Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
TMC

সম্পাদক সমীপেষু: জনসেবার টিকিট

কিন্তু, এঁদের মধ্যে কোনও জনপ্রতিনিধি মানুষের চাওয়া-পাওয়া, অধিকারের জন্য এক ফোঁটা অশ্রুজলও কি কখনও ফেলেছেন?

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২১ ০৪:৩৫
Share: Save:

৫ মার্চ দুপুর গড়াতেই রাজ্য জুড়ে কোথাও দেখা গেল একের পর এক প্রতিবাদ মিছিল, স্লোগান, রাস্তা অবরোধ, আবার কোথাও চলল টায়ার জ্বালিয়ে অবস্থান বিক্ষোভ। না, মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে, কিংবা কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ নয়। এ হল আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী না হতে পারার ক্ষোভ! অবশেষে ঝোলা থেকে বিড়াল যেন বেরিয়েই পড়ল। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা মুখে মানুষের জন্য কাজ করা, বা মানুষের সেবা করার কথা বলে থাকেন। কিন্তু, এই দৃশ্যই প্রমাণ করে যে, অধিকাংশ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছে ‘মানবসেবা’-র আড়ালে রাজনীতির লাভ-ক্ষতিই প্রাধান্য পায়। মানুষের সেবা করাই যদি মূল উদ্দেশ্য হয়, সেখানে ভোটের টিকিট না পেলে কী এসে যায়? কেউ কেউ তো আবার প্রার্থী হতে না পেরে মিডিয়ার সামনে কেঁদে ভাসিয়েছেন।

কিন্তু, এঁদের মধ্যে কোনও জনপ্রতিনিধি মানুষের চাওয়া-পাওয়া, অধিকারের জন্য এক ফোঁটা অশ্রুজলও কি কখনও ফেলেছেন? মানুষের সেবা করতে গেলে যে মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদ হতে লাগে না, বা কোন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মেরও প্রয়োজন হয় না, তার প্রমাণ গত বছর লকডাউনেই আমরা পেয়েছি। একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিঃস্বার্থ ভাবে হতদরিেদ্রর পাশে দাঁড়িয়েছে। বলিউড অভিনেতা সোনু সুদের কথাই ধরা যাক। তিনি কোনও রাজনৈতিক পদপ্রার্থী না হয়েও শুধুমাত্র একক প্রচেষ্টায় জনসেবামূলক কাজের
দৃষ্টান্ত রেখেছেন। ।

সুদীপ সোম,হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

শিকড়হীন

একে একে সামনে আসছে দলগুলির প্রার্থী-তালিকা। প্রার্থীরা কোমর বেঁধে প্রচারে নেমেছেন। বিগত নির্বাচনগুলির মতো একই সঙ্কটের মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ। প্রার্থীদের মধ্যে তুলনামূলক ভাবে কম খারাপ কে? কারই বা দুর্নীতি একটু কম? বর্তমানে আমাদের কাছে প্রার্থী বাছাইয়ের মানদণ্ড এগুলিই। প্রত্যহ রুপোলি পর্দায় রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্রগুলিও রূপায়িত হচ্ছে এ ভাবেই। হাস্যকর এই যে, ব্যাপারটি এতটাই সত্য, তা স্বয়ং নেতা বা তাঁর অনুগামীদেরও গায়ে লাগছে না।

কোনও দল আবার হাঁটে তারকাখচিত প্রার্থী-তালিকা প্রকাশের দিকে। এর কারণ কি দুর্নীতিগ্রস্তদের আড়াল করা, না কি জাঁকজমক দেখিয়ে জনগণকে ভুলিয়ে কাজ হাসিল করা, জানা নেই। এমন প্রার্থীরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে ব্যর্থই হবেন, এমন নয়। কিন্তু গভীর শিকড় না থাকলে সুউচ্চ শিখর এক অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

আদিত্য চক্রবর্তী, মহাকাল নগর, আলিপুরদুয়ার

বিষাক্ত

“নকশাল থেকে পদ্মে, বিতর্কে ‘জাত গোখরো’” (৮-৩) শীর্ষক খবরে জানলাম, মিঠুন চক্রবর্তী বিজেপিতে যোগদান করেই ব্রিগেড থেকে বার্তা দিয়েছেন, “আমি জলঢোঁড়াও নই, বেলেবোড়াও নই। আমি জাত গোখরো, এক ছোবলেই ছবি। এ বার কিন্তু এটাই হবে।” এটা কোনও ছবির সংলাপ নয়, অপর দিকে ব্রিগেড কোনও নাট্যমঞ্চও নয়। তা হলে তিনি এই কথা বললেন কেন? একটি মিডিয়া তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করলে, তিনি জানান, “যাঁদের উদ্দেশে বলেছি, তাঁরা ঠিক বুঝতে পেরেছেন।” তাঁর এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য, বিরোধীদের ভয় দেখানো।

তাঁর এই সংলাপ ভয়াবহ। নির্বাচন কমিশনের উচিত, তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা করা। তা না হলে, এর পরে কেউ যদি বলে, আমাকে বা আমার দলকে ভোট দিতে হবে, নয়তো খুন করে ফেলব, তাকে শাস্তি দেওয়া যাবে কি?

মলয় মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১১০

কোথায় ছিলেন?

2 ভোটের দিন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে টলিউড তারকাদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে নাম লেখানোর হিড়িক পড়ে গিয়েছে। উদ্দেশ্য, জনসেবা। ভাবখানা এমন, যেন রাজনীতি ছাড়া জনসেবার আর রাস্তা নেই। এই তারকাদের কাছে একটাই প্রশ্ন, লকডাউনে কোথায় ছিলেন? কত মানুষ কাজ হারিয়ে অনাহারে, অর্ধাহারে কাটালেন, কত মানুষ মারা গেলেন। তখন তো আপনাদের এমন জনসেবা করার বাসনা জাগেনি?

প্রফুল্ল কুমার সরকার, কলকাতা-৭৮

গাছ পাচার

কয়লা, বালি আর গরু কেলেঙ্কারি নিয়ে রাজ্য রাজনীতি সরব। কিন্তু রাজ্য জুড়ে যে ভাবে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে, তা নিয়ে সবাই নীরব। মেহগনি, সেগুন, আকাশমণি— এই সব গাছের যা দাম, তাতে কয়লা, বালি বা গরু কেলেঙ্কারি কিছুই না। মন্দারমণি, তাজপুরে গেলে শোনা যায়, কী ভাবে ওখানকার হোটেল ও রিসর্ট মালিকেরা দিনের পর দিন প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস করে বেআইনি ইমারত গড়েছে কাদের মদতে, এবং এর পিছনে কত দুর্নীতি রয়েছে।

পার্থময় চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪

আনকোরা

যৌবনে দেখেছি, সাংসদ-বিধায়ক তো বটেই, কাউন্সিলর বা পঞ্চায়েত সদস্য পদেও রাজনৈতিক দলগুলি সেই সব প্রার্থীকে মনোনয়ন দিত, যাঁদের মানুষের সঙ্গে দীর্ঘ দিনের জনসংযোগ ও রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা আছে। এ বার তৃণমূলের প্রকাশিত প্রার্থী-তালিকায় দেখছি, রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন, জনসংযোগহীন, বিলাসবহুল জীবনে অভ্যস্ত অনেক পুরুষ ও মহিলাকে প্রার্থী করা হয়েছে। তালিকাটি দেখলে মনে হয়, রাজনীতি করতে গেলে কোনও রাজনৈতিক শিক্ষা, অনুশীলনের প্রয়োজন পড়ে না। দলের প্রতি শর্তহীন আনুগত্য থাকলেই চলবে, ভোটে জেতানোর কাজটা দলের।

শাসক দলের প্রভাবে এই সব প্রার্থী নির্বাচনে হয়তো বিজয়ী হবেন, কিন্তু রাতারাতি মানবসেবী হয়ে উঠবেন কি? জনকল্যাণমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করবেন, এমনটা কি আশা করা যায়? সমস্যাটা এখানেই। রাজনীতি, তথা জনকল্যাণমূলক কাজে সম্পূর্ণ আনকোরা ছেলেমেয়েদের হঠাৎ করে নির্বাচনে প্রার্থী করাটা কতটা মঙ্গলদায়ক? আমরা, যারা ৭০ পেরিয়েছি, আগের মতো দৌড়ঝাঁপ করতে পারি না, প্রয়োজনে এই আনকোরাদের থেকে কতটা সাহায্য পাব? এ ছাড়া অনেকেই আবার স্থানীয় নয়, তাই নির্বাচনের পর ক’জনের টিকির দেখা মিলবে, বলা যায় না। পাখি ফিরে যাবে আপন পাঁচতারা নীড়ে, এই আশঙ্কা থেকেই যায়।

কুমার শেখর সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি

সভার ঝুঁকি

আজ পশ্চিমবঙ্গে সমস্ত ভোটপ্রার্থী নেতা দু’টি কথা প্রায়ই বলেন। ‘জনগণের সেবা করতে চাই’, ‘আমরা রাজ্যের উন্নয়ন করব’। অথচ, এখন এই অতিমারির সময় সমস্ত দলের নেতারা যে জনসভা করেন, সেখানে নিজেরা মুখে মাস্ক পরে মঞ্চে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বসেন। সাধারণ মানুষকে বাসে-লরিতে গাদাগাদি করে সভায় নিয়ে আসা হয়, এবং স্বল্প জায়গায় কত বেশি লোক ভরানো যায়, তার প্রতিযোগিতা চলে। জনসেবার বদলে বিপদে ফেলছে মানুষকে। কোনও নেতা বা দলকে এটা বলতে শুনলাম না, এই অতিমারির সময় জনসভা না করে সমাজমাধ্যমে প্রচার করা হবে।

জহর চক্রবর্তী, কলকাতা-৯১

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Agitation TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE