Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: দু’জনের নাম নেই

তাঁদের নাম উল্লেখ করতে গিয়ে দু’টি নাম উল্লেখ করা হয়নি। নাম দু’টি হল যথাক্রমে সুরিন্দর অমরনাথ (বাঁ দিকে) এবং হনুমন্ত সিংহ

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০০
সুরিন্দর অমরনাথ (বাঁ দিকে) এবং হনুমন্ত সিংহ।

সুরিন্দর অমরনাথ (বাঁ দিকে) এবং হনুমন্ত সিংহ।

ভারত বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে পৃথ্বী শ-র অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরির পরিপ্রেক্ষিতে প্রাক্তন আর যাঁরা অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন, ‘সেরাদের ক্লাব’-এ (৫-১০) তাঁদের নাম উল্লেখ করতে গিয়ে দু’টি নাম উল্লেখ করা হয়নি। নাম দু’টি হল যথাক্রমে সুরিন্দর অমরনাথ (বাঁ দিকে) এবং হনুমন্ত সিংহ। এঁরাও অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেছিলেন। এঁদের নাম কেন উল্লেখ করা হবে না?

মস্তফী অমরনাথ
কলকাতা-৮৪

সামাজিক সুরক্ষা

অতুলকৃষ্ণ বিশ্বাসের ‘সেই ট্র্যাডিশন’ (১০-১০) চিঠিটি পড়ে ‘ইকনমিক রিজ়ার্ভেশন’ সম্বন্ধে আলোকপাত করার চেষ্টা করছি। ‘ইকনমিক রিজ়ার্ভেশন’ কথাটার সঙ্গে মোটামুটি আমরা সবাই পরিচিত। ব্যবহারিক দিকে নয়, বরং ভার্চুয়ালি এর গুরুত্ব অপরিসীম। জ্ঞানে-অজ্ঞানে প্রতিটি মানুষ এর উল্লেখ করে থাকেন ‘রিজ়ার্ভেশন’ নামক বেদনাদায়ক প্রসঙ্গটি উঠলে। যিনি হয়তো প্রতি ট্রেনে ফার্স্ট ক্লাস রিজ়ার্ভেশন করে বছরে দু’চার বার সপরিবারে ভারত ভ্রমণ করেন, তিনিও গম্ভীর মুখে বলেন, ‘‘এ ভাবে কিস্যু হবে না দেশের।’’ সরকারি চাকরির চেষ্টায় রত ছেলেটা পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে কাট-অফ দেখে গালাগালি করে, ‘‘এতটা ডিফারেন্স!’’ ফেসবুকে মিমগুলোতে লাইকের ঝড়।
কিছু দিন আগেই সুপ্রিম কোর্ট এসসি/এসটি অ্যাক্টের দ্বারা তফশিলিদের সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টি রিভিউ করেছিলেন। জনক্ষোভ দেখা দিয়েছিল, অর্থাৎ, চলতি ভাষায় ‘ছোট জাতের লোকজন’-এর স্বার্থ হয়তো আইন লঘুকরণের মাধ্যমে ক্ষুণ্ণ হতে পারত। অর্থাৎ, তাঁরা আজও মনে করেন, তাঁরা পুনরায় শোষিত, অত্যাচারিত হতে থাকবেন যদি না এই ‘মিনিমাম সিকিয়োরিটি’টুকু না থাকে। যাঁরা এই জাতভিত্তিক সংরক্ষণের বিরোধিতা করেন, কেউ ভেবে দেখেন না কেন এখনও উচ্চবর্ণের দ্বারাই সমাজের সমস্ত রকম ক্ষেত্র পরিচালিত হয়, অন্তত ৯৯ শতাংশ তো বটেই। কেউ বুকে হাত রেখে বলতে পারবেন, যে তথাকথিত ‘নিচু জাত’-এ যাঁরা জন্মগ্রহণ করেন তাঁরা ‘অপেক্ষাকৃত কমবুদ্ধি স্বল্পমেধা’ ইত্যাদি নিয়ে জন্মান? পারবেন না, কারণ যাঁরা এমন কথা বিশ্বাস করেন, তাঁদেরই বোধবুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কথা। অবিশ্যি এ রকম ‘সামাজিক অসুস্থ’ লোকজন প্রতিনিয়ত সমাজের বুকে নির্বিঘ্নে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেনন আমাদের রাজনীতিতে নেতৃত্বও দিচ্ছেন, আর একবিংশ শতাব্দীতেও ‘ব্রহ্মশাপ’ দিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এ বারে ‘প্রিভিলেজ’ প্রসঙ্গ। অনেকে এই শব্দটি মানতেই চান না। মনে করেন, সবটাই পরিশ্রমের ফসল। তা হলে যে লোকটির পূর্বপুরুষ দু’শো বছর আগে শ্মশানঘাটে মড়া পোড়াত, মাঠে শ্রম দিয়ে সোনার ফসল ফলাত, কাপড় বুনত, নারীর অহঙ্কারের গয়না বানাত, দিনরাত হাপরের আগুনে ফুঁ দিত, তাঁরা তা হলে অলসতায় ভোগা লোকজন? আসলে পরিশ্রম কথাটা প্রযোজ্যই নয় এখানে। যে লোকটি কস্মিনকালেও বই ছুঁয়ে দেখার অধিকারটুকুও পায়নি ভারতীয় সমাজের থেকে, তাঁর কাছে পরিশ্রমের কোনও শ্রেণিবিভাগই নেই। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে পরিবারের মুখে অন্ন সংস্থানটুকুকেই তিনি পরিশ্রমের ব্র্যাকেটে ফেলেন।
নিজ জ্ঞানে যদ্দূর জানি, শূদ্রদের বেদ অধ্যয়ন নিষিদ্ধ ছিল প্রাচীন কাল থেকেই। এ নিয়ে লোকগাথার অন্ত নেই। পতিতদের হাতে বেদ তুলে দেওয়ার ভাবনা ভাবাটাও যে এক প্রকার নরকগমন, এ কথা তথাকথিত উচ্চবর্ণের লোকজন গভীর ভাবে বিশ্বাস করতেন। সে বিশ্বাসে ছাই দেওয়ার লোকজন ভারতে তখনও হয়তো আবির্ভূতই হননি। পেশার ভিত্তিতে বর্ণ গঠন মহান ভারতীয় সভ্যতার যুগান্তকারী আবিষ্কার! পুঁথিজ্ঞান অর্জিত না হলে, তত্ত্ববিশ্লেষণে পারদর্শী না হলে উচ্চ পেশায় নিযুক্ত হওয়া যে অসম্ভব, এ কথা সকলেই বোঝে। হতেই পারত এক জন চাষির ছেলেই এক বেদজ্ঞ! কিন্তু সেই ছেলেটিকে ওই সুযোগটাই তো সমাজ দেয়নি! পরিশ্রমেই ফসল ফলবে, এ যাঁদের মত, তাঁদের বংশগত প্রিভিলেজটুকু তাঁদের সঙ্গেই রয়েছে। তফশিলিদের জন্য তো তাঁদের সাফল্যে বাধা পড়ার কথা নয়। ওঁদের জন্য এই সরকারি প্রিভিলেজটুকু থাক না। এক দল পুরুষের পর পুরুষ সামাজিক সুবিধে ভোগ করেছেন, এখন ওঁরা দু’পুরুষ সে সুবিধে ভোগ করলেই জ্বালা!
অনেকেই বলতে পারেন, অতীতের পাপ ধুয়ে এখনও যদি জল খেতে চাইলে তো কোনও কালেই সামাজিক সাম্য আসবে না! তা হলে বলব, আপনারা কবে সত্যযুগের পুণ্য মুছে ফেলতে রাজি হয়েছেন? সময়মতো ছেলেকে পৈতে দেওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিতে কখনও ভোলেন না তো নিকটাত্মীয়কে! সব কি ভুলতে পেরেছি আমরা? রাস্তাঘাটে আকছার শোনা যায়, ‘‘নিচু জাত, শিক্ষার অভাব, তাই এমন কম্ম করেছে!’’ একই কাজ উঁচু জাতের কেউ করলে ‘চক্রান্ত’! অনেকে মেধার প্রসঙ্গ তোলেন। রিজ়ার্ভেশনে অতিরিক্ত সুবিধে পেয়ে যাঁরা ‘মেধাতালিকা’য় নাম তোলে, তাঁদের অকর্মণ্যতাই নাকি দেশের উন্নতির পক্ষে অন্তরায়! তা হলে বলব, পৃথিবীর কোন সভ্য জাতি সমগোত্রীয় মানুষদের শিক্ষা অর্জনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছেন যুগের পর যুগ? যাঁদের মেধাকে বংশগত ভাবে পঙ্গু করে দেওয়া হল, তাঁরা কেন সেই পঙ্গুত্বের প্রিভিলেজটুকু নেবে না? আমরা তো মনেই করি না ওঁরা আমাদের সমান। আগে সমানটুকু হতে দিই! কিছু দিন আগে দক্ষিণ ভারতে এক বোর্ডের পুরোহিত নির্বাচনের পরীক্ষায় ২২ বছরের এক দলিত যুবক যদুকৃষ্ণের প্রথম স্থান পাওয়া দেখে আমার বহু পরিচিত উচ্চবংশীয়গণ হাসাহাসি করেছিলেন। সত্যিই বংশগরিমায় ভারতের মতো দেশেও কত লোকের পেট ভরে!
ইকনমিক রিজ়ার্ভেশন কথাটা রাশভারী। কিন্তু এর প্রয়োগ বা ফল সম্পর্কে কেউই নিশ্চিত নই। যে দেশে সরকারি দফতরগুলি দুর্নীতির আখড়া, সেখানে আমি-আপনি কোন সাহসে ভাবব যে, এই রিজ়ার্ভেশনে বিজ়নেস টাইকুনের নাম থাকা অসম্ভব! রেলের টিকিট থেকে ডার্বি ম্যাচের টিকিট, সর্বত্র মানুষের সুবিধে চাই। এটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। এ বারে ভাবুন, যে লোকটি এই সব ভারী ভারী শব্দ কস্মিনকালেও শোনেনি, তাকে টপকে সেই তিনতলা-বাড়িওলার নাম রিজ়ার্ভেশনের খাতায় তোলা কতখানি সহজ! আগে ছিল অর্থবলের হুমকি, এখন জাতেরও হুমকি! পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘গীতাঞ্জলি’ প্রকল্পে যে বাড়িগুলি নির্মিত হয়েছে, ক’টা বাড়ি রয়েছে যেগুলোতে ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল্ড হয়েছে! বরং যাদের দিয়ে তা হওয়ার কথা, তাঁরা ও শব্দের মানেই জানেন না তো কি ফুলফিল করবেন! সরকারি আধিকারিকের নিশ্চয়ই অত সময় বা অতখানি ইচ্ছেও নেই যে পুঙ্খানুপুঙ্খ সত্য যাচাই করে দেখবে। হ্যাঁ, যাদের সদিচ্ছাটুকু আছে, সেখানে তারা ভগবান! কিন্তু সর্বোপরি চিত্রটা ফ্যাকাশে নয় কি? এ সব কিছু যদি বা বাদও দিই, ইকনমিক রিজ়ার্ভেশনের পরিচ্ছন্ন সার্বিক চিত্র যদি তুলেও ধরা যায়, তবুও দেখা যাবে, তাতে নিম্নবর্ণের মানুষ, দলিত রয়েছেন ৯০ শতাংশের উপর। উচ্চবর্ণের যে সমস্ত মানুষ ওই তালিকাভুক্ত হবেন, তাঁরাও সামাজিক কিংবা অর্থনৈতিক ভাবে অনগ্রসর (ওবিসি তালিকার অন্তর্ভুক্ত)। যদি এত কিছু করা সত্ত্বেও জাতের নামে বজ্জাতি বন্ধ করা যায়, তাও হত। কিন্তু সেও হবার নয়, কারণ ‘হেজিমনি’ সর্বদা উচ্চবর্ণের হাতে। এ এক অমোঘ চক্র!
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট একটি রায়ে ঘোষণা করেছেন, এসসি/ এসটি-দের চাকরির প্রোমোশনে ‘ক্রিমি লেয়ার’-এর ধারণাটি প্রযোজ্য নয়। এ নিয়ে অনেকে ‘মেধার অবনমন’-এর প্রশ্ন তুলেছেন।
কিন্তু একটা ব্যাপার আমাদের ভেবে দেখা উচিত নয় কি? ‘প্রোমোশনাল প্রিভিলেজ’ প্রাপ্তির ‘স্পর্ধায়’ কত জন উচ্চবর্ণের শাপশাপান্ত হজম করতে হয়! সারা দেশে প্রচুর সুকুমার মল্লিক, প্রচুর যোগেন মণ্ডল, অগণিত অম্বেডকর লুকিয়ে রয়েছেন। তাঁদের প্রতিভার বিকাশ হতে পারেনি, একই কারণে। ভেবে দেখার সময় এসেছে এ বার।

অঙ্কুশ দেবনাথ
কলকাতা-৮১

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

Cricket Forgotten Reservation Quota
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy