দিন না হয়ে ওঠে।

নারায়ণ দত্ত, পূর্ব বর্ধমান

লক্ষ্যভ্রষ্ট

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, “... সমস্ত দেশের সংস্কৃতি, সৌভ্রাত্র সচ্ছলতা একদা বিকীর্ণ ছিল আমাদের গ্রামে। আজ সেখানে প্রবেশ করলে দেখতে পাবে মরণদশা তার বুকে খরনখর বিদ্ধ করেছে একটা রক্তশোষী শ্বাপদের মতো। অনশন ও দুঃখ দারিদ্র্যের সহচর মজ্জাগত মারী সমস্ত জাতির জীবনী শক্তিকে জীর্ণজর্জর ক’রে দিয়েছে। এর প্রতিকার কোথায় সে কথা ভাবতে হবে আমাদের নিজেকে, অশিক্ষিত কল্পনার দ্বারা নয়, ভাববিহ্বল দৃষ্টির বাষ্পাকুলতা দিয়ে নয়।... আমাদের সমাজে আমাদের স্বভাবে, আমাদের অভ্যাসে, আমাদের বুদ্ধি-বিকারে গভীরভাবে নিহিত হয়ে আছে আমাদের সর্বনাশ।... হতাশ্বাস্ ধৃতরাষ্ট্রের মতো মন বলে ওঠে— তদা নাশংসে বিজয়ার সঞ্জয়।” (‘দেশ’, ২-১১-০৭)

আজ দেশের অগ্রগমনের পরিপ্রেক্ষিতেও বক্তব্যগুলি প্রাসঙ্গিক। মনে পড়ে, স্বাধীন ভারতের সংবিধান রচনাকালে বহু বিতর্কের ফলেই পার্লামেন্টারি শাসনপদ্ধতিকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। স্থির হয় যে সব দিক থেকে বিচার করলে দোষেগুণে ইংরেজদেরই সংসদীয় পদ্ধতির ভারতীয়করণ ভাল। নেতাদের মত ছিল, লোকতান্ত্রিক গণরাজ্য স্থাপিত হোক, যার একটা লক্ষণ সর্বজনীন ভোটাধিকার। দ্বিতীয় লক্ষণ হল নারী ও পুরুষের সমানাধিকার। তৃতীয় লক্ষণ হিসাবে সংখ্যালঘুদের দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত সুযোগসুবিধা। রাষ্ট্রপতির পদও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। চতুর্থ লক্ষণ কল্যাণকামী রাষ্ট্র। নেহরুর ভাষায়, এটা শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক লোকতন্ত্র, যা জীবনের সুখ সুবিধাগুলি অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রতিবদ্ধ। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের ধারণা আরও পরিষ্কার হয় আভাদি কংগ্রেস (১৯৫৫)-এ। সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের সমাজ লক্ষ্য হিসাবে গৃহীত হয়। আমাদের সংবিধান-রচয়িতারা মৌলিক অধিকারের তালিকা গ্রহণ করেছিলেন আমেরিকার সংবিধান থেকে, সংসদীয় গণতন্ত্রের আদল নিয়েছেন ব্রিটেন থেকে, নির্দেশক নীতির ধারণা আয়ারল্যান্ড থেকে। আমাদের গণতন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রীয় ধাঁচের। কিন্তু আমেরিকার মতো অঙ্গরাজ্যগুলিকে সংবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। অথচ রাজ্যগুলির ঐতিহাসিক উদ্ভব ও বৈচিত্রের কথা মনে রেখে বিভিন্ন ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আধুনিক ভারতের রূপকার হিসাবে ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায়-এর একটি পত্রে দেখা যাচ্ছে, তিনি রাজতন্ত্রে আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন এবং রাজনীতিতে প্রজাতন্ত্রের সমর্থক হয়েছেন। তিনি সেই সময়ে ব্রিটিশ সংবিধানের চমৎকার নীতিগুলোর সমর্থক ছিলেন। কিন্তু ক্রমশ তাঁর চিন্তায় পরিবর্তন ঘটে। একান্ত আলোচনায় রামমোহন ব্রিটিশ রাজতন্ত্র নিয়ে পরিহাস করতেন। রামমোহন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রচলিত শাসন ব্যবস্থার পক্ষপাতী হলেও ঔপনিবেশিক প্রথার বন্ধু ছিলেন না। (ঋণস্বীকার: ‘দেশ’, ৭-৩-৯৮)

সহানুভূতিশীল অফিসার ফন ট্রট এবং ডক্টর ডার্ট সুভাষচন্দ্র বসুকে প্রায়ই বলতেন যে, স্বাধীন ভারতের পক্ষে ব্রিটেনের পার্লামেন্টারি ব্যবস্থা উপযুক্ত হবে। কিন্তু শক্তিশালী সমাজতন্ত্রী রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি নেতাজির পক্ষপাত তাঁদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।

বর্তমানে দলীয় রাজনীতির পাঁকে হাবুডুবু খাওয়া গণতন্ত্র জোড় দেওয়া সংবিধানটির অস্তিত্ব রক্ষায় মত্ত। তাই দেশ জুড়ে বিচারাধীন বন্দিমৃত্যু, নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব, শাসকের সমালোচনায় দেশদ্রোহী আইনের ব্যর্থ প্রয়োগ সব কিছুতেই স্বৈরতন্ত্রের ছায়া দেখতে পাচ্ছে দেশের জনগণ। যুগনায়কদের উপহার দেওয়া গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ ভারত বর্তমান শাসকের নিকট রাজনীতির পাকেচক্রে পড়ে কুক্ষিগত কামনা-বাসনা এবং ক্ষমতা বহিঃপ্রকাশের একটি উৎসস্থল হয়ে উঠতে চলেছে। আদর্শবাদী গণতন্ত্রকে ফেরানো আশু প্রয়োজন।

সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

থাক প্রবেশমূল্য

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ও ইচ্ছানুসারে এ রাজ্যে জঙ্গলের প্রবেশমূল্য নেওয়া বন্ধ করেছে রাজ্য বন দফতর। এই প্রবেশমূল্য বাতিল করাটা এক দিক দিয়ে ভাল, প্রচুর পর্যটক আসতে পারবেন। এতে জঙ্গলকে ঘিরে স্থানীয় মানুষদের যে জীবিকা অর্জনের উপায় বা ছোটখাটো ব্যবসাবাণিজ্য চলে, তার উন্নতি তথা প্রসার বা বৃদ্ধি হবে।

তবে অন্য দিকটাও ভাবা জরুরি। বিনামূল্যে বনে বা জঙ্গলে ঢোকা গেলে পর্যটকের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বাড়বে। তাতে রাশ টানা যাবে না। সেখানে কোলাহল হবে, হয়তো খেলার ছলে পশুদের দিকে ঢিল ছোড়া হবে। দল বেঁধে পিকনিক হবে। যেখানে সেখানে খাবার, কাগজ, প্লাস্টিক পড়ে থাকবে। এই ফেলে রাখা আবর্জনার সঙ্গে পরিবেশ দূষণও বাড়বে। ফলে জঙ্গলের সুস্থ ও স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হবেই, বন্যপ্রাণীদের স্বাধীন ভাবে বাঁচা বা চলাফেরা অনেকটাই বিঘ্নিত হবে। যে-হেতু এই রাজ্যের অনেক বনভূমি জাতীয় সম্পদ, তাই সেগুলিকে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।

অন্য দিকে, প্রবেশমূল্য বাবদ যে আয় হয়, তার অনেকটা বন দফতরের প্রয়োজনে কাজে লাগতে পারে। যেমন— বর্ষার মরসুমে লাগানো চারাগাছের রক্ষণাবেক্ষণ, জঙ্গলের রাস্তা সাফাই, পড়ে থাকা গাছ তোলা, বনের ফাঁকা অংশ নিয়মিত পরিষ্কার রাখা ইত্যাদি। প্রবেশমূল্য নেওয়া যদি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তা হলে এই সব খরচের টাকা আসবে কোথা থেকে, সেই প্রশ্নও ওঠে। সরকার সে ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করেছে কি?

পঙ্কজ সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Republic day Netaji

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}