সন্দীপন সেনের ‘পটেল, নেতাজি’ শীর্ষক পত্রে (২৪-১১) জওহরলাল নেহরুর মহানুভবতার উদাহরণে বলা হয়েছে, গাঁধীজির ইচ্ছার বিরুদ্ধে নির্বাচিত কংগ্রেস সভাপতি সুভাষচন্দ্রকে চাপে ফেলতে ওয়ার্ধায় কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের আগে দু’জন সদস্য— শরৎচন্দ্র বসু ও জওহরলাল নেহরু বাদে বাকি সদস্যরা পদত্যাগ করেন এবং সে জন্য নাকি বল্লভভাই এবং অন্যরা জওহরলালের উপর বিস্তর চটে গিয়েছিলেন এবং তাঁরা দু’টি গাড়ি নিয়েই সভাস্থল থেকে চলে যাওয়ায় জওহরলালকে পাঁচ মাইল পথ পায়ে হেঁটে ফিরতে হয়। হ্যাঁ, জওহরলাল পদত্যাগ করেননি; শুধু ছোট্ট এক বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন যে সুভাষের ব্যাপারে গাঁধীবাদী ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যরা যা করেছেন তা সবই গণতন্ত্রসম্মত এবং সুভাষই এই অচলাবস্থার জন্য একমাত্র দায়ী এবং সে জন্য তাঁকে কোনও রকম সহায়তা করা তাঁর (নেহরু) পক্ষে সম্ভব নয়।
এর পরে মার্চ মাসে ত্রিপুরী কংগ্রেসে ১০৬ ডিগ্রি জ্বরে গুরুতর অসুস্থ শয্যাশায়ী সভাপতি সুভাষ কোনও ক্রমে উপস্থিত হলেও, প্রথমেই সংখ্যাধিক্যে পণ্ডিত গোবিন্দবল্লভ পন্থ উত্থাপিত এক প্রস্তাব পাশ করিয়ে নেওয়া হল যে ওয়ার্কিং কমিটি সব দিক থেকে গাঁধীজির মনোমতো হতে হবে, অন্যথায় সে কমিটি বৈধ বলে স্বীকার করা হবে না। এর ব্যাখ্যা দিলেন অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি গোবিন্দদাস তাঁর ভাষণে এ ভাবে— “...ফ্যাসিস্টদের মধ্যে মুসোলিনির, নাৎসিদের মধ্যে হিটলারের এবং কমিউনিস্টদের মধ্যে স্তালিনের যে স্থান, কংগ্রেসসেবীদের মধ্যে মহাত্মা গাঁধীরও সেই স্থান।” এমন চমৎকার (!) বক্তব্যের পর সেখানে নাকি জয়ধ্বনি উঠেছিল— হিন্দুস্থান কা হিটলার কী জয়! মহাত্মা গাঁধীজি কি জয়! বলা বাহুল্য ওই সভায় মধ্যমণি ছিলেন মাননীয় পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু। সে সময় আর কেউ প্রতিবাদ না করলেও, এক জন করেছিলেন এই বাংলা থেকে। ব্যথিত বিস্মিত কবির আক্ষেপ প্রকাশ পেয়েছিল এ ভাবে— “অবশেষে আজ এমনকী, কংগ্রেসের মঞ্চ থেকেও হিটলারি নীতির জয়ধ্বনি শোনা গেল। ...স্বাধীনতার মন্ত্রউচ্চারণ করবার জন্য যে বেদি উৎসৃষ্ট, সেই বেদিতেই আজ ফ্যাসিস্টদের সাপ ফোঁস করে উঠছে।... আমি সর্বান্তঃকরণে শ্রদ্ধা করি জওহরলালকে... আমি তাকে প্রশ্ন করি, কংগ্রেসের দুর্গদ্বারের দ্বারীদের মনে কোথাও কি এই ব্যক্তিগত শক্তিমদের সাংঘাতিক লক্ষণ দেখা দিতে আরম্ভ করেনি”।
এ ব্যাপারে ‘বন্ধু’ জওহরলালের আচরণে ক্ষোভে দুঃখে সুভাষ পরে একটু সুস্থ হয়ে দীর্ঘ ২৭ পাতার এক চিঠি দিয়েছিলেন তাঁকে, যার কয়েকটি পঙ্ক্তি— “…আমি জানতে চাই যে তুমি কি সমাজবাদী, না বামপন্থী, অথবা মধ্যপন্থী, না দক্ষিণপন্থী, না আর কিছু? ...যদি পুরাতন প্রহরীরা আমার বিরুদ্ধে লড়তেই চেয়েছিলেন, তাঁরা তা সোজাসুজি করেননি কেন? মহাত্মা গান্ধীকে আমাদের মধ্যে নিয়ে এলেন কেন? এটা চমৎকার কৌশল সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে, এই চালটা কি সত্য আর অহিংসার সঙ্গে খাপ খায়?’’
আর "The way Subhas Bose has chosen is naturally wrong…. I cannot accept but must oppose. I will receive him with open sword"— এমন সদর্প ঘোষণা এবং ক্লিমেন্ট অ্যাটলিকে পত্রে নেতাজিকে "your war criminal" বলে উল্লেখ কিংবা ১৯৬৮ পর্যন্ত বসু পরিবারের সদস্যদের উপর নজরদারি জারি থাকার কথা জানার পরও কি বলা যায়, ‘‘সুভাষচন্দ্রের প্রতি জওহরলালের ব্যক্তিগত অপছন্দ ছিল না তা বলাই বাহুল্য’’?
শান্তনু রায়
কলকাতা-৪৭
ফসল বিমা
‘ফসল বিমায় সাড়া নেই’ (২২-১০) প্রতিবেদনটির পরিপ্রেক্ষিতে জানাই, প্রতিবেদক ফসল বিমার যে সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন, তা শুধু বর্ধমান জেলার নয়, হাওড়া জেলারও। হাওড়া জেলার বাগনান-১ নং ব্লকের এই সমস্যা আরও গভীরে। বর্ধমান জেলায় তবু কৃষি দফতর ফসল বিমার প্রচারের জন্য কিছু কর্মসূচি নিয়েছে। হাওড়া জেলায় এ বিষয়ে কোনও কর্মসূচি নেওয়া হয়নি।
আমরা বাগনান-১ নং ব্লকের অধীনে শ্রী অরবিন্দ সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির পক্ষ থেকে মূলত ধান ও পান চাষের জন্য কৃষিঋণ চাষিদের দিয়ে থাকি। পান চাষের জন্যই বেশির ভাগ চাষি ঋণ নেন। সমিতির অধীনে প্রায় ৭৫০ জন কৃষক পরিবার রয়েছে। কিসান ক্রেডিট কার্ড করেছে ৩৬৯ জন। ফসল বিমার আওতায় রয়েছে মাত্র ২৬২টি কৃষক পরিবার। ফসল বিমার জন্য এখানে চাষিদের নিজেদেরকে বিমার খরচ বহন করতে হয়। ঋণ দেওয়ার সময় চাষিদের কাছ থেকে আগেই মোট ঋণের পরিমাণ থেকে ৫ শতাংশ হারে বিমার প্রিমিয়াম কেটে নেয় দ্য হাওড়া ডিস্ট্রিক্ট সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক লিঃ, বাগনান শাখা। চাষিদের পরিশোধ করতে হয় মোট ঋণের অর্থের উপর ৭ শতাংশ হারে সুদ ও ৫ শতাংশ হারে বিমার প্রিমিয়াম দিয়ে, যা চাষিদের পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য। ফলত চাষিদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে— তাঁরা কৃষি ঋণ নিতে অনাগ্রহী হয়ে পড়ছেন। এ বছর (২০১৮-১৯) কৃষি ঋণ দেওয়া হয়েছে ৯১৯৯০০০ টাকা, যা গত বছরের (২০১৭-১৮) তুলনায় ২৭৩৬০০০ টাকা কম। এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে বিমার দৌলতে কৃষি ঋণ নেওয়ার আগ্রহ চাষিদের হ্রাস পাবে, চাষিরা তাঁদের শেয়ার মানি তুলে নিতে চাইছেন এবং এর ফলে সমবায় সমিতিগুলির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে, মহাজনী প্রথা ফিরে আসবে।
ফসল বিমার বিষয়ে চাষিরা সম্পূর্ণ অন্ধকারে। তাঁদের ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণ কোথায়, কী ভাবে পাবেন, তা তাঁরা জানেন না। কৃষি দফতর থেকে শস্য বিমার জন্য প্রচারকার্য বা আইইসি-র ধারাবাহিক কার্যক্রম সম্পাদন করলে এলাকার চাষিরা উৎসাহিত হবেন। ধান ও পান চাষ এখানকার প্রধান ফসল। শস্য বিমার ক্ষেত্রে ধান ও পান চাষ সমগোত্রীয় হওয়া উচিত। ধান চাষের বিমার অর্থ রাজ্য সরকার বহন করে, তেমনই পান চাষের বিমার অর্থ বহন করার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। ধান চাষের জন্য প্রতি শতকে যে কৃষিঋণ দেওয়া হয়, তা অত্যন্ত কম হওয়ায় ধান চাষ এখানে লাভজনক নয়। পান চাষে সেই সমস্যা নেই। তাই পান চাষেই চাষিদের আগ্রহ বেশি। কিন্তু বিমার অর্থ কেটে নেওয়ার জন্য সেই আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
সেখ খলিলুর রহমান
সভাপতি, শ্রী অরবিন্দ সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি, হারপ, হাওড়া
ধান বিক্রি
বর্তমান নিয়মানুযায়ী সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে কাগজপত্র জমা দিলে, ধানের পরিমাণ বা কোথায় ধান জমা দিতে হবে লেখা একটি টোকেন চাষিকে দেওয়া হয়। ওই টোকেন নিয়ে, যেখানে ধান জমা দিতে হবে সেখানে ডেট বা তারিখ আনতে হয়। ডেট অনুযায়ী ধান জমা দিলে, চাষিকে ধান গ্রহণের রসিদ দেওয়া হয়। ওই রসিদ ক্রয়কেন্দ্রে জমা দিলে চাষির ব্যাঙ্কে টাকা জমা হয়।
গ্রামের ছোট বা প্রান্তিক চাষিরা খামারে ধান ঝাড়ার পর ৫-১০ বস্তা ধান অভাবী বিক্রি করে। স্থানীয় ফড়েরা যা অনেক কমে কিনে থাকে। কারণ চাষিদের পক্ষে এখান থেকে ১০-১২ কিমি দূরে অবস্থিত কিসান মান্ডি বা রাইস মিলে ধান নিয়ে যাওয়ার মতো পরিকাঠামো নেই।
গ্রামে গ্রামে সরকারের সাহায্যপ্রাপ্ত যে সমস্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে, তাদেরকে ট্রেনিং দিয়ে গ্রামে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনার ব্যবস্থা করলে ভাল হয়। চাষিরাও অভাবী বিক্রিতে সরকারি দর পেতে পারেন। বিগত কয়েক বৎসরের অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, চাষিরা ৬০ কেজি বস্তায় ধান আরও ২ কেজি বেশি দিয়ে ওজন করে সমবায় সমিতি বা মিল-এ নিয়ে গিয়েছেন, নানা অজুহাতে আরও বাদ দিয়ে ধান গ্রহণের রসিদ চাষিদের দেওয়া হয়েছে। ওই রসিদ অনুযায়ী চাষিরা টাকা পেয়েছেন। যা তাঁদের পক্ষে লোকসান। এই পরিস্থিতিতে গ্রামেই চাষিরা যাতে ধান বিক্রি করতে পারেন, সে ব্যবস্থা হোক।
নিমাই চাঁদ দত্ত
অকালপৌষ, পূর্ব বর্ধমান
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy