Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
BJP

সম্পাদক সমীপেষু: ক্ষমাহীন অপরাধ

বিজেপি নেতারা যতই বলুন যে তাঁদের দল এটা সমর্থন করে না, বা এটা দলের সংস্কৃতি নয়, সে কথা বিশ্বাস করা উচিত নয়।

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২১ ০৫:২১
Share: Save:

নদিয়ার শান্তিপুরে এক দশ বছরের বালক ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে অস্বীকার করায়, এবং ‘খেলা হবে’ বলায় এক মধ্যবয়স্ক চা বিক্রেতা তাকে মারধর করেন (“‘জয় শ্রীরাম’ না-বলায় লাথি, ঘুসি বালককে”, ২০-৪)। বালকটিকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে! ঘটনা অত্যন্ত নির্দয়, নিন্দনীয় ও আতঙ্কের। চা বিক্রেতা যথারীতি পলাতক। তাঁর স্ত্রীর বক্তব্য, স্বামী ভুল করে ফেলেছেন। এটা কখনও মেনে নেওয়া যায় না। এটা অপরাধ এবং অবশ্যই শাস্তিযোগ্য। চা বিক্রেতা নিজেও বুঝেছেন তাঁর কাজটা অন্যায় হয়েছে। না হলে তিনি কেন পলাতক? তাঁর তো উচিত ছিল, ছেলেটির প্রাথমিক চিকিৎসা করানো। এক জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ কী করে এক ১০ বছরের বালকের গায়ে হাত তোলেন, তা বোধগম্য হয় না! তাঁর সন্তানকে অন্য কেউ এই ভাবে মারধর করলে কি তিনি সেই অপকর্ম মেনে নিতেন? অভিযুক্ত চা বিক্রেতাকে উপযুক্ত শাস্তি না দিলে এমন অপরাধ দিন দিন বাড়তে থাকবে। সব রাজনৈতিক দল ও স্থানীয় বাসিন্দাদের তরফ থেকে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও সমালোচনা হওয়া উচিত।

বিজেপি নেতারা যতই বলুন যে তাঁদের দল এটা সমর্থন করে না, বা এটা দলের সংস্কৃতি নয়, সে কথা বিশ্বাস করা উচিত নয়। কারণ, এমন ঘটনা এই প্রথম বার ঘটল, এমন নয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এ ধরনের ঘটনা প্রায়শই দেখা যাচ্ছে, এবং অনেক ক্ষেত্রেই প্রহৃত ব্যক্তি গুরুতর ভাবে আহত হয়েছেন, বা মারাও গিয়েছেন। জোর করে ‘জয় শ্রীরাম’ বলানোয় কোনও লাভ বা বাহাদুরি নেই। যে দিন মানুষ নিজে থেকে ভালবেসে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেবেন, সে দিনই রামনাম সার্থক হবে। বালকটির দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।

পঙ্কজ সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি

কতটা ভিন্ন?

রণবীর সমাদ্দারের নিবন্ধে (‘একটি সামাজিক যুদ্ধ চলছে’, ১৯-৪) লেখক কোনও রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ না করলেও, পাঠকের বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না যে, উনি ‘জনবাদী রাজনৈতিক শক্তি’ বলতে কাকে বোঝাচ্ছেন, ও ‘উদারবাদী দক্ষিণপন্থী শক্তি’ বলতে কাকে বোঝাচ্ছেন। এটা ঠিকই যে, উদারবাদী, দক্ষিণপন্থী, কর্তৃত্ববাদী শক্তি যে ভাবে বাংলা দখলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তা অভূতপূর্ব এবং দৃষ্টিকটু। সারা দেশে কোভিড অতিমারি দ্বিতীয় দফার তাণ্ডব চালাচ্ছে, অথচ সর্বাধিক আক্রান্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সময় পাচ্ছেন না, কারণ প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত। কিন্তু রাজ্যের তথাকথিত জনবাদী রাজনীতি, কেন্দ্রের নয়া উদারবাদী রাজনীতির সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ, তা কী ভাবে বলা যায়?

গত এক দশকে দেশে নয়া উদারবাদী অর্থ, শিল্প, শ্রমনীতির বিরুদ্ধে যেটুকু লড়াই হয়েছে, তাতে কতটুকু শামিল হয়েছে রাজ্যের ‘জনবাদী’ শক্তি? বড় বড় শিল্প সম্মেলন করে, দেশের একচেটিয়া পুঁজিপতিদের কয়েক জনকে হাজির করে তাঁদের দিয়ে শিল্পায়নের ব্যর্থ প্রচেষ্টা তো অন্য কথাই বলে। যেখানে কোটি কোটি গরিব মানুষের সমর্থনে নির্বাচনে উতরানোর বাধ্যবাধকতা চরম উদারবাদী কেন্দ্রীয় সরকারকেও একশো দিনের কাজ প্রকল্পের অর্থ বাড়াতে বাধ্য করে, সেখানে রাজ্য সরকারের কল্যাণকর কর্মসূচিগুলিকে অতিরঞ্জিত করার কী দরকার? তা হলে তো সাম্প্রদায়িক শক্তি পরিচালিত বিভিন্ন রাজ্য সরকারের কর্মসূচিগুলির প্রশংসাও করতে হয়।

লেখক সঠিক ভাবেই বলেছেন যে, নয়া উদারবাদী শক্তি সমাজের বিভিন্ন বিভাজন রেখাকে নির্দয় ভাবে ব্যবহার করে নতুন গোষ্ঠী সৃষ্টি করে। কিন্তু ‘জনবাদী’ দলের নেতারা কি পশ্চিমবঙ্গে এই কাজ আরও আগে থেকে শুরু করেননি? ২০০৯ সাল থেকেই রিজওয়ানুর রহমানের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু ও সাচার কমিটির রিপোর্টকে সফল ভাবে কাজে লাগিয়ে রাজ্যে পরিচিতির রাজনীতির ফলিত প্রয়োগ শুরু হয়। তার পর ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতাসীন শাসক দল ইমাম ভাতা চালু করে, যা রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঠাসবুনোটকে ভিতর থেকে দুর্বল করা শুরু করে, এবং যার পরিণতিতে শেষ পর্যন্ত পুরোহিত ভাতা চালু করতে হয়।

এই ভাবেই দার্জিলিং পাহাড়ের জিটিএ প্রশাসনকে ঠুঁটো করে রেখে তামাং বোর্ড, লামা বোর্ড ইত্যাদি অনেকগুলি অতি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীভিত্তিক সংগঠন তৈরি করাও কি বিভাজনের নির্দয় ব্যবহার নয়? লেখক এই সংগঠনের পরিবর্তন পদ্ধতিকেও জনবাদী বলেছেন, এবং জনগণের নানা অংশকে কুশীলবের গুরুত্ব দিয়েছেন। ব্যক্তিকেন্দ্রিক একটি দল, যে দলে পারিবারিক উত্তরাধিকারের প্রশ্নে বড়সড় দলত্যাগ ঘটে গিয়েছে এবং যে দল কোটি কোটি টাকা খরচ করে প্রশান্ত কিশোরের মতো ভোটকুশলীর পেশাদারি সাহায্য নিচ্ছে, সেই দলে জনসাধারণের এত বড় ভূমিকা কি থাকা সম্ভব?

পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন পর্ব প্রায় শেষের দিকে। আগামী ২ মে ফলাফল প্রকাশিত হলে হয়তো রাজ্য এক নতুন পর্বে প্রবেশ করবে। লেখক নিবন্ধে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, জনবাদী শক্তির আধিপত্যকে দৃঢ় করতে আরও কয়েক শতাংশ সমর্থন প্রয়োজন হবে। যদি ফলাফলে দেখা যায় যে, তথাকথিত জনবাদী শক্তি সংখ্যাগরিষ্ঠতার কাছাকাছি এসে থমকে গেল এবং অপর ধর্মনিরপেক্ষ জোট কিছু আসনে জয়ী হল, তখন কি নব্য উদার সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আটকাতে দুই পক্ষ নির্বাচন পরবর্তী সমঝোতা করবে? নীতিগত অবস্থানের এই বৈপরীত্যগুলির নিরসন না হলে ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির একত্রিত হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

শ্রীমন্ত মিত্র, কলকাতা-১৫৬

-সামাজিক

‘একটা সামাজিক যুদ্ধ চলছে’ নিবন্ধে রণবীর সমাদ্দার মানুষকে অঘোষিত গৃহযুদ্ধের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। সাধারণত বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা দেখি, শাসক দল বিভিন্ন মানুষের দৈনন্দিন সমস্যার কতটা সুরাহা করতে পেরেছেন বা পারেননি, তাই নিয়েই চাপানউতোর চলে বিরোধীদের সঙ্গে। আর উভয় পক্ষই নিজেদের স্বপক্ষে যুক্তি নিয়ে হাজির হন মানুষের দুয়ারে। তার পর সমস্ত মানুষ বা ভোটাররাই নির্বাচনে ভোট প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচিত করেন মনের মতো জনপ্রতিনিধি, কাজের নিরিখে বা কাজের আশায়। কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে ও ছদ্ম-ধর্মনিরপেক্ষতা দেখিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণের ফাঁদে মানুষকে পা ফেলতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা এত নির্লজ্জ ভাবে কোনও দিন ঘটেনি আমাদের রাজ্যে। এই মেরুকরণে হিন্দুত্বের মধ্যেও ভাষাগত বিভেদের সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা বাংলার সামাজিক জীবনের সঙ্গে বেমানান। তাই নিবন্ধের শিরোনাম যদি ‘একটা (অ)সামাজিক যুদ্ধ চলছে’ লেখা হত, তা হলেও ভুল কিছু হত বলে মনে হয় না। এই বার আমাদেরই ঠিক করতে হবে, বাংলার বাতাসে এই বারুদের গন্ধে কার উপর ভরসা রাখব?

অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি

বিমা বাতিল

দেশে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা যখন হুহু করে বাড়ছে, তখন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্যবিমা কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে বাতিল করে দিল, তা বিস্ময়কর। এই নিয়ে প্রবল হইচই হলে ফের সেই জীবনবিমা প্রকল্প শুরু হল বটে, তবে বেশ কিছু ধোঁয়াশা থেকে গিয়েছে। প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর আশঙ্কা নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করতে হয়। তাঁদেরও পরিবার রয়েছে। স্বাস্থ্যবিমা কিছুটা হলেও আর্থিক সুরক্ষার ভূমিকা নিতে পারে। তা কেড়ে নেওয়া হলে তাঁরা কী ভাবে জীবন বিপন্ন করে কাজে মন দেবেন! সরকার কি বিমাকে আর্থিক বোঝা মনে করে? পিএম কেয়ার্স ফান্ডে যে বিপুল পরিমাণ টাকা মজুত রয়েছে, সে তা হলে কিসের জন্য? প্রধানমন্ত্রী তাঁদের সম্মান জানাতে হেলিকপ্টার থেকে পুষ্পবৃষ্টির মতো কর্মসূচি নিয়েছিলেন। তা কি লোকদেখানো ছিল?

সমর মিত্র, কলকাতা-১৩

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP TMC Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE