সুরাহা নেই
বাজেটের দিন অনেক টিভি চ্যানেলে দেখাল, ৭৫ বছর এবং তার ঊর্ধ্বে মানুষদের কোনও আয়কর রিটার্ন জমা করতে হবে না। আমরা আনন্দিত হলাম। প্রকৃতপক্ষে, প্রবীণ নাগরিকদের সরকার কোনও সুবিধাই দেয়নি। এখন সিনিয়র সিটিজ়েনদের ৩ লাখ টাকা আয়কর মুক্ত, সেটা একই আছে। বরং আগে জানতাম, ৮০ বছরের ঊর্ধ্বে ছাড় ছিল ৫ লাখ টাকা। এখন জানি না সেটা আছে কি না। সেই একই ভাবে প্রবীণ নাগরিকদের রিটার্ন দিতে হবে, ফর্ম ১৫এইচ জমা দিতে হবে। কোনও সুরাহা নেই। সব লোক-দেখানো। বাজেটের অন্যান্য বরাদ্দ এবং বাংলার সড়ক নির্মাণ, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্য প্রকল্পের বরাদ্দ, সব ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছে। সরকার করোনাকালে যে সব প্যাকেজ করেছিল, সেগুলি সব বাজেটের মধ্যে ঢুকিয়ে, ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বাজেট তৈরি করেছে। করোনার সময় প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল সরকার, কিন্তু বাস্তবে মানুষ তার কোনও ফল পায়নি। সেই রকম এই বাজেটও আপাত দৃষ্টিতে অনেক আশ্বাস দিলেও, বাস্তবে অত্যন্ত হতাশাজনক।
তপন কুমার রায় , কলকাতা-৭৫
কলঙ্ক
‘আবর্জনা’ (৩-২) সম্পাদকীয় নিবন্ধের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ সহমত। ইনদওরে ফুটপাতবাসী প্রবীণদের আবর্জনা ফেলার গাড়িতে তুলে শহরের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা চলছিল। ইনদওর গত চার বছর পরিচ্ছন্ন শহরের যে শিরোপা লাভ করেছে, তা যেন কোনও মতে হাতছাড়া না হয়। নাগরিকদের প্রতিবাদের জন্যে তা সম্ভব হয়নি। শুধু ইনদওর কেন, দুয়ারের বাইরে প্রবীণদের আবর্জনার মতো ছুড়ে ফেলে অনেক সন্তানই তাদের সংসার ‘পরিচ্ছন্ন’ রাখতে চায়। এরাই সমাজ তথা সংসারের কলঙ্ক। এমন নীচ মানসিকতার এই সব সন্তান মনেও রাখে না, যে তারাও বয়স্কদের দলে নাম লেখাতে এগিয়ে চলেছে। প্রবীণদের বর্জন না করে, তাঁদের একটু সম্মান দেওয়া হোক।
সত্যকিঙ্কর প্রতিহার, যমুনা দেশড়া, বাঁকুড়া
উপেক্ষা কেন?
‘আবর্জনা’ পড়ে লজ্জা বোধ হয়। বয়স্ক, গৃহহীন মানুষগুলি এখন জঞ্জালের শামিল। খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এঁদের হয়তো ছেলেমেয়ে আত্মীয়-পরিজন, সবাই আছে। কিন্তু দেখে না। যে মানুষগুলো তাঁদের জীবন-যৌবন অতিবাহিত করে আমাদের বড় করেন, তাঁদের এই পরিণতি! কাউকে পরিবার গঙ্গাসাগরের মেলায় ফেলে যায়, কাউকে রেখে যায় বৃদ্ধাশ্রমে, কাউকে নির্জন স্টেশনে। এ কোন সমাজের পথে চলেছি আমরা? চার দিকে সহমর্মিতার অভাব। প্রবীণ মানেই উপেক্ষার যোগ্য, এই ভাবনাটা সবার আগে আমাদের মন থেকে বার করা দরকার। এবং তার জন্যে দরকার সরকারি পদক্ষেপ।
প্রবীণদের কোনও অসুবিধে হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য নিয়মিত লোক পাঠানো, দায়িত্ববহনকারীকে আয়কর ছাড় দেওয়া, ইত্যাদি উপায়ে সে কাজে উৎসাহ জোগানো যেতে পারে। প্রবীণ নাগরিকদের প্রতি বেশি যত্নবান হওয়া সরকারের কর্তব্য। ফুটপাতবাসীদের উৎখাত করা গর্হিত অপরাধ। তার থেকেও বেশি অপরাধ হল ফুটপাতবাসী প্রবীণদের আবর্জনা হিসেবে গণ্য করে উৎখাত করা।
সুমন চক্রবর্তী, কলকাতা-৬৫
বিচ্ছিন্ন নয়
‘রাস্তায় ফেলা হল গৃহহীন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের!’ (৩১-১) শীর্ষক খবরটি পড়ে শিউরে উঠেছি। সম্বলহীন অসহায়দের প্রতি এহেন আচরণ মানবাধিকার লঙ্ঘনের এক ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত। পরিচ্ছন্নতার দোহাই দিয়ে এই কুকর্মের নেপথ্যে রয়েছে চূড়ান্ত হৃদয়হীনতা ও অবহেলা। আশ্চর্য সমাপতন দেখি একই দিনের আরও একটি সংবাদে, ‘কোভিডমুক্তির পরেও নিতে আসেনি কেউ, ঠাঁই হাসপাতালে’। জীবনের প্রান্তে উপনীত এই মানুষেরা নিজ পরিবারের আশ্রয় থেকেই বঞ্চিত। তবে এই সকল ঘটনা আজ আর বিচ্ছিন্ন নয়। দৈনন্দিন খবরের ভিড়ে চোখে পড়ে পুত্র-বৌমা দ্বারা বিতাড়িত অসহায় পিতার আইনের আশ্রয় গ্রহণ, পেনশনের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, নেশার টাকা অনাদায়ে বাবাকে পিটিয়ে মারা থেকে ব্যাঙ্ক, ডাকঘরে বয়স্কদের হেনস্থার বিবরণ। যাঁরা কিছুটা সৌভাগ্যবান, তাঁরা ছোট ফ্ল্যাটের সুখী পরিসরে এক কোণে ‘আশ্রিত’ হয়ে দিনাতিপাত করেন।
সুপ্রতিম প্রামাণিক, আমোদপুর, বীরভূম
দান
‘চার বছরের সঞ্চয় দান করলেন বৃদ্ধ ভিক্ষাজীবী’ (কলকাতা, ৩০-১) দেবস্মিতা ভট্টাচার্যের ছবি-সহ খবরটি পড়ে খুবই ভাল লাগল। ৭৫ বছরের শেখ নাসের কলকাতার চাঁদনি চক এলাকার ভিখারি। দুর্ঘটনায় আট বছর আগে ডান পা জখম হয়েছে। সেই অবস্থায় চার বছর ভিক্ষা করে জমানো ১৪ হাজার টাকা বেওয়ারিশ লাশের শেষকৃত্যের জন্য দান করলেন একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। তিনি যথার্থই ‘সহমর্মী’।
গৌতম মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১০১
অমানবিক
কেরোসিন তেলের উপর থেকে ভর্তুকি তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত অমানবিক। পেট্রল-ডিজ়েলের মতো কেরোসিনের দামও এখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের ওঠা-নামার উপরে নির্ভর করবে। বিশেষ করে গরিব মানুষের উপর এটা চরম আঘাত।
রতন চক্রবর্তী, উত্তর হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা