Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
BJP

সম্পাদক সমীপেষু: কেবলই নিরামিষ?

গান্ধী-নেহরুর প্রদর্শিত পথ থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যেতে গিয়ে ভারত আজ তার বিশ্বের কূটনীতির মানচিত্রে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি হারিয়ে ফেলছে।

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:১৬
Share: Save:

‘নীতি যখন নিরামিষ’ (৩-১) প্রবন্ধে নীলোভা রায়চৌধুরী যথার্থই বলেছেন যে, “ভারতের কূটনীতির সাংস্কৃতিক দিক (সফ্‌ট ডিপ্লোম্যাসি) হয়ে দাঁড়িয়েছে নিরামিষ ভোজন, যোগচর্চা আর পরিবেশপ্রীতি, যেগুলিকে হিন্দু ধর্মের মৌলিক বৈশিষ্ট্য বলে তুলে ধরা হচ্ছে।” সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, আমাদের দেশের শাসকরা ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি ও কূটনীতিকে গুলিয়ে ফেলছেন। উগ্র হিন্দু মৌলবাদ এবং মুসলিম মৌলবাদ এটাই করে থাকে। ২০১৪ সাল থেকে ভারতে এটা বিপজ্জনক আকার ধারণ করেছে।

লেখক সুন্দর উদাহরণ তুলে ধরে বলেছেন যে, সাম্প্রতিক কালে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং আগে চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং যখন ভারতে এসেছেন, তখন তাঁদের নিরামিষ খেতে দেওয়া হল, যা রুশ ও চিনা অতিথিরা ভাল ভাবে নেননি। এর বাইরে গত আট বছরে অসংখ্য কূটনৈতিক আদানপ্রদান হয়েছে বিশ্বের নানা দেশের সঙ্গে ভারতের। দেশের ভিতর বিফ বিরোধী একটা উন্মাদনা যেমন ধর্মনিরপেক্ষতার সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করছে, তেমনই খাদ্য নির্বাচনের স্বাধীনতা হরণকেও আন্তর্জাতিক কূটনীতি ভাল চোখে দেখে না। নিজের সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি কারও উপর চাপানো ঠিক নয়। জাতীয় স্বার্থে রাজনীতি ও কূটনীতি পরিচালিত করার বদলে ‘এক ধর্ম, এক ভাষা, এক খাদ্য’কে সামনে আনা হচ্ছে, যার অর্থ হল গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সহিষ্ণুতার আদর্শকে বিসর্জন দেওয়া। গান্ধী-নেহরুর প্রদর্শিত পথ থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যেতে গিয়ে ভারত আজ তার বিশ্বের কূটনীতির মানচিত্রে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি হারিয়ে ফেলছে।

শামসুল আলম, ক্যালিফর্নিয়া

নেতাজি স্মরণে

গত বছর ৮ জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মদিন এই বছরে মহাসমারোহে পালনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ৮৫ জনের একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছিল, অথচ বছর ঘুরতে দেখা গেল যে, সেই কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি! এই কমিটিতে বিশিষ্ট অনেক ব্যক্তিদের মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, বসু পরিবারের সদস্য চন্দ্রনাথ বসু সকলেই আছেন। অথচ, কমিটি সারা বছর নিশ্চল হয়ে রইল। এই নিয়ে বসু পরিবারের সদস্য চন্দ্রনাথ বসু কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখিকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন যে, লালকেল্লা প্রাঙ্গণে হিন্দ মেমোরিয়াল গড়ে তোলা হোক, যা ভারত তথা বিশ্বের কাছে ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসকে আরও জানার তাগিদে জ্ঞানের ভান্ডারকে বহু গুণ বাড়িয়ে তুলবে। অথচ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর উত্তর আসে যে, সেটা মোগল স্থাপত্য, তাই সেখানে এই স্থাপত্য গড়ে তোলা অসম্ভব। অথচ, বিকল্প পথ কী হতে পারে, তা মন্ত্রী বলেননি। এই বিষয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

লালকেল্লার ইতিহাসের সঙ্গে নেতাজির স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসও জড়িয়ে আছে। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির লালকেল্লায় আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিচার হয়। প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন প্রেম সেহগল, শাহনওয়াজ় খান, এবং জিএস ধীলন। আইনজীবী ভুলাভাই দেশাই, তেজ বাহাদুর সপ্রু, জওহরলাল নেহরু, আসফ আলি এবং কৈলাসনাথ কাটজু আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনাদের পক্ষে সওয়াল করেন। যেখানে ভারতের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ঘটেছে, সেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিবৃতি নিরাশাজনক।

শুভজিৎ বসাক, কলকাতা-৫০

তথ্যহীন

অতিমারিতে ভারতে কর্মসংস্থান বিপুল হারে কমেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের পরিসংখ্যান দফতরের রির্পোটে এ কথা উঠে এসেছে। সিএসও সমীক্ষা রির্পোটে বলা হয়েছে, ২০২০-২০২১ সালে মহামারির দ্বিতীয় প্রবাহের বছরে ভারতে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে ৮৬.৫ লক্ষ। কিন্তু ২০১৯-২০২০ সালে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছিল ১ কোটি ১০ লক্ষ। অর্থাৎ, এক বছরে কর্মসংস্থান কমেছে ৩৫ লক্ষ। ফলে নতুন কর্মসংস্থান কমেছে ২২ শতাংশ। এই তথ্য ইপিএফ-এর নতুন গ্রাহক সংখ্যার ভিত্তিতে তৈরি করেছে। কিন্তু ইপিএফ-এ শুধু সংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের নাম থাকে, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকের নাম থাকে না। এ দেশে ৯০ শতাংশই অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক। সংগঠিত ক্ষেত্রের ১০ শতাংশ শ্রমিকের এই দুর্দশা হলে আন্দাজ করা যায়, অসংগঠিত ক্ষেত্রের ৯০ শতাংশের হিসাব করলে কী ভয়ঙ্কর চিত্র উঠে আসবে! অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ হারিয়েছেন বিপুল সংখ্যক শ্রমিক, অনেকে পুরনো কাজে ফিরতে পারেননি।

অতিমারির অনেক আগে থেকেই দেশ আর্থিক মন্দার কারণে ধুঁকছিল। অতিমারি সেই মন্দার গতি অনেকখানি বাড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে নীতি নিয়ে চলছে, সেই নীতিরই ফল হল দেশে বর্তমান সময়ে বৃদ্ধি পাওয়া বেকার সমস্যার ভয়াবহতা। লকডাউনের শেষে সব খুলে গেলেও আজও ঘুরে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় আসেনি। শিল্পে বিনিয়োগ বাড়েনি এবং চাহিদা না থাকায় নতুন শিল্পও গড়ে ওঠেনি। দেশে যদি নতুন নতুন কলকারখানা গড়ে না ওঠে, তা হলে নতুন কর্মসংস্থান হবে কী করে? যে দেশের পরিযায়ী শ্রমিকদের মাইলের পর মাইল হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্তিতে রাস্তাতেই পড়ে মৃত্যু হয়, সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর ১২ কোটি টাকা দামের গাড়ি কেনাটা বড্ড বেমানান। সারা দেশে বার বার আলোচনায় উঠে আসছে অসংগঠিত শ্রমিকদের কাজ পাওয়ার কথা, ন্যায্য মজুরির কথা। কিন্তু তাঁদের নিয়ে সরকারের কী পরিকল্পনা রয়েছে? পরিকল্পনা তো দূরের কথা, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের সম্পর্কে সরকারের কাছে কোনও তথ্যই নেই। আর তথ্য যদি না থাকে, তা হলে পরিকল্পনা গ্রহণ করবে কী করে?

সনাতন পাল, বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর

কাঁদছে পাহাড়

আবার পাহাড় কাঁদছে। পাহাড়ি মানুষ ভাল নেই। পাহাড়ের পর্যটনের বেশির ভাগটাই নিয়ন্ত্রণ করে সমতলের ব্যবসাদার সম্প্রদায়। পাহাড়ি মানুষ বেশির ভাগই হোটেলের কর্মচারী বা গাড়ির চালক। দার্জিলিং, কালিম্পং ছাড়াও যে অসাধারণ জায়গাগুলো আছে, যেগুলোকে পাহাড়ি মানুষরা তাঁদের একক চেষ্টায় প্রকৃতিপ্রিয় মানুষদের কাছে উপহার দিচ্ছেন, সেখানে সরকারের তরফ থেকে কোনও সহযোগিতা নেই! নিজেদের খরচে দু’-তিন কিলোমিটার দূর থেকে পাইপলাইনের মধ্যে দিয়ে পানীয় জল আনছেন তাঁরা, সোলার পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ জ্বালাচ্ছেন, রাস্তা চলাচলের যোগ্য করছেন। ছোট ছোট হোমস্টে করে পর্যটকদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। কুমাই, লামাহাটা, তিনচুলে, ফাফারখেতি, দাওয়াইপানি,আরও অজস্র জায়গায় সরকার যদি একটু নজর দিত, তবে এই বাংলা পর্যটনে দেশের প্রথম স্থানে পৌঁছে যেত।

দীর্ঘ ১৫ মাস পরে পাহাড়ে পর্যটক আসা শুরু হয়েছিল। কিন্তু আবার সব স্তব্ধ করে দিচ্ছে করোনা। যখন দেখি কুমাইয়ের বিজয় থাপাকে, যিনি কার্গিল লড়াইয়ে জয়লাভ করে অবসরের পরে তাঁর ছোট্ট ডেরায় হোমস্টে বানিয়ে শেষ পর্যন্ত জীবনযুদ্ধে হেরে গিয়ে অবসাদে ডুবে যাচ্ছেন, তখন কষ্ট হয়। যখন খবর পাই পেডংয়ের রবি সাই, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হয়ে বেঙ্গালুরুর মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে ধোবি ধারার পাশে পাহাড়ের মাথায় খোলা তাঁর স্বপ্নের হোমস্টে বন্ধ করার কথা ভাবেন, তখন ওঁর যন্ত্রণাভরা মুখটা আমার চোখে ভাসে। লামাহাটা গ্রামের দুই বৌমা, ইডেন আর নাম্বুলের শ্বশুর-শাশুড়ি আর দুটো বাচ্চাকে ভাল ভাবে রাখার যে লড়াই, সেটা করোনা থামিয়ে দিয়েছে।

পাহাড়ি মানুষের ভাল ভাবে বেঁচে থাকা অনেকটাই নির্ভর করে পর্যটন ব্যবসার উপর। সমতলের পর্যটকরাই তাঁদের প্রধান ভরসা। প্রশাসনের কাছে আবেদন, পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ করছেন করুন, কিন্তু পর্যটন-নির্ভর এই পাহাড়ি মানুষগুলোর কথাও আলাদা করে ভাবা হোক।

পার্থময় চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE