Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Oxygen Cylinder

সম্পাদক সমীপেষু: অক্সিজেন আছে?

প্রতি রাতে শোয়ার সময় মনে হয়, কাল সমাজমাধ্যমে কী দেখব, কে জানে! খবরের কাগজে কী বার হবে, টিভির খবরে কী বলবে, কে জানে! এর পর কার পালা?

শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২১ ০৫:২৫
Share: Save:

যার পকেটে অর্থ আছে, তার অক্সিজেন মিলবে, সাদাবাজার বা কালোবাজার, যেখান থেকেই হোক। কিন্তু যার পকেট খালি, তার কী হবে? ডাঙায় তোলা মাছের মতো খাবি খেতে খেতে মরে যাবে। দিনের পর দিন দেখতে দেখতে, শুনতে শুনতে, সইতে সইতে এই সব মৃত্যু এক দিন গা-সওয়া হয়ে যাবে। আজ অক্সিজেনের অভাবে অসহায় মৃত্যু দেখছেন ডাক্তারবাবুরা, নার্সরা। তাঁরা চরম মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছেন। শোনা যাচ্ছে, ন’হাজার টন অক্সিজেন আমাদের দেশের সরকার বিদেশে নাকি রফতানি করেছে। কেন করল? ভারতে কি অক্সিজেন উদ্বৃত্ত? মোটেই না। নাগরিকরা যেখানে প্রাণবায়ুর অভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে, সেখানে এই ধরনের মহানুভবতার মানে কী?

প্রতি রাতে শোয়ার সময় মনে হয়, কাল সমাজমাধ্যমে কী দেখব, কে জানে! খবরের কাগজে কী বার হবে, টিভির খবরে কী বলবে, কে জানে! এর পর কার পালা? কোন চেনা মুখ, কোন প্রিয় নাম, কোন সম্ভাবনাময় মানুষটা? অথচ, কোনও রাজনৈতিক দলের ইস্তাহারেই নেই, “অক্সিজেনের মতো অত্যাবশ্যক চিকিৎসা সরঞ্জামের যাতে সব সময়ে যথেষ্ট জোগান থাকে, তার ব্যবস্থা করা হবে। কালোবাজারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।” আমাদের লড়াই মন্দির-মসজিদ নিয়ে। কিন্তু কোনও ঐশ্বরিক শক্তি এই প্রাণবায়ুর জোগান দিতে পারছে না। জোগান দেবে ল্যাবরেটরি, কারখানা। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা উৎসবে মাঠ ভরানোর লড়াইয়ে নেমেছিলেন। এক এক করে কত স্বজনকে ভোটপুজোর বলি হতে দেখলাম আমরা। সামাজিক দূরত্বের চক্করে কত প্রিয় মুখ দেখা হয় না কত দিন! মোবাইল-সর্বস্ব জীবনে ভালবাসার সংলাপও বদলে গিয়েছে। ও-পাশ থেকে ভেসে আসে প্রিয় কণ্ঠ, “শুনছ, তোমার শ্বাসকষ্ট নেই তো? বার বার অক্সিমিটারে চেক করো অক্সিজেন লেভেল।” এ বার হয়তো জন্মদিনে আত্মীয়-বন্ধুরা অক্সিজেন ক্যান উপহার দেবেন। প্রাণবায়ুর চাইতে কাজের জিনিস আর কী আছে?

তন্বী হালদার, বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা

কালোবাজারি

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার পড়ে গিয়েছে। অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, সুস্থ মানুষও ভবিষ্যতের কথা ভেবে গোপনে নিজের বাড়িতে অক্সিজেনের সিলিন্ডার মজুত করে রাখছেন। এই কারণে বহু করোনা রোগী অক্সিজেন না পেয়ে মারা যাচ্ছেন। প্রতি দিনের কাগজ খুললেই অক্সিজেন না পেয়ে রোগীর মৃত্যুর ছবিগুলো দেখলে নিজেদের বড় অসহায় মনে হয়।

প্রসঙ্গত বলি, ক’দিন আগে আমারই এক পরিচিত সাময়িক ভাবে জ্বর-সর্দিতে অসুস্থ হলে আমাকে ফোনে অক্সিজেন সিলিন্ডার জোগাড় করে দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করেন। আমি তাতে রাজি হইনি। সকলে বাড়িতে মজুত করে রাখতে চাইলে যাঁর জরুরি প্রয়োজন, তিনি তো পাবেন না। এই ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রবণতা অনেকের মধ্যেই কাজ করছে। বিশেষত প্রভাবশালী বা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে এই বেপরোয়া ভাব বেশি দেখা যাচ্ছে। বাড়িতে মজুত করে রাখার ফলে সিলিন্ডারের অভাবে অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ হতে পারছে না। অতি দ্রুত এই প্রবণতা বন্ধ হওয়া উচিত। এ ছাড়া বেশ কিছু অক্সিজেনের মজুতদার গোপন গুদামে অক্সিজেন-ভর্তি সিলিন্ডার লুকিয়ে রেখে বাজারে কৃত্রিম চাহিদা তৈরি করে লাগামছাড়া দামে গোপনে অক্সিজেন বিক্রি করছেন। সবটাই চলছে এক শ্রেণির অমানবিক নেতার কারসাজিতে। ভাবতেই অবাক লাগে, যেখানে মানুষের জীবন নিয়ে টানাটানি, সেখানে অক্সিজেন নিয়ে কালোবাজারি! এ জঘন্যতম অপরাধ! প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ করা, যাতে অক্সিজেন সরবরাহকারী কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই অমানবিক কাজ করতে না পারে। এই মুহূর্তে প্রশাসনিক নজরদারি বাড়ানো হোক। এই প্রসঙ্গে বলি, হঠাৎই সার্জিক্যাল মাস্ক বাজার থেকে উধাও হয়ে এখন দ্বিগুণেরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের এ কী প্রবণতা! মাস্ক, অক্সিজেন, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার এখন জীবনদায়ী হিসেবে গণ্য। এগুলো নিয়েও কালোবাজারি করতে হবে?

পরেশনাথ কর্মকার, রানাঘাট, নদিয়া

চাই নিয়ন্ত্রণ

করোনার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হতেই হাসপাতালে ‘ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই’ রব। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অক্সিজেনের চাহিদা। এর মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত করার কারবার। সমাজমাধ্যমের দৌলতে অক্সিজেনের উৎস, বিভিন্ন পরিমাণের সিলিন্ডার-পিছু দাম-সহ নানা তথ্য আদানপ্রদান হচ্ছে। সেই সুযোগে এক শ্রেণির মানুষ ভবিষ্যৎ বিপদের আশঙ্কা করে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত করে রাখছেন। এমনকি অনলাইন বুকিং করলে হোম ডেলিভারির সুবিধাও পাওয়া যাচ্ছে। এ দিকে মুমূর্ষু রোগীদের অক্সিজেনের অভাবে প্রাণ ওষ্ঠাগত। শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি করোনা আক্রান্তদের অক্সিজেন পেতে নাজেহাল অবস্থা। এই মহামারি পরিস্থিতিতে এ ভাবে অপ্রয়োজনে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত রুখতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ভীষণ জরুরি। ডাক্তার বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের লিখিত অনুমতি ব্যতীত অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনা-বেচা বন্ধ হওয়া দরকার।

মৃণাল কান্তি ভট্টাচার্য, কেতুগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান

ইএসআই কই?

শ্রমজীবী মানুষের স্বাস্থ্যের সুরক্ষা ও চিকিৎসার জন্য শ্রম মন্ত্রকের অধীনে ‘এমপ্লয়িজ় স্টেট ইনশিয়োরেন্স কর্পোরেশন’ (ইএসআইসি) কাজ করছে। নথিভুক্ত শ্রমিকদের বেতন থেকে নিয়মিত অর্থও কাটা হয়। কিন্তু গত বছর অতিমারির প্রথম ঢেউয়ের সময় ইএসআই কোভিড-আক্রান্ত শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য কোনও ব্যবস্থা করেনি। এ বছরও ছবিটা বদলায়নি। বিশেষ করে চটকল শ্রমিকরা ঘনবসতিপূর্ণ মহল্লাগুলোতে থাকেন। তাই সেখানে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সে জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী হাসপাতাল বা সেফ হোমে সংক্রমিত ব্যক্তিকে দ্রুত স্থানান্তরিত করার ব্যবস্থা করা উচিত। সেখানে চিকিৎসার সঙ্গে খাওয়াদাওয়ার সুব্যবস্থাও প্রয়োজন।

ইএসআইসি-এর কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক অধিকর্তা, এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা দফতরের কাছে অনুরোধ, ইএসআই নথিভুক্ত কর্মীদের জন্য কর্মস্থলে বিনামূল্যে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। এতে অন্যান্য টিকা কেন্দ্রে ভিড় কমানো সম্ভব হবে। অবিলম্বে ইএসআই হাসপাতালে কোভিড-আক্রান্ত শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে কোভিড স্বাস্থ্যবিধি যাতে ঠিক ভাবে পালন করা হয় তার কঠোর তদারকি করতে হবে। কোভিড সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে সমস্ত ট্রেড ইউনিয়নকে নিয়ে বিশেষ প্রচারাভিযান করা দরকার।

নবেন্দু দাশগুপ্ত, সভাপতি, বেঙ্গল চটকল মজদুর ফোরাম

প্যাকেজ

‘সাইকেলে স্ত্রীর মৃতদেহ, শ্মশানের খোঁজে প্রৌঢ়’ (২৮-৪) সংবাদ পাঠে মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের জৌনপুর জেলার। পাঁচ বছর আগে ওড়িশার কালাহান্ডি জেলার আদিবাসী দানা মাঝির স্মৃতি উস্কে দিল এই অমানবিক ঘটনা। জেলা হাসপাতাল থেকে শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করায় দানা মাঝি স্ত্রীর মৃতদেহ কাপড়ে মুড়ে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছিলেন। এক জন প্রৌঢ় মানুষের স্ত্রীর মৃতদেহ বহন করে নিয়ে যাওয়া ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর উপযুক্ত বিজ্ঞাপনই বটে! তার চেয়ে বরং শ্মশানযাত্রা ও সৎকার, এই পুরো প্যাকেজ সরকার-ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেওয়া হোক।

রাজশেখর দাস, কলকাতা-১২

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in India Oxygen Cylinder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE