Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Football Training

সম্পাদক সমীপেষু: প্রয়োজন প্রশিক্ষণ

যে খেলা যেমন পরিচর্যা দাবি করে, তা মেনে মূল খেলা খেলতে হয় খেলোয়াড়কেই। খেলোয়াড় তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রথম কাজ প্রতিভা বাছাই পর্বে শারীরিক গঠন বা খেলায় আগ্রহের বিষয়ে নজর দেওয়া।

এই ধরনের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ খেলার প্রস্তুতি পর্বে প্রতিটি ফুটবলারের দরকার।

এই ধরনের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ খেলার প্রস্তুতি পর্বে প্রতিটি ফুটবলারের দরকার। ফাইল ছবি।

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৩ ০৪:২২
Share: Save:

ইন্দ্রজিৎ রায়ের ‘ক্রিকেটে পারি, ফুটবলে পারি না’ (২৪-১২) শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলি, বিষয়টিকে শারীরিক গঠন, উপযুক্ত পরিমাণ পুঁজি বা সরকারি-বেসরকারি সাহায্যের নিরিখে আলোচনায় সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। খেলাধুলোর প্রতি ইঞ্চিতে রয়েছে বিজ্ঞান। সেই সঙ্গে দরকার লেগে থাকার মানসিকতাও। যে খেলা যেমন পরিচর্যা দাবি করে, তা মেনে মূল খেলা খেলতে হয় খেলোয়াড়কেই। তাই, খেলোয়াড় তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রথম কাজ প্রতিভা বাছাই পর্বে শারীরিক গঠন বা খেলায় আগ্রহের বিষয়ে নজর দেওয়া। ছেলেমেয়েদের মধ্যে স্কুল স্তর থেকে তা চিহ্নিত করতে হবে। এর পর থাকে ফিটনেস ট্রেনিং। শারীরিক সক্ষমতা যাচাইয়ের বিভিন্ন ব্যায়াম অনুশীলন, বিভিন্ন স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ়, কার্ডিয়ো-ভাস্কুলার টেস্ট করিয়ে দম বা সহনশীলতা বাড়ানোর অনুশীলনের ক্ষমতা যাচাই করা হয়। আসলে, খেলায় টেকনিক বা কৌশল যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ পুরো খেলায় টিকে থাকার বা ধকল নেওয়ার শারীরিক সক্ষমতা। এ ক্ষেত্রে, ঘণ্টা দুয়েকের সহনশীলতা বা দম ধরে লড়ে যাওয়ার দক্ষতা বজায় রাখতে হয়, যাকে ট্রেনিং-এর পরিভাষায় বলা হয় ‘এনডিয়োর‌্যান্স ট্রেনিং’। এটা শুধু একটা প্রমাণ সাইজ়ের ফুটবল মাঠে খেলতে নামার আগে দু’পাক দৌড়ঝাঁপ বা গা গরম করা নয়, এর জন্য চাই পেশির ক্ষমতা বাড়ানো বা শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ানো। এ ছাড়াও রাখতে হয় ‘ওয়েট ট্রেনিং’ শিডিউল, যাতে ‘বডি কন্ট্যাক্ট গেম’-এ বিপক্ষের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার মতো শারীরিক শক্তি থাকে। এই ধরনের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ খেলার প্রস্তুতি পর্বে প্রতিটি ফুটবলারের দরকার।

ক্রিকেটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে বিশ্বের বারো-তেরোটা ক্রিকেট-খেলিয়ে দেশের মধ্যেই লড়াইটা সীমাবদ্ধ থাকে। ওই খেলার বিজ্ঞাপন ও স্পনসরশিপ থেকে টাকা আসে। অন্যান্য খেলা মার্কেটিং-এ বা প্রচারে মার খায়। ফুটবল বিশ্বকাপে ফুটবল-খেলিয়ে দু’শোর বেশি দেশের মধ্যে থেকে বাছাই পর্বের মুখোমুখি হয়ে শেষ পর্যন্ত মোট ৩২টি দল জায়গা করে নিতে পারে মূল পর্বে। লাটিন আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকার ফুটবল খেলার আবহ, পরিকাঠামো তাদের খেলোয়াড়দের দেশে-বিদেশের বিভিন্ন পর্বের টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগের মাধ্যমে একে অপরকে জানা ও খেলোয়াড়ভিত্তিক শৈলী দেখার সুবিধা করে দেয়। এই সুযোগগুলিও সব দল বা খেলোয়াড়কে অনেকটা এগিয়ে দেয়। যেমন, এশীয় মহাদেশের জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া কাতার বিশ্বকাপে তাদের ফুটবল মুনশিয়ানার প্রদর্শন করে প্রি-কোয়াটার ফাইনাল পর্বে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়, যা সত্যিই অনুকরণযোগ্য। তাই, ভারতের খেলাধুলোকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হলে ফুটবলের মাথাদের আন্তর্জাতিক মানের উন্নত ভাবনা ভাবতে হবে।

সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪

অধরা স্বপ্ন

ভারত কি কোনও দিন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলবে? যত দিন যাচ্ছে উত্তর দেওয়ার কাজটা তত শক্ত হয়ে উঠছে। আশির দশকের মাঝামাঝি মারাদোনা ম্যাজিকের তুঙ্গ সময়ে আমরা ডেডলাইন রেখেছিলাম ২০০২ সাল। পরিকাঠামোগত অনেক অসুবিধা কাটাতে সামনে আশা-ভরসা ছিল টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমি বা সাই-এর মতো কিছু প্রতিষ্ঠান। প্রতিভাবান কিশোর ফুটবলারদের বাছাই করে শরীর গঠন এবং খেলাধুলোর সঙ্গে শুরু হয় স্কলারশিপ ও কর্পোরেট স্পনসরশিপ। আরও বেশ কিছু পরিবর্তন হল। সত্তর মিনিটের কলকাতা লিগ ম্যাচ বাতিল হয়ে সব খেলাই নব্বই মিনিটের করা হল। চালু হল দেশজোড়া জাতীয় লিগ। দলগুলোয় যুক্ত করা হল বিদেশি খেলোয়াড়। তার পর বিদেশি কোচ ও ক্রমশ সাপোর্ট স্টাফদের। প্র্যাকটিস ও খেলার মাঠের মানে বিপুল আধুনিকীকরণ-সহ এল অনেক সুযোগ-সুবিধা। যেমন, স্পোর্টস মেডিসিন, ডায়েট, জিমন্যাশিয়াম বা মনোবিদের কাউন্সেলিং সাপোর্ট ইত্যাদি। কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ বাড়ানো হল। ক্লাব ও ফেডারেশন প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করল। কিন্তু র‌্যাঙ্কিং-এ তার প্রতিফলন ঘটল না। আশির দশকে যেখানে জাপান তুল্যমূল্য প্রতিপক্ষ ছিল, তারাই এখন অনেক এগিয়ে গিয়েছে। চিনও তাই। আর কোথায় আমরা? এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছি। কেন এত পিছিয়ে? দমে, ফিটনেসে, না কি মানসিকতায়? পাশাপাশি তুলনা করা যাক হকি খেলার সঙ্গে। ভারত সেখানে বিশ্বর‌্যাঙ্কিং-এ রয়েছে ছ’নম্বরে। অর্থাৎ, মান যথেষ্ট ভাল।

এর দাওয়াই কী? এক নম্বর খামতি মনে হয়, বিদেশি দলের সঙ্গে না খেলা। এআইএফএফ-এর কাছে প্রত্যাশা, এ ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করে এএফসি ও ফিফার সাহায্য নিয়ে বাছাই খেলোয়াড়দের প্যানেল তৈরি করা এবং জাপান, চিন, দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি এশিয়ার দেশের লিগে তাঁদের খেলানোর ব্যবস্থা করা। আমাদের দেশের ফুটবল ক্লাবগুলোকেও এই উদ্যোগে শামিল হতে হবে। ফুটবলে ভারতের মতো পিছিয়ে পড়া দেশের জন্য ফিফাকে নিতে হতে পারে এ ধরনের কিছু বিশেষ উদ্যোগ। সঙ্গে বিভিন্ন ভারতীয় বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের নাগরিকত্ব দিয়ে দেশের হয়ে খেলানো হোক।

আর চাই রেফারিং ও খেলার মাঠের মানের উন্নতি। ফুটবলারদের এনডিয়োর‌্যান্স ও স্ট্যামিনা বাড়াতে প্র্যাকটিস ম্যাচে বাছাই ন’জনকে খেলানো হোক এগারো জনের দলের বিরুদ্ধে। এ ভাবেই তৈরি হতে পারে নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা। আর স্কিলের সঙ্গে গা বাঁচানো নয়, গতিময় ও শরীরী ফুটবল খেলার দিকে নজর দেওয়া হোক প্রাথমিক জুনিয়র স্তর থেকে। পাঁচ বছরের পরিকল্পনা ও অ্যাকশন প্ল্যানে থাকুক এশিয়ার প্রথম বারোটা দলের মধ্যে আসা। আর, খেলোয়াড় নির্বাচন এবং খেলার প্রশাসনে আসুক রাজনীতিমুক্ত স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা। নিয়োগ করা হোক টিসিএস-এর মতো দক্ষ কনসালটেন্সি সার্ভিস সংস্থা বা কোনও প্রথম সারির গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে, যারা এই লক্ষ্যপূরণে সাহায্য করতে পারে। এই ভাবে এগোলে নিশ্চয়ই সাফল্য আসবে। সেই দিনগুলির দিকেই তাকিয়ে আছে সমগ্র ভারত।

তাপস দে, কলকাতা-৬১

অভাব টাকার

ইন্দ্রজিৎ রায়ের প্রবন্ধ সম্বন্ধে দু’-একটি কথা বলতে চাই। শহরাঞ্চলে প্রয়োজনীয় ফুটবল খেলার উপযুক্ত মাঠ নেই, এ কথা ঠিক। তবে বর্তমানে ফুটবল খেলার চর্চা একেবারে কমে গিয়েছে, তা একটু লক্ষ করলেই বুঝতে পারা যায়। শহরাঞ্চলে যদি বা একটু চর্চা আছে, গ্রামাঞ্চলে তার ছিটেফোঁটাও নেই। তা ছাড়া খেলার মানও অত্যন্ত পড়ে গিয়েছে। বিশ্বকাপ ফুটবলে ভারতের পক্ষে অংশগ্রহণ করতে না পারার কারণ শুধু খেলার মাঠ হতে পারে না। ভারতের ফুটবল কর্মকর্তাদের দূরদর্শিতার অভাব সবচেয়ে বড় কারণ। ক্রিকেট কর্মকর্তারা যে ভাবে ক্রিকেটকে বিপণন করতে পেরেছেন, ফুটবল কর্মকর্তারা তা করতে পারেননি। ভারত ১৯৭০ সালেও এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিল। তখন থেকেও যদি ফুটবল কর্মকর্তারা শিল্পসংস্থার বদান্যতা লাভের জন্য চেষ্টা করত, তবে আজ ভারতীয় ফুটবলের এই দৈন্যদশা হত না বলেই বিশ্বাস। পেশাদারিত্ব ছাড়া কোনও খেলাই উন্নত হতে পারে না। আর পেশাদারিত্ব আনতে হলে শিল্প মহলের বদান্যতা অবশ্যই চাই। ফুটবল খেলে ক্রিকেটের মতো বিজ্ঞাপন ও স্পনসরশিপ থেকে টাকা উপার্জনের সুযোগ থাকলে অবশ্যই খেলাটির সংস্কৃতিও বদলে যেত।

বর্তমান ক্রিকেটের মতো অলিগলিতে ফুটবল অ্যাকাডেমি গড়ে উঠত। চাহিদা মেনে আপনাআপনি গড়ে উঠত ফুটবল পরিকাঠামোও। আমাদের দেশে ফুটবল সংস্কৃতি গড়ে ওঠার সব অনুকূল পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও আমরা তা হেলায় হারিয়েছি। ফলে এখন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্সকে সমর্থন করে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো ছাড়া আর উপায় কী?

নিশানাথ ভট্টাচার্য, আনগুনা,পূর্ব বর্ধমান

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE