Advertisement
১০ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: আকাশবাণী ও বাংলা

সত্তরের দশকের আকাশবাণী কলকাতা থেকে প্রচারিত সংবাদ সমীক্ষা, সংবাদ পরিক্রমা, বাংলা নাটক, ফুটবল-ক্রিকেটের ধারাবিবরণী প্রভৃতি যে সব অনুষ্ঠান নিয়ে আজও বাঙালি নস্টালজিয়াতে ভোগেন, তার সবই ছিল বাংলা ভাষায়, এতে হিন্দির ছায়াও ছিল না।

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৯ ০০:১০
Share: Save:

‘তখনও হিন্দি গানই’ (৩০-৬) শীর্ষক চিঠিতে হিন্দি গান ও সিনেমার প্রচারের পিছনে ষাট-সত্তর দশকের আকাশবাণী কলকাতাকে যে ভাবে দায়ী করা হয়েছে, ওই আকাশবাণীরই সত্তর দশকের এক জন প্রাক্তন কর্মী হিসাবে তা কোনও ভাবেই মেনে নিতে পারছি না। পত্রলেখক আকাশবাণী কলকাতা থেকে সেই সময় হিন্দি ভাষায় প্রচারের গল্প তুলে ধরলেও, সমগ্র অনুষ্ঠানের সেটা শতকরা কত ভাগ ছিল জানালে ভাল হত। সারা সপ্তাহে মাত্র ৫০ মিনিটের অনুরোধের আসর বা ৩০ মিনিটের ছায়াছবির গানের অনুযোগ করেছেন। পত্রলেখকের জ্ঞাতার্থে জানাই, অনেক বেশি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান, যেমন সঙ্গীত শিক্ষার আসর, গল্পদাদুর আসর সপ্তাহে মাত্র এক দিনই হত। ইন্দিরাদির ‘ছোট্ট সোনা বন্ধু, কেমন আছো’ এখনও লোকের মুখে মুখে ঘোরে, তারও প্রচার-সময় সপ্তাহে মাত্র এক দিনই ছিল। যে কোনও আকাশবাণী থেকে এত বেশি রকমের অনুষ্ঠান প্রচার করতে হয় বলে, জনপ্রিয় হলেও বেশি সময় বরাদ্দ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

সত্তরের দশকের আকাশবাণী কলকাতা থেকে প্রচারিত সংবাদ সমীক্ষা, সংবাদ পরিক্রমা, বাংলা নাটক, ফুটবল-ক্রিকেটের ধারাবিবরণী প্রভৃতি যে সব অনুষ্ঠান নিয়ে আজও বাঙালি নস্টালজিয়াতে ভোগেন, তার সবই ছিল বাংলা ভাষায়, এতে হিন্দির ছায়াও ছিল না। ওই সব অনুষ্ঠান ছাড়াও, কৃষিকথার আসর, বিজ্ঞান বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা, এ-পার বাংলা ছাড়াও ও-পার বাংলাতেও প্রচণ্ড জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

বদলির চাকরির সুবাদে বিভিন্ন প্রদেশের আকাশবাণীতে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, পটনা-কটক থেকে যেমন বাংলা গান প্রচার করা হত, তেমনই আকাশবাণী কোহিমা থেকে অসমিয়া গানের প্রচার। নিজস্ব ভাষা ছাড়াও, অন্য ভাষার কিছু অনুষ্ঠান করার দায়িত্ব থাকে সব আকাশবাণীরই।

চন্দ্রশেখর লাহিড়ী

কলকাতা-৮১

আগের ঘটনা

‘তখনও হিন্দি গানই’ চিঠিটি পড়ে, কয়েকটি কথা। আমি ১৯৫৬ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো ও আকাশবাণীতে চাকরি করেছি। যাঁদের সাহচর্য পেয়েছিলাম, তাঁরা প্রত্যেকেই এক এক জন দিকপাল, বলা যায় সেটা ছিল আকাশবাণীর স্বর্ণযুগ। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, বাণীকুমার, পঙ্কজ মল্লিক, শ্রীধর ভট্টাচার্য, প্রেমেন্দ্র মিত্র, লীলা মজুমদার, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়, বেলা দে, ইন্দিরা দেবী, জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, দীপালি নাগ, কাজী সব্যসাচী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়... এ ছাড়াও বহু গুণিজনের সমাবেশ ও আনাগোনাতে আকাশবাণী (তৎকালীন অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো) আলোকিত হয়ে থাকত। এঁরা প্রত্যেকেই বাংলার গর্ব, বাংলা ভাষাকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে লালন-পালন করেছেন।

এই বিদগ্ধ মানুষজন ছাড়াও, এক জন সাধারণ মানুষের কথা উল্লেখ করতেই হয়, তিনি তারিণী বন্দ্যোপাধ্যায়, স্টেবলটন সাহেবের আমল থেকে পরবর্তী ডিরেক্টর ও সাধারণ কর্মচারীর কাছে তিনি ছিলেন অপরিহার্য। তাঁর মুখে শুনেছি, ’৩০ ও ’৪০-এর দশকে অল ইন্ডিয়া রেডিয়োতে সঙ্গীতশিল্পীর আকাল ছিল। ডিরেক্টরের নির্দেশে তারিণীদা অফিসের গাড়ি নিয়ে শিল্পী জোগাড় করতে যেতেন। কলকাতার অলি-গলিতে ঘুরতে ঘুরতে হয়তো কোনও একটা বাড়ি থেকে একটু গানের রেশ ভেসে এল। সঙ্গে সঙ্গে তারিণীদা সেই বাড়ির কড়া নাড়তেই, এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক দরজা খুলে বললেন ‘‘কাকে চাই?’’ ‘‘আজ্ঞে আপনার বাড়ি থেকে মিষ্টি একটা গান ভেসে আসছিল...’’ ‘‘হ্যাঁ, আমার নাতনি। তাতে কী?’’ ‘‘না, আমি অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো থেকে আসছি, আপনার নাতনিকে যদি একটু রেডিয়োতে গান গাইতে দেন।’’ ভদ্রলোক বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘‘এটা ভদ্রলোকের বাড়ি, আপনি কী করে ভাবলেন, আমার বাড়ির মেয়ে রেডিয়োতে গাইবে?’’ দড়াম করে মুখের ওপর দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। এই ভাবে অপমানিত হতে হতে হয়তো এক জনকে পাওয়া যেত। শর্ত, গাড়ি করে নিয়ে যেতে হবে, পৌঁছে দিতে হবে। স্টুডিয়োর মধ্যে গান গাওয়ার সময় বাড়ির এক জন লোক পাশে বসে থাকবে। সব শর্ত মেনেই সেই শিল্পীকে আনা হল। তাঁর হয়তো দু’খানা গান গাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পরের শিল্পী জোগাড় না হওয়ায়, জলসার আসরের মতো তাঁকে উৎসাহিত করে বেশ কয়েকটি গান তাঁকে দিয়ে গাওয়ানো হত। এ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। আমার প্রশ্ন: এগুলো কি বাংলা গানের পৃষ্ঠপোষকতা ছিল না?

অজিত মুখোপাধ্যায়

কলকাতা-৯৭

অতিরঞ্জন

‘‘ব্যাঙ লাফিয়ে’ দিলীপের পায়ে পড়লেন রেলকর্তা’’ (৮-৭) শীর্ষক খবরটি যথেষ্ট পরিমাণে আমার সম্মানহানি ঘটিয়েছে এবং মানসিক ভাবে বিচলিত করে তুলেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের সাংসদ মাননীয় দিলীপ ঘোষ কোনও সরকারি কর্মসূচিতে আসেননি এবং আমি রেলের আধিকারিক হিসেবে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাইনি। বা, কোনও সরকারি অনুষ্ঠানে বা সরকারি দফতরে এমন কোনও আচরণ করিনি, যা আমার সামাজিক সম্মানহানি ঘটায়। আমি কর্মজীবনে যা-ই হই না কেন, প্রতিটি মানুষের একটি ব্যক্তিগত জীবন থাকে, যেখানে স্বচ্ছন্দ বিচরণের অধিকার তাঁর আছে। সুতরাং আমি আমার ছুটির দিনে (রবিবার) একটি বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানে যদি যোগদান করি এবং যোগাসন-চর্চাকারী হিসেবে একটি যোগাসন প্রদর্শন করি, সেটা কোনও অন্যায় কি? আমি কখনওই দিলীপবাবুর পায়ে হাত দিইনি এবং প্রণাম করিনি। ভারতের সংবিধান ব্যক্তিগত পরিসরের বিষয়টিকে মান্যতা দিয়েছে। মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, ব্যক্তিগত পরিসরে হস্তক্ষেপের অধিকার রাষ্ট্রেরও নেই। তাই সংবাদমাধ্যমেরও নেই।

বিষয়টিকে অতিরঞ্জিত করে আমার কর্মজীবনকে টেনে এনে যে বিভ্রান্তিমূলক খবর প্রকাশ করা হল, তার যৌক্তিকতা কী?

প্রবীর গঙ্গোপাধ্যায়

খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

প্রতিবেদকের উত্তর: প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য কাউকে অসম্মান করা নয়। এক রেল আধিকারিকের আচরণে যে-বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, প্রতিবেদনে সেটুকুই তুলে ধরা হয়েছে। এক জন রেল আধিকারিকের পরিচয় নিশ্চয়ই রবিবার বদলে যায় না! আর ওই দিন তিনি যে যোগাসন চর্চা করে দেখিয়েছেন, সেটা তাঁর বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে হয়নি। হয়েছে এক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে, জনসমক্ষে। গোটা ঘটনার ভিডিয়ো ফুটেজ আমাদের কাছে আছে। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, তিনি দিলীপ ঘোষের পায়ে গিয়ে পড়েছেন। তা ছাড়া তাঁর সঙ্গে ফোনে কথোপকথনের অডিয়ো রেকর্ডও আমাদের কাছে আছে। সেখানে তিনি নিজেই তাঁর কর্মকাণ্ডকে ‘ব্যাঙ লাফানো যোগা’ বলেছেন। ফলে, প্রতিবেদনে কোনও অতিরঞ্জন নেই।

দু’টি সংবাদ

‘ভুল কবুল করে নিন, শোধরান’ (১২-৭) এবং ‘হাঁটা বন্ধ মুখ্যমন্ত্রীর!...’ (১২-৭) শীর্ষক সংবাদ দু’টি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হল।

প্রথম সংবাদটিতে উল্লিখিত নির্দেশের মধ্যে ২০০৯ সালে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর কথার সুর পেলাম। তিনি কমরেডদের একই নির্দেশ দিয়ে সতর্ক করেছিলেন।

দ্বিতীয় সংবাদটিতে জানলাম, ইলিয়ট পার্কে হাঁটতে গিয়ে তিনটি ফণা-তোলা সাপ দেখেন মুখ্যমন্ত্রী, তাই তড়িঘড়ি পার্ক সাপমুক্ত করার উদ্যোগ। ঠিক এমনটাই হয়েছিল আশির দশকে সল্টলেকে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর ঘুমে বিঘ্ন ঘটিয়েছিল অর্বাচীন কয়েকটি শিয়াল। তাই সল্টলেক শিয়ালমুক্ত করতে বিশেষ তৎপরতা দেখিয়েছিল প্রশাসন।

ছন্দা দাস সরকার

কলকাতা-১০৩

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

‘পুবে ‘অধিকার’-ই শেষ কথা, তবু স্বপ্ন বিজেপির’ শীর্ষক সংবাদে (পৃষ্ঠা ৫, ১০-৭) হলদিয়ার স্থানীয় বিজেপি নেতা যে প্রদীপ দাসের মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে তাঁর সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর (তমলুক) সাংগঠনিক জেলার সদ্য প্রাক্তন জেলা সভাপতি প্রদীপ দাসের কোনও যোগ নেই। কোনওরকম বিভ্রান্তি তৈরি হয়ে থাকলে আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Language All India Radio AIR
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE