ডিভিসি-র ছাড়া জলে এ রাজ্যে যে বন্যা হয়েছে, তাকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ম্যান মেড’ আখ্যা দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যকে আগাম না জানিয়ে এক সঙ্গে বিপুল পরিমাণে জল ছাড়ার ফলেই বিভিন্ন জেলার একাধিক এলাকা বন্যার কবলে পড়ে। সম্প্রতি বাঁকুড়া জেলার বন্যা পরিস্থিতি দেখতে এসে মন্ত্রী মলয় ঘটকও একই কথা বলেছেন। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রক বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ডিভিসি-র রিজ়ার্ভার রেগুলেশন কমিটিতে ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধি ছিলেন। আগাম আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েই জল ছাড়া হয়েছে। এ কথা ঠিক যে, টানা তিন দিন ধরে ধারাবাহিক বৃষ্টি হলে বিভিন্ন বাঁধের জল বিপদসীমার উপরে উঠবে। ডিভিসি ছাড়াও, রাজ্যের সেচ দফতরের আওতাধীন দুর্গাপুর ব্যারাজও অতিরিক্ত জল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। কংসাবতী ব্যারাজ থেকেও জল ছাড়া হয়েছে।
পরিকল্পনাহীন ভাবে নদী বাঁধের উপর, নিচু জমিতে, খাল-বিল-নদী ভরাট করে প্রতি দিন অবৈধ নির্মাণকাজ হচ্ছে। বিভিন্ন জলাধার দীর্ঘ দিন ড্রেজিং না হওয়ায় মজে গিয়ে জলধারণ ক্ষমতা কমেছে। আবার নদী, পুকুর, খালবিল মজে যাওয়ার কারণে তাদেরও জলধারণ ক্ষমতা কমেছে। এই কারণে কংসাবতী নদীর পাড় একাধিক জায়গায় ভেঙে পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সুতরাং, উদাসীনতা কেন্দ্র-রাজ্য উভয় পক্ষেরই আছে। তাই রাজ্যের এই সঙ্কটজনক বন্যা পরিস্থিতিতে ‘ম্যান মেড বন্যা’, ‘ডিভিসি-র সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করব’ ইত্যাদি রাজনৈতিক কথাবার্তা না বলে, সমস্যা মোকাবিলায় কেন্দ্র এবং রাজ্যের যৌথ উদ্যোগ দরকার। প্রকৃত সমস্যা নিরূপণ এবং সমাধানে উদ্যোগী হলে সমস্যা কমানো যাবে। তাতে এ রাজ্যের জনগণের বেশি উপকার হবে বলে মনে হয়।
প্রদ্যোৎ পালুই, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া
জলবায়ুর খবর
‘পূর্বাভাসে উন্নতি’ (২১-৯) সম্পাদকীয় সম্পর্কে বলতে চাই, এ দেশ অনেক কিছুতেই পিছিয়ে, তার মধ্যে জলবায়ুর পূর্বাভাস একটি। তাই অনেক ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যাচ্ছে না। তবে কেন্দ্রীয় সরকার হাত গুটিয়ে বসে নেই। ‘মিশন মৌসম’ নামে একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে, যেখানে আগামী দু’বছরে ব্যয়বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২০০০ কোটি টাকা। এই মিশনের মূল লক্ষ্য, ভারতকে একটি ‘আবহাওয়া প্রস্তুত’ এবং ‘জলবায়ুগত ভাবে স্মার্ট’ দেশে রূপান্তরিত করা। প্রাথমিক লক্ষ্য হল আবহাওয়ার চরম ঘটনা এবং জলবায়ু-সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলির পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশের ক্ষমতা বাড়ানো। উদ্যোগটি বায়ুমণ্ডলীয় পর্যবেক্ষণের বিশদ প্রতিচ্ছবি পাঠাবে, আবহাওয়ার পূর্বাভাসের আরও সূক্ষ্ম ও উন্নত বিশ্লেষণ করবে।
মনে রাখা দরকার, বর্তমানে একই সময়ে, জলবায়ু পরিবর্তন বায়ুমণ্ডলকে আরও বিশৃঙ্খল করে তুলছে, যার ফলে বিচ্ছিন্ন এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত আর ছোট এলাকায় খরা একযোগে তৈরি করছে। মেঘ-ভাঙা বৃষ্টি, বজ্রপাত এবং ঝড় ঘটে চলেছে, যার সম্পর্কে জ্ঞান সীমিত। এই জটিল বিষয়গুলি বোঝার জন্য মেঘের অভ্যন্তরে এবং বাইরে, পৃষ্ঠে, উপরের বায়ুমণ্ডলে, মহাসাগরের উপরে এবং মেরু অঞ্চলে ঘটতে থাকা প্রক্রিয়াগুলির সম্বন্ধে গভীর জ্ঞান অর্জন প্রয়োজন। সেই জ্ঞান অর্জন এই মিশনের লক্ষ্য।
এটা তো রাতারাতি সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে এগোতে হবে। পাঁচ বছরের মিশন দু’টি ধাপে বাস্তবায়িত হবে। তাই যদি এখনই মনে করা হয় যে, ‘মিশন মৌসম’-এর ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আশাবাদী হওয়া মুশকিল, তা হলে তাকে নেতিবাচক ভাবনা বলেই মনে হয়। উল্লেখ্য, এক সময় এ দেশে আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়ে নানা রকম তামাশা করা হত। কারণ, প্রযুক্তির অভাবের জন্য প্রায়শই আবহাওয়ার খবর মিলত না। তাই সে সময় জনমানসে আবহাওয়ার খবরে বিশ্বাস ছিল না। সে চিত্র অনেকাংশেই পাল্টে গেছে। এখন আবহাওয়া দফতরের দেওয়া ঝড় বৃষ্টির অনেক আগাম খবর পুরোপুরি মিলে যাচ্ছে। তেমনই ‘মিশন মৌসম’-এর গবেষণাকৃত কাজের সুফলও নিশ্চিত ভাবে মিলবে।
কুমার শেখর সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি
চাই কাজ
দক্ষিণবঙ্গে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি রাজ্য সরকারের অস্বস্তিতে নতুন মাত্রা যোগ করল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বন্যার দায় দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি) ও ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন সরকারের উপর চাপিয়ে দিয়ে এই বন্যাকে ‘ম্যান মেড’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এ কি রাজনৈতিক কূটকৌশল প্রয়োগ করে বন্যাপীড়িতদের ক্ষোভের অভিমুখ অন্যত্র ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা?
২০০০ সালে পশ্চিমবঙ্গের মসনদে ছিল বামফ্রন্ট সরকার। আর বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বছর লাগাতার ভারী বর্ষণের পরে ফরাক্কা বাঁধ থেকে জল ছাড়া শুরু হয়। বৃষ্টির জমা জল ও বাঁধ থেকে ছাড়া জলের জন্য উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অন্তর্গত বনগাঁ ব্লকের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়ে। প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানিও হয়। বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বন্যাকে ‘ম্যান মেড’ বন্যা বলে তৎকালীন বাম সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান। ২০০১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ম্যান মেড’ বন্যার অভিযোগ একটি অন্যতম বিষয়ও হয়।
সময় বদলেছে। এখন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সম্প্রতি বন্যাকে আবারও ‘ম্যান মেড’ বলেছেন, কিন্তু দায় এ বার অন্যের ঘাড়ে ঠেলেছেন। ২০০০ সাল থেকে ২০২৪ সাল— মাঝখানে ২৪টি বছর কেটে গিয়েছে দায় ঝেড়ে ফেলা ও প্রতিশ্রুতির কথামালায়। কাজের কাজ কিছুই হয়নি, জল-যন্ত্রণা বেড়েছে বই কমেনি। মানুষ আর প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে না। মানুষ চায় কাজ।
হারান চন্দ্র মণ্ডল,ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
ঘাটালের দশা
‘সরকার-দ্বন্দ্বে বানভাসি’ (২১-৯) খবরে পড়লাম পশ্চিমবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথা। সেখানে লেখা হয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, চন্দ্রকোনা, দাসপুরে বাঁধ ভেঙে প্লাবন হয়েছে। সেচমন্ত্রীর নির্দেশের পরেও ঘাটালে বাঁধ মেরামতে সেচ দফতর গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ। হাওড়া, হুগলি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে বন্যা পরিস্থিতি এখনও বেশ উদ্বেগজনক। আমি পার্শ্ববর্তী পূর্ব মেদিনীপুরের এক জন বাসিন্দা হয়ে জানি, এখানকার বন্যাদুর্গত সাধারণ মানুষ বানভাসি হয়ে কঠিন জীবনসংগ্রামের সম্মুখীন হয়ে কী ভাবে হাহাকার করছে। আক্ষেপ, এ দিনই ঘাটালের মাননীয় সাংসদ দেব-এর একটি উদ্ধৃতিও প্রকাশিত হয়েছে বিনোদনের পাতায়, যেখানে তিনি বলেছেন, এ বারের পুজো অন্য বারের চেয়ে অনেকটাই আলাদা। তবে পুজোর সঙ্গে অনেক রুজি-রোজগারের প্রশ্নও জড়িয়ে। সে কারণেই উৎসব জরুরি।
হ্যাঁ, উৎসব জরুরি তো বটেই! কিন্তু বানভাসি পরিবারগুলি উৎসব নিয়ে ভাবা তো দূর, শিশুদের মুখে দু’মুঠো অন্নও যে জোগাতে পারছে না, সেটা ভাবাও জরুরি! খবরে পড়লাম, কোটি কোটি টাকা বাকি পড়ে থাকায় ঠিকাদার সংস্থা বাঁধ মেরামতির কাজ করছে না, ফলে বাঁধ ভেঙে বন্যার জল ঢুকছে। টাকার জন্য জীবন-জীবিকা-বাসস্থান বাঁচাতে বাঁধ সারানো যায় না, অথচ দুর্গাপুজো কমিটিগুলিকে ৮৫০০০ টাকা দেন বাংলার প্রশাসনিক প্রধান। আবার বলে দেন আগামী বছর সেই উপঢৌকন বেড়ে ১ লক্ষ টাকা হবে, সঙ্গে বিদ্যুৎ বিলে ছাড়! ঘাটালের চিত্রতারকা সাংসদ টানা তিন বার ঘাটালের সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। গত ১১ বছরে বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে আসতে পারেননি।
অঞ্জনা চৌধুরী, এগরা, পূর্ব মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy