বিতর্কিত গোল
‘রশ্মি-বিতর্কে বিদ্ধ ইংল্যান্ড, তদন্তের নির্দেশ’ (৯-৭) শীর্ষক প্রতিবেদনে ১৯৬৬-র বিশ্বকাপ ফাইনালের বিতর্কিত গোল প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে, “জার্মানরা আজও বিশ্বাস করেন, হার্স্টের সেই শট বারে লেগেছিল। গোলে ঢোকেনি।” এখানে একটু তথ্য-বিভ্রাট ঘটেছে। আসলে শটটি ক্রসবারে লেগে ড্রপ খায়। এর পরেই জার্মান গোলরক্ষক বলটিকে চাপড় মেরে বার করে দেন। রেফারি লাইন্সম্যানের নির্দেশে গোল ঘোষণা করেন। তাঁদের মনে হয়েছিল, ক্রসবারে লেগে বলটি নীচে ড্রপ খাওয়ার সময় গোললাইন অতিক্রম করেছিল। জার্মান ফুটবলারদের বক্তব্য ছিল, বলের যতটা অংশ অতিক্রম করলে গোলের সঙ্কেত দেওয়া যায়, ততটা অতিক্রম করেনি। রিপ্লেতেও বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জার্মানরা আজও মনে করেন, নিজেদের মাঠে ইংল্যান্ড তাদের অন্যায় ভাবে হারিয়েছিল।
প্রদীপনারায়ণ রায়
শক্তিপুর, মুর্শিদাবাদ
বর্ণহীন
দর্শকবিহীন, উল্লাসবিহীন, আনন্দবিহীন ভাবে টোকিয়োর স্টেডিয়ামগুলিতে অনুষ্ঠিত হবে ৩২তম অলিম্পিক্স। বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশের খেলোয়াড়, কর্মকর্তারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যথারীতি বর্ণময় পোশাকে সজ্জিত হয়ে মার্চ-পাস্ট করবেন। কিন্তু তাঁদের দেখে হাততালিতে ভরিয়ে দেবেন না গ্যালারিতে বসে থাকা হাজার হাজার দর্শক। চারিদিকে থাকবে শুধুই নিস্তব্ধতা, কারণ করোনার জন্য টোকিয়ো অলিম্পিক্সের স্টেডিয়ামে দর্শকের প্রবেশ নিষিদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯১৬ সালে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪০ ও ১৯৪৪ সালে অলিম্পিক্স অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। কিন্তু বিশ্বে ইতিপূর্বে কখনওই দেখা যায়নি যে, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি ভাইরাস তার অসীম শক্তির পরিচয় দিয়ে সারা পৃথিবীকে দুরমুশ করে দিয়েছে। তাই আন্তর্জাতিক অলিম্পিক্স কমিটি বাধ্য হয়েছে সম্পূর্ণ দর্শকবিহীন ভাবেই টোকিয়ো অলিম্পিক্সের আসর বসাতে।
প্রাণহীন, জৌলুসহীন এ বারের টোকিয়ো অলিম্পিক্সে কি ভারতীয় প্রতিযোগীরা পারবেন প্রাণ ফিরিয়ে আনতে? টোকিয়োর স্টেডিয়ামগুলি দর্শকশূন্য থাকল কি থাকল না তাতে কিছুই যায় আসে না, যদি আমরা দূরদর্শনের দৌলতে দেখতে পাই যে, অনেক আশার সঞ্চারকারী ভারতীয় শুটারদের অনেকেই একাধিক পদক জয় করে আমাদের ভরিয়ে দিচ্ছেন। যদি তিরন্দাজিতে এই বঙ্গের অতনু দাস ও তাঁর স্ত্রী দীপিকা কুমারীর অলিম্পিক্সে প্রথম পদক জয়ের সাক্ষী থাকতে পারি, বা যদি দেখি বক্সিংয়ে বিশ্বের এক নম্বর অমিত পঙ্ঘাল সোনা জিতলেন, অসম্ভব আনন্দ হবে। দেখা গেল হয়তো বজরং পুনিয়া, বিনেশ ফোগতরাও ফাইনালে দারুণ প্যাঁচে বিপক্ষের প্রতিযোগীকে ধরাশায়ী করে অবিশ্বাস্য ভাবে সোনা জয়ের স্বাদ এনে দিলেন। আশা করতে বাধা নেই, হয়তো ব্যাডমিন্টনে গত রিয়ো অলিম্পিক্সের অধরা সোনাটি জয় করে আনতে পারলেন আমাদের সোনার মেয়ে পি ভি সিন্ধু! আবার এমনও তো হতে পারে যে, ফেন্সিং, জিমন্যাস্টিক্স, টেবিল টেনিস, জুডো, সাঁতার, রোয়িং, সেলিং বা গল্ফ থেকে কোনও ভারতীয় প্রতিযোগী বা প্রতিযোগীরা দুরন্ত জয়ে জিতে নিলেন পদক! এঁদের জয়ের সেই মুহূর্তগুলো যদি সরাসরি দূরদর্শনে আমরা দেখতে পাই, আমাদের কাছে তখন দর্শকহীন, বর্ণহীন, আনন্দহীন, প্রাণহীন টোকিয়ো অলিম্পিক্সের চেহারা আনন্দে ঝলমল করে উঠবে।
ভারতের আলো-ঝরানো পারফরম্যান্সই টোকিয়ো অলিম্পিক্সকে ভারতীয়দের কাছে বর্ণহীন থেকে বর্ণময় করে তুলবে।
তাপস সাহা
শেওড়াফুলি, হুগলি
ফুটবল ও নায়ক
সালটা ১৯৮০। এখনকার মুম্বই, তখনকার বম্বেতে রোভার্স কাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা চলছে। সেমিফাইনালের আগে মুম্বই পৌঁছলাম মোহনবাগানের খেলা দেখার জন্য। প্রথম দিন মোহনবাগান দু’গোলে এগিয়ে গিয়েও ইস্টবেঙ্গল দু’গোল শোধ করল। তখনকার নিয়ম অনুযায়ী, দ্বিতীয় দিন আবার খেলা শুরু হল। খেলা হচ্ছে ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামে। দ্বিতীয় দিনেও খেলা শুরু হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যে মোহনবাগান এক গোলে এগিয়ে গেল। তার পরই মারাত্মক রকমের ফাউলের জন্য ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণভাগের এক জন খেলোয়াড়কে রেফারি লাল কার্ড দেখালে খেলোয়াড়টি মাঠ ছেড়ে না বেরিয়ে রেফারির হাত থেকে লাল কার্ডটি কেড়ে নিয়ে মাঠে ফেলে দিল। খেলা বন্ধ। প্রবাদপ্রতিম ফুটবলার এবং মোহনবাগান ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা শৈলেন মান্না গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন। মাঠের পরিস্থিতি দেখে মান্নাদা মাঠে গিয়ে রেফারির সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে এলেন। খেলা আবার শুরু হল। খেলার ফলাফল হল মোহনবাগান এক, ইস্টবেঙ্গল দুই। মোহনবাগান হেরে গেল।
মন খারাপ অবস্থায় আমি আর মান্নাদা মাঠ থেকে বেরোতে যাচ্ছি, হঠাৎই ‘মিস্টার মান্না’ বলে ডাক। আমরা দু’জন ফিরে তাকাতেই দেখি তখনকার একমেবাদ্বিতীয়ম্ অভিনেতা এবং সেই সময়কার মুম্বইয়ের শেরিফ খেলা-অন্তপ্রাণ দিলীপ কুমার। দিলীপ কুমারকে ঘিরে সাত-আট জন। আমিও তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলাম। কুশল বিনিময়ের পর দিলীপ কুমার মান্নাদাকে বিরক্তি সহকারে বললেন, মোহনবাগান ক্লাব যদি আজ ইনজাংশন দেয়, তা হলে রোভার্স কাপের খেলা বন্ধ হয়ে যাবে। মান্নাদা মৃদু হেসে বললেন, কিসের জন্য ইনজাংশন? দিলীপ কুমার বললেন, ইস্টবেঙ্গল দলের এক জন খেলোয়াড়কে রেড কার্ড দেখালেন রেফারি, তার পরেও খেলে গেল। মাঠ থেকে বার হল না। মাঠের এত লোক দেখলেন, এর জন্যই ইনজাংশন। মান্নাদা বললেন, মোহনবাগান ক্লাব কখনও খেলা নিয়ে কোর্টকাছারি করে না। মাঠের রেজ়াল্ট মাঠে রেখেই চলে যায়।
তার পর মান্নাদা আমাকে বললেন, “চল”। বললাম, আপনি যান, আমি পরে যাচ্ছি। মান্নাদা চলে গেলেন। আমি বিভোর হয়ে দিলীপ কুমারের কথা শুনছি। দিলীপ কুমার তখন বললেন, এই হচ্ছে মোহনবাগান ক্লাব। আমরা সকলেই এক-একটা টিমের সাপোর্টার। নিজের বুকে হাত রেখে বললেন, আমি মহমেডানের সাপোর্টার, এখানে কেউ ইস্টবেঙ্গলের সাপোর্টার, কেউ মোহনবাগানের। কিন্তু আমরা সম্মান করি মোহনবাগানকে তাদের স্পোর্টসম্যান স্পিরিটের জন্য।
সে দিনের হারের দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর চলে যাওয়ার দুঃখ ভুলব কেমন করে?
সুশান্ত ঘোষ
কলকাতা-৮০