প্রত্যেক বছর এপ্রিল মাসে আয়কর আইন ১৯৬১-এর ১৯৭এ(১সি) ধারা মোতাবেক ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিস প্রভৃতি সংস্থায় সঞ্চয়কারীকে দু’পাতার দীর্ঘ দু’কপি ফর্ম (১৫জি বা ১৫এইচ) জমা দিতে হয়। জমা না দিলে ওই আইন মোতাবেক টাকা ট্যাক্স ডিডাকটেড অ্যাট সোর্স (টিডিএস) হিসাবে কেটে নেওয়া হয়। তাই এপ্রিল মাসে ফর্ম জমা দেওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইন পড়ে এবং প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়। আবার এমনও বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে ফর্ম জমা দেওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের নির্দিষ্ট শীর্ষ অফিস থেকে টিডিএস কেটে নেওয়া হয়েছে। ওই ফর্মটি শুধু দীর্ঘই নয়, জটিলও। অনেকের পক্ষে সঠিক ভাবে পূরণ করা বেশ কষ্টসাধ্য। কোনও কোনও ব্যাঙ্ক ফর্ম সঠিক ভাবে পূরণ না হলে জমা নেয় না। তা ছাড়া, কর্মী অপ্রতুলতার কারণে ব্যাঙ্ক কর্মীদের এই বিষয়ে সাহায্য চাইলে হয় তাঁরা বিরক্ত হন নয়তো দুর্ব্যবহার করেন।
এই বিড়ম্বনা প্রতি বছর অনেক অসুস্থ প্রবীণ সঞ্চয়কারীকেও ভোগ করতে হয়। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বাজেট-বক্তৃতায় আয়করে বড় অঙ্কের ছাড় দিয়ে মধ্য বা উচ্চবিত্তের অনেকটা সুরাহা করেছেন। এর সঙ্গে টিডিএস-এ এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু অভিজ্ঞতায় দেখেছি নির্দিষ্ট ছাড় থাকা সত্ত্বেও ব্যাঙ্ক টাকা কেটে নিয়েছে। এমতাবস্থায় ১৫জি বা ১৫এইচ ফর্ম জমার নিদারুণ দুর্ভোগযন্ত্রণা থেকে সাধারণ মানুষকে রেহাই দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করি।
সূর্যকান্ত দেবনাথ, কলকাতা-১৪৬
ফলপ্রকাশে দেরি
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উপভোক্তা বিষয়ক দফতর রাজ্য এবং জেলার উপভোক্তা বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনগুলিতে প্রেসিডেন্ট এবং সদস্য পদে নিয়োগ করছে। অথচ, তার চূড়ান্ত ফলাফল সব ক্ষেত্রে সরকারি ভাবে জনসমক্ষে আনা হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, দফতরের ওয়েবসাইটে সর্বশেষ ২০২১ সালের ২২ ডিসেম্বরের নিয়োগ সংক্রান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এর পর ২০২৪ সালের ২৫ জুন রাজ্য এবং জেলা উপভোক্তা বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনগুলিতে প্রেসিডেন্ট এবং সদস্যপদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার পর প্যানেল তৈরি সংক্রান্ত ফলাফল দফতরের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়নি। তাই সফল প্রার্থীদের নাম জানা যাচ্ছে না। এ ভাবে অন্য প্রার্থীদের কেন অন্ধকারে রাখা হচ্ছে, সেটাই প্রশ্ন। ইতিমধ্যে, ওই দফতর রাজ্য এবং জেলার উপভোক্তা বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনগুলিতে নতুন করে প্রেসিডেন্ট এবং সদস্য নিয়োগ করতে চাইছে। এ জন্য প্রার্থীদের দফতরের ওয়েবসাইটে আবেদন করতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দফতরের মাননীয় মন্ত্রীর কাছে বিনীত অনুরোধ, যথাসম্ভব শীঘ্র বিষয়টি দেখুন এবং নিয়োগ নিয়ে স্বচ্ছতা বজায় রাখুন।
ধ্রুব বসু, কলকাতা-১৯
এক জন বাদ
মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। মার্চে শুরু হবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। এগুলি শেষ হলেই ছাত্রছাত্রী-সহ বহু পরিবারেরই ছুটি কাটাতে যাওয়ার হিড়িক পড়বে। তবে এখন তো বছরের কোনও সময়েই ট্রেনের টিকিট পাওয়া যায় না। বিশেষত, উত্তরবঙ্গ বা পুরী যাওয়ার ট্রেনের টিকিট অপ্রতুল। আর এই ভিড়ের সুযোগ নিয়ে এক দল অসাধু ব্যবসায়ী তৎকাল টিকিট কনফার্ম করিয়ে দিয়ে যেমন পারছেন টাকা দাবি করছেন। এ সবের মাঝে সম্প্রতি আমার নিজের একটি খারাপ অভিজ্ঞতা হল রেলের নিয়মের সূত্রে। গত নভেম্বরে শিলিগুড়ি জংশন থেকে আমার এবং আমার পরিবারের টিকিট ছিল ওয়েটিং লিস্টে একই ‘পিএনআর’ নম্বরে। ট্রেন ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা আগে মেসেজ পেলাম যে ওই ‘পিএনআর’-এ দু’জনের টিকিট কনফার্মড হলেও বাকি এক জনের হয়নি। রেলের আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, একই পিএনআর যে-হেতু তাই সবাই ট্রেনে উঠতে পারবেন, কিন্তু সিট পাবেন না। এই চূড়ান্ত অস্বস্তিকর নিয়মটি অবিলম্বে বদলানো উচিত। এমন ক্ষেত্রে হয় একই পিএনআর-এর সবার টিকিট ওয়েটিং-এ থাকুক, নয়তো সবার কনফার্মড হোক।
দেবজ্যোতি অধিকারী, শিয়াখালা, হুগলি
ঝুঁকির পারাপার
‘প্রাণ হাতে রেললাইন পারাপার, ক্ষুব্ধ যাত্রীদের অবরোধ ক্যান্টনমেন্টে’ (৭-২) শীর্ষক খবরটি পড়লাম। প্রসঙ্গত, হাওড়া-বর্ধমান রুটের একগুচ্ছ রেললাইন বালি স্টেশনে গিয়ে বিভক্ত হয়। একটা মেন, আর একটা কর্ড। বালি স্টেশনের আগে একটা লেভেল ক্রসিং-কে লোকাল ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগামী রাজধানী সমেত বন্দে ভারত-এর মতো ট্রেনকে পার হতে হয়। এ পারে, জি টি রোড পুরসভার বালি বাজার থেকে শাখা রাস্তা সোজা চলে গিয়ে দুটো উচ্চতর বিদ্যালয়কে পাশ কাটিয়ে থমকে যায় লেভেল ক্রসিং-এ। ও পারে ঘোষপাড়া সমেত সংলগ্ন এলাকায় বাড়ছে লোকবসতি। ক্রসিং-এর গেট উঠলেই দু’পাশে জমে থাকা মানুষজন, বাইক-বাহিনী, চার-চাকার যানের হুড়োহুড়ি করে পারাপারের মাঝে গেট ফেলাই অনেক সময় মুশকিল হয়ে পড়ে। জনস্রোতের জেরে অনেক সময় ক্রসিং-এর আগেই ট্রেন যায় থেমে। গেট বন্ধ হওয়ার সময় কয়েক জন ব্যক্তি, দু’চাকার যান বিভিন্ন কসরত করে ক্রসিং পারাপার করে থাকেন। কাছাকাছি থাকা চলন্ত ট্রেনের সামনে দিয়ে প্রাণ হাতে করে এক ছুটে লাইন পেরিয়ে যাওয়ার দৃশ্য হামেশাই চোখে পড়ে। এই ঝুঁকির পারাপার নিয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
অঞ্জন কুমার শেঠ, কলকাতা-১৩৬
শান্তি নেই
আমি নিউ টাউন অ্যাকশন এরিয়া ১-এর এ ই ব্লকের বাসিন্দা। বহু কাল ধরেই আধুনিক সুযোগসুবিধা-সহ ফাঁকা জায়গা, পরিস্রুত জল আর নিয়মিত পুর তথা পুলিশি পরিষেবা পেতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলাম। ধীরে ধীরে বসতি বাড়ল। রাস্তার দখল নিলেন অগুনতি হকার। হকাররা তাঁদের পসরা আনেন তিন চাকার কাটা তেলে চলা বীভৎস আওয়াজ তোলা মোটর ভ্যানে, যার ব্রেক কষার আওয়াজও একই রকমের বিকট। এর পর যোগ হল অজস্র গাড়ি আর তাদের হর্নের আওয়াজ। সেই সঙ্গে সকালে জেসিবি-র গর্জন, রাতে সাইলেন্সার বিহীন মোটর-সাইকেল বা সারা রাত ধরে কাজ করা ইমারতি-পণ্যবাহী ডাম্পারের আওয়াজ তো আছেই। যান নিয়ন্ত্রণে পুরপ্রতিনিধি অবশ্য বিশাল উঁচু কয়েকটি গতিরোধক বানিয়ে দায়িত্ব সেরেছেন।
এখানেই শেষ নয়। এনকেডিএ ফুটবল স্টেডিয়ামটি লোকালয়ের মধ্যেই। সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সপ্তাহে অন্তত তিন দিন সেখানে চলে বিভিন্ন খেলার প্রতিযোগিতা। সকাল ৮টা থেকে লাউড স্পিকার চালু হয়ে প্রায়শই রাত ন’টা পর্যন্ত ‘তারস্বরে ধারাবিবরণী’ দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলতে থাকে। প্রতিযোগীদের হরেক গাড়ি প্রায় সব ক’টি আবাসনের গেটের সামনে পার্ক করে চালক অদৃশ্য হয়ে যান। ফলে নিজের ফ্ল্যাটে নিজেদেরই ঢোকা বা বেরোনো চালকদের কৃপার উপরে নির্ভর করে।
আর, শেষে বলব নিকাশিব্যবস্থার কথা। আমার নিজের ফ্ল্যাটের জলনিকাশি নালার উপর পুরপ্রতিনিধি (হিডকো) কংক্রিটের একটি চৌবাচ্চা বানিয়ে নিকাশি নালাটি অযথা আটক করে রেখেছেন। বহু বার হাতে হাতে চিঠি আর ইমেল করা সত্ত্বেও কোনও সুরাহা এখনও হয়নি। জল জমে মশা জন্মাচ্ছে। অথচ, গেটের পাশেই পুরসভার দেওয়া ডাস্টবিনের গায়ে লেখা আছে ‘জল জমতে দেবেন না, নচেৎ জরিমানা হবে’। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্ট সুধীবৃন্দ কি বলতে পারেন যে আধুনিক শহর বলতে আমরা কী বুঝি আর কোথায় কী ভাবে বললে ন্যূনতম পরিষেবা পেতে পারি?
কল্যাণ ভট্টাচার্য, কলকাতা-১৫৬
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)