Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Year 2023

সম্পাদক সমীপেষু: উদ্বেগের বছর

বিশ্ব উষ্ণায়নের সম্ভাব্য ফল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার, যুদ্ধে অসহায় মানুষের ঢল, ধর্মীয় বিভাজনের কদাকার রূপ সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে সঙ্কটময় করে তুলেছে।

—প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪ ০৪:৫৩
Share: Save:

সেমন্তী ঘোষের প্রবন্ধ ‘যদি পণ করে থাকি...’ (৩১-১২)-তে যখন চোখ বোলাচ্ছি, তখন বর্ষবরণের সময় গণনা শুরু হয়ে গেছে। ২০২৩ সালটি অন্য বছরগুলির মতো অতীতের হিসাবে চলে যাবে। কিন্তু সব অতীত, অতীত হয় না। বিশেষ করে তেইশ সালে যা সব হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইলাম তা ভুলি কী করে? বছরের শুরু রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ দিয়ে এবং আস্তে আস্তে তা একটা পুরোদস্তুর যুদ্ধের চেহারা নিল। অন্যতম শক্তিধর একটি রাষ্ট্র তার সামরিক সম্ভার নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল ইউক্রেনের উপর। পরের দিকে শুরু হয়ে গেল ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধ, যা নাকি পর্যায়ক্রমে একটা গণহত্যা বা জেনোসাইড-এর রূপ পরিগ্রহ করল। হাসপাতাল থেকে শুরু করে নবজাতক শিশুরাও শেষ হয়ে গেল মারণাস্ত্রের আঘাতে। এ বারের ইজ়রায়েল-হামাস যুদ্ধের বীভৎসতা ২০০৮ সালের ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন যুদ্ধকে দশ যোজন দূরে পিছিয়ে দিল। ২০২২-এর শেষের দিকে দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা একটা রিপোর্টে এ সবের ইঙ্গিত দিয়েছিল, এবং এও বলেছিল— ইউক্রেন যুদ্ধ সহজে মিটবে না এবং মেটার কোনও ‘কূটনীতিগ্রাহ্য’ কারণ নেই। অন্য দিকে, গণতন্ত্রের নিরিখে বিশ্বের অনেকটা এগিয়ে থাকা আমেরিকায় চলল এলোপাথাড়ি বন্দুকবাজি আর গর্ভপাত বিরোধিতার উদ্দামতা। আমাদের দেশে মণিপুরে যে ভয়াবহ জাতিদাঙ্গা হল ও আগুনে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিল এক গোষ্ঠী আর এক গোষ্ঠীর উপর চড়াও হয়ে, সেটা তো নিছকই ছিল রাজ্য ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনের নিরপেক্ষতার অভাবে। প্রশাসন মূলত মেইতেই প্রশাসনে পরিণত হল।

বিশ্ব উষ্ণায়নের সম্ভাব্য ফল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহার, যুদ্ধে অসহায় মানুষের ঢল, ধর্মীয় বিভাজনের কদাকার রূপ সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে সঙ্কটময় করে তুলেছে। সুন্দর পৃথিবী, যেটা সভ্য মানুষের নিশ্চিন্ত আবাস ছিল, কোন অশনি সঙ্কেতে হারিয়ে যাচ্ছে সেই রূপ, ভাবার সময় এসেছে এখন।

দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা

পেনশনের অঙ্ক

‘ইপিএফে পেনশন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কি ভোটের আগেই’ (২-১) শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। ইপিএফ-এর আওতায় থাকা বিভিন্ন কলকারখানা, সরকারি দফতরে কর্মরত অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী ও বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত শ্রমিক, কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের একটাই প্রশ্ন— বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে যেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য, পণ্য ও জীবনদায়ী ওষুধ-সহ প্রায় সব ধরনের ওষুধের দাম ঊর্ধ্বমুখী, বেকারত্বের হার ঊর্ধ্বমুখী, অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প ও স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে সুদের হার বর্তমান বাজারদরের পরিপ্রেক্ষিতে বাড়ছে না, সেখানে ইপিএফের আওতায় থাকা বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমিক, বেসরকারি সংস্থার কর্মচারী, সরকারি দফতরে কর্মরত অস্থায়ী ঠিকাকর্মী প্রমুখের ন্যূনতম পেনশন মাত্র ১০০০ টাকা! এটা বর্তমান বাজারদরের পরিপ্রেক্ষিতে কী ভাবে সম্ভব?

সরকারের বক্তব্য, ইপিএফের আওতায় থাকা ৩৪ লক্ষ পেনশনভোগীদের ১০০০ টাকা পেনশন দিতেই নাকি ৯০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়ে যাচ্ছে। অথচ, এই অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের বেতন থেকেই ইপিএফের পেনশন খাতে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা কেটে জমা হত, যখন এই সমস্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্মী কর্মরত ছিলেন। এর পরেও ইপিএফের সদস্যদের জমানো টাকার একটা অংশ শেয়ার বাজারে খাটিয়ে তার থেকে লভ্যাংশ লাভ করেছে ইপিএফ দফতর, যদিও সেই লভ্যাংশের কোনও অংশ আজ অবধি ইপিএফের সদস্যদের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ার কোনও খবর আছে বলে মনে হয় না। এই দুর্মূল্যের বাজারে বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ কলকারখানার শ্রমিক এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার শ্রমিক কর্মচারীদের ন্যূনতম পেনশন ১০০০ টাকা হলে তাঁদের পরিবারগুলি কি ভয়ঙ্কর আর্থিক দুরবস্থার সম্মুখীন হয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই সরকারের কাছে আবেদন, ন্যূনতম পেনশন ৮০০০-১০,০০০ টাকা করা হোক।

ইন্দ্রনীল দে, বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা

আঁধার পেরিয়ে

সারা বছর ব্যর্থতা এবং দুর্নীতির খতিয়ানের ঘোর অন্ধকারে বাঙালি বিজ্ঞানীদের চন্দ্রাভিযান সাফল্যের যে কৃতিত্ব দেবাশিস ভট্টাচার্য তাঁর ‘আঁধার ফুঁড়ে জ্যোৎস্না ছড়ায়, ভরসা সেটাই’ (৩১-১২) প্রতিবেদনে তুলে ধরেছেন, তা যেন প্রতিপদের একচিলতে চাঁদের আলো।

বিগত বছরে যে রাজ্যে কর্মসংস্থানের অভাবে লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত বেকার ছেলে রুজিরোজগারের জন্য ঘর ছেড়ে ভিন রাজ্যে কর্মের তাগিদে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে পাড়ি দিচ্ছেন, যেখানে শিক্ষার চরম দুরবস্থা, দলছুট ছাত্র আর শিক্ষকহীনতার জন্য শিক্ষাক্ষেত্র মুখ থুবড়ে পড়েছে, যে রাজ্যে মন্ত্রী, বিধায়ক, শাসক দলের উঁচু তলার নেতারা আজ দুর্নীতির দায়ে জেলে বিচারাধীন, সেই রাজ্যে সারা বছরে সাফল্যের ‘শূন্য’ ছাড়া আর কী আশা করা যায়। রাজ্য আজ পুরসভার চাকরির দুর্নীতি, রেশনে দুর্নীতি, পঞ্চায়েতের দুর্নীতি, কয়লা, গরু, বালি পাচারের দুর্নীতির পঙ্কিলে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। শিল্প আজ দূর অস্ত্, নিরাপত্তা বিপন্ন, রাজনৈতিক দলগুলির রাজনৈতিক প্রতিহিংসার রক্তক্ষয়ী লড়াই আজ তুঙ্গে। এই তো এই রাজ্যের চাওয়া-পাওয়ার বর্ষশেষের খতিয়ান! এই হতাশা ও ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে, আগামী দিনে এ রাজ্যে ভোর হয়ে উঠবে রাতের চেয়েও অন্ধকার!

তপনকুমার বিদ, বেগুনকোদর, পুরুলিয়া

লোকসান

কর্মসূত্রে সরকারি বাসে অফিসে যাতায়াতের সময় লক্ষ করি, বেশ কিছু অসাধু বাসযাত্রী পূর্ণ ভাড়া ১৫ টাকার পরিবর্তে বিনা টিকিটে ১০ টাকা কন্ডাক্টর বা ড্রাইভারকে দিয়ে নেমে যান। এই ছবি প্রায় সমস্ত সরকারি শর্ট ও লং রুটেই। লং রুটে বিনা টিকিটে ৬০ টাকার বদলে ৫০ টাকা কিংবা ১৫০ টাকার বদলে ১০০ টাকা দিয়ে যাতায়াত করা নিয়মে পরিণত হয়েছে। খুব সহজ একটা পরিসংখ্যান দিলাম। প্রতি দিন লোকসানের পরিমাণ=অসাধু বাসযাত্রীর সংখ্যা X বাসরুটের সংখ্যা X প্রতিটি বাসের ট্রিপ সংখ্যা। ঠিক তথ্য দিলে লোকসানের পরিমাণটা যে কয়েক লক্ষ বা কোটিতে পৌঁছবে, তার জন্য কোনও দক্ষ পরিসংখ্যানবিদের প্রয়োজন হবে না। সচেতন নাগরিকগণ এই একটা সংস্থার একটি বিভাগের ছবি থেকে প্রতি দিন সরকারি কোষাগারের মোট প্রত্যক্ষ লোকসানের পরিমাণ সহজেই অনুমান করতে পারবেন। টিকিট পরীক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা করলে এই অর্থ সরকারি কোষাগারকে কিছুটা উজ্জীবিত করতে পারবে।

দেবদুলাল মহাপাত্র, কলকাতা-৬০

স্কুলের দশা

এখন গ্ৰামেও বনিয়াদি প্রাথমিক শিক্ষার ধারণাটা কেমন বদলে গেছে। আমার ছোটবেলার শিক্ষা যে স্কুলে, সেই সরকারি স্কুল ছিল সেই সময়ের সেরা স্কুল। এখন সেই স্কুলের সামনে থেকেই বেসরকারি স্কুলের গাড়িতে ওঠে শিশুরা। সরকারি স্কুল সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচার, শিক্ষকদের অবহেলা ও বনিয়াদি শিক্ষা বিষয়ে অজ্ঞতাও এ জন্য দায়ী। ভাবতে হবে খামতিটা কোথায়। কিছু দিন আগেও একটা কি দুটো বেসরকারি স্কুলের গাড়ি ঢুকত গ্ৰামে। এখন কেন ৬-৮টি বেসরকারি স্কুলের গাড়ি আসে? সমাজের কাছে প্রশ্ন রাখতে হবে, সব থেকেও কেন অভিভাবকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এত পুরনো একটি স্কুল থেকে। স্বপ্ন দেখি, ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে আবার ভরে উঠবে আমার ছোটবেলার স্কুল।

ইন্দ্র মুখোপাধ্যায়, বাগনান, হাওড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Israel Palestine Conflict Russia Ukraine War
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE