Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Farm Laws

সম্পাদক সমীপেষু: কৃষিতে সঙ্কট

বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার যে তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রবর্তন করেছিল, সেটা ভাল না খারাপ সেই বিষয়ে কৃষকদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা।

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:৩৯
Share: Save:

বিশ্বজিৎ ধর যথার্থই লিখেছেন, “ভারতে কৃষি যে এখন নিতান্তই অলাভজনক একটি বৃত্তি সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে কি” (‘চাই সামগ্রিক কৃষি নীতি’, ১২-১)। বর্তমান সময়ে বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, বর্ষার ধান চাষ করে সার, কীটনাশক, জল, শ্রমিক, সব মিলিয়ে যে খরচ হয়েছে, ধানের ফলন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ তার থেকে অনেক কম। অনেক ভাগচাষি, বর্গাদার আর চাষ করতেই চাইছেন না, জমির মালিককে জমি ছেড়ে দিতে চাইছেন। জমির মালিকরাও ভীত, হয়তো জমিগুলো পতিত হয়েই থাকবে। গ্রামাঞ্চলের এমন পরিস্থিতি এই পত্রলেখকের নির্মম অভিজ্ঞতা। কয়েক বছর আগেও গ্রামের কৃষকদের বাড়িতে কমপক্ষে একজোড়া বলদ-গরু থাকতই। আজ অনেকের বাড়িতেই শূন্য গোয়াল পড়ে আছে।

বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার যে তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রবর্তন করেছিল, সেটা ভাল না খারাপ সেই বিষয়ে কৃষকদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। আজও অনেক কৃষক জানলেন না, ওই তিনটি কৃষি আইনে কী ছিল! এটা বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যর্থতা। এ কথা সত্য যে, কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ ছাড়া কৃষকদের উন্নতি কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। কেন্দ্রের কিসাননিধি বা রাজ্যের কৃষকবন্ধু প্রকল্পের টাকা জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীকে প্যারাসিটামল প্রয়োগের মতো। কৃষকদের দুর্দশা দূরীকরণ করতে হলে বড় বড় কর্পোরেট হাউসগুলোকে এগিয়ে আসতেই হবে। তা যদি সম্ভব না হয়, তবে গ্রামের চাষিদের বর্তমান প্রজন্ম চাষবাসে ইতি টানবেন খুব শীঘ্র। এখন অনেকেই চাষ ছেড়ে ভিনরাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন, নয়তো রাজমিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি— এই সব কাজে নিজেদের নিয়োজিত করছেন। তাই আমিও লেখকের সঙ্গে একমত, চাই সামগ্রিক কৃষি নীতি। সহমত তৈরি করে এমন ভাবে এগোতে হবে, যাতে কৃষকরা নিশ্চিত হতে পারেন যে, তাঁদের আর্থিক উন্নয়ন এবং নিরাপত্তার জন্যই আইন সংস্কারের দিকে এগোচ্ছে সরকার।

কমলেন্দু বিকাশ রায়

রামপুরহাট, বীরভূম

বিধির সম্মান

সম্প্রতি আমেরিকায় মানবদেহে শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের পরেই হঠাৎ করে অসমের চিকিৎসক ধনীরাম বরুয়ার নাম সংবাদমাধ্যম ও সমাজমাধ্যমে উঠে এসেছে (‘শূকরের হৃদ‌্‌যন্ত্র: ২৫ বছর আগে বসান ধনীরাম’, ১৩-১)। বলা হচ্ছে যে, এই প্রতিস্থাপন তো বরুয়া আগেই করেছিলেন। কেউ কেউ আবার বরুয়াকে আইভিএফ পদ্ধতির জনক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও তুলনা করছেন, যা একেবারেই অতিকথন। অনেকে বরুয়ার সঙ্গে আমেরিকান সার্জন বার্টলে গ্রিফিথ-এর তুলনা টানছেন। দাবি করছেন, গ্রিফিথ শ্বেতাঙ্গ বলে তাঁকে নিয়ে এত নাচানাচি হচ্ছে। মুশকিল হল, গ্রিফিথ হৃৎপিণ্ডটা বসিয়েছেন মাত্র। তার আগে দশ বছর ধরে বহু বিজ্ঞানী যে শূকরের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করছিলেন, সেটা ভুললে চলবে না।

ধনীরাম বরুয়া খুব প্রতিষ্ঠিত ও সফল এক জন কার্ডিয়াক সার্জন ছিলেন। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিতেশ্বর শইকিয়া তাঁকে অসমে ওপেন হার্ট সার্জারির ক্লিনিক বানাতে অনুরোধ করেছিলেন। বহু রোগী তাঁর অপারেশনে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু গোলমাল বাঁধল ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে, যখন তিনি পূর্ণ শইকিয়া নামে ৩২ বছরের এক কৃষকের দেহে শূকরের হৃদয় প্রতিস্থাপন করলেন। পূর্ণের দেহ এই প্রতিস্থাপন প্রত্যাখ্যান করে। প্রবল প্রতিক্রিয়া ও সংক্রমণে পূর্ণ মারা যান। ধনীরাম বরুয়া দাবি করেন, সেই হৃৎপিণ্ড কাজ করেছিল এবং পূর্ণ সাত দিন বেঁচেছিলেন। কিন্তু তার কোনও ক্লিনিক্যাল রেকর্ড আছে কি না, জানা যায় না। অনেকে মনে করেন, খুব সম্ভবত পূর্ণ অপারেশনের পর পরই মারা গিয়েছিলেন। বরুয়ার নামে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু হয়, ৪০ দিন জেলে থাকার পরে তিনি জামিন পান, এবং বেরিয়ে এসে সরকারের বিরুদ্ধে ৫২০০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণের মামলা করেন। এর পর তিনি গবেষণা চালিয়ে যান এবং অদ্ভুত সব দাবি করতে থাকেন। যেমন, মানবদেহে শূকরের রক্ত দেওয়া যায়, হিমালয়ের ভেষজ দিয়ে এইচআইভি সারিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু এ সবের সমর্থনে কোনও ক্লিনিক্যাল রেকর্ড বা প্রকাশিত গবেষণাপত্র পাওয়া যায় না। পূর্ণ শইকিয়ার মৃত্যুর মামলাতে ওঁর কোনও সাজা হয়েছে বলে শোনা যায়নি।

অনেকেই মনে করেন, ধনীরাম বরুয়া ভারতে বসে ব্যতিক্রমী, উদ্ভাবনী চিন্তা করেছিলেন, তাই ওঁর এত দুর্দশা। তা মেনে নিলেও কিছু প্রশ্ন থাকে। কোনও উদ্ভাবনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ বা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে মানুষ ব্যবহারে কঠোর নিয়ম রয়েছে। আমরা জানি, বন্দিদের উপর কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে নাৎসি ডাক্তাররা নানাবিধ ভয়ানক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন। নুরেমবার্গ ট্রায়ালে তার বীভৎসতার কথা উঠে এসেছিল। ১৯৬৪ সালে ওয়ার্ল্ড মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের হেলসিঙ্কি ঘোষণার মাধ্যমে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে মানুষ ব্যবহারের রীতিকে খুব শক্ত একটি আন্তর্জাতিক নিয়মের মধ্যে বেঁধে ফেলা হয়। পরে বহু বার তাতে ছোট ছোট সংযোজন বা সংশোধন করা হয়েছে।

প্রথম প্রশ্ন, বরুয়া কি সে সব নিয়ম মেনে চিকিৎসা করেছিলেন? রোগী ও রোগীর পরিবারকে সমস্ত ঝুঁকি বুঝিয়ে লিখিত সম্মতি নিয়েছিলেন? সম্প্রতি আমেরিকায় প্রতিস্থাপিত ব্যক্তি ডেভিড বেনেট ও তাঁর পরিবার সম্মতি দিয়েছিলেন। বরুয়ার দাবি, তিনি সম্মতি নিয়েছেন। কিন্তু তার প্রমাণ মেলেনি।

দুই, শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন ছাড়া পূর্ণের বাঁচার কোনও সম্ভাবনাই নেই, এ বিষয়ে ডাক্তারদের কোনও প্যানেলে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছিল কি? যেমন, ডেভিডের বাঁচার অন্য কোনও উপায় নেই দেখে আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অথরিটি তাঁর দেহে শূকরের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের আপৎকালীন অনুমতি দেয়। না হলে গ্রিফিথকেও জেলে পোরা হত। বরুয়ারও কি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ-এর অনুমতি নেওয়ার দরকার ছিল না?

তিন, সরাসরি রোগীর দেহে প্রতিস্থাপনের আগে কী কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে, তার কোনও প্রমাণও ধনীরাম বরুয়া পেশ করতে পারেননি, চিকিৎসার নৈতিকতার দৃষ্টিতে যা অপরাধ। চার, অন্য প্রাণীর অঙ্গ মানবদেহে ঢোকালে প্রতিক্রিয়া ও মৃত্যুই স্বাভাবিক। ডেভিড বেনেটের ক্ষেত্রে অঙ্গদাতা শূকরের দেহে দশটি জিনের পরিবর্তন ঘটানো হয়েছিল। মানুষের দেহে অঙ্গটি সহনীয় করতে চারটি জিন নিষ্ক্রিয় করা হয়, এবং শূকরটির জিনোমে ছয়টি মানব জিন ঢোকানো হয়। বরুয়ার পথ ধরে চললে কোনও চিকিৎসক মনে করতে পারেন, এত গবেষণার কোনও দরকারই নেই।

যদি আমরা ধনীরাম যুগের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন বলে তাঁর বন্দনা শুরু করি, তার অর্থ দাঁড়ায় আমরা হেলসিঙ্কি ঘোষণাকে লঙ্ঘন করে উদ্ভাবনী চিকিৎসার নামে যার যেমন খুশি মানবশরীরকে ব্যবহার করার ছাড়পত্র দিয়ে দিতে চাইছি, যা পরিণামে উৎসাহ দেবে প্রভূত ক্ষমতাশালী বড় বড় ওষুধ কোম্পানিকে, যারা মানুষকে গিনিপিগ বানিয়ে তাদের ওষুধের পরীক্ষা বা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল করতে চায়। সে ক্ষেত্রে কিন্তু তাদের প্রধান শিকার হবেন তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষরাই।

নির্মাল্য দাশগুপ্ত

স্যান ডিয়েগো, আমেরিকা

দামে হেরফের

বেশ কয়েক বছর ধরে খোলা বাজারে জিনিসের ওজন ও দামের মধ্যে একটা ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক ক্রমশ অস্বাভাবিক হয়ে উঠছে, বিশেষত কাঁচা আনাজের ক্ষেত্রে। এক কেজির দাম তিরিশ টাকা, হাফ কিলো কুড়ি আর একশো গ্রাম দশ টাকা— দোকানদার এই ভাবে একই জিনিসের ভিন্ন ভিন্ন দাম এক নিশ্বাসে জানিয়ে দিচ্ছেন। প্রচুর দরিদ্র, অণু পরিবারের সদস্য বা নিঃসঙ্গ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা এতে অবিচারের শিকার হচ্ছেন। এই বিষয়ে রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আনন্দ বক্সী

কলকাতা-৮৪

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Farm Laws
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE