আজ থেকে বছর পঁচিশ আগে শিল্পী এবং শান্তি আন্দোলনের আজীবন কর্মী শ্যামলী খাস্তগীরের উদ্যোগে কলাভবনের এক দল শিল্পী-কারিগর শনিবারের হাট চালু করেছিলেন। শান্ত, নিভৃত ও নিঃশব্দে ঘেরা শীতল সোনাঝুরির ছায়াতলে প্রতি শনিবার দুপুরে খোয়াইয়ের ধারে বসত এই হাট। ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে ছিল একটা সৃজনশীল মনোভাব। এক নান্দনিক চেহারা ছিল এই হাটের, আজ যা বিলুপ্ত।
এখনকার ভিড়ে ভরা শনিবারের হাট/ খোয়াই হাট/ সোনাঝুরির হাট দেখে মনে প্রশ্ন জাগে উন্নয়নই কি এর ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াল? কাদের জন্য এই হাট? কাদের জন্য টোটোচালকদের রুজিরোজগার? পর্যটকদের জন্য নিশ্চয়ই। আর আজ সেই হাটই পর্যটকদের কাছে ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাট থেকে প্রায় দেড়-দুই কিলোমিটার দূরে ও রাস্তা থেকে প্রায় ২০ ফুট নীচে গাড়ি পার্কিং করতে হয়। আর প্রায় দুই কিলোমিটার পথ ধরে শুধুই টোটো স্ট্যান্ড। মেলা থেকে ডাইনে ও বাঁয়ে দুই কিলোমিটার জুড়ে নো-পার্কিং বোর্ড। অথচ, এখানে টোটো রাখার জায়গা করা। প্রবীণরা এখানে বেড়াতে এলে তাঁদের পক্ষে দেড়-দু’কিলোমিটার হাঁটা কি সম্ভব?
ফাঁকা জায়গা পেয়ে কেউ যদি তাঁর গাড়ি রাখতে যান, তবে স্থানীয় ছেলেছোকরার দল তেড়ে আসে। সোনাঝুরির হাটে এখন যানজট হয় বলে রাস্তায় পার্কিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে এটি সঠিক সিদ্ধান্ত হিসেবে যদি ধরে নেওয়া যায়, তবে টোটো কেন রাস্তার উপর দীর্ঘ লাইন করে দাঁড়াবে? এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
বলা বাহুল্য, এই হাট এখন বাণিজ্য কেন্দ্র হয়ে গিয়েছে। শিল্পী বা কারিগরদের কোনও স্থানই আজ সেখানে নেই। বদলে তা দখল করে নিয়েছে দালাল আর দোকানদার, মধ্যস্বত্বভোগীরা সেখানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আগামী দিনে হয়তো সোনাঝুরিতে গড়ে উঠবে মার্কেট কমপ্লেক্স। তখন চিরতরে হারিয়ে যাবে স্মৃতিবিজড়িত এই হাটখানি।
পার্থময় চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৯৪
বিধিভঙ্গ
সম্প্রতি গিয়েছিলাম ঐতিহ্যবাহী ইডেন গার্ডেনস সংলগ্ন ইডেন পার্কে। সেখানে ২০ টাকা প্রবেশমূল্য দিয়ে ঢুকতে হয়। এ ছাড়া দলবদ্ধ ভাবে গেলেও ভাড়া হিসেবে আলাদা মূল্য ধার্য করা হয়। অবশ্য, সেটা ঠিক কত জানা নেই। ভিতরে রান্নাবান্না এবং টেবিল-চেয়ার পেতে খাওয়াদাওয়া— সবই করা যায়। আমিও একটি সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে কয়েক জন আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে একটি মিলন মেলায় যোগ দিয়েছিলাম। আরও তিন চারটি সংস্থার খাওয়া-দাওয়া’সহ নানা অনুষ্ঠান সেখানে চলছিল। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল, নিষিদ্ধ থার্মোকল বাটির ব্যবহার এবং লাগামহীন শব্দমাত্রায় ডিজে বাজানোর অনুমতি কি সেখানে দেওয়া আছে? এমন অনেক কিছুই হয়তো অগোচরে থেকে গেছে।
সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি জায়গায় এমন করে যথেচ্ছ আইন ভাঙা যায় কি? কোনও সিকিয়োরিটি গার্ড বা ন্যূনতম কোনও পরিদর্শক চোখে পড়েনি সে দিন। এমন একটি ঐতিহ্যবাহী উদ্যানে আইন অমান্যের বিষয়টি আগামী দিনে কড়া নজরে দেখুক সরকার।
মানস কুমার সেনগুপ্ত, কলকাতা-৭৪
হকাররাজ
কবি নজরুল মেট্রো স্টেশনের সামনে গড়িয়া বাজারে প্রবেশের পথ অস্থায়ী বিক্রেতাদের দখলে চলে গিয়েছে। হাঁটাচলা করা রীতিমতো কষ্টসাধ্য। উচ্ছেদ অভিযান চলাকালীন ফুটপাত ফাঁকা করে দেওয়া হচ্ছে বটে, কিন্তু প্রশাসনের লোকজন চলে যেতেই আবার যে কে সেই। সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ করার দুঃসাহস খুব একটা চোখে পড়ছে না। সেটাই স্বাভাবিক, যে-হেতু স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতার বিষয়টি এ ক্ষেত্রে সহজেই অনুমেয়। চিরস্থায়ী সমাধানের ব্যাপারে প্রশাসনকে যথেষ্ট কঠোর হতে হবে।
বিশ্বজিৎ কর, কলকাতা-১০৩
শ্রমিক-মৃত্যু
‘নর্দমার গর্তে নেমে মৃত ৩’ (৩-২) শীর্ষক খবরটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। মনে প্রশ্ন জাগে, মানুষের মনুষ্যত্ব কি তবে হারিয়ে যাচ্ছে? বছর তিনেক আগে কুঁদঘাটে চার জন শ্রমিকের মৃত্যুও টলাতে পারেনি পুর কর্তৃপক্ষকে। তাঁরা যে তিমিরে ছিলেন, এখনও সেই তিমিরেই যেন অবস্থান করছেন। শ্রমিকের প্রাণের কোনও মূল্য বা নিরাপত্তা এখনও এখানে নেই, সরকারি টাকায় ক্ষতিপূরণই একমাত্র সমাধান এ সব প্রাণঘাতী সমস্যার। বানতলা চর্মনগরীতে কেএমডিএ-র নিকাশি নালা সাফ করতে গিয়ে তিন জনের বেঘোরে প্রাণ হারানোর পরে আবার প্রশ্ন উঠছে, এ ভাবে শ্রমিকদের জীবনকে ভাগ্যের হাতে ছেড়ে না দিয়ে কোনও আধুনিক পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া কি যায় না? ম্যানহোলে শ্রমিক নামানো নিয়ে কলকাতা-সহ ছয়টি শহরকে সুপ্রিম কোর্ট সতর্ক করেছিল, শ্রমিক সুরক্ষায় কিছু নির্দেশও ছিল সেখানে।
পুরমন্ত্রী ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করে শ্রমিকের প্রাণের মূল্য চোকাতে চাইলেন হয়তো, কিন্তু এ সব কাজের সুষ্ঠু ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান কী, ও-সব ভাবনায় প্রশাসন গুরুত্ব দিলে হয়তো অন্ন সংস্থানের তাড়নায় গ্রামগঞ্জ থেকে কাজের খোঁজে এসে এ ভাবে বেঘোরে প্রাণ দিতে হত না প্রান্তিক শ্রমিকদের। ঠিকাদার শ্রমিকের জোগান দিয়ে যারা কাজটা করিয়ে দেয়, তারা নর্দমা বা ম্যানহোল বিশেষজ্ঞ নয়। ঝুঁকিপূর্ণ এ সব কাজের দায়িত্ব পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার-সহ এই বিভাগের অভিজ্ঞজনদের। তাঁরাই তো কাজের তদারকি করবেন, পুরো ব্যবস্থাপনার নজরদারিতে থাকবেন। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজের জায়গায় তাঁরাই থাকেন অনুপস্থিত। এটাও কি এক প্রকার সরকারি গাফিলতি নয়?
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪
সময়ে ট্রেন
আমি গত ৫৫ বছর যাবৎ বারুইপুর থেকে শিয়ালদহ কলেজে পড়াশোনা ও পরে পেশাগত কারণে ট্রেনে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করছি। স্টিম ইঞ্জিন-ইএমউ চার বগি-আট বগি-বারো বগিতে রূপান্তরিত হতে দেখেছি। পরিষেবার বহু উন্নতি রেল করেছে। নিউ গড়িয়া নতুন স্টেশন হয়েছে। মেট্রো রেল চালু হয়েছে। ট্রেন এখন সুন্দরবন সংলগ্ন নামখানা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। প্রচুর যাত্রীও বেড়েছে।
নতুন করে বগি বাড়ানো ও সেই সঙ্গে প্ল্যাটফর্ম বৃদ্ধি করা গেলেও ভিড় সামাল দেওয়া অসম্ভব ও সময়সাপেক্ষ। এই বিষয়ে এক রাজনীতিবিদ এক সময় নিউ গড়িয়া থেকে ডায়মন্ড হারবার, নামখানা ও ক্যানিং যাওয়ার ট্রেনের দাবি জানিয়েছিলেন। রেল কর্তৃপক্ষ সেই দাবি মেনে স্টেশন সংলগ্ন কিছু কাজ করেওছিলেন। কিন্তু সেই কাজ বছর পাঁচেক আগে বন্ধ হয়ে গেছে। রেল কর্তৃপক্ষ ন্যূনতম অর্থ বরাদ্দ করে হাত ধুয়ে ফেলেছেন।
বর্তমান যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচিত সাংসদ লোকসভায় বারুইপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল বিস্তারের দাবি করলে রেল কর্তৃপক্ষ লাভজনক না হওয়ার কারণে তাঁর সেই প্রস্তাব বাতিল করেন। অথচ, দিন দিন লোকাল ট্রেনগুলিতে যাত্রীর সংখ্যাবৃদ্ধি এক ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। দূরবর্তী যাত্রীরা সোনারপুর লোকাল ও বারুইপুর লোকাল ধরে সোনারপুর অথবা বারুইপুর এসে ট্রেন ধরছেন। এতে সমস্ত যাত্রীই নাকাল হচ্ছেন।
রেল কর্তৃপক্ষ যদি নিউ গড়িয়া স্টেশনকে হল্ট স্টেশন হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় একটি করে ডায়মন্ড হারবার, নামখানা ও ক্যানিং লোকাল আপ ও ডাউনে চালানোর সিদ্ধান্ত নেন, তবে হাওড়া, কলকাতার বহু মেট্রোযাত্রী উপকৃত হবেন।
আশিস ভট্টাচার্য, পশ্চিমপাড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)