‘বিষবাষ্পে মৃত ১৪, গ্রেফতার হয়নি কেউ’ (১-৫) সংবাদটির পরতে পরতে মেছুয়া ফলপট্টির ‘ঋতুরাজ’ হোটেলকে ঘিরে হোটেল কর্তৃপক্ষ থেকে পুরসভা, দমকল ও পুলিশের নজরদারির শৈথিল্য, অনিয়ম, উদাসীনতা স্পষ্ট। একই দিনে প্রকাশিত সম্পাদকীয় ‘দগ্ধ’ও যথার্থ দিঙ্নির্দেশ করেছে। হোটেলটিতে যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না, দমকল দফতরের অনুমতি নবীকরণও করানো হয়নি। এই নিয়ম যাচাই করে নেওয়ার কাজটি পুরসভা, দমকল-সহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির। কোনও দফতর উদ্যোগীও হয়নি নিয়মগুলি পালন করা হচ্ছে কি না, দেখার জন্য।
সর্বসাধারণের ব্যবহারের জায়গায় লাগানো অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রগুলি নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখতে হয়। দমকল দফতর থেকে সর্বশেষ ২০২২ সালে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ নিয়ে ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫-এর প্রায় অর্ধেক সময় কাটিয়ে ব্যবসা চলছে হোটেলটিতে, ফায়ার অডিট হয়নি এই ক’বছর। নতুন নতুন নির্মাণকর্ম চলছে, অথচ স্থানীয় পুরপিতা থেকে পুলিশ কারও নজরে আসেনি। বোঝা গেল, পূর্ব ভারতের অন্যতম বৃহৎ ও ব্যস্ত বড়বাজার এলাকার ব্যবসাস্থলে রোজকার নজরদারি চলে না। নিজের রাজ্য ছাড়িয়ে পড়শি রাজ্য বা তারও দূর প্রদেশ থেকে এখানে ব্যবসায়িক কাজে আসে লোকজন, দু’-চার দিনের কাজের পরিকল্পনা থাকলে কলকাতা ঘোরানোর জন্য পরিবার নিয়ে এসে ওখানকারই হোটেলে ওঠেন ব্যবসায়ীরা। একতলায় পানশালা চলে, কেউ জানতে পারেনি না চায়নি যে পানশালাকে ঘিরে কী চলে! দোতলার ঘর ভেঙে ডান্স বার তৈরি হচ্ছিল! সেই কাজেরও অনুমতি ছিল না।
অবশ্য এমন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শহরে নতুন নয়। এ শহরে আগুন লেগেছে বারে বারে— হোটেল, রেস্তরাঁ, হাসপাতাল, কারখানা প্রভৃতিতে। ২০১০ সালে পার্ক স্ট্রিটের স্টিফেন কোর্ট কাণ্ড, ২০১১-র ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ড, প্রতি এক-দু’বছর অন্তর নগর কলকাতায় এমন ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে আর পুরমন্ত্রীর ঘোষণা থাকে, কমিটি গঠন করে তদন্ত হবে। কিন্তু অতীত থেকে কোনও শিক্ষা নেয়নি প্রশাসন। প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটার পর তদন্ত করা নয়, আগেই দেখা দরকার জনস্বার্থের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি দফতরের দায়িত্বশীল অধিকর্তা-আধিকারিক, মন্ত্রী নিয়মিত নিজের কাজগুলো নিষ্ঠাভরে করেন কি না! দায়বদ্ধতার বিষয়টি না থাকলে গয়ংগচ্ছ ভাবেই সব চলবে। বার বার এমন অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটা আটকানো যায় কী ভাবে, ভেবে দেখার অনুরোধ রইল।
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪
ভরসা কোথায়
কিছু দিন আগে কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারের অতি নিকটে মেছুয়াতে এক অগ্নিকাণ্ডে সরকারি মতে চোদ্দো জনের প্রাণহানি ঘটল। প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত হোটেলটির ‘ফায়ার লাইসেন্স’ তিন বছরের উপর নবীকরণ করা হয়নি, তদুপরি অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার নিয়মিত দেখভাল না হওয়ার কারণে প্রয়োজনের সময় সেগুলি কাজ করেনি। এমনকি হোটেলটির উপরের ডান্স বারটিও প্রশাসনের অনুমোদন পায়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি দফতর ও বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির নজর এড়িয়ে এই ধরনের ব্যবসা কী ভাবে চলছিল? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়ে জনসাধারণকে দায়িত্বশীল হতে বলেছেন। তা হলে কি এ বার থেকে হোটেলে ঘর নেওয়ার সময় আমাদের ‘ফায়ার লাইসেন্স’-এর বৈধতা ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার কার্যকারিতা পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করতে হবে?
এই ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ সরকারি স্তরে যাঁদের প্রশ্রয়ে চলেছে, তাঁরা কিন্তু বহাল তবিয়তেই থাকবেন। সরকারি স্তরে দায়িত্বপালন ও জবাবদিহির পরম্পরা থাকলে এই ধরনের ঘটনা চট করে ঘটার কথা নয়। অথচ সেটাই এই রাজ্যের নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শংকর গঙ্গোপাধ্যায়, কলকাতা-৩৪
বেহুঁশ
‘পর পর অগ্নিকাণ্ডেও হুঁশ ফেরে না কারও, বাজার এখনও সেই জতুগৃহই’ (১৩-৫) শীর্ষক সংবাদে স্তম্ভিত। আমাদের ও প্রশাসনের ঘুম ভাঙবে কবে? দুর্ঘটনা হলে একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপানো হবে আর অগ্নিকাণ্ডের বিভিন্ন কারণ নিয়ে আলোচনাই শুধু চলবে? অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এখনও বেহাল অনেক বাজারে। এগুলি ঠিকমতো পরিদর্শন করা হয় না কেন? প্রত্যেক বাজারে একটি বাজার ব্যবসায়ী কমিটি থাকে। তারা যথাযথ নজর দিলে আপৎকালীন বেরোনোর পথ কখনও প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে বন্ধ হবে না। আগামী দিনে বাজারের প্লাস্টিকের ছাউনিগুলি পরিবর্তন করা যায় কি না, তা নিয়েও চিন্তাভাবনা করা হোক। যে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাজ এখনও সম্পন্ন করা বাকি, যেমন— জলের ব্যবস্থা করা, ঠিক সময়ে দমকল দফতরের পক্ষ থেকে ফায়ার অডিট করানো, সেগুলি সম্পন্ন হোক।
তমাল মুখোপাধ্যায়, ডানকুনি, হুগলি
সহজ ভাষায়
‘অতই সহজ পাঠ?’ (১৬-৪) প্রবন্ধে রিয়া মোদক সহজ পাঠ সম্পর্কে তাঁর চিন্তাভাবনা, গবেষণা, অনুভূতি অতি সহজ ভাষায় প্রকাশ করেছেন। সহজ পাঠ বাঙালির কাছে একটি আবেগ। এটি শুধুমাত্র উপদেশমূলক বা নীতিশিক্ষার বই নয়; এই বইটি শিশু শিক্ষার্থীকে ভাষা শিক্ষার সঙ্গে কল্পনার জগতে প্রবেশ করতে শেখায়। প্রতি দিনের দেখা জগৎ, জীব, মানুষ, তাদের কাজকর্মের বিবরণ সহজ পাঠ-এ সহজ ভাষায় সমাজচিত্র বর্ণনের মাধ্যমে উল্লিখিত আছে।
আমরা দেখতে পাই সহজ পাঠ-এর প্রথম ভাগে ‘ডাক পাড়ে ও ঔ/ ভাত আনো বড়ো বৌ’ নিত্যপরিচিত বাঙালি পরিবারের সহজ চিত্রটিই তুলে ধরে। এই ‘বড়ো বৌ’ আমাদের মা, ঠাকুমা, জেঠিমা, কাকিমাদেরই প্রতীক। বেশির ভাগ সংসারে এই রাঁধা-বাড়ার কাজটি পূর্ণ কর্তৃত্বের সঙ্গে নিষ্ঠাভরে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গেই তাঁরা নিয়মিত ভাবে করে যেতেন। সহজ ভাবে নিজের কর্তব্য নিষ্ঠা সহকারে পালনের মধ্যে নারীর উৎকর্ষই প্রকাশ পায়, পুরুষতান্ত্রিকতা নয়। এই ‘বড়ো বৌ’-দের কোমলতা, সংসারের প্রতি দায়বদ্ধতা, স্নেহশীলতা, আদর্শ, মূল্যবোধ, দৃঢ়তা ও সহিষ্ণুতা প্রকৃত অর্থে আধুনিক চিন্তাভাবনা, যা পুঁথিকেন্দ্রিক শিক্ষায় শিক্ষিত পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে দেখা যায় না। এর মধ্যে কোনও ভাবেই নারীকে অসম্মানিত হতে দেখি না, বরং তাঁদের মাতৃত্বে উত্তরণের ছবি দেখতে পাই।
সমাজচিত্র বর্ণন করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ‘পৈতে’, ‘বিবাহ’ ইত্যাদি অনুষ্ঠান ও একই সঙ্গে ধোপা, কাঠুরে, বেহারা, মুটে, ভূস্বামী (দুর্লভবাবু)-র মতো মানুষের কথাও উল্লেখ করেছেন সহজ পাঠ-এ। এর মাধ্যমে তদানীন্তন সমাজে বর্ণ অনুযায়ী কর্ম-বিভাজনের বৈচিত্রটুকুই তুলে ধরা হয়েছে। এই চিত্রণ শিশুমনে তৎকালীন সমাজের নিত্যদিনের ছবিটি কল্পনার ক্যানভাসে এঁকে তুলতে সহায়ক হয়। শ্রমের আনন্দময় সামাজিক রূপই সেখানে তুলে ধরা হয়েছে।
চন্দনা দাস ভৌমিক ঘোষ, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
অ-নিরাপদ
দক্ষিণ-পূর্ব রেলপথে আন্দুল ও সাঁকরাইলের মাঝে প্রায় এক দশক ধরে রেলপথ বাড়ানোর কাজ চলছে। রেলের ঢালাই স্লিপার-সহ অন্যান্য ভারী জিনিসপত্র ক্রেনের সাহায্যে নানা জায়গায় স্থানান্তর করার কাজ চলছে। ব্যস্ততম পথের উপর এই কাজ চললেও কোথাও কোনও নজরদারি বা সতর্কতা মোটেও চোখে পড়ে না। এ কাজে একাধিক ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটা সত্ত্বেও রেলের টনক নড়ে না।
স্বপন কুমার ঘোষ, মধ্য ঝোড়হাট, হাওড়া
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)