সম্পাদকীয় ‘পাঠ্য প্রহসন’ (৩০-৬) জরুরি প্রশ্ন বহন করে। চাহিদা এবং জোগানের ফাঁকটি এখানে প্রকট। আগামী বছরের সংখ্যাক্রমের সঙ্গে মিল রেখে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০২৬টি স্কুলের প্রত্যেকটিকে ১ লক্ষ টাকার বই স্কুল গ্রন্থাগারের জন্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। প্রস্তাবটি চটকদার হলেও ভাল। নিয়মিত ‘কম্পোজ়িট গ্রান্ট’ না পাওয়ায় এমনিতেই স্কুলগুলিতে আর্থিক সঙ্কট প্রকট। তাই নিজ উদ্যোগে বই কেনা হয় না বললেই চলে। এমতাবস্থায় এতগুলি বই এক সঙ্গে পেলে স্কুল গ্রন্থাগারের ফাঁকা তাকগুলি আবারও ভরে উঠবে। কিন্তু, গলদ থেকে যাবে গোড়ায়।
অধিকাংশ স্কুলেই এখন গ্রন্থাগারিক নেই। ২০১৩ সালের পর থেকে এই পদে নিয়োগও বন্ধ। তাই গ্রন্থাগার থাকলেও নিয়মিত পরিচর্যা ও ব্যবহারের অভাবে ছাত্রছাত্রীরা তার থেকে লাভবান হয় না। যদিও অনেক স্কুলে অন্য বিষয়ের কোনও সহৃদয় শিক্ষক পাঠদানের পাশাপাশি গ্রন্থাগারিকের দায়িত্বটিও সামলে দেন। উল্টো দিকে, ছাত্রছাত্রীরাও এখন মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকে সারা ক্ষণ। দশম শ্রেণি-পরবর্তী পড়ুয়াদের হাতে হাতে ঘুরছে সরকারপ্রদত্ত স্মার্টফোন। তাই গ্রন্থাগার ব্যবহারে সিংহভাগ ছাত্রছাত্রীরই আগ্রহ তলানিতে।
এই হতাশাজনক পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখাতে পারে ‘অটল টিঙ্কারিং ল্যাবস’ বা তার সমান্তরাল কোনও প্রকল্প। কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি আয়োগের ব্যবস্থাপনায় এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে দেশের দশ হাজারেরও বেশি স্কুল। এই রাজ্যেরও দু’শোর অধিক স্কুলে এই সুবিধা কার্যকর আছে। যদিও তাদের কোনওটিই রাজ্য সরকারি নয়। কী আছে এই ল্যাবে? আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ সব কিছুই। যেমন থ্রি-ডি প্রিন্টার, রোবোটিক্স, সেন্সর, প্রোজেক্টর ইত্যাদি। এ সবের ব্যবহারে ছাত্রছাত্রীরা হাতে-কলমে শিক্ষা পাবে, পরিচিত হবে আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে। সর্বোপরি, এমন আধুনিক ল্যাবের উপস্থিতির জন্যই সরকারি স্কুলগুলিও ছাত্রছাত্রীদের কাছে হয়ে উঠবে আকর্ষক এবং প্রাসঙ্গিক। তাই, ছাত্রছাত্রীদের চাহিদের কথা না ভেবে কেবল লেখক ও বইয়ের তালিকা নির্দিষ্ট করে দিয়ে লক্ষ টাকার বই প্রদান ‘পাঠ্য প্রহসন’-ই বটে।
পার্থ পাল, মৌবেশিয়া, হুগলি।
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত
‘পাঠ্য প্রহসন’ সম্পাদকীয়টি যথার্থ ও ইঙ্গিতবাহী। স্কুলে পড়ুয়াদের সিলেবাসে দলীয়করণ ভারতে নতুন কিছু নয়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এ বার শিক্ষক ও পড়ুয়াদের পছন্দমতো বই কেনার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করল পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা দফতর তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্যে স্কুল পরিদর্শকদের স্কুলে স্কুলে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষা দফতর সম্প্রতি পাঁচশোরও বেশি বইয়ের তালিকা ও সেট বেঁধে দিয়েছে। বলা হয়েছে, সরকারি স্কুলগুলিকে ওই বইয়ের তালিকা থেকেই বই পছন্দ করে কিনতে হবে। এ বারের শিক্ষা দফতরের নির্ধারিত বইয়ের তালিকায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বেশ কয়েকটি বই স্থান পেয়েছে। ভাবনার বিষয় হল, যুগ যুগ ধরে পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত যে সব কবি, সাহিত্যিক, লেখক, ঔপন্যাসিক ও প্রবন্ধকারের লেখা পড়ে কিশোর-কিশোরী ও স্কুল পড়ুয়ারা সমৃদ্ধ হয়েছে, তাদের মানসিক, কাল্পনিক ও বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটেছে, তাঁদের পাশে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা দলীয় কাজকর্ম ভিত্তিক ও প্রচারমূলক পুস্তক কতখানি যুক্তিযুক্ত ও গ্ৰহণযোগ্য? এতে শিশুমনের স্বাধীন চিন্তা-ভাবনায় ব্যাঘাত হবে না তো?
অনেকেই মনে করছেন, স্কুলের পাঠ্যসূচিতে এই হেরফের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। রাজ্যের বর্তমান শাসক দলের সাফল্যগাথা দিয়ে পড়ুয়া ও তার পরিবারকে প্রভাবিত করার পরিকল্পিত চেষ্টা। অথচ, কবি, সাহিত্যিক ও প্রবন্ধকারের লেখায় সমাজের সর্বস্তরের মানুষের জীবনসংগ্রামের প্রতিফলন ঘটে। রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, অবনীন্দ্রনাথ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রমুখের লেখা বই থেকে ছাত্রছাত্রীরা যে সাহিত্যরস, মূল্যবোধ, বিনোদন ও আনন্দ পেয়ে থাকে, মুখ্যমন্ত্রীর লেখা বই থেকে সেই সাহিত্যপাঠের সুখ ও উপযোগিতা পাবে কি না, সন্দেহ থেকে যায়।
এ বারে শিক্ষা দফতর বই বাছাইয়ের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেছে, এত দিন বহু স্কুল শিক্ষা দফতরের নিয়ম মেনে বই কিনত না, দফতরের দেওয়া টাকা খরচ করত না। যদি কোথাও অনিয়ম হয়ে থাকে, শিক্ষা দফতরের পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করে শুধরে দেওয়ার। আসল কথা হল, স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন সরকারের প্রচার ও গুণগান চাই। চাই সরকারের প্রতি সকলের শর্তহীন আনুগত্য।
হারান চন্দ্র মণ্ডল, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা।
শ্রমের মূল্য
স্বাতী ভট্টাচার্যের লেখা, ‘ভাজা মাছের উল্টো পিঠ’ (২৮-৭) পড়ে মাছের বাজারে শ্রমজীবী মেয়েদের অবস্থান সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেল। জেনে ভাল লাগল যে, বিশাখাপত্তনমের বিশাল মাছ বাজারে শ্রমজীবী মেয়েদেরই আধিপত্য রয়েছে। আমরা বিশাখাপত্তনমে বেড়াতে গিয়ে মাছ বাজারে মেয়েদের এই বিশাল কাজকারবার প্রত্যক্ষ করেছিলাম। বিশাখাপত্তনমে সমুদ্রের পাড় ঘেঁষে মছলিপত্তনম বলে একটি এলাকা আছে, যেখানে মাইলের পর মাইল মাছ শুকোতে দেওয়া হয় মাটিতে বা দড়িতে ঝুলিয়ে, আর এর পুরোটাই মেয়েদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। তবে তাঁরাও বেশ কিছু অসুবিধার সম্মুখীন হন। বেলা দুটো-তিনটে পর্যন্ত তাঁরা খাবার বা জলটুকুও খান না শৌচালয়ের অভাবে। তা ছাড়া, অন্ধ্রপ্রদেশে যে স্কিমে বরফবাক্স ও সাইকেলে ভর্তুকি দেওয়া হত, তা উঠে গিয়েছে। বরং, কেন্দ্রের অনুদান পাচ্ছেন বড় এক্সপোর্টাররা। মেয়েরা বাধ্য হচ্ছেন মাথায় করে মাছ বয়ে নিয়ে যেতে।
আর, আমাদের রাজ্যে মেয়েরা প্রধানত মাছ শুকোনো ও মাছ বাছার কাজ করেন। মাছের বাজারে মেয়েরা যে পরিমাণ শ্রম দেন, তার বিনিময়ে পান শুধু বঞ্চনা। অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের মেয়ে-মৎস্যজীবীদের মতো এ রাজ্যের মেয়েদের কোনও পরিচয়পত্র নেই। মাছ বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সাইকেল, বরফবাক্স— এ সব এ রাজ্যের মেয়ে-মৎস্যজীবীদের হয় অজানা অথবা তাঁদের সাধ্যে কুলায় না। তা ছাড়া, সব জায়গায় রাজনৈতিক দাদাদের দাপাদাপি বেশি। অভিজ্ঞতায় দেখেছি কৈখালি, বকখালি, সাগরদ্বীপে মেয়েরা মীন ধরার জন্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোমর পর্যন্ত নোনা জলে দাঁড়িয়ে থাকেন।
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষায় দেখেছি কৈখালিতে মেয়েরা মাছ ধরতে যান। বর্ষায় উত্তাল মাতলা নদীতে পুরুষদের সঙ্গে সমান তালে তাঁরা ছিপনৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। অবলীলায় বাঁধ বেয়ে উঠে উপরে নিমানিয়া নদী, যেখানে মাতলার সঙ্গে মিশেছে, সেই উঁচু পাড়ে, রামকৃষ্ণ মিশনের গেটের সামনে, মেয়েরা সার দিয়ে বসে খুচরো মাছ বিক্রি করেন। কিন্তু পাইকারি মাছ আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন পুরুষেরা। তাই মেয়ে-মৎস্যজীবীদের হাতে টাকাপয়সা তেমন থাকে না। এ রাজ্যে আর কবে মাছ বাজারে মেয়ে-শ্রমজীবীরা তাঁদের শ্রমের উপযুক্ত মূল্য পাবেন?
শিখা সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা।
ভাঙা রাস্তা
সম্প্রতি দেখলাম মুদিয়ালির আগে দেশপ্রাণ শাসমল রোডের একাংশ খুঁড়ে রাখা রয়েছে। সেই সঙ্গে রাখা আছে বড় বড় পাইপ, আরও অন্যান্য সরঞ্জাম। ফলে মূল রাস্তাটি এখন বেশ সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে। দেখেছি ঠিক বর্ষা আর পুজোর আগে প্রশাসনের যত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তার পর সে রাস্তা ঠিকমতো মেরামত হয় না। অসমান রাস্তার কারণে বাড়ে যানজট ও দুর্ঘটনা। এই প্রবণতা আর কত দিন চলবে? মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৩৩।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)