Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: আধার ও দুর্গতি

সুপ্রিম কোর্টের রায় আসার আগে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার ও তাদের পরিচালিত সংস্থাগুলির এই অঘোষিত হুমকির ফলে সাধারণ মানুষের যে সীমাহীন দুর্গতি ঘটেছে, তার কোনও প্রতিকার হবে, এমন আশা কার্যত নেই।

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০১
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

আধার কার্ডের সীমানা নির্ধারণ করে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিল, তা আরও এক বার এই পরিচয়পত্র ঘিরে মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের অতি-সক্রিয়তাকে জিজ্ঞাসার মুখে ফেলল। বিশেষত গত প্রায় এক বছর ধরে ব্যাঙ্ক, মোবাইলের সিম কার্ড, স্কুলের ভর্তি-সহ বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক ভাবে চাপিয়ে দেওয়ার যে দুরভিসন্ধি চলছিল এবং আধারের তথ্য নিরাপত্তা নিয়ে যে নানান সন্দেহ ছিল, তাতে অন্তত কিছুটা স্বস্তি মিলল।

কিন্তু এই রায় আসার আগে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার ও তাদের পরিচালিত সংস্থাগুলির এই অঘোষিত হুমকির ফলে সাধারণ মানুষের যে সীমাহীন দুর্গতি ঘটেছে, তার কোনও প্রতিকার হবে, এমন আশা কার্যত নেই। এই বিষয়ে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জানালে অনুমান করা যাবে মানুষের অবস্থার সুযোগ নিয়ে এই আধার তৈরি বা আপডেট নিয়ে কী ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য চলছে।

মাসখানেক আগে নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথিভুক্ত বাসস্থানের ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য স্টেট ব্যাঙ্ক ও অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কে গেলে আমায় জানানো হয়, ঠিকানা পরিবর্তনের জন্য মাত্র চারটি ডকুমেন্ট গ্রাহ্য, আধার কার্ড তার অন্যতম। অর্থাৎ পরিবর্তিত ঠিকানায় পাওয়া আধার কার্ড দেখালে তবেই ব্যাঙ্ক এই বদল করবে, যদিও এর আগে বাড়ির টেলিফোন বিল, ইলেকট্রিক বিল, গ্যাসের বই দেখালে এই পরিবর্তন করা যেত, যার প্রতিটিই সরকারি ভাবে অন্যত্র এখনও গ্রাহ্য।

বাকি প্রমাণগুলির মধ্যে ভোটার কার্ড, পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স— খুব দ্রুত পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, আর তা ছাড়া পাসপোর্টে ঠিকানা বদল করতে গেলে সরকারি ভাবেই দেড় হাজার টাকা লাগে।

অগত্যা আমাকে সন্ধান করতে হয় আধার নথিভুক্ত করার কেন্দ্রের, পাশাপাশি আধার কর্তৃপক্ষের সরকারি ওয়েব পোর্টালের সাহায্যও নিতে হয়। তাঁদের ওয়েব পোর্টালে সেল্‌ফ ইউজ়ার আপডেশন নামক একটি মেনু আছে ঠিকই, কিন্তু সেখানে কোনও ভাবেই নিজে নিজে আপডেশন করা সম্ভব হয় না, কারণ সেটি সব সময়ই অকেজো। হেল্পলাইন (১৯৪৭) থেকে জানানো হয় স্থানীয় আধার নথিভুক্তি কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে।

অনেকেই হয়তো জানেন না, সুপ্রিম কোর্টে চলতে থাকা এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে (গত ডিসেম্বর ২০১৭ থেকে শুনানি চলছিল) ইউআইডিআই (আধার কর্তৃপক্ষ) রাজ্যে রাজ্যে তাঁদের অনুমোদিত বেসরকারি এজেন্সিগুলির বেশির ভাগের অনুমোদন গত মার্চ (২০১৭) থেকে বন্ধ করে দিয়েছেন, পরের পর্যায়ে ৩০ জুন (২০১৭) আরও কিছু কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই মুহূর্তে সরকারি ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিসে মাত্রই কিছু নির্বাচিত শাখায় আধারের পরিষেবা কেন্দ্র রয়েছে, তাও পরিকাঠামোর ঘাটতি থাকায় সেখানে পরিষেবার আয়তন অত্যন্ত সঙ্কুচিত।

কলকাতার প্রধান ডাকঘর জিপিও-তে প্রতি দিন মাত্র ৩০ জনের জন্য পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে, এটা আমি নিজের চোখেই দেখে এসেছি। দু’একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেও একই দশা— স্টেট ব্যাঙ্কের যে সব শাখায় কাজ চলছে সেখানেও ৩০/৪০ জনের বেশি ব্যক্তির দৈনিক পরিষেবা মিলছে না।

বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে নিরাশ হয়ে অবশেষে আমি ব্যাঙ্ক অব বরোদার উত্তর কলকাতার একটি শাখায় পৌঁছই, তাদের অনুমোদিত এজেন্সি আমার কাজটি করতে সম্মত হয়। সরকারি ভাবে আধার কার্ডে কোনও আপডেশন হলে ৩০ টাকা সার্ভিস চার্জ লাগে আর ১২৫ টাকা লাগে আপডেটেড আধার কার্ডের নতুন কপি পেতে (ডাকখরচ-সহ)। কিন্তু সেই এজেন্সি আমার থেকে এই কাজের জন্য ৭৭০ টাকা দাবি করে, অ্যাডভান্স বুকিং করে যেতে হবে বলে জানায় এবং আমি টাকার রসিদ চাইলে তা দিতে অস্বীকার করে।

বহু বাক্‌বিতণ্ডা করেও তাঁদের অবস্থান ও নির্ধারিত মূল্য পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে নিজের প্রয়োজনের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আমায় ওই বিপুল পরিমাণ টাকা দিতে হয়।

খেয়াল করি, অনেকেই একান্ত নাচার হয়ে ওই কেন্দ্রে এসেছেন এবং বিভিন্ন জনের থেকে বিভিন্ন পরিমাণ টাকা চাওয়া হচ্ছে— কোন পরিষেবার কী খরচ তা কোথাও প্রকাশ্যে টাঙানো নেই, এ এক বিচিত্র ব্যবস্থা।

এই অভিজ্ঞতার পরে আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে পাড়ায় পাড়ায় আরও এই ধরনের বেশ কয়েকটি সাইবার ক্যাফে খুঁজে পেয়েছি যেখানে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে ন্যূনতম ৫০০ টাকার বিনিময়ে আধারের তথ্য আপডেশন করা হচ্ছে, নতুন আধারের ক্ষেত্রে তার দাম আরও চড়া— এবং কোথাওই কোনও রসিদ দেওয়া হচ্ছে না। বিভ্রান্ত হয়ে বহু মানুষ এই সব কেন্দ্রে যাচ্ছেন।

বাস্তব অবস্থা এই যে, প্রতিটি ক্ষেত্রে আধারকে বাধ্যতামূলক বলে দাবি করায় আসলে তৈরি হয়েছে বিপুল চাহিদা। শুধু নতুন কার্ড তৈরিই নয়, এই ধরনের পরিচয়পত্রের ক্ষেত্রে সব সময়ই বিভিন্ন সূত্রে সংশোধনের দরকার পড়ে; ভোটার কার্ডের ক্ষেত্রে নিয়মিত যে কাজটি করে থাকে নির্বাচন কমিশন এবং নাগরিকদের যতটা সম্ভব সুবিধা বিচার করে প্রতি বছর সেই সংশোধন ও নতুন ভোটার নথিভুক্ত করার কাজ হয়।

কিন্তু আধারের ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত ভাবে কাজটি জটিল সেই সঙ্গে বিপুল চাহিদার তুলনায় পরিষেবা পাওয়ার ঘাটতি তৈরি করেছে এক বিস্তৃত কালোবাজার।

আধারের পিছনে ইতিমধ্যেই বহু কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে, যেমন হয়েছিল এপিক বা ভোটার কার্ডের ক্ষেত্রে। কিন্তু আধারের সঙ্গে গোড়ার থেকেই (মূলত বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে) জুড়ে গিয়েছে একটা ডিজিটাল সন্ত্রাসের আবহ, এটা না থাকলে কী জানি কী হয়, এমন এক ভয় জড়ো হয়েছে সাধারণ নাগরিকের মনে সেই সঙ্গে বেড়েছে দুর্গতি ও দুর্নীতি— সুপ্রিম কোর্টের রায় আমাদের মতো নাগরিকদের ভবিষ্যতের দুর্গতি যদি বা রোধ করেও, এই সুযোগসন্ধানী ডিজিটাল কালোবাজারিদের কী হবে?

প্রবুদ্ধ বাগচী

কলকাতা-৫২

কয়েকটি দাবি

সর্বশিক্ষা মিশন দ্বারা পরিচালিত ভারত সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি যৌথ প্রকল্প হল কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয়। ২০০৭ সালে এই প্রকল্পটি তৈরি করা হয় সমাজের পিছিয়ে পড়া ছাত্রীদের জন্য।

এই প্রকল্পে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের খাওয়া-জামাকাপড়-চিকিৎসা-প্রাইভেট শিক্ষক-নিরাপত্তা ইত্যাদি দিয়ে ছাত্রাবাসে রেখে স্বনির্ভর সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালানো হয়। এই কাজের জন্য এই প্রকল্পে রাঁধুনি, পিয়ন, গৃহশিক্ষক-শিক্ষিকা, ওয়ার্ডেন, অ্যাসিস্ট্যান্ট ওয়ার্ডেন, হিসাবরক্ষক ইত্যাদি নানা পদে নিযুক্ত অনেক কর্মী আছেন। এই রাজ্যে এ রকম ৯২টি বিদ্যালয় আছে, যাতে মোট প্রায় ২৫০০ জন কর্মী আছেন।

১০০ জনের একটি আবাসিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদে আমরা ২০ জন সারা বছর ২৪ ঘণ্টা অস্থায়ী পদে কাজ করি। মাসিক আয় সর্বোচ্চ ৫১০০ টাকা আর সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা। এই বেতনে আজকের দিনে সংসার চালানোই দায়। ‘নো ওয়ার্ক নো পে’— প্রথা মেনে এর উপরে আবার অনুপস্থিতির জন্য এই সামান্য বেতন থেকে টাকা কাটা হয়। কর্মচারীদের কোনও ছুটিই মান্যতা পায়নি। এমনকি মাতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়েও পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি। পরিবারের থেকে দূরে থেকে ছাত্রীদের দেখভাল করতে হয়। ফলে নিজের সন্তান বঞ্চিত হয়।

আমাদের দাবি হল: ১) বাঁচার মতো মজুরি ও বেতন কাঠামো। ২) সরকার স্বীকৃত নিয়োগপত্র। ৩) সরকারি বিধি অনুযায়ী ছুটি ও কাজের সময়। ৪) অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা চালু।
৫) হস্টেলের ছাত্রীদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মানোন্নয়ন।

শোভা সর্দার

আহ্বায়ক, সারা বাংলা কস্তুরবা গান্ধী বালিকা বিদ্যালয় কর্মচারী সমিতি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

Aadhaar Controversy Supreme Court Verdict Relief
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy