ফিফা র্যাঙ্কিং-এ ভারতের বর্তমান স্থান ১০৬-এ। প্রতীকী ছবি।
যদি এমন হত— ভারত এ বছর বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতার মূল পর্বে খেলছে। দোহায় পৌঁছে গিয়েছে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ক্লাবের লক্ষ লক্ষ সমর্থক নিজেদের চিরন্তন রেষারেষি ভুলে। সবার মনে একটাই প্রশ্ন, ভারত কি বিশ্বকাপের ট্রফিটি জিতে আনতে পারবে?
আক্ষেপ, তেমন কিছুই এ বারও হল না। ভারত কেন ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-এর আসর থেকে অনুপস্থিত রয়ে যাবে যুগের পর যুগ? ক্রিকেট, হকি, টেনিস, ব্যাডমিন্টন, কুস্তি, জিমনাস্টিক্স প্রভৃতিতে ভারতীয়রা বিশ্বমঞ্চে সেরা হতে পারলেও শুধুমাত্র ফুটবলে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। সাফ গেমসের মতো কিছু প্রতিযোগিতায় সাফল্যই শুধু থাকছে ভারতীয় ফুটবল দলের হাতে।
এই মুহূর্তে বিশ্ব ফুটবলের মানচিত্রে ভারতের স্থান ঠিক কোথায়? ফিফা র্যাঙ্কিং-এ ভারতের বর্তমান স্থান ১০৬-এ। আর কবে দেশটি বিশ্বকাপ ফুটবলের মূল পর্বে খেলবে? অথচ, এই দেশে ফুটবল প্রতিভার অভাব নেই। প্রকৃত সত্য হল, ভারতীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)-এর কোনও সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেই ফুটবল প্রতিভা খোঁজার ব্যাপারে। এআইএফএফ বর্তমানে আইএসএল নামক এক ‘ধামাকা’ লিগ নিয়ে ব্যস্ত, যেখানে বিদেশ থেকে ফুটবলার এনে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করা হচ্ছে। অথচ, নতুন প্রতিভা তুলে আনার জন্য রাজ্যে-রাজ্যে, জেলায়-জেলায় ফুটবল অ্যাকাডেমি তৈরি করা হচ্ছে না। এর ফলে দেখা যাচ্ছে কলকাতার মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, মহমেডানের মতো বড় ক্লাবে এখন ভূমিপুত্র ফুটবলারদের সংখ্যা দলের অর্ধেকেরও কম। এই রকম স্থানীয় ফুটবলারহীন ক্লাব হলে কী ভাবে উন্নতি হবে দেশীয় ফুটবলের?
ভারত যদি অন্তত এক বার বিশ্বকাপের মূলপর্বে উঠতে পারে, তা হলে ভারতীয়দের মধ্যে আমরা, বাঙালিরা, সবচেয়ে বেশি শ্লাঘা অনুভব করব। কেননা বাঙালির রক্তে, স্বপ্নে, চেতনায় ফুটবল। সেই কারণেই তো পেলে, মারাদোনা, মেসি, নেমারদের ঘরের ছেলে বলে মনে করে এসেছি আমরা।
তুষার ভট্টাচাৰ্য, কাশিমবাজার, মুর্শিদাবাদ
এখনই কেন
ফুটবল বিশ্বকাপ যখন পুরোদমে চলছে এবং ভারতেও সব ফুটবলপ্রেমী মানুষ সেই ‘বিশ্বকাপ জ্বরে আক্রান্ত’, তখন আইএসএল প্রতিযোগিতা কি এই এক মাসের জন্য স্থগিত রাখা যেত না? এই প্রতিযোগিতায় খেলা অনেক তরুণ খেলোয়াড়ই ভবিষ্যতে ভারতীয় ফুটবল দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তাঁদের কথা ভেবেই এআইএফএফ-এর উচিত ছিল এই সময়ে খেলোয়াড়রা যাতে বিশ্বকাপের প্রতিটি খেলা দেখতে পারেন এবং তা থেকে বর্তমান বিশ্বের ফুটবলের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে অবগত হতে পারেন, সে দিকে নজর দেওয়া। বিশেষ করে এশিয়া থেকে প্রতিনিধিত্ব করা ছ’টি দেশের খেলা আরও বেশি করে পর্যবেক্ষণ করা উচিত ছিল। কারণ, এদের মধ্যে কয়েকটি দেশের সঙ্গে আগামী বছর কাতারে অনুষ্ঠিত হতে চলা এএফসি এশিয়া কাপে মুখোমুখি হতে হবে ভারতকে। তাই এআইএফএফ-এর কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, খেলোয়াড়দের স্বার্থে বিশ্বকাপের শেষ কয়েক দিনের জন্য আইএসএল-এর খেলাগুলো একটু পিছিয়ে দেওয়া হোক।
আত্রেয় শেঠ, কলকাতা-২
দৃষ্টান্তমূলক
‘পরিচ্ছন্নতার পাঠে ব্যতিক্রমী জাপান’ (২৭-১১) প্রসঙ্গে এই পত্র। ২৩ নভেম্বর খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে জাপান চার বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে অপ্রত্যাশিত ভাবে ২-১ গোলে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে নেয়। দল তো ম্যাচ জিতলই, সঙ্গে সে দেশের সমর্থকরাও গোটা স্টেডিয়ামের ময়লা সাফ করে গ্যালারি ছাড়লেন। এমনকি ফুটবলাররাও পরিষ্কার করলেন তাঁদের সাজঘর। গণমাধ্যমে সেই ছবি পোস্ট করে তাঁদের সাধুবাদ দেয় ফিফাও। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপেও একই নজির গড়েন জাপানের দর্শকরা। প্রতি বারই পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে এক চুলও নড়েননি জাপানের ফুটবলপ্রেমীরা। কারণ, তাঁদের ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয় যে, এই পৃথিবীটাই তাঁদের বাড়ি। নিজের বাড়ি সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। তাই তাঁরা বার বারই বিশ্বকে শিখিয়ে যান, পরিবেশ দূষণের সঙ্গে কোনও আপস নয়।
সুব্রত পাল, শালবনি, বাঁকুড়া
ফিফার উদ্যোগ
কাতার বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানের অগ্রগতির সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াও নক আউট পর্বে ওঠে। সৌদি আরব, ইরান দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে না পারলেও একের পর এক অঘটন ঘটায়। এর প্রেক্ষিতে দু’রকম মত গোটা দুনিয়া জুড়ে উঠে আসছে। এক দল বলছেন যে, ফুটবলের বিশ্বায়ন হয়েছে। এশিয়া-আফ্রিকার ফুটবল এখন ইউরোপ-লাটিন আমেরিকার মানের কাছাকাছি চলে এসেছে। অন্য দিকে আর একটি মত হল, এশিয়ার এই জয় সাময়িক, কপালে পাওয়া। কথাটা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয় না, কারণ অঘটন এক বার হতে পারে, বার বার নয়। জার্মানি, স্পেন, আর্জেন্টিনা, পর্তুগালকে হারানো মামুলি ব্যাপার নয়। তা হলে কি এশিয়ার ফুটবলের মান হঠাৎ বেড়ে গিয়েছে? যুক্তি বলে, হঠাৎ করে কিছু বাড়ে না, উন্নতি একটা ক্রমবিকাশের ফল।
বিশ্বকাপের ইতিহাস ঘাঁটতে বসলে দেখা যাবে, এক বার বাদ দিলে এক বার দক্ষিণ আফ্রিকা আর এক বার যৌথ ভাবে জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়া প্রতি বার বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজিত হয়েছে হয় আমেরিকা মহাদেশে, নয়তো ইউরোপে। দু’টি ব্যতিক্রম ছাড়া প্রতি বার যে মহাদেশে খেলা হয়েছে, সেই মহাদেশের টিমই সাধারণত বিশ্বকাপ জেতে। পর্যবেক্ষণকে যদি বিজ্ঞানসম্মত ভাবে বিশ্লেষণ করা যায়, তবে বোঝা যাবে, দুটো ব্যতিক্রম বাদ দিলে, নিজের নিজের মহাদেশের পছন্দমতো পরিবেশে খেলোয়াড়রা অধিক স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেছেন, তাই জিতেছেন। একই সুবিধার কারণে জাপান-কোরিয়া যুগ্ম আয়োজনের বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়া সেমিফাইনালে পৌঁছয়, আগে বা পরে (এ বছর বাদে) এই দল কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত আর পৌঁছতে পারেনি। একই ঘটনা দেখতে পাই এশিয়ান গেমস, কমনওয়েলথ গেমস বা অলিম্পিক্সের সময়ও।
যদিও অস্বীকার করার উপায় নেই, ধারে এবং ভারে ইউরোপ বা লাটিন আমেরিকার ফুটবল এশিয়া বা আফ্রিকার থেকে অনেকটা এগিয়ে। তবুও এই এগিয়ে থাকা মহাদেশের ফুটবল দলগুলো আরও এগিয়ে যায় তাদের অনুকূল পরিস্থিতিতে খেলতে পারলে। তাই ফুটবলের বিশ্বায়ন চাইলে বিশ্বকাপের আয়োজন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া হোক।এশিয়া-আফ্রিকার গরিব দেশগুলোর কাঁধে কাপ আয়োজনের আর্থিক দায়ভার পুরো না ছেড়ে দিয়ে ফিফা নিজে সেই সব দেশে পরিকাঠামো গড়ে তুলুক।
পার্থ নন্দী, শেওড়াফুলি, হুগলি
ভুল তথ্য
সুমিত ঘোষের ‘কাতার কার্নিভাল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে (রবিবাসরীয়, ২০-১১) দু’টি তথ্যপ্রমাদ থেকে গিয়েছে। এক, প্রবন্ধকার লিখেছেন, “ব্রাজিল যেমন কুড়ি বছর কাপ জেতেনি, তেমনই আর্জেন্টিনা জেতেনি ২৮ বছর।” এই প্রসঙ্গে জানাই, ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনার নেতৃত্বে নীল-সাদা জার্সিধারীরা শেষ বার বিশ্বকাপ জেতে ১৯৮৬ সালে, অর্থাৎ, ৩৬ বছর আগে। দুই, এক জায়গায় লেখা হয়েছে, “কাতারের জনসংখ্যা সব মিলিয়ে হবে ২৫ মিলিয়ন অর্থাৎ ২ কোটি ৫০ লক্ষ।” কিন্তু ওয়ার্ল্ড-ও-মিটারের তথ্য অনুযায়ী কাতারের বর্তমান জনসংখ্যা সব-মিলিয়ে ২৯.৯৯ লক্ষ।
সজলকান্তি ঘোষ, বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy