E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: আহত পৌরুষ

বাস্তবে, সমাজের অধিকাংশ মানুষই মেয়েদের সম্মানজনক রুজিরোজগারের পথ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টাটি বন্ধ করার পক্ষপাতী।

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:৩২

স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘তিলোত্তমা টোটো স্ট্যান্ড’ (১৯-৯) শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। কথাগুলি শুধু টোটোর ক্ষেত্রে নয়, অটোচালকদের ক্ষেত্রেও সত্যি। অটোর যাত্রী হিসেবে অটোচালক এবং অন্য যাত্রীদের মধ্যে মহিলা অটোচালকদের নিয়ে নিন্দাসূচক আলোচনা বহু বার শুনেছি। মহিলা যাত্রীদেরও অনেকেরই মেয়েদের অটো চালানো পছন্দ নয়। এমনকি, গৃহপরিচারিকা হিসেবে স্ত্রীর রোজগার যে স্বামীরা দ্বিধাহীন ভাবে গ্রহণ করেন, তাঁরাও স্ত্রীর অটো চালানোর মতো কাজের ক্ষেত্রে দ্বিধাগ্রস্ত। এই নিন্দার বিপক্ষে কিছু মানুষ থাকলেও, তাঁদের বক্তব্য ধোপে টিকবে না বলে তাঁরা সচরাচর চুপ করেই থাকেন।

বাস্তবে, সমাজের অধিকাংশ মানুষই মেয়েদের সম্মানজনক রুজিরোজগারের পথ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টাটি বন্ধ করার পক্ষপাতী। এতে যে নিজেরাই পরোক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, এই ভাবনা তাঁদের মধ্যে আসে না। তাঁরা ভাবেন না, মেয়েদের পিছিয়ে থাকা মানে শেষ পর্যন্ত দেশের অর্থনীতিও পিছিয়ে থাকা। সমাজ যদি মেয়েদের এই সব কাজে বিরোধিতা না করত, তা হলে হয়তো প্রশাসনেরও মেয়েদের কাজের ক্ষেত্রে বৈষম্য এবং অসহযোগিতা প্রদর্শনের সাহস হত না।

অন্য দিকে, পুরুষরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘর মুছছে, বাসন মাজছে, এমন দৃশ্য দেখা যায় না। অর্থাৎ পুরুষদের কাজ মেয়েরা করলে, এবং মেয়েদের কাজ পুরুষরা করলে দুই ক্ষেত্রেই পৌরুষ আহত হয়। এই জট থেকে বেরিয়ে আসা সবার পক্ষে হয়তো খুব সহজ নয়। তাই একটা-একটা করে গিঁট খুলতে হবে। সর্বাগ্রে একটু মানবিক হতে হবে, মস্তিষ্কের অলসতা সরিয়ে একটু ভাবনাচিন্তা করলে এই জট কাটতে বাধ্য।

দুর্গেশ কুমার পান্ডা, সোনারপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

সহযাত্রিণী

স্বাতী ভট্টাচার্য তাঁর ‘তিলোত্তমা টোটো স্ট্যান্ড’ প্রবন্ধে মহিলাদের টোটো চালানোর কিছু খণ্ড চিত্র তুলে ধরেছেন। পুরুষশাসিত সমাজে মেয়েদের টোটো চালানোকে এখনও এক শ্রেণির পুরুষ মেনে নিতে পারছেন না। যিনি বা যাঁরা মেয়েদের এই কাজ মেনে নিতে পারছেন না, তাঁদের ধারণা অটো-টোটো চালানো একমাত্র পুরুষদের একচেটিয়া অধিকার। সেই অধিকারে কেউ হাত দিক, সেটা তাঁরা চান না। আর চান না বলেই প্রায় সর্বত্র মেয়েদের কিছু ব্যঙ্গবিদ্রুপ সহ্য করতে হয়। আজকাল পুরুষদের সঙ্গে মেয়েরাও সর্ব ক্ষেত্রে যখন অংশগ্রহণ করছেন এবং পারদর্শিতা দেখাচ্ছেন, তখন সংসারের হাল ধরার জন্য কেউ যদি অটো-টোটো চালানোর কাজে এগিয়ে আসেন, তবে তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। বাংলার বহু জায়গাতেই এখন মেয়েরা টোটো চালানোকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন।

আসবেনই বা না কেন? গোটা দেশ-সহ বাংলায় বেকার সমস্যা আজ এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত। দিকে দিকে হতাশা— আতঙ্ক যেন গ্রাস করতে বসেছে। পরিবারকে বাঁচানোর তাগিদে মেয়েরা আজ যে শুধু টোটো চালাচ্ছেন তা নয়, তিন চাকা চার চাকা থেকে বাস লরি পর্যন্ত চালাতে হচ্ছে জীবিকার তাগিদে। বুদ্ধির উৎকর্ষে মেয়েরা তো পিছিয়ে নেই। বীরাঙ্গনা বেশে শত্রুর সঙ্গে লড়াই করছেন, যে কোনও সাহসী অভিযানে পাল্লা দিচ্ছেন পুরুষদের সঙ্গে। রাজনীতির প্রাঙ্গণ থেকেও মেয়েরা আজ আর দূরে সরে নেই, বলা যায় সে ক্ষেত্রে তাঁরা এখন পুরুষদের সহযাত্রিণী। সাহিত্য-বিজ্ঞানেও মেয়েরা বিশ্ব জয়ের স্বীকৃতি পাচ্ছেন যখন, তখন সামান্য টোটো চালানো নিয়ে সমাজের এমন পিছিয়ে পড়া দৃষ্টিভঙ্গি কেন থাকবে? সরকারের উচিত এ ব্যাপারে এগিয়ে এসে মেয়েদের পাশে দাঁড়ানো এবং আরও বেশি মেয়ে যাতে এই পেশা বেছে নিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারেন, সে বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা করা।

রতন চক্রবর্তী, উত্তর হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

মেয়েদের টোটো

স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘তিলোত্তমা টোটো স্ট্যান্ড’ পড়ে মহিলা টোটোচালকদের জীবন-জীবিকার লড়াই সম্বন্ধে জানা গেল। দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে প্রায় পঁচিশ জন মহিলা টোটোচালক তাঁদের রুজির প্রয়োজনে যে ভাবে পুরুষ টোটোচালকদের বিরোধিতার মোকাবিলা করছেন, তাঁদের কুর্নিশ। পুরুষ টোটোচালকরা হয়তো আরও কয়েক জন পুরুষ টোটোচালক এলে এতটা বিরোধিতা করতেন না। কিন্তু মহিলাদের দুর্বল ভেবে নানা টোন-টিটকারি শোনানো, নোংরা কথা বলা প্রভৃতির মাধ্যমে তাঁরা মেয়েদের রুজি-রোজগার বন্ধ করতে চান। সোনারপুর সমবায়ের টোটোচালক মেয়েরা যা সহ্য করতে না পেরে পিছু হটেন। বর্তমান সময়ে মেয়েদের টোটো চালিয়ে কলকাতা এবং মফস‌্সল শহরে জীবিকা অর্জন করা একটি বাস্তব সত্য। দেখা যায়, টোটোচালক মহিলারাই তাঁদের সংসারের প্রধান উপার্জনকারী এবং সংসার সামলে নিজেদের সময়ে তাঁরা স্বাধীন ভাবে রোজগার করতে পারেন। মহিলা টোটোচালকদের নিজস্ব স্ট্যান্ড পাওয়া প্রধান সমস্যা। পুরুষ টোটোচালকরা স্ট্যান্ড দিতে সর্বপ্রকারে বাধা দেন। দমদম ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের বাইরে যে মেয়ে চালকরা ‘তিলোত্তমা টোটো স্ট্যান্ড’ করেছিলেন, বাঁশ রড দিয়ে তার উপর হামলা হয়েছিল। ‘তিলোত্তমা করে দেব’ বলে হুমকি সত্ত্বেও মেয়ে টোটোচালকরা তাও নিজেদের জীবিকা ছাড়েননি।

রাস্তার পাশে বাড়ি হওয়াতে দেখি, আমাদের বিরাটির খলিসাকোটা পল্লি থেকে স্টেশন পর্যন্ত দু’জন মহিলা টোটোচালক নিয়মিত যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করেন। পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে সকলেই এঁদের টোটোতে যেতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। কিন্তু স্টেশনের টোটো স্ট্যান্ডে এঁদের কখনও দাঁড়াতে দেখি না। হয়তো তাঁরাও স্ট্যান্ডে জায়গা পাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন।

শিখা সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর চব্বিশ পরগনা

বৃষ্টি-বিপদ

গত ২২ সেপ্টেম্বর পাঁচ ঘণ্টার বৃষ্টিতে কলকাতা-সহ শহরতলির নানান জায়গায় জল জমার ছবি যে ভাবে ফুটে উঠেছে, তা অনেক প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায় আমাদের। এমনিতে নিন্দুকে বলে, কলকাতা প্রায় পরিকল্পনাহীন শহর। এর রাস্তাঘাট, ফুটপাত সবটাই বেনিয়মের শিকার। সবচেয়ে বড় বিপদ, এই শহরের একশো বছরেরও বেশি প্রাচীন নিকাশিব্যবস্থা। তার ফলে অল্প বৃষ্টিতেও জল জমে এখানে ওখানে, পথচলতি মানুষ বিপর্যস্ত হয়, পথে গাড়ি পাওয়া যায় না, কাজে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার সমস্যা হয় প্রবল। তার উপর ইদানীং বৃষ্টির জল একটু বেশি হলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারানোর সংখ্যাও বাড়ছে কোনও কোনও এলাকায়, এই শহরে বা দূরবর্তী জেলায়ও। ঘনবসতি শহরে রাস্তাঘাটে বিদ্যুৎস্তম্ভ, রাস্তা লাগোয়া বহুতলের মিটার ঘর বা খোলা তার শুধুমাত্র কারও অবহেলায় আলগা অবস্থায় পড়ে থাকে চলাচলের রাস্তায়! তার বলি শিশু থেকে বৃদ্ধ— যে কোনও বয়সি লোকজন হতে পারে, এ দিকটা ভেবে দেখা হয় না!

দক্ষিণ শহরতলির একটি পুরসভার পুরপ্রধান তাঁর এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়াতে মন্তব্য করেছেন, যে এলাকায় আগে কখনও জল জমেনি, সেখানেও জল জমেছে। আসলে, যতই আমরা অত্যধিক বেশি বৃষ্টির অজুহাত দিই না কেন, জল বেরোনোর মূল জায়গাটাই যে আমরা দখল করে রেখেছি জলাভূমির গুরুত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে শয়ে শয়ে বহুতল, বাড়ি বানিয়ে। তাই জলও আমাদের ঘরবাড়ির দখল নিতে ঢুকে পড়ছে অনবরত। নিচু জলার দিকে জল না গিয়ে রাস্তার উপর, বাড়ির ভিতরে ঢুকে অধিবাসীদের রাতের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে। খাদ্য, পানীয়, বিদ্যুতের জোগানে প্রবল সমস্যা সৃষ্টি করছে। ২২ সেপ্টেম্বরের বৃষ্টির পর সংবাদমাধ্যমে দেখা গিয়েছে, কলকাতার মহানাগরিক লম্বা ছাতার বাঁট দিয়ে নর্দমার মুখে জমা প্লাস্টিক, আবর্জনা সরাচ্ছেন। এই কাজটি নির্দিষ্ট দফতর সারা বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে করলে, এই দুরবস্থার ছবি দেখতে হত না শহরবাসীকে।

সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Auto Driver Toto Drivers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy