‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন’ (১০-১) শীর্ষক সম্পাদকীয় সম্বন্ধে দু’-চারটি কথা। সম্প্রতি রাজ্য শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা দুর্নীতির দায়ে একে একে জেলবন্দি হয়েছেন। প্রবাদ আছে, যে যায় লঙ্কায়, সে-ই হয় রাবণ। তাই ‘শাসক’ মাত্রেই ‘দুর্নীতি’ করবেন— এই ধারণা অধিকাংশ রাজ্যবাসীর মনে গেঁথে যাওয়ায় দীর্ঘ দিন ধরে এই সরকারের আমলে এত দুর্নীতিতেও নাগরিক সমাজে, এমনকি তথাকথিত ‘বুদ্ধিজীবী’ সমাজেও তেমন জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। কিন্তু আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের পরে প্রশাসনিক তৎপরতায় অপরাধের সমস্ত তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। ফলে রাজ্য তথা দেশ জুড়ে নজিরবিহীন নাগরিক আন্দোলন গড়ে ওঠে। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলায় এ রকম অরাজনৈতিক স্বতঃস্ফূর্ত গণআন্দোলন কখনও দেখা যায়নি।
কালের নিয়মে, আন্দোলন একটু কমে এলে প্রশাসন আবার ‘স্বমূর্তি’ ধারণ করে। ফলস্বরূপ, অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত তৎকালীন অধ্যক্ষকে ‘বাঁচানো’র সব রকমের চেষ্টা করা হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করার অনুমতি না দেওয়ায় ওই মামলায় তিনি জামিনও পেয়ে যান। মানুষকে স্বাস্থ্য-সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব গণতান্ত্রিক সরকারের। কিন্তু তার বদলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক-সহ নানা অভাব, দালাল চক্র, ভেজাল ওষুধ নিয়ে ব্যবসা ইত্যাদি চলছেই, যা এক প্রকার সরকার-পোষিত ব্যবসা-তন্ত্র। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ-নেতা-মন্ত্রী-আমলাদের বকুনি দিচ্ছেন। সম্ভবত দুর্নীতি দমনে বকুনির অতিরিক্ত আর কিছু করতে তিনি নারাজ। তাই শাসক দলের সঙ্গে লতায়-পাতায় যোগ, এমন দুষ্কৃতীরাও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়, তাদের কেশাগ্র স্পর্শ করার সাহস বা ইচ্ছা পুলিশের নেই।
সম্পাদকীয় স্তম্ভে আরও লেখা হয়েছে, দুর্নীতির লোম বাছতে বসলে তৃণমূলের কম্বলটি আর টিকত না। প্রসঙ্গত মনে হল, বিভিন্ন হাসপাতালে মৃতপ্রায় রোগীদের বাঁচাতে গেটের সামনে লাইন ধরে বসে থাকেন তাবিজ-বিক্রেতারা, যাঁদের দাবি, তাবিজ ধারণ নাকি সকল রোগের অব্যর্থ উপশম। এমনকি ওই সব তাবিজ পরলে নাকি সাপ, ভূত কেউই কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেখানে মরণাপন্ন রোগীর পরিবারদের ভিড় জমে। ঠিক সেই রকম, অবৈধ খাজনা আদায়ের অধিকার অর্জন করতেই কি ‘তৃণমূল-তাবিজ’ ধারণ করছেন নেতা-মন্ত্রী-সান্ত্রি-পুলিশ’সহ রাজ্যের এক বিরাট সংখ্যক মানুষ, যাতে শত অপরাধেও তাঁদের সাত খুন মাপ হয়ে যায়?
নিকুঞ্জবিহারী ঘোড়াই, কলকাতা-৯৯
দলের সম্পদ
‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন’ সম্পাদকীয়-তে খুব সঙ্গত কারণেই তৃণমূল দলকে কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই সম্পাদকীয় প্রকাশের দিনেই শান্তনু সেন ও আরাবুল ইসলামকে সাসপেন্ড করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। তবে এই মুহূর্তে সেই সিদ্ধান্ত কতটা ইতিবাচক, সেটা সময়ই বলবে। কেননা এই ধরনের শাস্তির অর্থ দল থেকে বহিষ্কার নয়, বরং দেখা গেছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই শাস্তি উঠে গিয়ে আবার এই সমস্ত নেতা দলের মূল স্রোতেই ফিরে আসেন। প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে, এই আরাবুল ইসলামই এর আগে কয়েক বার শাস্তি পেলেও তাঁকে দল থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। আসলে সংসদীয় এই ভোটসর্বস্ব রাজনীতিতে যে নেতার জনসংযোগ যত বেশি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাঁরা দলের সম্পদ হিসেবেই বিবেচিত হন। অস্বীকার করার উপায় নেই, তেরো বছরের বেশি রাজ্যে ক্ষমতায় থাকার ফলে এবং সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সৌজন্যে অধিকাংশ নেতার জনপ্রিয়তার কাছে বিরোধীদের জনমানসে গ্রহণযোগ্যতা দূরবিন দিয়ে দেখতে হয়। অবশ্যই এর জন্য বিরোধীদের শীতঘুমকেই প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে। তবে দেখা যায়, দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বের সঙ্গে দীর্ঘ দিন দল আপস করলে, হঠাৎই এক দিন বিপর্যয় হুড়মুড়িয়ে নেমে আসে, এর অজস্র উদাহরণ রাজনীতিতে। তাই বেছে বেছে অপেক্ষাকৃত কম জনসংযোগ আছে এমন দুর্নীতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করলে উদাহরণ স্থাপন করা যায়, কিন্তু দলের প্রকৃত মেদ ঝরানো কখনওই সম্ভব নয়। তাই সম্পাদকীয়তে উল্লিখিত, “দুর্নীতির লোম বাছতে বসলে তৃণমূলের কম্বলটি আর টিকত না।”— কথাটা ভুল প্রমাণ করার দায়িত্ব এখন দলের শীর্ষ নেতৃত্বেরই।
অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি
বাহুবলীর জন্ম
রাজনৈতিক বাতাবরণে তৃণমূলের দল পরিচালনা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ প্রবাদবাক্যের অনুসারী। সম্পাদকীয় ‘পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন’কে সমর্থন করে কয়েকটি সংযোজন। নীতি-আদর্শহীন তৃণমূল দল ক্ষমতায় আসার পর, তাদের কর্মপন্থার প্রতিক্রিয়ায় তৈরি হয়েছে বিপুল সংখ্যক বাহুবলী নেতা ও কর্মী-বাহিনী। তাদের অন্যায় অত্যাচার, অবৈধ ভাবে টাকা উপার্জন সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে। এদের দৌরাত্ম্যে শিক্ষা স্বাস্থ্য খাদ্য আবাস ক্ষেত্র আজ চরম কলুষিত। এরা রক্ষা পায়, কারণ শাসকের ক্ষমতা ধরে রাখার হাতিয়ার এরাই। অথচ, এই সব দুর্নীতি আর দুষ্কর্ম দমন করা সম্ভব হত, যদি পুলিশ নিরপেক্ষ ও স্বাধীন ভাবে কাজ করার সুযোগ পেত। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাঝেমধ্যেই দলের পদাধিকারী ও কর্মিবৃন্দকে সতর্ক করেন, ভর্ৎসনা করেন। পুলিশকে হুঁশিয়ারি দেন। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ফলে দুর্নীতি গোষ্ঠী কোন্দল এমনকি প্রাণহানির মতো হিংসার ঘটনা ঘটে চলেছে।
সারনাথ হাজরা, হাওড়া
সমাজবন্ধু
‘চিকিৎসার পথ’ (২-১) সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। গত ২৭ ডিসেম্বর আমাদের সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ মেডিক্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’-র পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের মুখ্য স্বাস্থ্যসচিবের নিকট কিছু দাবি-সহ ডেপুটেশন দেওয়া হয়। পিএমপিএআই-এর সূচনাপর্ব থেকে ইনফর্মাল হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার বা আইএইচসিপি-দের যে তিনটি মূল দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছে তা আজও অব্যাহত। এই নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলনের ফলে ২০১৫-তে রাজ্য সরকার এক নির্দেশিকা জারি করে গ্রামীণ এলাকায় প্র্যাকটিশনারদের নাম নথিভুক্ত করে এবং বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু ব্লকে ট্রেনিং করানো হয়।
১৯৪৬-এ স্বাস্থ্য নিয়ে গঠিত ‘ভোর কমিটি’ সুপারিশ করেছিল ত্রিস্তরীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তরে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্বারা সম্পন্ন করার। স্বাধীনতার পর প্রথম দিকে এর প্রয়োগ থাকলেও কালক্রমে হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট মেল বা স্যানিটারি ইনস্পেক্টরের মতো পদ বিলোপ করা হয়। আজ সরকারি বা সংগঠিত স্বাস্থ্য পরিষেবা, বিশেষত নিরাময়কারী ব্যবস্থা যেখান অবধি পৌঁছয়, মানুষের জীবন তার থেকে অনেক দূরে। এই সামাজিক প্রেক্ষাপটেই আইএইচসিপি-দের উদ্ভব। তাঁরা কোনও চিকিৎসকের কাছে থেকে, হাসপাতাল, নার্সিং হোম বা ওষুধের দোকানে কাজ করার সুবাদে কিছু প্রচলিত সমস্যায় ব্যবহৃত ওষুধ, জরুরি অবস্থা সামাল দেওয়ার মতো স্যালাইন, ইনজেকশন ইত্যাদির ব্যবহার জেনে মানুষের বিপদ-আপদের সহায় হন।
এই প্র্যাকটিশনাররা নিজ এলাকায় হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উপযুক্ত সংখ্যক ডাক্তার নার্স নিয়োগ-সহ পরিকাঠামোর ঘাটতি পূরণ করা ও পরিষেবা উন্নত করার দাবিতে আন্দোলন করে চলেছেন। পিএমপিএআই-এর দৃঢ় সিদ্ধান্ত, এই সমাজবন্ধুদের ডাক্তার বা হাতুড়ে আখ্যায়িত করার প্রয়োজন নেই। তাঁদের ইনফর্মাল হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার নামে সম্বোধন করলেই যথাযথ সম্মান দেওয়া হবে।
তিমির কান্তি দাস, রাজ্য কমিটি, পিএমপিএআই
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy