E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: বিরল শিক্ষক

বড় ক্লাসে পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে পড়াতেন, নতুন বিষয় পড়ানোর আগে বোর্ডে মূল বিষয় ও তার অন্তর্ভুক্ত পয়েন্টগুলি, বইয়ের তালিকা সবই লিখে দিতেন। ছাত্রছাত্রীরা প্রশ্ন করলে খুশি হতেন।

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২৫ ০৬:৩৭

চলে গেলেন অধ্যাপক চিত্তব্রত পালিত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অনেক কালের এক বড় সম্পদ। শিক্ষক হিসেবে তিনি ছিলেন অসামান্য। কখনও ক্লাসে কোনও নোটস নিয়ে আসতে দেখিনি ওঁকে। বড় ক্লাসে পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে পড়াতেন, নতুন বিষয় পড়ানোর আগে বোর্ডে মূল বিষয় ও তার অন্তর্ভুক্ত পয়েন্টগুলি, বইয়ের তালিকা সবই লিখে দিতেন। ছাত্রছাত্রীরা প্রশ্ন করলে খুশি হতেন। সহজ ইংরেজিতে কঠিন বিষয়গুলি যে ভাবে উপস্থাপনা করতেন, কেবল বিষয়ের জন্য নয়, শিক্ষকতা কেমন করে করতে হয়, বোঝার জন্যও সেটা দেখার অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ। পড়াতে পড়াতে তিনি নিজেও যেন আলোচ্য চরিত্রগুলির সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতেন। আসলে আবেগ ছাড়া যে ভাল শিক্ষক হওয়া যায় না, অধ্যাপক পালিতের ক্লাস করেই আমরা তা বুঝেছিলাম।

পড়াশোনা ছাড়াও বিভাগের যে কোনও অন্যান্য কাজে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, সে রি-ইউনিয়ন হোক, কিংবা বিদায় সংবর্ধনা, বা চড়ুইভাতি, সব কিছুতেই তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। নানা বিষয়ে তাঁর আগ্রহ টের পেতাম। নিজে বাংলার কৃষি বিষয়ে গবেষণা করেন। কিন্তু বাংলার ব্যবসা, শিল্প, বিজ্ঞান ও জাতীয়তাবাদ, ভারতের চিকিৎসা শাস্ত্রের ইতিহাস, পরিবেশ— কত বিষয়ে যে তাঁর অগাধ জ্ঞান, এবং ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে তা নিয়ে অফুরন্ত আলোচনা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ ১৯৬৮ থেকে ২০১০ সাল তাঁর মেধায় উজ্জ্বল হয়ে ছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিলেও শিক্ষাজগৎ থেকে তিনি কখনও সরে যাননি। ইনস্টিটিউট অব হিস্টরিক্যাল স্টাডিজ়-এর সঙ্গে তিনি যুক্ত হন, পরে অধিকর্তা হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তনীদের নিয়ে ‘কর্পাস’ নামে একটি গবেষণা সংস্থা গড়ে তোলেন।

অধ্যাপক চিত্তব্রত পালিতের সবচেয়ে বড় গুণ হয়তো ইতিহাসের ছাত্রছাত্রীদের ইতিহাস-গবেষক করে তোলা। কত জনের জীবনে যে তিনি এই ছাপ রেখে গিয়েছেন। কেবল তাদের নতুন নতুন বিষয়ের উপর গবেষণা করতে উৎসাহিত করা নয়, আগাগোড়া তাদের পাশে থাকতেন। কখনও হতাশ হতে দিতেন না। খুবই বড় প্রাপ্তি ছিল আমাদের।

অমিত ভট্টাচার্য, কলকাতা-৭৪

স্মরণীয়

সায়ন্তনী সেনগুপ্তের ‘রেস্তরাঁর বিলের উপরে লেখা লতার জন্য গান’ (রবিবাসরীয়, ২৫-৫) শীর্ষক প্রবন্ধটি পড়ে সমৃদ্ধ হলাম। পাশাপাশি কিছু তথ্য সংযোজন করতে চাই। শোনা যায়, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় শরীর খারাপের অজুহাতে মাসখানেক ঘাটশিলায় নিজের দিদির বাড়িতে চলে যেতেন। উদ্দেশ্য ছিল গান লেখার। মাসখানেক পর ফিরে দেখতেন গোটা পঁচিশ গান লেখা হয়ে গিয়েছে। এমনই লেখাপাগল মানুষ ছিলেন তিনি। হৈমন্তী শুক্লর জন্য লেখা ‘আমার বলার কিছু ছিল না’ এবং ‘ঠিকানা না রেখে ভালই করেছ বন্ধু’ গান দু’টি তাঁর সঙ্গীত জীবনকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল। মান্না দে’র সুরে ও পুলকবাবুর লেখায় হৈমন্তী শুক্ল গানের জীবনে নতুন আলোর সন্ধান পেয়েছিলেন। ফলে আমরা পেলাম এক নক্ষত্রকে। এ ছাড়া শোনা যায় এক পার্টিতে গিয়ে এক মহিলার কানের ঝুমকো পড়ে যাওয়ার ঘটনা জন্ম দেয় ‘জড়োয়ার ঝুমকো থেকে একটা মোতি খসে পড়েছে’র মতো গান। এমন গান লেখা বোধ হয় পুলকবাবু বলেই সম্ভব।

১৯৭৮ সালে তিনি মান্না দে’র জন্য লেখেন ‘সারা বছরের গান’, যাতে ছ’টা গান ছিল ছয় ঋতুর। ‘প্রখর দারুণ অতি দীর্ঘ দগ্ধ দিন’ (গ্রীষ্ম), ‘গহন মেঘের ছায়া ঘনায়’ (বর্ষা), ‘স্বপনে বাজে গো বাঁশি’ (শরৎ), ‘জ্বালাও আকাশ প্রদীপ’ (হেমন্ত), ‘না না যেয়ো না’ (শীত), ‘কে তুমি তন্দ্রা হরণী’ (বসন্ত)। এমন বিস্ময় সৃষ্টি পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া ভাবা যায় না। ১৯৮৭ সালে কিশোর কুমারের মৃত্যুর পর তাঁর ভক্ত শিল্পী কুমার শানুকে দিয়ে গাওয়ালেন ‘অমর শিল্পী তুমি কিশোর কুমার’। এই গান স্মরণীয় হয়ে রয়েছে আজও। বিয়ের ফুল সিনেমায় মুম্বইয়ের বিখ্যাত দুই সুরকার যতীন-ললিতের সুরে লিখলেন জনপ্রিয় বাংলা গান। কুমার শানু, কবিতা কৃষ্ণমূর্তি, বিজয়েতা পণ্ডিতের কণ্ঠে পেলাম অমর কিছু সৃষ্টি। তিনি শুধু স্বর্ণযুগের রথী মহারথীদের কণ্ঠের মধ্যে সোনা ফলিয়েছেন এমনটা নয়, নব্বইয়ের দশকেও এমন গান লিখে গেছেন। এ ছাড়া, ১৯৯৪ সালে বাপ্পি লাহিড়ীর সুরারোপিত ও পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা রক্ত নদীর ধারা ছবির প্রতিটা গান শ্রোতাদের হৃদয়ে স্থান পেয়েছে। ‘ভুলো না কোনওদিন’ এবং ‘মন্দ কিছু বোলো না’ গান দু’টি পুলকবাবুর লেখার মাধুর্য আর বাপ্পি লাহিড়ী এবং অলকা যাজ্ঞিকের কণ্ঠে এক অন্য ভাললাগার জন্ম দিল। মান্না দে’র কণ্ঠে সুপর্ণকান্তি ঘোষের সুরের জনপ্রিয় গান ‘সে আমার ছোট বোন’ বাংলা গানের ইতিহাসের মাইলফলক হয়ে রয়ে গেছে। মান্না দে’র কণ্ঠে যে ক’টা গান উনি আমাদের উপহার দিয়েছেন, তা যেন জীবনের প্রতিটা বয়সের ও প্রতিটা অনুভূতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে। হাওড়ার সালকিয়ার এমন শিল্পীর জন্য হাওড়াবাসী হিসাবে আমি গর্বিত।

স্নেহাশিস সামন্ত, দাশনগর, হাওড়া

অযথা ঘৃণা

মেঘালয়ে মধুচন্দ্রিমায় গিয়ে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের নববিবাহিত যুবক রাজা রঘুবংশীর মৃত্যুরহস্য ‘অপারেশন হানিমুন’ নামক পুলিশি তদন্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্মোচিত এবং বর্তমানে সর্বজনবিদিত। সংবাদ সূত্রে প্রকাশ (‘ওকে মারো’, রাজার সামনেই বলেন সোনম, ১১-৬) মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা জানিয়েছেন যে মেঘালয়, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গে ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তে একযোগে কাজ করেছে। ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের পুলিশের সমবেত প্রয়াসের ফলে প্রাপ্ত সাফল্য নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। যদিও অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত যুবকের স্ত্রী এবং অপরাধের শিকার হওয়া যুবক, উভয় পরিবারের সদস্যরা ক্রমাগত নৃশংস এই ঘটনার দায় মেঘালয় রাজ্য প্রশাসন এবং সেখানকার স্থানীয় মানুষদের উপর প্রথম থেকেই চাপিয়ে এসেছিলেন। সঙ্গে ঘৃণা-ভাষণে মত্ত হয়ে উঠেছিলেন এক শ্রেণির সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারী।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে জানাই, বার তিনেক ভ্রমণ সূত্রে আমি উত্তর-পূর্ব ভারতের চারটি রাজ্যের বিভিন্ন স্থান ঘুরেছি। কোথাও কোনও অপ্রীতিকর অবস্থার সম্মুখীন হওয়া দূরের কথা বরং প্রত্যন্ত কিছু অঞ্চলে যান বিভ্রাট, থাকার জায়গার সমস্যা, অসময়ে খাবারের জোগান ইত্যাদি বিষয়ে স্থানীয় মানুষদের আন্তরিক সাহায্য পেয়ে শারীরিক ও মানসিক ভাবে তৃপ্ত হয়েছি। যে মেঘালয়ের দিকে কিছু অবিবেচক মানুষ সন্দেহের আঙুল তুলেছিলেন, তাঁরা হয়তো শিলংয়ের ‘চেরি ব্লসম’ উৎসব দেখেননি, ডাউকির স্বচ্ছ স্ফটিক জলে নৌ-বিহার করেননি, জানেন না মাউলিনলং নামক এশিয়ার পরিচ্ছন্নতম তকমা পাওয়া গ্রামটি মেঘালয়েই আছে। এঁরা হয়তো হাঁটেননি লিভিং রুট ব্রিজের উপর দিয়ে কিংবা অজস্র জলপ্রপাতের সামনে নিজেকে আবিষ্কার করার সুযোগ পাননি। সংবাদ সূত্র অনুযায়ী, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন ঘৃণাভাষী মানুষগুলি যেন এ বার মেঘালয়বাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। নিহত যুবক রাজা রঘুবংশীর দুই দাদা, সন্দেহের বশবর্তী হয়ে তাঁদের করা মন্তব্যের জন্য মেঘালয়বাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। সমাজমাধ্যমের ‘ওয়াল’ ভরিয়ে তুলতে পারদর্শী লোকেদের উচিত, সমগ্র মেঘালয়বাসীর কাছে ক্ষমা চাওয়া। পরিশেষে বলব, উত্তর-পূর্ব ভারতের কয়েকটি রাজ্যের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণসূচি থেকে বাদ দিলে ‘অতুলনীয় ভারত’-এর অনেক কিছুই আমাদের অ-দেখা থেকে যাবে।

অরিন্দম দাস, হরিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

শৌচাগার সংস্কার

হাওড়া-গোঘাট রেলপথের আরামবাগ স্টেশনের মহিলা শৌচালয়টির অবস্থা একেবারেই ভাল নয়। শৌচালয়টির জল নিকাশি ব্যবস্থা যথাযথ না হওয়ায় জল জমে দুর্গন্ধ ও জীবাণু ছড়াচ্ছে, যা মেয়েদের জটিল অসুখ ডেকে আনতে পারে। তা ছাড়া, শৌচালয়ের দরজার ছিটকিনিটিও বিকল, ফলে মেয়েদের নিরাপত্তার সমস্যাটি প্রবল হয়ে ওঠে। রেল বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে শৌচালয় সমস্যার দ্রুত সমাধানের আর্জি জানাচ্ছি।

লোপা চট্টোপাধ্যায়, হরিশপুর, হুগলি

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jadavpur University Manna Dey Haimanti Shukla

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy