সম্পাদকীয় ‘লজ্জা-হারা’ (১০-৯) প্রসঙ্গে কিছু কথা। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাসভবন দখল করে নেয় জনতা। তাঁর বাসভবনে লুটপাট হয়। দেশ ছেড়ে পালাতে হয় তাঁকে। ঘটনাচক্রে দ্বীপরাষ্ট্রের অন্যতম প্রভাবশালী রাজাপক্ষে পরিবারের বিরুদ্ধে প্রচুর দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ ছিল। গত বছর বাংলাদেশে ‘ছাত্র বিপ্লব’ হয়। মুজিবকন্যা তথা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। হাসিনা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, তাঁর ব্যক্তিগত কর্মীদের বিরুদ্ধেও বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। উঠেছিল স্বজনপোষণের অভিযোগও। ১০ সেপ্টেম্বর সমস্ত সংবাদপত্রের শিরোনামে উঠে এসেছে নেপালের বিক্ষোভ। জনতার বিক্ষোভে প্রধানমন্ত্রী-সহ গোটা মন্ত্রিসভাকেই কার্যত পালাতে হয়েছে। উল্লিখিত তিনটি দেশেই যেটা সামনে আসছে— সরকারের দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, আর্থিক নীতি ইত্যাদি নানা কারণে জনগণের অসন্তোষ হঠাৎ করেই বিপ্লবের চেহারা নিয়েছে। ‘লজ্জা-হারা’ পড়ার সময় মনে হল, এই দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের দায়েই গত তিন বছরে ভারতের তিন প্রতিবেশী রাষ্ট্রে পর পর যে পালাবদল হল, তার থেকে কোনও শিক্ষা কি নিল আমাদের দেশের সরকার এবং রাজনীতিবিদরা! বিশেষ করে জেন জ়ি-র এই আন্দোলন বুঝিয়ে দিল যে, রাজনীতিবিদরা অভাব-অভিযোগের কথা না শুনে এন্তার দুর্নীতি করে গেলে মানুষই কিন্তু গোটা দেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে। ক্ষোভ বেরিয়ে আসে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে।
গত কয়েক বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের রাজ্যেও সরকারি স্তরে যে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে, তা আগামী দিনে সরকারের চরম অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠতে পারে। শিক্ষায় দুর্নীতি তার অগ্রগণ্য। যে স্কুলে তাঁরা ছাত্র পড়িয়েছেন, আবার পড়াতে যাচ্ছেন আপাতত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত— সেই শিক্ষকদের অনেকেই ফের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বসলেন গত সেপ্টেম্বর মাসে, আরও এক বার নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য। যোগ্য শিক্ষকদের এই পরীক্ষায় বসা অগ্নিপরীক্ষার মতোই যন্ত্রণার। এই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ পরীক্ষার্থী ছিলেন ভিন রাজ্য থেকে আগত এবং তা নিয়ে রাজ্য সরকার উচ্ছ্বসিত। ভিন রাজ্যেও তা হলে শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতা রয়েছে, সেখানেও দুর্নীতি হয়! আবারও সেই তুলনামূলক রাজনীতি, তুমি মন্দ তাই আমিও মন্দ। এক মেয়ের প্রশ্ন, বাবা তুমি তো স্কুলে পড়াও, তোমাকেও পরীক্ষা দিতে হবে? এক জন ছাত্রী পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে তাঁর পূর্বতন শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন পরীক্ষা হল, স্যর? এ রকমই চিত্র ছিল এ বারের স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায়। এই দুর্নীতি শুধু শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে চুরমার করেই দেয়নি, মানুষ গড়ার কারিগরদেরও এর মাধ্যমে অপমান করা হয়েছে। প্রত্যেক রাজ্যবাসীর কাছে তা গভীর বেদনার।
সুপ্রিয় দেবরায়, বরোদা, গুজরাত
অন্ধকারাচ্ছন্ন
‘লজ্জা-হারা’ ও ‘শিক্ষার ব্যাধি’ (১০-৯) শীর্ষক দু’টি সম্পাদকীয়তে এ রাজ্যে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের চূড়ান্ত হেনস্থা বা অস্বস্তিকর অবস্থার কথা যথার্থ বলা হয়েছে। ‘শিক্ষা’ জাতির মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মানদণ্ড। সেই হেতু শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব শাসক বা সরকারকে দিতেই হবে। সে শিক্ষা পরিকাঠামোর প্রথম ধাপ হল যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ। সেই যোগ্য শিক্ষকরা বেশ কয়েক বছর চাকরি করার পর কিছু দুর্নীতিপরায়ণ মানুষের জন্য আদালতের নির্দেশে তাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে। ফলে, তাঁদের ফের পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে সসম্মানে চাকরি ফিরে পাওয়ার অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যাদের কারণে আজ সেই সব যোগ্য শিক্ষক চাকরিহারা, তাদের চূড়ান্ত শাস্তি এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। তার পরেও অযোগ্যদের পাশে থাকার জন্য শাসক দল বিভিন্ন ভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের চরম ভর্ৎসনার পরেও। অনেক টালবাহানার পরে অবশেষে দাগি শিক্ষকদের তালিকা রাজ্য সরকার আদালতের কাছে পেশ করেছে। তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে সুপ্রিম কোর্ট অযোগ্য প্রার্থীদের সবিস্তার তথ্য দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশনকে।
এমন অবস্থায় স্কুলগুলির পঠনপাঠনে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাবে। এক দিকে রাজ্যের সরকারি ও সরকারপোষিত স্কুলগুলিতে যখন এমন অবস্থা, তখন বেসরকারি স্কুলগুলি শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রায় সম্পূর্ণরূপে ব্যবসার জায়গায় নিয়ে চলে এসেছে শুধুমাত্র সরকারের নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে। রাজ্যের সরকারি ও সরকারপোষিত স্কুলগুলির দুরবস্থার কারণে চিন্তিত অভিভাবকরা সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে প্রচুর টাকার বিনিময়ে বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করছেন।
কিন্তু এত টাকা নিয়েও সব স্কুলে পড়ানোর মান যথেষ্ট সন্তোষজনক নয়। তাই প্রতিটি বিষয়ের জন্য আলাদা করে গৃহশিক্ষকতার ব্যবস্থা করতে হয়। দুইয়ের ফাঁদে পড়ে রাজ্যের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ আজ প্রশ্নের মুখে।
স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০
নির্লজ্জ
‘লজ্জা’ শব্দটির মধ্যে একটা বোধের সম্পর্ক থাকছে। সে বোধ অপরাধ অনুশোচনা বা কোনও অশালীন আচরণের জন্য অন্যায়কারীর মনে জন্মাতে পারে। তার ফলস্বরূপ সংশ্লিষ্ট জনের পরবর্তী পদক্ষেপে খানিকটা স্বচ্ছতার ছাপ পরিলক্ষিত হবে, এমনটাই আশা। রাজ্য সরকারের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির প্রেক্ষাপটে ‘লজ্জা-হারা’ সম্পাদকীয়টি সেই কারণে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। প্রায় ছাব্বিশ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি হারানোর পিছনে রাজ্য সরকারের শিক্ষা দফতরের সীমাহীন দুর্নীতি এখন প্রমাণিত সত্য। যোগ্য-অযোগ্য বাছাই করতে তাদের বারে বারে মিথ্যার পথ বেছে নিতে হয়েছে। প্রতিটি পদক্ষেপে অযোগ্য দাগিদের আড়াল করতে তাদের আন্তরিকতা লক্ষ করা গিয়েছে। দাগিদের ভাতা দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাই তার প্রমাণ। আদালতে বারে বারে তার জন্য সরকারকে কড়া ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হচ্ছে। চিহ্নিত অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরির অধিকার নিয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন কেন সওয়াল করছে— সেই প্রশ্নও তুলেছে কলকাতা হাই কোর্ট। অনন্যোপায় হয়ে অযোগ্য দাগিদের একটা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে মাত্র, তাতেও বিস্তৃত তথ্য নেই বলে শীর্ষ আদালত অসন্তুষ্ট হয়েছে। একই সঙ্গে বঞ্চিত যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ না করাও আর এক ধরনের তঞ্চকতা। এদের সম্মিলিত দুর্নীতির কারণে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটময়। শিক্ষায় আগ্রহ কমে যাচ্ছে, পড়ুয়া আর শিক্ষকের অভাবে কয়েক হাজার স্কুল বন্ধ। প্রতিকারে সরকারের উদ্যোগ অনুপস্থিত। সরকার হয়তো মনে করে, দুর্নীতির সঙ্গে আপস করে চলতে হলে নির্লজ্জতার কোনও বিকল্প নেই।
সারনাথ হাজরা, হাওড়া
গতির শিকার
উন্নয়নের কল্যাণে সুনির্মিত পথ-সড়ক আমরা পেয়েছি, মিলেছে জনপরিবহণের সুব্যবস্থা। অথচ সড়ক-সংলগ্ন গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা হিসাবে আমাদের ঘটছে প্রাণসংশয়। গুসকরা-আউশগ্রাম জঙ্গল রাস্তার সংলগ্ন আমাদের গ্রাম। রাস্তার পাশেই গড়ে উঠেছে বাড়িগুলি। গ্রাম শেষ হলেই আবার বন কিংবা মাঠ। সেই ফাঁকা রাস্তায় যে গতিবেগে যান চলাচল হচ্ছে, গ্রামের অভ্যন্তরে যাওয়ার সময়েও গাড়ির চালকরা প্রায় একই গতিবেগ বজায় রাখছেন। গ্রাম শুরু হতেই রাস্তার পাশে গতিবেগের সর্বোচ্চ সীমানির্ধারক ফলকে লেখা আছে ২০ কিমি/ঘণ্টা, কিন্তু গাড়ির চালকরা সেই অনুযায়ী তাঁদের গাড়ির গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ করছেন না। ইতিমধ্যেই আমরা যথেষ্ট সংখ্যক দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি এবং পালিত প্রাণীরা প্রাণ হারিয়েছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর না হয়, সেই নিশ্চয়তা আমরা চাই।
সাকিলা খাতুন, আউশগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)