২০১৭ সালে মোদী সরকার যখন উপযুক্ত পরিকাঠামোগত প্রস্তুতিটুকুও না নিয়ে জিএসটি চালু করে, তখনই দেশ জুড়ে প্রশ্ন উঠেছিল যে, পণ্য এবং পরিষেবার উপর এমন বিপুল হারে কর চাপানোর কোনও প্রয়োজন আছে কি? এই কর তো শেষ পর্যন্ত জনগণকেই মেটাতে হবে। সঙ্কট-জর্জরিত জনগণের কি তা বইবার মতো ক্ষমতা রয়েছে? তা ছাড়া, জিএসটি চালুর সঠিক প্রস্তুতি না থাকায় ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে তার হিসাবপত্র খুবই জটিল হয়ে পড়ে, যা তাঁদের সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে। কিন্তু বিজেপি সরকার সে দিন জনমতের কোনও তোয়াক্কা করেনি। জিএসটি চালুর ফলে এক ধাক্কায় জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে বেড়ে যায়। বেকারত্ব, ছাঁটাই, কম মজুরির মতো অজস্র সমস্যায় জর্জরিত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নেমে যায় আরও নীচে। ফলে, সরকারের জিএসটি নীতি ব্যর্থ প্রমাণিত হয়। কিন্তু জিএসটি নীতির ব্যর্থতা বুঝতে এবং তার পরিবর্তন করতে সরকারের এত বছর সময় লাগল কেন?
বছরে এখন সরকারের জিএসটি সংগ্রহের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২ লক্ষ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ আর্থিক বছরের (৯ মাস) তুলনায় এই কর তিন গুণের বেশি (৭.১৯ লক্ষ কোটি টাকা) এবং ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরের তুলনায় দ্বিগুণ (১১.৭৭ লক্ষ কোটি টাকা)। কিন্তু সরকারের কর আদায় যতই বাড়ুক, মানুষের কেনার ক্ষমতার অভাবে অভ্যন্তরীণ বাজারের আয়তন ক্রমাগত সঙ্কুচিত হয়েছে। এর মাঝে ভারতীয় পণ্যের উপর আমেরিকার ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর আশঙ্কা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। সেই আশঙ্কা এখন কিছুটা কমলেও শোনা যাচ্ছে বিদেশি লগ্নিকারীরা মুখ ফেরাচ্ছেন ভারত থেকে, রফতানি বাণিজ্যেও পড়েছে প্রভাব। এই অবস্থায় সরকারকে অভ্যন্তরীণ বাজারের উপর জোর দিতে হচ্ছে। তার জন্য মানুষের কেনার ক্ষমতা বাড়ানোর কথা ভাবতে হচ্ছে। ফলে, জিএসটি-র হার কমানো ছাড়া সরকারের হাতে আর কোনও রাস্তাই খোলা ছিল না। সরকার যদি সত্যিই মানুষের কেনার ক্ষমতা বাড়াতে চাইত, তবে নামমাত্র জিএসটি কমানোর রাস্তায় না গিয়ে সবার আগে জিনিসপত্রের চড়া দামে লাগাম পরানোর উদ্যোগ করত। চাল, ডাল, তেল, আনাজপাতির মূল্যবৃদ্ধির জেরে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। শূন্যপদে এবং নতুন নিয়োগ করে মানুষের কেনার ক্ষমতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা যেত। ধনকুবেরদের করছাড়, ব্যাঙ্কঋণ মকুব বন্ধ করে তাঁদের উপর সম্পদ কর চাপিয়ে সমাজে বৈষম্য কমানোর চেষ্টা করত। কিন্তু এ সব কোনও কিছুই সরকার করেনি। ফলে শুধু জিএসটি দিয়ে মানুষের সাশ্রয় করার দাবি নেহাতই প্রহসন নয় কি?
সমরেন্দ্র প্রতিহার, কলকাতা-২
ভরসা নেই
নতুন জিএসটি হার ঘোষণার পর প্রশ্ন উঠেছে, বেশ কিছু পণ্যে সরকার যে পরিমাণে কর কমিয়েছে সেই পরিমাণে কি জিনিসপত্রের দাম কমবে? জনসাধারণ কি সত্যিই সেই সুবিধাটুকু পাবেন? জনসাধারণ যাতে তা পান, দেখার কোনও নজরদারি ব্যবস্থা কি সরকার করেছে? শুনতে অবাক লাগলেও এ প্রশ্নের উত্তর হল ‘না’। সরকার তার জন্য কোনও ব্যবস্থা করেনি। শিল্পমহলের আশ্বাসের উপরই সরকার পুরোপুরি ভরসা করেছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি এবং বিমা প্রদানকারী শিল্প প্রতিনিধিরা সরকারকে জিএসটি সংস্কারে পূর্ণ সমর্থন প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালও জানান তিনি শিল্পমহলের কাছে আবেদন করেছেন যাতে সাধারণ মানুষ জিএসটি কমার সুবিধা পান। অর্থাৎ, বিজেপি মন্ত্রীরা বিড়ালের হাতেই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন মাছ পাহারা দেওয়ার।
এখন অনেকেই মনে করছেন যে, কেন্দ্রের উচিত ছিল অন্যায্য ভাবে মুনাফা লোটা বন্ধ করতে প্রতিরোধী সংস্থা তৈরি করা। কিন্তু সরকার তা করেনি। ফলে, সরকারের পদক্ষেপের অন্যথা হলেও কোথাও সেই অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা নেই। জনগণের কাছে কর কমার সুযোগ পৌঁছে দিতে সরকার এমন কোনও সংস্থা তৈরি করল না কেন? শোনা যাচ্ছে, এর ফলে নাকি ‘ইনস্পেকটর রাজ’ তৈরি হয়। ব্যবসার সহজ পরিবেশ নষ্ট হয়। অবাক ব্যাপার, জনগণের উপর অন্যায় লুট আটকানোর নাম যদি হয় ইনস্পেকটর রাজ, আর অন্যায় লুট চলতে দেওয়া যদি ব্যবসার জন্য সহজ পরিবেশ তৈরি করা হয়, তবে সাধারণ মানুষ সরকারের পদক্ষেপের সুবিধা পাবেন কী করে?
এটা সর্বজনবিদিত যে, শোষণের কারণেই শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা কমে। ক্রয়ক্ষমতা কমলে বাজারে বিক্রিও কমে। তাতে উৎপাদন ব্যাহত হয়। বিপরীতে শ্রমিকের হাতে বেশি টাকা থাকলে তাঁরা বেশি পণ্য কেনেন। তাতে বাজারে বেচাকেনা বাড়ে, উৎপাদনেও গতি আসে। বাজারও চাঙ্গা হয়। এই অকাট্য সত্য সত্ত্বেও কি শ্রমিকের শোষণ এতটুকুও কমে? শ্রমিকরা দাবি করলেই তাঁদের বেতন বাড়াতে রাজি হন কর্তৃপক্ষ? এই অবস্থায় সরকার ভরসা করলেও, সাধারণ মানুষ শিল্পমহলের উপরে ভরসা রাখবেন কী করে?
ইন্দ্র মিত্র, কলকাতা-৩১
নজরদারি কই
‘মুনাফা লাভ রুখবে কে’ (৬-৯) শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্রের অবতারণা। এ বারের স্বাধীনতা দিবসে জিএসটি-র হারের সংস্কারের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দীপাবলির আগে এই ঘোষণা হবে এবং সাধারণ মানুষের জীবনে তা যে স্বস্তি এনে দেবে— এই ঘোষণাও ছিল তাঁর বক্তৃতায়। ৫৬তম জিএসটি বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন পণ্য পরিষেবা কর সংক্রান্ত সংস্কারের কথা ঘোষণা করেন। জিএসটি-র চারটি স্তর ভেঙে দু’টি যথাক্রমে ৫ ও ১৮ শতাংশ করা হল। উঠিয়ে দেওয়া হল ১২ ও ২৮ শতাংশের দু’টি স্তর। এর ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় বহু পণ্যের জিএসটি ১২ বা ১৮ শতাংশ থেকে কমে ৫ শতাংশ হয়েছে। ২২ সেপ্টেম্বর থেকে এই নতুন করব্যবস্থা চালু হয়েছে।
সামগ্রিক ভাবে শতাধিক পণ্য ও পরিষেবার উপর কর হ্রাস খুশির খবর হলেও সমাজের মধ্যে কোথাও যেন একটা আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। অনেকেই ভাবতে বসেছেন, সত্যিই কি দাম কমবে জিনিসপত্রের? টুথপেস্ট, বিস্কুট, তেল, সাবান প্রভৃতি সব প্যাকেটজাত দ্রব্যের মোড়কে কর-সহ সর্বোচ্চ মূল্য লেখা থাকে। সেখানে পণ্যের প্রকৃত মূল্য ও জিএসটি আলাদা করে দেখানো হয় না। গত কয়েক মাসে একশো গ্রামের টুথপেস্ট কেউ কত দামে কিনে এনেছেন আর অক্টোবর মাসে তিনি কতটা সুলভে পেলেন, তা কী করে বোঝা সম্ভব হবে? সাধারণ মানুষ বিষয়টি তখনই বুঝতে পারবেন, যখন মোড়কে পণ্যের দাম ও জিএসটি কত শতাংশ, তার পরিষ্কার উল্লেখ থাকবে। সে রকম কোনও নির্দেশ সরকার শিল্প সংস্থাকে দিয়েছে বলে তো মনে হয় না। সাধারণ মানুষ সরকারের উদ্যোগের সুফল পেলেন কি না তা দেখার জন্য নজরদারি ব্যবস্থা না থাকলে শিল্প সংস্থাগুলির আগের তুলনায় বেশি লাভের পথ প্রশস্ত হবে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন। জনসাধারণের আশঙ্কা কমাতে জিএসটি কমানোর পাশাপাশি নজরদারির ব্যবস্থাটিও কি রাখা উচিত ছিল না সরকারের?
প্রবাল বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪
স্থানান্তরিত
বেহালা ডিএইচ রোডে একটি নামকরা সিনেমা হল অঞ্চলের পাশেই এত কাল ছিল প্রাচীন বেহালা পোস্ট অফিস। বেহালাবাসী আজীবন ওই পোস্ট অফিসে যেতেই অভ্যস্ত ছিলেন। আচমকা সেটিকে স্থানান্তরিত করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বেসব্রিজ অঞ্চলে। তারাতলা মোড় থেকে পশ্চিমে অনেকটা পথ গেলে তবেই বেসব্রিজ। কেন স্থানান্তরিত হল, জানা নেই। কিন্তু এই আকস্মিক স্থানান্তর নিঃসন্দেহে বেহালাবাসীকে খুবই ঝামেলায় ফেলেছে। বিষয়টি কলকাতা পোস্ট অফিসের সর্বোচ্চ আধিকারিকদের নজরে আনতে চাই।
স্বপন কুমার ঘোষ, কলকাতা-৩৪
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)