E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: ‘বড়’দের নীতি ভিন্ন?

প্লাস্টিক দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মাইক্রোপ্লাস্টিকের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে গেঁড়ি-গুগলি, ঝিনুক, শামুক প্রভৃতি জলজ প্রাণীর দেহেও, যারা খেটে-খাওয়া প্রান্তিক শ্রেণির মানুষদের পুষ্টি জোগায়।

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৫ ০৫:১৯

‘ভোগবাদের উচ্ছিষ্ট’ (১৫-৬) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, ভোগবাদ যত বাড়বে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বর্জ্যও বাড়বে। কী ভাবে ভোগবাদকে বাঁচিয়ে বর্জ্যকেও মানুষের কাজে লাগানো যায়, সেই চিন্তা-ভাবনা থেকে শুরু হয়েছে ‘জ়িরো ওয়েস্ট’ সমাজব্যবস্থার, যেখানে কিছুই বর্জ্যে পরিণত হবে না। শুধু নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যই নয়, বহুজাতিক সংস্থাগুলোর ওষুধও বিক্রি হচ্ছে প্লাস্টিকের মোড়কে ও প্লাস্টিকের শিশি-বোতলে। প্লাস্টিক দূষণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মাইক্রোপ্লাস্টিকের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে গেঁড়ি-গুগলি, ঝিনুক, শামুক প্রভৃতি জলজ প্রাণীর দেহেও, যারা খেটে-খাওয়া প্রান্তিক শ্রেণির মানুষদের পুষ্টি জোগায়। অথচ, বর্জ্যের উৎপত্তিতে এই মানুষদের ভূমিকা তুলনামূলক ভাবে কম।

তা হলে প্রশ্ন জাগে, যখন বহুজাতিক সংস্থার উৎপাদিত দুধের প্যাকেট থেকে ঠান্ডা পানীয়, সবই আমাদের প্লাস্টিকের মোড়কে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে এবং এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন নানা কারণে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা কল্পনাও করতে পারে না, তখন শুধুমাত্র বাজারে প্লাস্টিকের মোড়কে আলু-পটল বা মাছ-মাংস কিনলে পরিবেশ দূষণ নিয়ে জ্ঞান দেওয়া হয় কেন? দু’ক্ষেত্রই তো সমান দোষী। কেন বহুজাতিক সংস্থাগুলোকে বিকল্প মোড়কের ব্যবস্থা করার কথা বলা হচ্ছে না?

প্রসন্নকুমার কোলে, শ্রীরামপুর, হুগলি

উদ্বেগজনক

‘বাঁচার পথ’ (১৯-৬) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে কিছু কথা বলতে চাই। যদিও ২০২০-২২ সময়কালের সমীক্ষা অনুযায়ী রাজ্যে প্রতি এক লাখ জীবিত সন্তান প্রসবে প্রসূতির মৃত্যুর হার ১০৫, যা সর্বভারতীয় স্তরে ৮৮, তবে এই সত্য রাজ্য সরকার মানবে কি?

সরকারের দাবি, হাসপাতালে প্রসবের পর প্রসূতি এবং সদ্যোজাতের মৃত্যু রুখতে একাধিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু গত এক বছরে রাজ্যে ১১৬২ জন প্রসূতি মারা গিয়েছেন। আর তার মধ্যে বহু প্রসূতি নাবালিকা। শুধু তা-ই নয়, পরিসংখ্যান বলছে প্রসূতি মৃত্যুর নিরিখে শীর্ষে রয়েছে কলকাতা।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রসূতি মৃত্যুর সংখ্যা রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কলকাতার হাসপাতালগুলিতে। গত এক বছরে কলকাতায় ২০৪ জন প্রসূতি মারা গিয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা। সেখানে ১৬২ জন, পূর্ব বর্ধমানে ৭৯ জন এবং মালদহে ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আধিকারিকদের বক্তব্য, যে সকল প্রসূতি সরকারি হাসপাতালে মারা গিয়েছেন তাঁদের মধ্যে অনেকের অস্ত্রোপচার হয়েছে। কারণ তাঁদের বাড়ির লোকজন প্রসবযন্ত্রণা এড়াতে চাইছেন। এ ছাড়াও জেলা থেকে বহু প্রসূতিকে পাঠানো হচ্ছে কলকাতায়। যার ফলে সময় নষ্ট হচ্ছে এবং অবস্থা জটিল হচ্ছে। ফলে কলকাতায় এসে মারা যাচ্ছেন অনেকেই। সেই কারণে সংখ্যাটা বেশি। প্রসূতির মৃত্যু কোথায় ঘটেছে, জেলায় না কলকাতায়, সেটা বিবেচ্য নয়। উদ্বেগের বিষয় হল, প্রসূতি মৃত্যু ঘটছে এ রাজ্যে।

আবার দেখা যাচ্ছে, সরকারি হাসপাতালে যে হারে প্রসূতি মৃত্যু ঘটছে, বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। তা হলে কি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবায় ঘাটতি রয়েছে? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।

স্যালাইন কাণ্ডের পর সরকারের তরফে এত কিছু ব্যবস্থা তথা পদক্ষেপ করা সত্ত্বেও রাজ্যে প্রসূতি মৃত্যু আটকানো বা কমানো যাচ্ছে না কেন? নাগরিক মনে এ প্রশ্ন উঠছে বার বার। মূল ত্রুটি তথা গলদ তা হলে কোথায়? না কি তথাকথিত সরকারি নির্দেশ কাগজে কলমেই থাকছে, বাস্তবে তার প্রয়োগ ঘটছে না। চার দিকে যা অসাধু চক্রের ভি‌ড়! সেই ব্যূহ ভেদ করে তথা তাদের উপস্থিতিতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ কার্যকর করা বোধ হয় দুঃসাধ্য কাজ!

কুমার শেখর সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি

ভ্রাতৃত্বের বন্ধন

জয়ন্ত সেনের লেখা “‘কাকার জন্য হরিবোল’, শেষযাত্রায় শামিমেরা” (২০-৬) শীর্ষক খবরটি মানবধর্মের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মালদহ জেলার বৈষ্ণবনগরের হজরত-হাজিপাড়া গ্রামের ৩০০ পরিবারের মধ্যে একটিমাত্র হিন্দু পরিবার। সেই পরিবারের কর্তা লক্ষ্মী রবিদাসের ৭০ বছর বয়সে মৃত্যু হয়। তাঁর মৃত্যুতে স্বয়ং গ্রামের জুম্মা মসজিদের ইমাম মোরসালিম শেখ-সহ অন্য মুসলিম ভাইয়েরা এসে দেহ সৎকারের জন্য বাঁশের মাচা তৈরি করা থেকে হরিবোল দিয়ে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া এবং সমস্ত কাজে সহযোগিতা করেছিলেন। সর্বধর্ম সমন্বয়ের ক্ষেত্রে এই ঘটনাটি অত্যন্ত শিক্ষণীয়। এমন বন্ধনই ধর্মের ভেদাভেদের আগুন নিবিয়ে দিতে পারে। এই ধরনের মানুষেরাই স্মরণীয় হয়ে থাকেন কাজের জন্য, জীবনের জন্য। সাধুবাদ জানাই তাঁদের সকলকে।

সঞ্জিত কুমার মণ্ডল, বড়গাছিয়া, হাওড়া

মূল্যায়ন হচ্ছে?

এ বছর মাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হয়েছিল ২ মে। ফল প্রকাশের প্রায় ৪৬ দিন পরে প্রকাশিত হল মাধ্যমিকের নম্বর যাচাই এবং রিভিউ-এর ফল। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, পুনর্মূল্যায়নের জেরে মোট বারো হাজারেরও বেশি পরীক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর বদলেছে। তা ছাড়া এই মূল্যায়নের জেরে বদল হল মেধা তালিকারও। ২০২৫-এর ফল প্রকাশের পর দেখা গিয়েছিল প্রথম দশে রয়েছেন ৬৬ জন। এর পর এই রিভিউ ও স্ক্রুটিনির পর এই তালিকায় যোগ হল আরও ৯ জন। অর্থাৎ প্রথম দশ জনে চলে এল মোট ৭৫ জন। স্বাভাবিক ভাবেই বেশ কয়েক জনের মেধাতালিকায় অবস্থান বদল হল, যা কাম্য নয় ও অপ্রীতিকর।

নজিরবিহীন সংখ্যক পরীক্ষার্থীর স্ক্রুটিনির পরে নম্বর বাড়ায় অভিভাবকদের একাংশ এবং বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতাদের প্রশ্ন, সত্যিই কি ঠিক করে মূল্যায়ন হচ্ছে উত্তরপত্রের? অযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দিয়ে উত্তরপত্রের মূল্যায়ন হচ্ছে না তো? মানুষেরও শঙ্কা বাড়ছে।

নিকুঞ্জবিহারী ঘোড়াই, কলকাতা-৯৯

সাফাই হয় না

কলকাতার প্রাণকেন্দ্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পার্ক সার্কাস এবং তার সংলগ্ন তপসিয়া ও তিলজলা অঞ্চল দীর্ঘ দিন ধরে গুরুতর পরিবেশ দূষণের শিকার। এই এলাকা এত নোংরা কেন? পার্ক সার্কাস স্টেশনের কাছে খুবই দুর্গন্ধ। কবে কাটবে এই ঔদাসীন্য? অপরিচ্ছন্নতা, আবর্জনার স্তূপ, অসহনীয় দুর্গন্ধ এবং সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমার সমস্যা এই এলাকার জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।

এই এলাকাগুলিতে আবর্জনা ফেলার জন্য পর্যাপ্ত ডাস্টবিনের অভাব রয়েছে। যেগুলি আছে, সেগুলিও নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলস্বরূপ, যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা হয়, যা পচে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং মশা-মাছির বংশবিস্তারে সাহায্য করে। কলকাতা পুরসংস্থার পক্ষ থেকে এই অঞ্চলে নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত সাফাই কাজ না হওয়ার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। কর্মীর অভাব এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে আবর্জনা জমে থাকে, যা পরিবেশ দূষণকে আরও বাড়িয়ে তোলে। পার্ক সার্কাস ও সংলগ্ন এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। বেশিরভাগ নিকাশি নালাই আবর্জনা বা পলিতে বন্ধ হয়ে থাকে, যার ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় জল জমে যায়। এই জমা জল শুধু দুর্গন্ধই ছড়ায় না, ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়ার মতো পতঙ্গবাহিত রোগের ঝুঁকিও বাড়ায়।

অনির্বাণ বাগচী, কলকাতা-১৭

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Plastic Pollution industries Package

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy