Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Democracy

সম্পাদক সমীপেষু: ক্ষমতার হাত

রাজনীতিকে এড়িয়ে গিয়ে কোনও নাগরিক সমাজ নিজের কাজ ভাল ভাবে করতে পারে না। দরকার হল এর মধ্যে থেকেই এর পরিবর্তন এবং উন্নতি সাধন করা।

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২১ ০৪:২৬
Share: Save:

প্রেমাংশু চৌধুরীর ‘পুতুল নাচানোর ইতিকথা’ (৪-১১) প্রসঙ্গে বলতে চাই, সংসদীয় গণতন্ত্রের একাধিক স্তম্ভ। সংবিধান অনুসারে সামরিক বিভাগের প্রধান, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং সংবাদমাধ্যম খুবই শক্তিশালী স্তম্ভ হলেও, ক্ষমতায় এগুলির স্থান নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নীচে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর নীচে। আমরা সবাই জানি, পুতুলগুলো নাচে অদৃশ্য ওই হাতে ধরা সুতোর খেলায়। মজার কথা এই যে, রাজনীতির শীর্ষে আরোহণের জন্য কোনও শিক্ষাগত যোগ্যতা বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই, তার কোনও রূপরেখাও কোথাও লেখা নেই। এই আলো-আঁধারির মাঝখান থেকে উঠে আসেন আমাদের নেতারা, যাঁরা রাজনীতির কারিগর। আমরা, সুশীল সমাজের মানুষেরা, দীর্ঘ দিন রাজনীতিকে সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছি। এখন বুঝতে পারছি যে, তা মস্ত ভুল। রাজনীতিকে এড়িয়ে গিয়ে কোনও নাগরিক সমাজ নিজের কাজ ভাল ভাবে করতে পারে না। দরকার হল এর মধ্যে থেকেই এর পরিবর্তন এবং উন্নতি সাধন করা। দূর থেকে কেবল বিবেকবাণী আওড়ানো যায়, চায়ের কাপে তুফান তোলা যায়, হা-হুতাশ করা যায়। “আইএএস, আইপিএসদের উপর যথেচ্ছ ছড়ি ঘোরানো বিপজ্জনক” বললে বোধ হয় কম বলা হল। এটি এক মস্ত সঙ্কট। ক্ষমতা প্রদর্শনের খেলায় দড়ি টানাটানি চলছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে। শিক্ষিত মানুষ রাজনীতিকে অবহেলা করলে সমাধান হবে না। রাজনীতি যাতে একটি সুনির্দিষ্ট পেশা হতে পারে, এবং তাতেও উত্তরণের পথ রূপায়িত হতে পারে, তা ভাবতে হবে। তা হলে নেতারা ‘মানুষের সেবা করতে চাই’ বলে এই ডাল থেকে ওই ডালে দোল খাবেন না। তিনি তাঁর পেশার কাজ যথাযথ ভাবে করবেন। অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে, এখন যত তাড়াতাড়ি এটি বুঝব ততই মঙ্গল।

সুকুমার বারিক

কলকাতা-২৯

স্বঘোষিত পণ্ডিত

সর্দার বল্লভভাই পটেলের আকাশ-ছোঁয়া মূর্তি তৈরি করা, আর তাঁর মতো লৌহপুরুষের সততা, নিষ্ঠা, দৃঢ়তা অর্জন করা যে এক কথা নয়, তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দেখলে বেশ ভালই বোঝা যায়। তাই দক্ষ বাজিগরের মতো পুতুল নাচ করালেও অনুসন্ধানী ব্যক্তি সহজেই ধরে ফেলেন, কাজের উৎসটা কোথায়। আর নেহরু, বল্লভভাই পটেল প্রমুখ ব্যক্তি সংবিধান প্রবর্তন করে দেশ শাসনের সুপারিশ করেছিলেন, কিন্তু পরবর্তী কালে মন্ত্রী-আমলাদের আচরণে ব্রিটিশ শাসনের কার্বন কপিই যেন ফিরে ফিরে এসেছে। তাই বিগত ৭৫ বছর ধরে কংগ্রেস, বিজেপি-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল কেন্দ্রে বা রাজ্যে যখন যে ক্ষমতায় থেকেছে, সে নিজের স্বার্থে আইএএস, আইপিএস-সহ বিভিন্ন ধরনের সরকারি আমলাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। ওই নেতাদের ভাব এমন, যেন তাঁরা চাইলেই ওই আমলাদের মতো ডিগ্রি, যোগ্যতা হাসিল করতে পারতেন, যা প্রেমাংশু চৌধুরী সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন। এখন স্বঘোষিত পাণ্ডিত্য আর অসুস্থ রাজনীতির দৌলতে গরুর দুধে সোনা পাওয়া যায়, গণেশের মস্তিষ্ক প্লাস্টিক সার্জারির দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে, থালা বাজিয়ে, মোমবাতি জ্বালিয়ে করোনা দূর করা যায়। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হতে হলে অর্থনীতিবিদ অবশ্যই হওয়া চাই শ্রদ্ধেয় মনমোহন সিংহ কিংবা রঘুরাম রাজনের মতো, এমন শর্তই বা বর্তমান শাসক মানবে কেন? তাঁরা তো নিজেদের বিভিন্ন বিষয়ের উপরে এক এক জন বিশেষজ্ঞ বলে ভেবে আছেন ক্ষমতায় বসে ইস্তক। তাই তাঁরা যা বলবেন, করবেন, ভাববেন, সে সবে জনগণকে সম্মতি জানাতেই হবে। তাই তো রাজ্যের দক্ষ, শিক্ষিত আমলা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁদের কথামতো না চলায় নানা প্রশাসনিক নিয়মবিধির জালে আটকাতে চেষ্টা করা হয়েছে তাঁর অবসরের দিন, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেও। এটা যে শিক্ষিত, বুদ্ধিজীবী মানুষের বিবেকে এক মারাত্মক আঘাত, তা ক্ষমতার চূড়ায় বসে মোদী বুঝতে পারছেন না, বা চাইছেন না। এই রাজ্যের নির্বাচনে তার সমুচিত জবাব জনগণ দেওয়া শুরু করে দিয়েছে বলে মনে হয়। সময় হয়তো লাগবে, তবে সত্যের জয় হবেই।

মৃত্যুঞ্জয় বসু

কলকাতা-৩০

পরিযায়ী-দুর্ভোগ

‘বেঙ্গালুরুর শ্রমজীবী বাঙালি’ (২-১১) লেখাটি পড়ে এই চিঠি। বেঙ্গালুরুতে কর্মরত বাঙালি শ্রমিক বা পরিযায়ী শ্রমিকদের দিনযাপন, কাজকর্মের কথা বলা হয়েছে প্রবন্ধে। এই পরিযায়ী শ্রমিকরা শুধু বেঙ্গালুরুতে কাজ করেন, তা কিন্তু নয়। চেন্নাই, কেরল রাজ্যেও এমন বহু শ্রমিক কাজ করছেন। আমি স্বচক্ষে এমন বহু শ্রমিককে চেন্নাইতে বাড়ি ভাঙার কাজ করতে দেখেছি। চার, পাঁচতলা পুরনো পাকা বাড়ি উপর থেকে হাতুড়ি দিয়ে ভাঙতে ভাঙতে নীচের ঘর পর্যন্ত চলে আসছেন। উপরের তলায় যখন শ্রমিকরা ভাঙার কাজ করেন, তখন তাঁদের বাসস্থান হয় একবারে নীচের তলার ঘর। সেখানেই তাঁরা নিজেরাই রান্না করে খাওয়াদাওয়া করেন, রাতে ঘুমোন। নীচের তলা যখন ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন তখন সিমেন্ট, ইটের উপর শুয়ে রাতযাপন করেন। শৌচাগারের ব্যবস্থা বা বাসস্থান তেমন কিছুই থাকে না। আর চেন্নাইতে রোদের তাপমাত্রা তো জানাই যায়। প্রখর রোদের তাপে বিল্ডিং ভাঙার কাজ যেন রক্তঝরা পরিশ্রম। অথচ, বেতন খুব সামান্য।

ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা এক স্থান থেকে আর এক স্থানে যাযাবরের মতো ঘুরে ঘুরে বাড়ি ভাঙার কাজ করে বেড়ান। বৃষ্টি পড়লে তাঁরা ত্রিপল ঢেকে বসে থাকেন কিংবা শুয়ে থাকেন। সরকারি কোনও সুবিধা এঁরা পান না, কোনও প্রকল্পের আওতায় এঁরা নেই। তার‌ উপর তামিল ভাষা বলতে ও শিখতে হ্যাপা পোহাতে হয় শ্রমিকদের। বাঙালিরাই বাড়ি ভাঙার কাজ বেশি করেন। বীরভূম, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ জেলার শ্রমিকরা পেটের টানে ওই কাজ করেন চেন্নাইয়ের বিভিন্ন এলাকায়। বাড়ি ভাঙার কাজ করতে করতে দেওয়াল চাপা পড়ে অনেক শ্রমিক মারাও গিয়েছেন। মৃত্যুর পর সেই শ্রমিকের মৃতদেহ গ্রামের বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় শ্রমিকদের পরিবারকে। যাঁরা চেন্নাইতে মারা গিয়েছেন তাঁদের পরিবার কোনও ক্ষতিপূরণ পান না, কারণ এটা অসংগঠিত ক্ষেত্রের কাজ। দিন-আনা-দিন-খাওয়ার মতো কাজ করে, কঠিন পরিশ্রম করে, তবেই ওঁরা উপার্জন করেন কিছু টাকা।

এই সকল পরিশ্রমী শ্রমিককে পোর্টালে অন্তর্ভুক্ত করে সংগঠিত করা দরকার। তাঁদের কথা ও তাঁদের পরিবারের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে প্রকল্পের মাধ্যমে অনুদান পৌঁছে দিতে পারলে তাঁরা উপকৃত হবেন। এই শ্রমিকদের ছেলেমেয়েদের স্কুলমুখী করতে হবে। তাঁদের পরিবারে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে হবে।

মুন্সি দরুদ

কাজিপাড়া, বীরভূম

পাখির বাসা

করোনা-জনিত কারণে দীর্ঘ বিরতির পর অবশেষে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে রেল পরিষেবা। রেল লাইনের পরিচর্যা ও পরিচ্ছন্নতার কাজ হচ্ছে নিয়মিত। আর এটা করতে গিয়ে লৌহস্তম্ভের উপর থেকে পাখিদের বাসাগুলোকেও ভেঙে দেওয়া হচ্ছে, যা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক ঘটনা। সমস্ত প্রাণীই নিজের সন্তান-সন্ততির নিরাপত্তার ব্যাপারে অত্যন্ত সচেতন। পাখিরাও তো এর ব্যতিক্রম নয়।

সাধারণত এরা বাসা বানায় বৈদ্যুতিক তার থেকে নিরাপদ দূরত্বে। তাই জন-নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে এই সব বাসা ভেঙে দেওয়া যুক্তিহীন বলে মনে হয়। যদিও বিপজ্জনক স্থানে গড়ে ওঠা বাসা অবশ্যই সরাতে হবে বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে। আসলে যাঁরা লাইনে ঘুরে ঘুরে এই কাজটি করেন, তাঁরা অনেক সময় না বুঝেই হয়তো সমস্ত বাসা পরিষ্কার করে দেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাই এই ব্যাপারে একটু সচেতন দৃষ্টি রাখতে অনুরোধ জানাচ্ছি।

মানসী দেবনাথ

উলুবেড়িয়া, হাওড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE