ইন্দ্রজিৎ রায়ের লেখা ‘পাঁচ দিনের জীবনযুদ্ধ’ (৪-৮) প্রবন্ধটি পড়ে আমাদের শৈশবের অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল। তখন ক্রিকেট মানে আমরা বুঝতাম টেস্ট ক্রিকেট, পাঁচ দিনের এক যুদ্ধ। ভারত বনাম ইংল্যান্ড, নিউ জ়িল্যান্ড, পাকিস্তান কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজ়— সব দলই ছিল সমান শক্তিধর। এখনকার মতো দূরদর্শনের পর্দায় খেলা দেখার সৌভাগ্য হত না। কারণ, তখনও দূরদর্শন আসেনি। আমাদের কাছে তখন বেতারে খেলার ধারাভাষ্য শোনার মজাই ছিল আলাদা।
ছবির মতো চোখের সামনে ভেসে উঠত— “ইডেন উদ্যান থেকে বলছি অজয় বসু... আমার সঙ্গে আছেন কমলদা মানে কমল ভট্টাচার্য আর আছেন পুষ্পেন সরকার।” ছুঁয়ে যেত ধারাভাষ্যকারের কণ্ঠের সম্মোহনী জাদু আর মাদকতা। কোনও ইংরেজি না বলে অনর্গল বাংলা ভাষায় ধারাভাষ্য শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল এই ত্রয়ীর দৌলতে। কী দাপটের সঙ্গে ময়দানের ক্রিকেট-যুদ্ধের ছবি তুলে ধরতেন বেতারের অপর প্রান্ত থেকে। খেলোয়াড়দের পায়ের ভঙ্গি থেকে শুরু করে ব্যাটের আঘাতে বল কী ভাবে ইডেনের সবুজ গালিচার বুক চিরে আকাশবাণী ভবনের দিক থেকে হাই কোর্ট প্রান্তে চলে গেল... সোজা চার... সেই বর্ণনা নিখুঁত ভাবে দিতেন তাঁরা। শীতের দুপুরে মিঠে রোদে বসে কমলালেবুর খোসা ছাড়িয়ে খেতে খেতে বেতারের এই ধারাভাষ্য শোনার আমেজই ছিল আলাদা।
এই প্রসঙ্গে একটা ছোট ঘটনা বলি। আমার মেজদা খুব খেলাপাগল ছিলেন। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের ফুটবল খেলার সময় উত্তেজনায় জ্বর এসে যেত। আবার ক্রিকেটেরও ভক্ত সেই রকম। এক শীতের দুপুরে আমরা দুই ভাই আর বাবা বেতারে ক্রিকেট শুনছি। আমার এক দিদি অন্য এক অনুষ্ঠান শুনবে, তাই অন্য কেন্দ্র ঘোরাবে। এই নিয়ে তর্কাতর্কি... চিৎকার চেঁচামেচি করতে করতে মেজদা দিল বেতার যন্ত্রটি ছুড়ে ফেলে। ব্যস! টুকরো টুকরো হয়ে গেল গোটা সেটটি।
সেই উত্তেজনাপূর্ণ দিনগুলি এখন মোবাইলের পর্দায় হারিয়ে গেল।
তমাল মুখোপাধ্যায়, ডানকুনি, হুগলি
তাপপ্রবাহ
‘গরমের ফাঁদ’ (১১-৭) সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে বলি, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত কয়েক বছরের মতো এ বছরও ইউরোপের বিভিন্ন শহরে তাপমাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে তাপপ্রবাহের কারণে। কোথাও ৪০ ডিগ্রি, কোথাও ৪৬ ডিগ্রি, কোথাও আবার ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁইছুঁই করেছে পারদ। কোনও কোনও জায়গায় দিনের উষ্ণতম সময়ে ঘরের বাইরে বার না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রশাসন। পরিবেশবিদরা বহু দিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন— জীবাশ্ম-জ্বালানির ব্যবহার কম করতে না পারলে উষ্ণায়ন কমবে না। কিন্তু উন্নয়নের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়া মানুষ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে লাগাম টানতে না পারার কারণেই, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলিতেও তীব্র গরম এখন প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, এই হারে তাপ বৃদ্ধির ধারা চলতে থাকলে তার মোকাবিলা করা মানুষের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, কার্বন নিঃসরণে রাশ না টানলে ২০৩৬ থেকে ২০৬৫ সাল নাগাদ এই তাপপ্রবাহ আরও অনেক বেশি সময় ধরে চলতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে প্রকৃতি, পরিবেশ ও মানুষের জীবনে নানা সঙ্কট ঘনিয়ে এলেও আমেরিকা-সহ বেশ কিছু উন্নত দেশের কোনও হেলদোল নেই। দ্বিতীয় বার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন যে, আমেরিকা প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাবে। তিনি তাঁর প্রথম মেয়াদেও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি মেনে চলতে অস্বীকার করেছিলেন। আমেরিকার কার্বন নিঃসরণকারী শিল্পক্ষেত্রগুলিকে আরও উৎসাহ দেওয়া হয়েছিল।
নানা উদ্ভট অবৈজ্ঞানিক ধারণা প্রচারের জন্য তিনি ইতিমধ্যেই কুখ্যাত। এই সব চিন্তা-ভাবনার পরও তিনি আবার বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় ফিরেছেন। তাই বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে সারা বিশ্বের বৈজ্ঞানিকরা যা বলছেন, ট্রাম্প যে তার সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে হাঁটবেন, সে নিয়ে সন্দেহ নেই। পৃথিবীর অন্যতম শক্তিধর ও উন্নত দেশ যদি বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে উদাসীন থাকে, তা হলে অন্য বহু উন্নত দেশই জীবাশ্ম-জ্বালানির ব্যবহার কমাতে সচেষ্ট হবে না। তার পরিণাম হবে ভয়ঙ্কর।
রবীন রায়, শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
ন্যায্য মজুরি
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-র তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রায় ২ থেকে ৮ কোটি গৃহশ্রমিক রয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই মহিলা। কিন্তু এত বড় একটি শ্রমশক্তির জন্য এখনও পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ আইনি কাঠামো তৈরি হয়নি। গৃহপরিচারিকারা দরিদ্র পরিবারের সদস্য, যাঁরা অতি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও শহুরে জীবনের অপরিহার্য শ্রম জুগিয়ে থাকেন। দেশের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করলে পশ্চিমবঙ্গ অনেক পিছিয়ে। দিল্লি ও কেরলে ইতিমধ্যেই গৃহপরিচারিকাদের জন্য সরকারি ভাবে মজুরি নির্ধারণ হয়েছে। দিল্লি ও হরিয়ানায় দৈনিক গড় মজুরি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, সঙ্গে ইনসেন্টিভ। অথচ, পশ্চিমবঙ্গে মাসিক গড় মজুরি মাত্র ৭৫০০ থেকে ১০,০০০ টাকা। ফলে অতিরিক্ত আয়ের আশায় বহু বাঙালি পরিযায়ী গৃহপরিচারিকা গুরুগ্রাম, নয়ডার মতো শহরে যাচ্ছেন। কিন্তু সেখানে তাঁদের অনেক সময় বাঙালি বিদ্বেষের ফলে হেনস্থার শিকার হতে হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার গৃহপরিচারিকাদের জন্যও ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের উদ্যোগ করেছে। ১৯৪৮ সালের শ্রম আইন অনুযায়ী, এই পদক্ষেপ গ্রহণের অধিকার রাজ্যের রয়েছে। এর ফলে এক দিকে পরিচারিকারা ন্যায্য মজুরি পাবেন, অন্য দিকে ভিন রাজ্যে চলে যাওয়ার প্রবণতাও কিছুটা কমবে।
তবে সমস্যার অন্য দিকও রয়েছে। উচ্চবিত্তদের সমস্যা না হলেও রাজ্যের মধ্যবিত্ত পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন শোচনীয়। গৃহপরিচারিকার মজুরি হঠাৎ বেড়ে গেলে তাদের উপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে। ফলে সরকারের সামনে দ্বৈত চ্যালেঞ্জ— প্রথমত, গৃহশ্রমিকদের ন্যায্য পারিশ্রমিক ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা, দ্বিতীয়ত মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থান ও আয় বাড়ানোর দিকে নজর দেওয়া। সরকারের উচিত ভারসাম্যপূর্ণ নীতি গ্রহণ।
আসিফ ফারুক, সাধারণ সম্পাদক, পরিযায়ী শ্রমিক ঐক্য মঞ্চ
সাফল্যের পথ
“ডিগ্রি পেয়েও ‘নড়বড়ে’ বহু জুনিয়র চিকিৎসক, ক্ষুব্ধ স্বাস্থ্য অধিকর্তা” (১৮-৭) প্রসঙ্গে কিছু কথা। ভুল মানুষমাত্রেই হয়। কিন্তু, ভুল করা এক জিনিস আর চিকিৎসার মতো একটা পরিষেবায় খাতায়-কলমে সফল চিকিৎসকদের কোনও বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান না থাকা বা সেটিকে এড়িয়ে যাওয়া সম্পূৰ্ণ আলাদা। স্বাস্থ্য অধিকর্তা নিজে যখন অভিযোগ করেন, এমনও জুনিয়র চিকিৎসক আছেন, যাঁরা প্রসূতির প্রসব যন্ত্রণা দেখে ভয় পেয়ে লেবার রুম থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন, তখন সত্যিই ভয় হয়। শিরোনামেই স্পষ্ট, এমন চিকিৎসকের সংখ্যা অনেক। মানুষের রোগ নিরাময়ের সঙ্গে যাঁরা সরাসরি যুক্ত হতে চলেছেন, সব দিক যাচাই না করেই এ ভাবে তাঁদের পাশ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে কেন? শিক্ষায় এতটা অসম্পূর্ণতা নিয়ে তাঁরা পাশ করতে পারছেনই বা কী ভাবে? আমার এক নিকটাত্মীয় কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেছিল। এখন শহরতলির একটি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক। চিকিৎসাশাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ের অধ্যয়নে আমরা দেখেছি ওর গভীর আগ্রহ ও মনোযোগ। এটাই তো হওয়া উচিত। শুধু পাশ করলেই হবে না, ভালবাসতে হবে বিষয়টিকে। তবেই সাফল্যে পৌঁছনো সম্ভব।
গৌতম নারায়ণ দেব, কলকাতা-৭৪
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)