Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: বাঘ ও বিজ্ঞান

মার্কিং ফ্লুইড বা প্রস্রাবের অণুগুলির পারস্পরিক আনুপাতিক হার প্রতিটি বাঘ বা বাঘিনিকে অন্য বাঘ বাঘিনি থেকে আলাদা করে দেয়, অনেকটা ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙুলের ছাপের মতো।

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৫:১৬
Share
Save

চিরশ্রী মজুমদারের ‘রায়বাঘিনির থান’ (১৯-১) প্রবন্ধটি প্রসঙ্গে কিছু সংযোজন ও বিস্মৃত অতীতকে মনে করিয়ে দিতে চাই। ১৯৬৪-র গ্রীষ্মের কোনও এক দুপুরবেলা। অধ্যাপক রতনলাল ব্রহ্মচারী, জর্জ শ্যালারের সঙ্গে কানহার জঙ্গলে এক বিচরণশীল বাঘিনির চলন-বলন দেখে বিজ্ঞানের নতুন এক আবিষ্কারকে পৃথিবীর সামনে তুলে ধরেছিলেন, সে দিন থেকেই হয়তো বিশ্বে ব্যাঘ্র গবেষণার প্রথম প্রস্তর প্রোথিত হয়েছিল। তার পর, খৈরী নামের সিমলিপাল জঙ্গলের পোষা বাঘ ও পরে ভারত সরকারের অর্থানুকূল্যে ওড়িশার নন্দনকানন জ়ুয়োলজিক্যাল পার্কের সৌজন্যে দশটি বাঘ-বাঘিনির উপর পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সে সব আবিষ্কার প্রায় ৫০ বছর ধরে নানা ধাপের মধ্যে দিয়ে বিবর্তিত হচ্ছে। এটি ভারতের একমাত্র চিড়িয়াখানা যারা এই ধরনের গবেষণায় আমাদের উৎসাহিত করেছিল এবং তথ্যগুলি বাঘ-গবেষণাকে অনেকটা এগিয়ে দিয়েছিল। প্রসঙ্গত, আমি প্রয়াত শ্রীব্রহ্মচারীর এক গবেষিকা-ছাত্রী।

বিজ্ঞানমতে, সদ্যযুবতী বাঘিনি যেমন সুঠাম, সুপুরুষ, সুস্থ পুরুষ বাঘের সঙ্গে প্রজননের জন্য প্রস্রাবের মাধ্যমে কিছু রাসায়নিক বার্তা (বিজ্ঞানের পরিভাষায় ফেরোমন) জঙ্গলে গাছের উপরে, পাথরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেয়, তেমনই বাঘও বাঘিনিকে পাওয়ার আশায় একই ক্রিয়াকলাপ করে। এই ‘ফেরোমন’ যা বিশেষ ধরনের অণু-পরমাণুর সমন্বয়ে তৈরি, বাঘের প্রস্রাব ও ‘এক বিশেষ ধরনের প্রস্রাব’-এর মাধ্যমে প্রকৃতিতে নিঃসৃত হয়। এই বিশেষ ধরনের প্রস্রাবকে আমরা বলি ‘মার্কিং ফ্লুইড’। কেউ কেউ আবার ‘সেন্ট মার্কিং’ পরিভাষাটিও ব্যবহার করেন। এই মার্কিং ফ্লুইড বা প্রস্রাবের অণুগুলির পারস্পরিক আনুপাতিক হার প্রতিটি বাঘ বা বাঘিনিকে অন্য বাঘ বাঘিনি থেকে আলাদা করে দেয়, অনেকটা ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আঙুলের ছাপের মতো। ফলে, পারস্পরিক বন্ধু খোঁজার তাগিদে বাঘ ও বাঘিনি উভয়েই নিজের পরিচয় বৃত্তান্ত জঙ্গলে রেখে দেয় এই ফেরোমন-এর মাধ্যমে। উদাহরণ, জ়িনতের (ছবি) সাবলীল বিচরণ। অর্থাৎ, ব্যাঘ্রকুল মার্কিং ফ্লুইড ও সাধারণ প্রস্রাব এই দুই মাধ্যমকে নিজের এলাকা দখল ও প্রজননের জন্য ব্যবহার করে।

মৌসুমী পোদ্দার সরকার, কলকাতা-৯১

বয়সের যন্ত্রণা

সম্পাদকীয় ‘হিমশৈলের তল’ (২০-১) পড়ে কিছু ভাবনা মনে এল। যৌবনে মানুষের চোখে মায়াকাজল লাগানো থাকে। অনেক স্বপ্ন, অনেক আশা, আকাঙ্ক্ষা, ভালবাসা, মায়া থাকে। স্বামী-স্ত্রীর একে অপরের প্রতি, সন্তানের প্রতি অনেক স্বপ্নময় ইচ্ছা থাকে। তার পর, সংসারের কানাগলিতে পড়ে, অসংখ্য না পাওয়ার হাত ধরে হতাশার চোরাবালিতে হারিয়ে যায়। বর্তমান যুগের অতি দ্রুতগতিতে চলা প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারার অক্ষমতা এক দিকে যেমন আত্মবিশ্বাস কেড়ে নেয়, তেমনই সফল সন্তানসন্ততির দূর দেশে থিতু হওয়া অথবা কাছে থাকলেও অসুস্থ পিতামাতার প্রতি যথোচিত কর্তব্য পালনে অনীহা বার্ধক্যে মানুষকে অসহায় করে তোলে।

কলকাতা পুলিশের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে বয়স্ক মানুষের মধ্যে শতকরা চল্লিশ জনই কোনও না কোনও নির্যাতনের শিকার। পঁচিশ শতাংশ আত্মীয়দের এবং চল্লিশ শতাংশ নিজের সন্তান বা তাদের সঙ্গীদের দ্বারা নির্যাতিত। বার্ধক্যে এমনিতেই শরীর ভেঙে পড়ে, মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা শ্লথ হয়ে যায় এবং তার পরিণতিতে মানুষ হয়ে পড়ে অসহায়, পরনির্ভরশীল। এই অবস্থার সুযোগ নেয় কিছু সুযোগসন্ধানী লোভী মানুষজন যারা আমাদের চার পাশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। যে সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয় নির্ভরতার, প্রয়োজন হয় শারীরিক ও মানসিক সাহায্যের, সেই সময়েই সেই ভালবাসার হাত যেন ক্রমশ দূরে চলে যেতে থাকে।

জীবন এমন এক ভুলভুলাইয়া যেখানে আমরা একই জায়গায় বার বার পাক খেয়ে ফিরি। সন্তানকে সেরা বানাতে না পারলে বর্তমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিতে ভাল ভাবে বেঁচে থাকতে পারবে না। সেই জন্য সন্তানের সাফল্য কামনা কোনও অপরাধ নয়, কিন্তু সাফল্য চাইতে গিয়ে কখন যে তাদের স্বার্থপর বানিয়ে ফেলছি নিজেরাও বুঝতে পারি না। সেই সন্তান পড়াশোনায় সফল হয়তো হচ্ছে, কিন্তু মানুষ হচ্ছে কি? পাগলের মতো ছুটে চলেছি সফল সন্তান গড়তে কিন্তু এক বারও ভাবছি না পথের শেষে কী আছে! বৃদ্ধ বয়সে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এক জন প্রাকৃতিক নিয়মেই আগে চলে যান। যিনি পড়ে থাকেন তিনি চেষ্টা করেন পরিবারের বাকিদের আঁকড়ে ধরতে কিন্তু তখনই বাস্তব বড় শত্রু হয়ে দেখা দেয়। এত দিনের প্রিয় মানুষগুলোর প্রকৃত নিষ্ঠুর উদাসীন চেহারা সামনে আসে। আইন, আদালত, সরকার এই অবস্থা থেকে বৃদ্ধ মানুষকে কতটা পরিত্রাণ দিতে পারবে জানি না, তবে সন্তানের মনে পড়াশোনার সাফল্যের চেয়েও যদি মানবিক সুকুমার প্রবৃত্তিগুলিকে রোপণ করতে পারি, তবেই হয়তো সমস্যার কিছুটা সমাধান হতে পারে।

সুরজিৎ কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি

অবসরের পরে

নীলাঞ্জন দে-র লেখা ‘অবসরগ্রহণের পরে কী হবে’ (২৯-১) শীর্ষক প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বলি, এটাই এখন আমাদের দেশের সকল কল-কারখানা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী সমেত অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত বিপুল সংখ্যক শ্রমজীবীর প্রশ্ন এবং দুশ্চিন্তার কারণ।

খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধি এবং সেই সঙ্গে ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসে শ্রমজীবী জনসাধারণের দ্বারা কষ্টার্জিত উপায়ে জমানো অর্থরাশির উপর ক্রমহ্রাসমান সুদের হার আমাদের জীবনের ভার বাড়িয়ে তুলছে। এখনও পর্যন্ত ‘ইপিএফ’-এ ন্যূনতম পেনশন মাত্র এক হাজার টাকা। প্রশ্ন তুলতে ইচ্ছা হয়, একটা গ্যাস সিলিন্ডার-এর বর্তমান বাজার মূল্য যদি ৮২৯ টাকা হয় তা হলে ন্যূনতম পেনশন মাত্র এক হাজার টাকা হলে এক জন শ্রমজীবী মানুষ অবসরের পর কী ভাবে দিন কাটাবেন?

কৃষক, খেতমজুর, শ্রমিক-সহ সকল কর্মরত শ্রমজীবী মানুষেরই ন্যূনতম পেনশনের ভদ্রস্থ অঙ্কের অধিকার আছে। অতএব আমরা সবাই আশা করব আগামী কেন্দ্রীয় বাজেটে ‘ইপিএফ’-এ ন্যূনতম পেনশন দশ হাজার টাকা করা সমেত ‘সর্বজনীন পেনশন তহবিল’ বা প্রকল্প গঠন করবেন মাননীয় অর্থমন্ত্রী এবং সরকার।

ইন্দ্রনীল দে, বামনগাছি, উত্তর ২৪ পরগনা

অস্বাস্থ্যকর

শীতের বিদায়কালে বেলা পর্যন্ত ঘোলাটে মেঘলা আকাশ। এই পরিবর্তন কী প্রাকৃতিক বিবর্তনের সঙ্কেত নির্দেশ করছে? এই অস্বস্তিকর আবহাওয়ার ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক অস্থিরতা, অলসতা, স্নায়ু দুর্বলতা লক্ষণীয় ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইদানীং লক্ষ করা যাচ্ছে অতিরিক্ত যানবাহনের দৌলতে বায়ুদূষণের মাত্রা নির্দিষ্ট সীমা লঙ্ঘনের কারণে অনেক বেলা পর্যন্ত এই ঘোলাটে আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে না। এই পরিবর্তন এত দিন দিল্লি বা পশ্চিম ভারতে দেখা যেত। এর ফলে বিমান ও রেল চলাচল বিঘ্নিত হয়। কিন্তু এখনও কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ঠিক সেই প্রাণান্তকর অবস্থা দেখতে না পাওয়া গেলেও বর্তমানে বেলা পর্যন্ত আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন থাকছে। দেখে মনে হচ্ছে এখানেও অন্য রাজ্যের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এই সমস্যাকে রুখে দিতে একটি প্রস্তাব পেশ করতে চাই। অন্য রাজ্যের মতো জোড় ও বিজোড় সংখ্যার গাড়িগুলোকে বিভাজন করে শহরের নানা অংশ দিয়ে চালনা করা যেতে পারে। এতে কলকাতা শহরের দূষণ অন্তত কিছুটা হলেও রোধ করা যেতে পারে।

সুব্রত সেনগুপ্ত, কলকাতা-১০৪

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tiger Tigress Tigress Zeenat

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}