E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: যোগ্যতার বিচার

রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের পর দেশ গঠনের কাজে যে সব সমস্যা দেখা দিয়েছিল তার একটি ছিল মজুরি। অনেকে বললেন যে, মজুরির তারতম্য করা উচিত হবে না।

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৫ ০৭:২৫

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে কারা যোগ্য আর কারা অযোগ্য তাই নিয়ে লাগাতার বিতর্ক চলছে, অথচ যে প্রশ্নটা উঠল না, তা হল, শুধু ওই পরীক্ষায় কেন, কোনও পরীক্ষাতেই কি যোগ্যতার যথাযথ বিচার হয়? না কি হওয়া সম্ভব? অর্থশাস্ত্রী অধ্যাপক বিপ্লব দাশগুপ্ত এক বার লিখেছিলেন, যোগ্যতার বিচার যেমন পুরোপুরি পরীক্ষার খাতায় হয় না, তেমনই ইন্টারভিউতেও হয় না, খুব ভাল এবং খুব খারাপ বাদে। তবু পরীক্ষা হয়, ইন্টারভিউ হয়, ভুল হোক, ঠিক হোক, এ ছাড়া উপায় নেই।

তবে, ‘কাজ, উৎপাদন ও লেনিন’ শীর্ষক এক নিবন্ধে তিনি যা লিখেছিলেন, সেখানেই ছিল এক রুপোলি রেখা। রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের পর দেশ গঠনের কাজে যে সব সমস্যা দেখা দিয়েছিল তার একটি ছিল মজুরি। অনেকে বললেন যে, মজুরির তারতম্য করা উচিত হবে না। লেনিন বললেন, না, তারতম্য রাখতেই হবে। না-হলে উৎপাদন ভীষণ ভাবে কমে যাবে। কাজেই, কে কতটুকু শ্রম দিলেন এবং কতটা দায়িত্ব পালন করলেন তার বিচারে সমাজতন্ত্রে আয়ের তারতম্য হবে।

১৯৮২-৮৩ সালে বিপ্লব দাশগুপ্ত যখন এগুলি লিখছেন তখন পশ্চিমবঙ্গে কার্যত চলছে কেরানিরাজ। রয়েছে কোঅর্ডিনেশন কমিটির পরাক্রম প্রদর্শন, কর্মসংস্কৃতির সর্বনাশ। পরিস্থিতি যা ছিল, ওই নীতি গ্ৰহণ করতে হলে কোঅর্ডিনেশন কমিটির সিংহভাগেরই কোনও মাইনে হত না, বাকিদের হত নামমাত্র। তাই সম্ভবত ওই নীতি গ্ৰহণ সরকারের পক্ষে সম্ভব ছিল না। রাজ্যে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর তেমন কোনও বাধা ছিল না, কিন্তু একই বেতন, প্রোমোশন নীতি অব্যাহত থেকেছে, মাইনের পরিমাণও অপরিবর্তিত থেকেছে। শিক্ষাক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ছাত্রছাত্রীদের ভাল-মন্দের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাইনে-ভাতা’র কোনও সম্পর্ক নেই। পড়াশোনাও হয়ে গিয়েছে প্রাইভেট টিউটর আর টিউটোরিয়াল হোম নির্ভর। যেমন সরকারি প্রকল্পগুলো হয়েছে চুক্তি-কর্মী নির্ভর। তাই পরীক্ষার মাধ্যমে নিযুক্তকেও নিরন্তর যোগ্যতার পরীক্ষার মধ্যে রাখতে হবে। সেই পরীক্ষায় যাঁর যেমন ফল হবে, তাঁর মাইনে ভাতাও নির্ধারিত হবে সেই ফলের ভিত্তিতে। এমন ব্যবস্থা চালু হলে শুধু কর্মসংস্কৃতিরই যে ব্যাপক উন্নতি হবে তা-ই নয়, কেউ আর ঘুষ দিয়ে চাকরিতে ঢোকার দুঃসাহস দেখাবে না।

আশিস সামন্ত,কলকাতা-১০২

শুধুই দোষারোপ!

‘ভিন্‌ রাজ্য থেকে বহু পরীক্ষার্থী হাজির, তরজা’ (৮-৯) প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এই চিঠি। স্কুল সার্ভিস কমিশনের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বিহার, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি রাজ্য থেকে কিছু সংখ্যক পরীক্ষার্থী এ রাজ্যে পরীক্ষা দিতে এসেছেন। তাঁরা বলেছেন, শূন্য পদ থাকলেও তাঁদের রাজ্যে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ১০ বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আবার প্রশ্নপত্র ফাঁস হলে তারিখ পিছোয়। তা ছাড়া নিয়োগে সব রাজ্যে কম-বেশি দুর্নীতি আছে, এ কথাও তাঁদের মুখে শোনা গিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, সারা ভারত জুড়ে চাকরির আকাল চলছে, চাকরিহীনতা ও বেকারত্বের কারণে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত যুবসমাজ আজ দিশাহীন ও হতাশাগ্ৰস্ত, আর সারা ভারতেই বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় উৎকোচ ও দুর্নীতির রাজত্ব।

রাজ্য সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে সব ভাষাভাষীর মানুষ স্বাগত ও নিরাপদ। তাঁদের রাজ্যে চাকরি নেই, তাই তাঁরা এ রাজ্যে পরীক্ষা দিতে এসেছেন। বিরোধীরা দাবি করেছেন, পরীক্ষার্থীরা জেনে গিয়েছেন, এ রাজ্যে টাকা দিলেই চাকরি পাওয়া যায়, সেই ভরসায় তাঁরা এ রাজ্যে পরীক্ষা দিতে এসেছেন। রাজনৈতিক এই তরজার মূল লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন।

আসলে এখন সময় বড় কঠিন। জনস্বার্থ, সততা ও মানবিকতা বিপন্ন। ইতিহাস, মহাজীবন বা সাহিত্য থেকে আমরা কোনও শিক্ষা নিতে পারিনি। তা যদি হত, প্রশাসন অন্য রাজ্যের দুর্নীতিকে হাতিয়ার না করে অনেক আগেই ঘোষণা করতে পারত— তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?

হারান চন্দ্র মণ্ডল, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

সংবিধানে নেই

সুব্রত সীটের লেখা “এনআইটি দুর্গাপুরে ‘দীক্ষা’ শঙ্করাচার্যের কাছে, বিতর্ক” (১২-৯) শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। একটি কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান— যা জনগণের করের টাকায় পরিচালিত, সেখানে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান আয়োজন সরাসরি ভারতের সংবিধানের মূল চেতনার বিরুদ্ধে যায়।

সংবিধানের ধারা ২৮(১)-এ স্পষ্ট বার্তা: রাষ্ট্রচালিত বা রাষ্ট্র-অনুদানপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনও ধরনের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া যাবে না। অথচ এনআইটি-তে শঙ্করাচার্য মহারাজকে ডেকে ছাত্রছাত্রীদের বৈদিক জ্ঞান এবং দীক্ষা দেওয়ার কথা জানা গেল। এটি সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। একই সঙ্গে সংবিধানে এও বলা হয়েছে— সমস্ত নাগরিক সমান অধিকারের অধিকারী। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে এক বিশেষ ধর্মগুরুকে মঞ্চ দেওয়া মানেই অন্য ধর্মবিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী ছাত্রছাত্রীদের প্রতি অবিচার করা। বলা আছে, নাগরিককে তার ধর্মবিশ্বাস বা অবিশ্বাসের ভিত্তিতে বৈষম্যের শিকার হতে দেওয়া যাবে না। অথচ এই ধরনের কর্মসূচি প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট ধর্মের দিকে ঠেলে দেয় এবং শিক্ষার্থীদের উপর অপ্রকাশ্য চাপ সৃষ্টি করে। এখানেই শেষ নয়। সংবিধান নাগরিকের কর্তব্য হিসাবে বৈজ্ঞানিক মনোভাব ও যুক্তিবাদী চিন্তাধারার চর্চায় জোর দিয়েছে। কিন্তু, এই ধরনের ধর্মীয় দীক্ষা অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের যুক্তিবাদ নয়, বরং কুসংস্কার ও গোঁড়ামির দিকে ঠেলে দেয়।

প্রশ্ন হল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য কী? বিজ্ঞানচর্চা, গবেষণা, প্রযুক্তির বিকাশ এবং মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা, না কি ধর্মীয় প্রচার? যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ঢুকে পড়ে, তবে তা শিক্ষাক্ষেত্রকে অজ্ঞানতার যুগে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। রাষ্ট্রের কোনও ধর্ম নেই— এটাই ভারতের সংবিধানের মূল কথা।

এই সংবিধানবিরোধী কর্মসূচির বিরুদ্ধে প্রথমে সরব হয়েছে নাস্তিক মঞ্চ। সংগঠনটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছে এবং জনমত গড়ে তোলার উদ্যোগ করেছে। তাদের দাবি, দুর্গাপুর এনআইটি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এই সংবিধানবিরোধী দীক্ষা কর্মসূচি বাতিল করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানমনস্কতা ও যুক্তিবাদী চিন্তার প্রসার ঘটাতে হবে; কোনও ধর্মীয় মতবাদ চাপিয়ে দেওয়া চলবে না। কর্তৃপক্ষকে শিক্ষাঙ্গনে সংবিধানের ধারা ২৮ কার্যকর রাখার জন্য স্থায়ী নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

শিক্ষাক্ষেত্রকে ধর্মমুক্ত ও বিজ্ঞানভিত্তিক রাখা শুধু সংবিধানের নির্দেশ নয়, আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ রক্ষার একমাত্র পথও বটে। এখন প্রশ্ন, আমরা কি শিক্ষাঙ্গনকে বিজ্ঞানের পথে রাখব, না কি ধর্মীয় প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেব?

মৌসুমী দেবনাথ, নবদ্বীপ, নদিয়া

পুজোর অসুখ

প্রতি বার দেবী দুর্গার বিদায়ের মুহূর্তে সবাই আগামী এক বছরের জন্য প্রিয়জনের সুস্বাস্থ্যের প্রার্থনা করেন। আমি এর পর থেকে প্রার্থনা করব, পুজোর ক’টা দিন যেন সকলের প্রিয়জন সুস্থ থাকেন।

প্রতি বছর নতুন ক্যালেন্ডারে আমিও অন্য সকলের মতোই পুজোর ছুটির দিনগুলোর দিকে নজর রাখি। কিন্তু এই বছর অনুভব করলাম, চিকিৎসকরা প্রায় সবাই এক সঙ্গে পুজোর ছুটিতে চলে গেলে কী অবস্থা হয়। আজীবন মনে থাকবে এই বছরের আতঙ্কের পুজোর ছুটি।

আমাদের সৌভাগ্য, সেনারা কখনও দল বেঁধে ছুটিতে চলে যান না। এই সময়টা শুধুমাত্র গুটিকয়েক জুনিয়র ডাক্তারের ভরসায় গোটা স্বাস্থ্য পরিষেবা ফেলে রাখা ঠিক নয়। প্রশাসনের উচিত দরকারে অন্য রাজ্য থেকে ডাক্তার আনার কথা ভাবা ও পরিষেবা যথাযথ ভাবে চালু রাখা।

পরাশর চট্টোপাধ্যায়, দত্তপুকুর, উত্তর ২৪ পরগনা

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

SSC School Teachers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy