Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Letters to Editor

সম্পাদক সমীপেষু: বামফ্রন্টের তিন দোষ

বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ না থাকলেও তাঁদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ— স্বজনপোষণ, দলতন্ত্র এবং দাম্ভিকতা।

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:৪৮
Share: Save:

‘কোন পথে বিরোধিতা’ (২-১২) প্রবন্ধে অসীম চট্টোপাধ্যায় বিভিন্ন যুক্তি খাড়া করে দেখাতে চেয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ রাজ্যে বাম-কংগ্রেস জোট সবচেয়ে বেশি যুক্তিগ্রাহ্য। তাঁর মতে, বিজেপি সাম্প্রদায়িক এবং ফ্যাসিবাদী দল। তৃণমূলের নির্দিষ্ট মতাদর্শ নেই, দলের দুর্নীতি এবং তোলাবাজিতে মানুষ অতিষ্ঠ। গণতন্ত্রও দলে খুব দুর্বল। আছে শুধু মর্জির শাসন। কংগ্রেসেরও কুকীর্তির শেষ নেই। বামেরা ক্ষমতায় এসেছিল কংগ্রেস বিরোধিতা করেই। তা সত্ত্বেও বর্তমান পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িকতা, ফ্যাসিবাদ-বিরোধী গণতন্ত্রের লক্ষ্যে বাম-কংগ্রেস জোট সবচেয়ে বেশি সমর্থনযোগ্য।

তাঁর বক্তব্য সমর্থন করেও বলতে হয়, বামেদের বিরুদ্ধেও কিন্তু বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ না থাকলেও তাঁদের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ— স্বজনপোষণ, দলতন্ত্র এবং দাম্ভিকতা। যত দিন এগিয়েছে, ততই এই তিনটি গুণ ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে তাঁদের পতনের কারণ হয়েছে। বাম আমলে পঞ্চায়েত, পুরসভা, প্রশাসন— সব কিছু ছিল নিষ্ক্রিয়। কেউ নিজের এক্তিয়ারে থাকা বিষয়ের উপর কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারত না। সব সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হত দলীয় অফিস থেকে। সেগুলিই রূপায়ণ করতে হত। ১৯৭৭ সালে বামেরা এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম প্রতিটি পঞ্চায়েতে কর্ম সহায়ক নিয়োগ করা হয়েছিল। সেখানে পুরোপুরি দলতন্ত্র কাজ করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এ ছাড়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগ ইত্যাদি যেখানে সুযোগ ছিল, সেখানেই দলতন্ত্র কাজ করেছে। নেতাদের ক্ষমতার দাম্ভিকতাও চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছেছিল। তাই স্বীকার করা ভাল যে, কোনও দলই পুরোপুরি অভিযোগমুক্ত নয়। তবুও নিজেদের বিশ্বাস এবং নীতির সাপেক্ষে কোন জোট বেশি গ্রহণযোগ্য, সেই মতামত থাকতেই পারে।

প্রদ্যোৎ পালুই বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া

আর বামেরা?

‘কোন পথে বিরোধিতা’ নিবন্ধে অসীম চট্টোপাধ্যায় বাম-কংগ্রেস জোটের পক্ষে সওয়ালে বাংলার রাজনৈতিক দলগুলির চরিত্রাঙ্কন করেছেন একে একে। যেমন, বিজেপির ঝুলিতে ‘সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদ’। তৃণমূলের অবয়বে ‘আইনের শাসনের বদলে মর্জির শাসন’, ‘দুর্নীতি ও তোলাবাজি’। তাঁর বিচারে অতীতে কংগ্রেসের কুকীর্তির শেষ নেই, কিন্তু দেশের সঙ্কটকালে ‘নির্মম অতীতকেও ধরে রাখা যায় না’। এগুলি সবই বিশ্বাসযোগ্য।

শুধু বামফ্রন্টের কোনও মূল্যায়ন পেলাম না। ৩৪ বছরের রাজত্ব অবসানের কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন তৃণমূলের তীব্র সিপিএম-বিরোধিতা। এহেন ব্যাখ্যার দু’টি অপূর্ণতা। এক, বৃহত্তর মানুষের বিচারবুদ্ধিকে আমল না দিয়ে শুধুই একটি দলের বিরোধিতাকে কারণ হিসেবে দেখা সম্ভবত বিজ্ঞানসম্মত নয়। দুই, ৩৪ বছরে বাম দলের যাত্রাপথ নিয়ে ভালমন্দ যে কোনও আলোচনা এড়িয়ে যাওয়া। যার ফলে তাঁর মূল সুরটি গুরুত্বপূর্ণ হলেও একাদেশদর্শী এবং দুর্বল হয়ে পড়েছে, যা ফ্যাসিবাদ বিস্তারের সহায়তাই করবে। তিনি নকশালপন্থীদেরও বিজেপি-তৃণমূলের বিরুদ্ধ-জোটে চেয়েছেন। কিন্তু শতধাবিভক্ত সেই দলে নানা মুনির নানা মত। সিপিআইএমএল এবং সিপিআইএমএল-লিবারেশনের দিকে দেখুন— জোটে তৃণমূলকে রাখা নিয়ে দু’দলের দুই মত। এ সব প্রসঙ্গও এল না তাঁর সন্দর্ভে।

সব্যসাচী রায়, কলকাতা-১৬৩

যে যেখানে

অসীম চট্টোপাধ্যায়ের উত্তর সম্পাদকীয়টি প্রাসঙ্গিক। বিজেপি একটি ফ্যাসিবাদী ও সাম্প্রদায়িক দল— এটা যে সমস্ত রাজনৈতিক দল মনে করে, তারা একসঙ্গে জোট বাঁধতেই পারে। এ রাজ্যের নির্বাচনে মুখ্যত চারটি দল অংশগ্রহণ করবে— বামফ্রন্ট, কংগ্রেস, তৃণমূল ও বিজেপি। বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস চিরকালই বিজেপি-বিরোধী। যদিও বামেরা অটলবিহারী বাজপেয়ীদের এক বার হাত ধরেছিল। তবে নির্বাচনী আঁতাঁতে যায়নি। বিজেপি-বিরোধী হিসেবে বাকি রইল তৃণমূল। এখানেই লুকিয়ে আছে আসল রহস্য।

তর্কের খাতিরে ধরা যাক, তৃণমূলও তীব্র বিজেপি-বিরোধী। তৃণমূল এখন সরকারে। তাদের মাথায় এটা থাকবেই যদি তৃণমূল-বিরোধী ভোট বিজেপি ও বাম-কংগ্রেসের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়, তবে ক্ষমতায় ফিরে আসা সহজ। সেখানে তাকে কারও কাছে যেতে হবে না, ক্ষমতার ভাগও দিতে হবে না। সেখানে তৃণমূল বিজেপি-বিরোধী কি না, সেটা অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়। তাই তাদের দিক থেকে তীব্র বিজেপি-বিরোধী জোট গড়ার ইচ্ছে থাকার সম্ভাবনা সে ভাবে নেই।

অন্য দিকে, দেশের কথা চিন্তা করলে এই রাজ্যে একটা বিজেপি-বিরোধী জোটের মহড়া হতেই পারে, যে ভাবে বিহারে হয়েছে। কিন্তু সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী মেনে বাম-কংগ্রেসকে নির্বাচনী জোটে যেতে হবে। এটা মানা বাকিদের পক্ষে সম্ভব নয়, যার অন্যতম কারণ তৃণমূলের অতীত। অসীমবাবু উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, তৃণমূল জন্মলগ্ন থেকে বিজেপির সঙ্গে নির্বাচনী আঁতাঁত-সহ কেন্দ্রীয় সরকারে অংশগ্রহণ করেছে। শুধু তা-ই নয়, এক সময় আরএসএস-এর ভূয়সী প্রশংসাও করেছে। এ ছাড়া বিজেপি যে হেতু নির্বাচন কমিশনের দ্বারা একটি স্বীকৃত দল, তাই তারা সাম্প্রদায়িক দল হতে পারে না বলে যুক্তি দেখিয়েছে। ফলে তৃণমূলকে যেমন বাম-কংগ্রেস বিজেপি-বিরোধী হিসেবে মনে করে না, তেমনই তৃণমূলও বিজেপি বিরোধিতার জন্য বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে তেমন লাভ দেখছে না। তবে বিজেপি এ রাজ্যে ক্ষমতায় এলে এই তিন দল বিজেপিকে ‘ফ্যাসিবাদী’ ও ‘সাম্প্রদায়িক’ বলে একসঙ্গে ভোটে লড়তে পারে।

সুদীপ মাইতি, পূর্ব মেদিনীপুর

জোটই সমাধান?

নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, তত দেখছি পত্র-পত্রিকায় জোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একের পর এক লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। বিজেপির বিরুদ্ধে বাম, কংগ্রেস ও নানা আঞ্চলিক দলকে একজোট হয়ে নির্বাচন লড়ার জন্য আহ্বান করা হচ্ছে। এ কথা ঠিক, ধনকুবেরদের স্বার্থে বিজেপি সরকার এক দিকে গরিব ও শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম-অর্জিত বিভিন্ন অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, অন্য দিকে ধর্মীয় উন্মাদনায় দেশের মানুষকে বিভক্ত করে চলেছে। এই প্রবল শক্তিকে পরাস্ত করার লক্ষ্যে জোটের আহ্বান আসা‌ই উচিত। গত এক বছরে দেশ প্রত্যক্ষ করেছে নানা আন্দোলন। সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। আজ নতুন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন বৃহৎ আকার নিয়েছে।

প্রত্যেকটি আন্দোলনই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে যে, প্রবল রাষ্ট্রশক্তিও সঙ্ঘবদ্ধ আন্দোলনের কাছে মাথা নত করে। কিন্তু কংগ্রেস স্বাধীন ভারতে কোন আন্দোলনটা করেছে? কৃষক আন্দোলনেও টুইটার‌ই তাদের ভরসা। বাম দলগুলিরও দীর্ঘ আন্দোলনে অনীহা। মামুলি কিছু বিবৃতি ও লোক-দেখানো দু’একটা কর্মসূচি ছাড়া এদের কাছে আমরা কী পেয়েছি? অথচ এদের এখনও দেশ জুড়ে যা সংগঠন, ইচ্ছে করলেই তারা এই আন্দোলনকে দীর্ঘস্থায়ী রূপ দিতে পারত, গড়ে তুলতে পারত অসংখ্য জনগণের কমিটি, যা হতে পারত ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করার সবচেয়ে সবল হাতিয়ার। কংগ্রেস কি ফ্যাসিবাদ কায়েমের চেষ্টা করেনি? শুধু সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে স্লোগান দিলেই ফ্যাসিবাদ রোখা যাবে না।

শুধুমাত্র কিছু দলের নির্বাচনী জোট কি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করতে পারে? শাসকের পেশির জোরের বিরুদ্ধে কি সেই জোট মানুষকে রাস্তায় নামিয়ে প্রতিরোধ করাতে পারে? যদি না পারে, তবে এই জোটে মানুষের কী লাভ? তাদের সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলনের জোটই উপযুক্ত বিকল্প।

শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-১০৬

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Letters to Editor Left-front
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE