Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: দেশ কাকে বলে

গত বছর ১৬ ডিসেম্বর কাশ্মীরের পুলওয়ামাতেই সামরিক বাহিনী গুলি করে হত্যা করেছিল ৭ জন নিরীহ কাশ্মীরবাসীকে। সেই সময়ে উল্লসিত হয়েছিল উগ্রজাতীয়তাবাদী আর হিন্দুত্ববাদীরা, কারণ দেশের মানুষের জীবনের কোনও দাম নেই তাদের কাছে।

শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৯ ০১:৩৮
Share: Save:

‘প্ররোচনা ঠেকাতে সহমত মমতা, বাম ও কংগ্রেস’ এবং ‘বিরুদ্ধ মত, এ বার বাড়ি গিয়ে হামলা’ (১৯-২) শীর্ষক দু’টি প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। প্রথম খবরটিতে দেখলাম, রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ হিন্দুত্ববাদী তাণ্ডবকে সরাসরি সমর্থন করে বলেছেন ‘‘যা করেছে ঠিক করেছে।’’ অর্থাৎ এই রাজ্য তথা গোটা দেশে সাধারণ কাশ্মীরিদের উপর যে নির্যাতন শুরু করেছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আর বজরং দলের হিন্দুত্ববাদী গুন্ডারা, তা তাঁর মতে সঠিক কাজ। আরএসএস প্রচারক দিলীপ ঘোষের মতে, সঙ্ঘ পরিবারই একমাত্র জাতীয়তাবাদী। কেউ বিজেপি বা আরএসএস-এর বিরোধিতা করলেই সে দেশদ্রোহী। কাশ্মীরিরা এঁদের কাছে দেশদ্রোহী, এমনকি তাঁরা ভারতীয়ই নন! অথচ, এঁরা সব সময় দাবি করেন, ‘‘কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।’’ দেশ বলতে এঁরা বোঝেন দেশের রাজনৈতিক সীমার মধ্যে অবস্থিত ভূখণ্ড, দেশের মানুষ নয়। দেশপ্রেম বলতে উগ্রজাতীয়তাবাদীদের কাছে দেশের ভৌগোলিক অঞ্চলের অখণ্ডতাকে বলপূর্বক টিকিয়ে রাখার বাসনা, কখনওই দেশের মানুষকে ভালবাসা নয়। অথচ রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘‘দেশ মানুষের সৃষ্টি। দেশ মৃন্ময় নয়, সে চিন্ময়। মানুষ যদি প্রকাশমান হয় তবে দেশ প্রকাশিত। সুজলা সুফলা মলয়জশীতলা ভূমির কথা যতই উচ্চকণ্ঠে রটান ততই জবাবদিহির দায় বাড়বে, প্রশ্ন উঠবে প্রাকৃতিক দেশ তো উপাদান মাত্র, তা দিয়ে মানবিক সম্পদ কতটা গড়ে তোলা হল। মানুষের হাতে দেশের জল যদি যায় শুকিয়ে, ফল যদি যায় মরে, মলয়জ যদি বিষিয়ে ওঠে মারীবীজে, শস্যের জমি যদি হয় বন্ধ্যা, তবে কাব্য কথায় দেশের লজ্জা চাপা পড়বে না। দেশ মাটিতে তৈরি নয়, দেশ মানুষে তৈরি।’’ স্পষ্টতই, এখন বেঁচে থাকলে এই ‘দ্বেষপ্রেমী’দের কাছে রবীন্দ্রনাথ ‘দেশদ্রোহী’ আখ্যা পেতেন।

গত বছর ১৬ ডিসেম্বর কাশ্মীরের পুলওয়ামাতেই সামরিক বাহিনী গুলি করে হত্যা করেছিল ৭ জন নিরীহ কাশ্মীরবাসীকে। সেই সময়ে উল্লসিত হয়েছিল উগ্রজাতীয়তাবাদী আর হিন্দুত্ববাদীরা, কারণ দেশের মানুষের জীবনের কোনও দাম নেই তাদের কাছে। তখন দেখা যায়নি এত শোকমিছিল, এত মোমবাতি প্রজ্বলন। সেনাদের মৃত্যুটাই কেবল শোকের, সাধারণ মানুষের প্রাণের মূল্য নেই। আজ পর্যন্ত ৯৪ হাজার ২৯০ জন সাধারণ কাশ্মীরির মৃত্যু হয়েছে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে। কাশ্মীরের কুনান পোশপোড়া থেকে সোপিয়ানে যখন রাষ্ট্রের সেবকরা অসংখ্য কাশ্মীরি নারীকে ধর্ষণ করেছে, যখন পেলেট গানের ছোড়া গুলিতে শত শত শিশু কিশোর-কিশোরী অন্ধ হয়ে গিয়েছেন, যখন রাস্তা থেকে হাজার হাজার কাশ্মীরি যুবক গায়েব হয়ে গিয়েছেন, যখন হাজার হাজার গণকবরে নিজের সন্তানের লাশ খুঁজেছেন কাশ্মীরি মায়েরা, তখন যদি একই ভাবে ভারতের মানুষ দেশের সরকারের কাছে সুবিচারের দাবি করত, তা হলে হয়তো আজ এই ৪০ জন জওয়ানের লাশ দেখতে হত না।

দ্বিতীয় খবরটি এবং ওই দিনের প্রথম পাতার আর একটি প্রতিবেদন ‘ফেসবুকে প্রশ্ন তুলে বরখাস্ত শিক্ষক’ আমার কাছে অশনি সঙ্কেত। বাংলাতেও কি তবে নরেন্দ্র দাভোলকর, গৌরী লঙ্কেশ অথবা অভিজিৎ রায়ের মতো মুক্তমনাদের মৌলবাদীদের হাতে মরতে হবে? রাজ্যের প্রশাসনের ভূমিকা তো কিছু ক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদী গুন্ডাদের পাশেই, যেমন হাবরাতে তরুণ ছাত্রটিকেই গ্রেফতার করা হল, যিনি কিনা নিজেই ঘৃণ্য মৌলবাদীদের শিকার হয়েছেন। কোন রাজনৈতিক দলের মদতে পরিবর্তনের জমানায় গত ৭ বছরে ভিএইচপি বজরং দলের বাংলায় এত বাড়বাড়ন্ত? কার মদতে সঙ্ঘ পরিবারের এত শাখা পাড়ায় পাড়ায় বৃদ্ধি পেল?

শেষে, অকুণ্ঠ সাধুবাদ জানাই অভিনেতা কমল হাসনকে, যিনি কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রকেই দায়ী করে ‘গণভোট’-এর পক্ষে সওয়াল করেছেন। এই রকম মেরুদণ্ড বর্তমান ভারতে অনেকেরই নেই। প্রতিটি জাতিসত্তার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার না থাকলে গণতন্ত্র ফলপ্রসূ হয় না। বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকারও তার মধ্যে পড়ে।

অজেয় পাঠক

হরিণডাঙা, ডায়মন্ড হারবার

গেম থিয়োরি

ইমরান বলেছিলেন, শান্তির পথে ভারত এক কদম বাড়ালে তিনি দু’কদম যাবেন। অভিনন্দনকে মুক্তি দিয়ে তিনি যে শান্তির পথে প্রথম পদক্ষেপ করলেন, সে জন্য ধন্যবাদ।

প্রকৃতপক্ষে দু’টি পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কেন? উত্তর পাওয়া যায় ‘গেম থিয়োরি’তে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরস্পর-বিরোধী দু’টি রাষ্ট্রের আচরণ ব্যাখ্যা করে এই তত্ত্ব। তত্ত্বে একটি খেলা হল ‘চিকেন গেম’। একদম সরল ভাবে খেলাটি হল— দু’টি গাড়ি (শত্রুভাবাপন্ন দু’টি রাষ্ট্র) তীব্র বেগে পরস্পরের দিকে ধেয়ে আসছে এবং পরস্পরকে ভয় দেখানোর জন্য অবিরাম গালি দিয়ে চলেছে, খালি বিয়ারের বোতল রাস্তায় ছুড়ে ফেলছে। কিন্তু রাস্তাটি এমন, কোনও একটি গাড়ি থেমে না গেলে সংঘর্ষ অনিবার্য। যে হেতু কোনও পক্ষই অপর পক্ষকে বিশ্বাস করে না, কাজেই নিজের ধ্বংস রুখতে দু’টি গাড়িই থেমে যাবে।

কিন্তু ইমরানের শান্তির পদক্ষেপ আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে প্রবল সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। যুদ্ধ করে কোনও রাষ্ট্রেরই লাভ হয় না। কিন্তু যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লাভ করা যায়, যেটা করতে চেয়েছিলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। যুদ্ধের ঢাকে জল ঢেলে দিয়ে ইমরান যে কাজটি করলেন, তার ফলে ভোটের মুখে দাঁড়িয়ে বিগত পাঁচ বছরে মোদীজির ব্যর্থতার নজিরগুলি আবার সামনে চলে আসবে। জাতীয়তাবাদী আবেগকে উস্কে দিতে এ বার প্রধানমন্ত্রী কোন অস্ত্র ব্যবহার করবেন? রাম জানে!

অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়

কলকাতা-৭৩

কণিকা

‘চলে গেলেন কণিকা মজুমদার’ (আনন্দ প্লাস, ২২-২) পড়লাম। কিছু সংযোজন।

১) সাধারণ রঙ্গালয়ে প্রথম ‘রক্তকরবী’র অভিনয় যখন হয়, কণিকা মজুমদার নন্দিনীর ভূমিকায় অভিনয় করেন। অর্থাৎ তিনিই রঙ্গমঞ্চের প্রথম নন্দিনী। নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস। তৃপ্তি মিত্র সেটিতে করেছিলেন চন্দ্রার অভিনয়। দেবব্রত বিশ্বাস করেছিলেন বিশু পাগল, শম্ভু মিত্র নেপথ্য থেকে রাজার অংশ পাঠ করেছিলেন।এর অনেক পরে বহুরূপী ‘রক্তকরবী’ অভিনয় শুরু করে। সেখানে নন্দিনী হতেন তৃপ্তি মিত্র।

২) বিশ্বরূপ থিয়েটারের মালিক রাসবিহারী সরকারের দূতী হয়ে কণিকা গিয়েছিলেন সুপ্রিয়া দেবীর কাছে এবং তাঁকে ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’ নাটকে অভিনয় করতে রাজি করান ১৯৭৬ সালে। কণিকা নিজেও ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’ প্রভৃতি নাটকে যথাক্রমে লক্ষ্মীদি ও জবার ভূমিকায় নিয়মিত অভিনয় করেন সুপ্রিয়ার সহ-শিল্পী হিসাবে। সুপ্রিয়া দেবীর অনুপস্থিতিতে কণিকাই বিকল্প শিল্পী হিসাবে সুপ্রিয়ার ভূমিকায় অভিনয় করতেন।

৩) কণিকা মজুমদারের অভিনয়ের রেঞ্জ খুব বড় ছিল। ‘পুনশ্চ’ (১৯৬১) ছবিতে তিনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রেমিকা, আবার ‘জীবন সৈকতে’ (১৯৭২) ছবিতে তিনি সৌমিত্রবাবুর আধুনিকা হবু শাশুড়ি।

শ্রীশঙ্কর ভট্টাচার্য

কলকাতা-৩৯

সঞ্চালক নিজেই

টিভি-তে প্রায়ই দেখা যায়, বিভিন্ন টক শো-র সঞ্চালক অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করতে করতে, কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে জোরদার সওয়াল শুরু করে দেন। তাঁর নিজস্ব রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা আলাদা অনুষ্ঠান করে জানালেই হয়। মতামতের জন্য বিশিষ্টদের আর ডেকে আনা কেন?

সুদীপ বিশ্বাস

উত্তরপাড়া, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Politics Pulwama Terror Attack Kashmir BJP RSS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE