Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: বহুমুখী প্রতিভা

প্রেমিক চাইছেন ঝড় দুনিয়া পাল্টাবে, প্রেম সম্পর্কে ধারণাও বদলে দেবে।

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২২ ০৭:৩৪

স্বপন সোম অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে লিখেছেন ‘গণনাট্য থেকে রোম্যান্টিক, সব সুরেই তাঁর অবাধ বিচরণ’ (রবিবাসরীয়, ৭-)। মানুষের শিল্পী মন ‘সব’-এর অন্বেষণে সারা জীবন অনেক কিছুই ছুঁয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে মনে হয় এক জন স্রষ্টাকে বিশেষ পরিচয়ে চিহ্নিত করে তাঁর অন্যান্য পরিচয়কে ঢাকা দিয়ে রাখা বা সরিয়ে ফেলা যায় না। মনে হয় গণনাট্য করলে যেন রোম্যান্টিক সুর করা যায় না, বা লেখা যায় না। এতটা আড়াআড়ি ভাগ করার একটা ঝোঁক অবশ্য অনেক কালের। গণনাট্য শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরী গেয়েছিলেন ‘বিবি গুলশন বলো কী কারণ, শাড়ি পিনতে লাগে কেন এতক্ষণ’। এতে এক শ্রেণির মানুষ তাঁর উপর বেজায় চটেছিলেন। অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজের লেখা ও সুর করা গান ‘এমন একটা ঝড় উঠুক... তবু দুনিয়াটা কিছু পাল্টানো গেলে পরে... ভালবাসা মনে নাও হতে পারে বেহিসেবি পরিচয়।’ অর্থাৎ প্রেমিক চাইছেন ঝড় দুনিয়া পাল্টাবে, প্রেম সম্পর্কে ধারণাও বদলে দেবে। সলিল চৌধুরী গণনাট্য করলেও অজস্র মনে রাখা প্রেমের গানও সৃষ্টি করেছেন। নজরুলকে বিদ্রোহী কবি গণ্য করা হলেও অন্তঃকরণে তিনি আগাগোড়া কতটা রোম্যান্টিক, তাঁর গানগুলো শুনলেই বোঝা যায়। এমনই আর এক গণনাট্য শিল্পী অনল চট্টোপাধ্যায়ের নামও উল্লেখযোগ্য। এ ছাড়াও পরেশ ধর কিংবা প্রদীপ মজুমদার একই সঙ্গে গণনাট্য করেছেন, রোম্যান্টিক গানও সৃষ্টি করেছেন। গোড়ার দিকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়েরও গণনাট্য সঙ্ঘের সংস্রব ছিল। ভূপেন হাজরিকাও সব্যসাচীর মতো কাজ করে গিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের চার অধ্যায় একই সঙ্গে বিপ্লবীয়ানা ও প্রেমের টানাপড়েনের স্মরণীয় সৃষ্টি।

রুশ বিপ্লবের হোতা লেনিন যুদ্ধক্ষেত্রে অবসর পেলে শেক্সপিয়রের সনেট পড়তেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সঙ্গীতস্রষ্টা রুশো ছিলেন ফরাসি বিপ্লবের জনক। রোম্যান্টিক মনোভাবাপন্ন ওয়ার্ডসওয়ার্থ আবার ফরাসি বিপ্লবের সমর্থক। এডগার অ্যালেন পো বা সিলভিয়া প্লাথের কবিতায় প্রেম এসেছে নানা রূপে। আবার তাঁরা সমাজ বদলের পক্ষেও কলম ধরেছেন। কে এ আব্বাস এক সময় গণনাট্য সঙ্ঘের সদস্য ছিলেন। তিনিই লেখেন হিন্দি ববি ছবির চিত্রনাট্য। যেমন গণনাট্য শিল্পী বিজন ভট্টাচার্য লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর।

রঘুনাথ প্রামাণিক

কালীনগর, হাওড়া

সুরের কারিগর

অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে স্বপন সোমের মূল্যায়ন সম্পর্কে এই চিঠি। প্রবন্ধকার সঠিক ভাবেই লিখেছেন, “অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো এক জন সুরকারের আরও একটু স্মরণ ও শ্রদ্ধা অবশ্যই প্রাপ্য ছিল।” তিনি আরও একটু শ্রদ্ধা ও সম্মান যে পেলেন না, তার কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা যায় ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি বাপ্পি লাহিড়ীর চলে যাওয়া। এঁদের নিয়ে প্রচুর লেখা হল গণমাধ্যমে। তার পরেই ১ ফেব্রুয়ারি চলে গেলেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে নিয়ে ন্যূনতম লেখালিখি হল না।

সঠিক কারণটা খুঁজতে গেলে আর একটু তলিয়ে দেখতে হয়। ষাটের দশক, সত্তরের দশকে যখন বাঙালির গান শোনা ছিল রেডিয়োতে, তখন থেকেই রেডিয়োতে ঘোষণা করা হত শুধু গায়ক-গায়িকার নাম। কখনওই গীতিকার বা সুরকারের নাম ঘোষণা করা হত না। রবীন্দ্র-নজরুল-দ্বিজেন্দ্র-অতুলপ্রসাদ-রজনীকান্ত যুগের পর বাংলা আধুনিক গানের ক্ষেত্রে গীতিকার সুরকাররা কখনওই স্বীকৃতি পাননি। ফলে ‘হংসপাখা দিয়ে...’ গানটি ছিল ‘শ্যামল-এর গান’। অমিয় দাশগুপ্ত ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় গানটির মূল কারিগর হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের নাম আমবাঙালি জানত না বললেই চলে। বর্তমান লেখকও সেই আমবাঙালিরই এক জন। স্বর্ণযুগের অসাধারণ কণ্ঠশিল্পীদের যোগ্য সম্মান দিয়েও বলা যায় সেই সব গানের সৃজনশীল অংশটির স্রষ্টা গীতিকার-সুরকাররা। গায়ক-গায়িকা বদলে গেলেও গানগুলি জনপ্রিয় হত— এমনটা বলাই যায়। যেমন— একশো বছর আগে লেখা ও সুর করা রবীন্দ্রনাথের গান অসংখ্য শিল্পী গেয়ে চলেছেন এবং জনপ্রিয় হচ্ছেন।

পাঠকের মনে পড়তে পারে বিবিধভারতীর ‘মন চাহে গীত’, রেডিয়ো সিলোন-এর ‘বিনাকা গীতমালা’য় প্রতিটি গানের গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক-গায়িকার নাম এক সঙ্গে উচ্চারণ করা হত। হিন্দি ছবি রিলিজ় হলে নায়ক-নায়িকার সঙ্গে আলোচিত হত সঙ্গীত পরিচালকের নাম।

আশার কথা, এখন অবস্থা কিছুটা বদলেছে। এখন গীতিকার-সুরকাররা মর্যাদা পেতে শুরু করেছেন। আমরা অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা গানের স্বর্ণযুগের অসংখ্য গীতিকার সুরকারকে স্মরণ করি ও শ্রদ্ধা জানাই।

ত্রিদিবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়

শ্রীরামপুর, হুগলি

ঘুম ভাঙবে?

পথশিশুদের সার্বিক পুনর্বাসন ও সুরক্ষার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশ সম্পর্কিত খবরটি (‘পথশিশুদের জন্য’, -) খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে— বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও এবং বি আর গাভাইয়ের বেঞ্চ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত সতেরো হাজার নয় শত চোদ্দো জন পথশিশুর তথ্য মিলেছে। সারা দেশে পথশিশুদের সম্ভাব্য সংখ্যাটা প্রায় পনেরো থেকে কুড়ি লক্ষের মতো। আদালত জানিয়েছে, পুনর্বাসনের কাজে নজরদারি করবে (মাসে অন্তত এক বার) এনসিপিসিআর।”

দুর্ভাগ্যের বিষয় এটাই, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল-সহ সব রাজ্য থেকে সরকারি ভাবে পথশিশুর কোনও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান সঠিক ভাবে পেশ করা হয়নি। তাই আজ শীর্ষ আদালতের নির্দেশে সংগৃহীত সারা দেশে সম্ভাব্য পথশিশুর পরিসংখ্যানটির সঙ্গে রাজ্যগুলির পেশ করা তথ্য এতটা সামঞ্জস্যহীন বা অনেক কম। যদি তা-ই না হয়, ‘ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটস’ (এনসিপিসিআর)-এর প্রস্তাব অনুসারে, আদালতে সম্ভাব্য তথ্যের সঙ্গে রাজ্যগুলির তথ্যের কেন এত অমিল? রাস্তায় বাস করা লক্ষ লক্ষ গৃহহীন অনাথ সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুদের শোষণ, নির্যাতন থেকে রক্ষা ও দারিদ্রের গোলকধাঁধা থেকে মুক্তির জন্য, প্রতি বছর ১ এপ্রিল দিনটি ‘আন্তর্জাতিক পথশিশু দিবস’ হিসাবেও পালন করা হয়। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল-সহ সব রাজ্য এ ব্যাপারে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করা কিংবা ভাবমূর্তিকে অমলিন রাখার জন্যই কি সর্বোচ্চ আদালতের কাছে তাদের তথ্য গোপনের দৃষ্টান্ত এমন নির্লজ্জ ভাবে তুলে ধরল?

উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্ট পথশিশুদের চিহ্নিতকরণ এবং পুনর্বাসনের নীতি প্রণয়নের বিষয়টি আজও যথোপযুক্ত ভাবে কার্যকর না হওয়ায় রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সরকারগুলিকে তিরস্কার করে। বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও এবং বি ভি নাগারত্নের বেঞ্চ জানায়, “শিশুরা রাস্তায় ক্ষুধার্ত এবং তারা অপেক্ষা করতে পারে না। সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। এই কাজটি পালন করা তাদের দায়িত্ব।” এ দেশে আজও মূলত তীব্র দারিদ্রের কারণে এক বিপুল সংখ্যক শিশুর পথই ঠিকানা। বিভিন্ন বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হিসাবে পথশিশুর প্রকৃত সংখ্যাটিও কিন্তু অনেক। বহু অসহায় অনাথ শিশু আছে, যাদের বয়স তেরোর নীচে, তাদের কোনও পরিবার নেই। এদের কেউ ভিক্ষা করে, কেউ চায়ের দোকানে সারা দিন কাজ করে, অনেক নিঃসঙ্গ শিশু আবার মাদক-চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কঠিন সমস্যাটিকে প্রতিহত করতে বিচ্ছিন্ন ভাবে উদ্যোগ করলেও, অনাথ পথশিশুদের যথার্থ সুরক্ষা ও পুনর্বাসনের জন্য সময়মতো যথোচিত সরকারি সাহায্য ও অর্থের অভাবের কারণে, বিষয়টির প্রতিকার আজও কার্যকর ভাবে করা যায়নি। তাই, এমন ক্রান্তিকালে শীর্ষ আদালতের নির্দেশিকাটি সব অসহায় পথশিশুর কাছে এক বলিষ্ঠ অবলম্বন।

প্রশ্ন হল, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল-সহ সব রাজ্যের সরকারি স্তরে এ বার সত্যিই কি ঘুম ভাঙবে?

পৃথ্বীশ মজুমদার

কোন্নগর, হুগলি

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy