Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: দায়িত্বমুক্তির স্বাধীনতা

আমাদের দেশে কোনও কাজের কেউই দায়ভাগ বহন করেন না। এটাই স্বাধীন ভারতের দায়িত্বমুক্তির স্বাধীনতা। যে যার নিজের লভ্যাংশ বুঝে নিয়ে রা কাড়েন না।

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২২
মাঝেরহাট ব্রিজ ভাঙার পর। —ফাইল ছবি

মাঝেরহাট ব্রিজ ভাঙার পর। —ফাইল ছবি

আমাদের দেশে ব্রিজভঙ্গ কোনও নতুন ঘটনা নয়। ভারতের সমস্ত ব্রিজই এক কথায় বিপজ্জনক। কেননা ভারতের স্বাধীনতার বয়স যত বেড়েছে, সরকারি কর্মকাণ্ডে অবহেলা ও উদাসীনতা মাত্রাছাড়া ভাবে বেড়েছে। ফলে গুণমানের স্বাধীনতা পাওয়া বেপরোয়া ঠিকাদারের লোক চুক্তিপত্র অনুযায়ী ঠিক ঠিক মালমশলার ভাগ দিল কি না, তা দেখার কেউ থাকে না। জং ধরা বিগত আয়ুর লোহার রড প্রায়শই ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। পাথরের বদলে ঝামা ও পাথরের মিশ্রণের ঢালাই কখনওই গুণমান ধরে রাখতে পারে না। ফলে আয়ু হ্রাস। কপাল ফাটলে প্লাস্টার, ব্রিজ বা রাস্তা ফাটলে ওই পিচেরই প্লাস্টার। যিনি কাজের তদারক করবেন, তিনি কর্মস্থলে থাকেন না। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নিরাপদ আশ্রয়ে নির্মাণকাজ প্রত্যক্ষ করেন। আমাদের দেশে কোনও কাজের কেউই দায়ভাগ বহন করেন না। এটাই স্বাধীন ভারতের দায়িত্বমুক্তির স্বাধীনতা। যে যার নিজের লভ্যাংশ বুঝে নিয়ে রা কাড়েন না। অথচ কে নকশা করেছেন, কে নকশা অনুমোদন করেছেন, কে তৈরি করেছেন, কে প্রত্যক্ষ ভাবে তত্ত্বাবধান করেছেন, কে সমগ্র গুণমান খতিয়ে দেখে নির্মাণকাজ সমাপ্তির শংসাপত্র দিয়েছেন, এই নির্মাণ কত বছর চলতে পারে তার আনুমানিক তারিখ, মাল পরিবহণ ক্ষমতা, পরবর্তী সহ্যশক্তি পরীক্ষার তারিখ ইত্যাদি নির্মাণস্থলের কাছে ফলকে লিখে রাখলে ভাল হয়। ব্রিজের পর ব্রিজ ভেঙে যায়, তদন্ত প্রতি বারই হয়, তবুও কোনও শিক্ষা নেওয়া হয় না। যা দরকার তা হল ঠেলা। তবেই বন্ধ হবে বাহাত্তুরে অবহেলা।

তপন কুমার বসু

শিবপুর, হাওড়া

কয়েকটি প্রস্তাব

মাঝেরহাট সেতু ভেঙে যাওয়ার পর সব চেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে কলকাতা দক্ষিণ শহরতলি ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ। চেতলা ও টালিগঞ্জ ফাঁড়ি হয়ে যে দু’টি রাস্তা দিয়ে বর্তমানে যাতায়াত করতে হচ্ছে সে দুটো অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ। বিশেষ করে টালিগঞ্জ ফাঁড়িগামী টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডটি অত্যন্ত জনবহুল। দীর্ঘ দিন ধরে মহাবীরতলার কাছে সেতুর পুরোটিই প্রায় বাজারে পরিণত হয়েছে। সেতুর ফুটপাত দিয়ে মানুষের যাতায়াতের পথটি বন্ধ। অগণিত মানুষকে সড়কে নেমে আসতে হয়। গাড়ির গতি শ্লথ হতে বাধ্য, এবং সে জন্য যানজট সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতি দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসছে। কিন্তু বর্তমানে মাঝেরহাট সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর এই রাস্তার চাপ শতগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার কয়েকটি প্রস্তাব রয়েছে।

১) মাঝেরহাটের দিক থেকে মোমিনপুরের দিকে যাতায়াতের অস্থায়ী পায়ে হাঁটা একটা সেতুর ব্যবস্থা করুন। একটু মজবুত করে বাঁশ দিয়েও করা যায়। প্রচুর গ্রামে ঘুরে দেখেছি, বাঁশের অস্থায়ী সেতু দিয়ে ছোট মারুতি কার ও ভ্যানও যাতায়াত করছে। গ্রামের কিছু মানুষকে বরাত দিলে দু’এক সপ্তাহে বানিয়ে দিতে পারে সেতু।

২) মোমিনপুর থেকে কলকাতার দিকে যে কোনও রুটের বাস চালু করুন। আবার উল্টো দিকে তারাতলা থেকে বেহালা ডায়মন্ড হারবার ও অন্যান্য রুটের বাস। যে সব বাস কলকাতা থেকে বেহালা ডায়মন্ড হারবারের দিকে মাঝেরহাট সেতু মারফত যাতায়াত করত, তাদের বাধ্যতামূলক ভাবে আধাআধি দু’পাশের রুটে চালানোর ব্যবস্থা করুন। মনে রাখতে হবে ভেঙে পড়া মাঝেরহাট সেতু নির্মাণ ও যথাস্থানে ফিরিয়ে দেওয়া দু’চার মাসের ব্যাপার নয়। দীর্ঘ দিন মানুষের সুবিধার জন্য এ ছাড়া তাৎক্ষণিক আর কোনও পথ নেই।

৩) চেতলা অগ্রণী ও সুরুচি সঙ্ঘের পুজোর জন্য নিউ আলিপুর, চেতলা-সহ টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডটির পুজোর ক’দিন কী অবস্থা হয়! বিকেলের পর ওই সব রাস্তায় যানবাহন প্রায় স্তব্ধ হয়ে যায়। এ বছর আরও বেশি স্তব্ধ হওয়ার সম্ভাবনা! অথচ তারাতলার দিক থেকে কলকাতা, হাওড়ার সঙ্গে যোগাযোগের মাত্র ওই দু’টি পথ। মনে রাখতে হবে, সবাই ঠাকুর দেখতে বেরোয় না। রুটি রুজি থেকে মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজন-সহ বহু মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতালে যেতে হলে মাত্র ওই দু’টি পথ দিয়েই যেতে হবে। তাই এই পুজো দু’টি এ বার অত বড় আকারের করলে, মানুষের খুব অসুবিধা হবে। তার চেয়ে পুজো দু’টি কিছুটা ছোট ভাবে করা হোক।

প্রদোষ পাল

কলকাতা-৬০

পুলের নীচে

‘উড়ালপুলই ঘর, অবাধে চলে ব্যবসাও’ (১০-৯) সংবাদটি সময়ের নিরিখে যথাযথ। বিশেষত যে দফতর বা এজেন্সিটির উড়ালপুলটির দেখভাল করার কথা, তারা পুলটির নীচের দিকের অংশটি ঠিক ভাবে দেখভাল করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এ ছাড়া এখানে যে হেতু বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের ব্যবসা চলে, ইঁদুরদের উপদ্রব হওয়াটা অসম্ভব নয়। ইঁদুর মাটির তলদেশে গভীর সুড়ঙ্গ করে উড়ালপুলের ভিতের যথেষ্ট ক্ষতি করতে পারে। প্রশাসন যদি অবিলম্বে কলকাতার সব উড়ালপুলের তলা থেকে দখলকারীদের সরিয়ে, দু’পাশে স্টিলের ফেনসিং দেওয়ার ব্যবস্থা করে গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করে, তা হলে উড়ালপুলগুলির দেখভালে যেমন সুবিধে হয়, পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষাও সম্ভব।

মৃণাল মুখোপাধ্যায়

কসবা, কলকাতা

গাড়ির কাঁপুনি

আমি কবরডাঙার কাছে বহুতলের ফ্লাটে থাকি। সম্প্রতি বেহালার কাছে ব্রিজ দুর্ঘটনার পরে বহু মানুষ যেমন প্রত্যক্ষ ভাবে যান-যন্ত্রণার শিকার হচ্ছেন, তেমনি অনেক মানুষও তার পরোক্ষে শিকার হচ্ছেন। মহাত্মা গাঁধী রোড টালিগঞ্জ থেকে ঠাকুরপুকুর পর্যন্ত প্রায় সাত মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। এমনিতে চলাফেরার আলাদা কোনও পায়ে হাঁটার রাস্তা নেই, তার উপরে প্রচুর গাড়ি যাতায়াতের ফলে যানজট যেমন হচ্ছে, তেমনি বড় বড় গাড়ির কাঁপুনিতে বাড়িঘর কেঁপে কেঁপে উঠছে। আমাদের বাড়ির সামনে একটি অন্ধদের স্কুল আছে, সেখান থেকে ছাত্রেরা জীবন হাতে করে বেরোচ্ছে দেখি। রাস্তার দু’পাশে সারা দিন প্রাইভেট বাস লরি দাঁড়ানোর ফলে হেঁটে আর যাওয়া হয় না। হেঁটে সে দিন যেতে গিয়ে এমন ভাবে পড়ে গেলাম, যদি অটো চালকরা আমায় উদ্ধার না করতেন, বাড়ি আর ফিরতে পারতাম না। এমনই রাস্তার হাল। এখানে দুটো পাইকারি বাজার পড়ে, ফলে সারা রাত গাড়ির দাপটে ও কাঁপুনিতে এমনিতেই জীবন দুর্বিষহ, তার উপর আরও বড় বড় গাড়ির দাপটে ও বাম্প-এর জন্য রাস্তার পাশের বাড়িগুলোর আয়ু ক্ষয় হচ্ছে।

নুপুর পাল

ইমেল মারফত

পথ কমছে

মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই টালিগঞ্জে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোড ও দেশপ্রাণ শাসমল রোডের ওপর ট্রাফিকের চাপ অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছে। এম জি রোডে করুণাময়ী ও ঘোষপাড়া এবং তার পরেও আরও অনেক ছোট ছোট রাস্তা দিয়ে গাড়ি বেহালা যাওয়ার পথ বার করায়, অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচলে অস্বাভাবিক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। জরুরি সেবার গাড়িও যাওয়ার পথ পাচ্ছে না। এর ওপর পুজো এসে যাওয়ায় পাড়ায় পাড়ায় রাস্তা জুড়ে প্যান্ডেলের বাঁশ পোঁতা শুরু হয়ে গিয়েছে। যে সব ছোট গাড়ি ভেতরের রাস্তা ধরে যাওয়ার চেষ্টা করছে, তারা হয় দেখছে রাস্তা বন্ধ, অথবা সরু জায়গার মধ্যে দিয়ে যেতে গিয়ে বিপদের সম্ভাবনা। রাস্তা আটকে তার সামনে চেয়ার নিয়ে বসে আনন্দ আড্ডাও চলছে। রাস্তায় পুজো বন্ধ করতে বলার সাহস আমার কেন, সরকারেরও নেই, কারণ ধর্ম ও ভোট বড় বালাই। কিন্তু হঠাৎ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাস্তার এক-চতুর্থাংশ বন্ধ করে পুজো করলে যদি আনন্দ ও ভক্তি কমে না যায়, তবে পুজো কমিটির কর্তাদের সঙ্গে কি প্রশাসন কথা বলতে পারে?

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা-১০৪

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

Majerhat Majerhat Brige Kolkata Flyover Collapse Material Corruption
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy