Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
India

সম্পাদক সমীপেষু: বাঙালি বিদ্বেষ?

বহু ক্রিকেট-বিশেষজ্ঞ বললেন, ঋদ্ধিমানই বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ উইকেটরক্ষক। 

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

২০১৮ সালের জানুয়ারির কেপটাউন টেস্টে প্রথম এশীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে ঋদ্ধিমান দশটা ক্যাচ নেওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন। তার পরেই তিনি চোট পান ও দেড় বছর পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ় সফরে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ পান। কিন্তু এ কী ‘প্রত্যাবর্তন’! টেস্ট ক্রিকেটে দেশের এক নম্বর উইকেটরক্ষকই সাজঘরে বসে থাকলেন, আর মাঠে গ্লাভস হাতে উইকেট-কিপিং করতে নামলেন তাঁরই অনুপস্থিতিতে সুযোগ পাওয়া ঋষভ পন্থ!

কিন্তু সেই সিরিজ়েও ঋষভ চূড়ান্ত ব্যর্থ হলেন, ঋদ্ধিমান ঘরের মাঠে প্রত্যাবর্তন ঘটিয়ে উপর্যুপরি পাঁচ টেস্টে চমৎকার উইকেটরক্ষণ করলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বিশাখাপত্তনম ও পুণে টেস্টে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক ইডেন টেস্টে রহস্যময় গোলাপি বল-এ অবিশ্বাস্য কিছু ক্যাচ নিলেন! বহু ক্রিকেট-বিশেষজ্ঞ বললেন, ঋদ্ধিমানই বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ উইকেটরক্ষক।

যখন ভারতীয় টেস্ট একাদশে দ্বিতীয় কোনও উইকেটরক্ষকের নাম কল্পনাও করা উচিত নয়, তখন অনায়াস নিষ্ঠুরতায় ঋদ্ধিমানকে আবার বাদ দিয়ে দেওয়া হল, নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে খেললেন পন্থ। এবং যুক্তিও অনবদ্য! ঋষভের ব্যাটিং ঋদ্ধিমানের চেয়ে ‘ভাল’। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটসম্যান হিসেবে ঋষভ কোন চমৎকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন? উল্টো দিকে, ঋদ্ধিমান তিনটে টেস্ট জেতানো/বাঁচানো গুরুত্বপূর্ণ শতরান করেছেন ও তার চেয়েও অধিক সংখ্যক অর্ধশতরান করে দলকে বহু বার বিপদের সময় সাহায্য করেছেন। আর সম্প্রতি ঋদ্ধিমানকে অধিকাংশ সময়েই আট নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হয়েছে। যার ফলে ধীরেসুস্থে দীর্ঘ ইনিংসে খেলার সুযোগ থেকে তিনি বঞ্চিত। হয় অবশিষ্ট খেলোয়াড়েরা আউট হয়ে যাওয়ায় সামান্য কিছু রান করে ঋদ্ধিকে অপরাজিত অবস্থায় ইনিংস শেষ করতে হচ্ছে বা ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেওয়া হচ্ছে। যাঁর কাছ থেকে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানের মতো সর্বদা বড় রানের ইনিংস দাবি করা হচ্ছে, তাঁকে তা হলে নিদেন পক্ষে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে পাঠানো হোক।

আর যদি ব্যাটসম্যান হিসেবে ঋষভই উচ্চ মানের হন, তাতে কি এ কথা প্রমাণিত হয় যে, উইকেটরক্ষক নির্বাচনের মূল মাপকাঠি হল ব্যাটিং! তা হলে তো বলতে হয়, ভারতীয় বোর্ডের চোখে উইকেটরক্ষণ কোনও ধর্তব্যের বিষয়ই নয়! উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমানকে দলে টিকে থাকতে হলে যদি ব্যাট হাতেও ধারাবাহিক ভাবে বড় বড় রানের ইনিংস খেলতে হয়, তা হলে বিরাট কোহালিকেই বা কেন প্রতি ইনিংসে অন্তত তিন/চারটে উইকেট নিতে হবে না? বা ইশান্ত শর্মাও প্রতি ইনিংসে গড়ে অন্তত চল্লিশ রান কেন করবেন না!

বুঝি না, অজস্র অপযুক্তি কেন বারে বারে বাঙালিদের দিকেই ধেয়ে আসে। ভারতীয় ক্রিকেটের জন্মলগ্ন থেকে বাঙালি-বিদ্বেষের যে ‘সংস্কৃতি’ (মণ্টু-সুঁটে-সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে আরম্ভ করে গোপাল বসু-শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়-উৎপল চট্টোপাধ্যায় হয়ে শিবশঙ্কর পাল-রণদেব বসু-অশোক ডিন্ডা), তারই নবীনতম শিকার বোধ হয় ঋদ্ধিমান।

কাজল চট্টোপাধ্যায়

সোদপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

ঈশ্বর গুপ্ত

‘তুমি মা কল্পতরু...’ (পত্রিকা, ১-২) শীর্ষক নিবন্ধে ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত সম্পর্কে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তার সঙ্গে একমত নই। ঠিকই, ঈশ্বর গুপ্ত সিপাহি বিদ্রোহকে সমর্থন করেননি, বিধবাবিবাহকেও নয়। কিন্তু তাই বলে তিনি ইংরেজ শাসনের সমালোচনা করেননি, তা নয়। তিনি ‘সংবাদ প্রভাকর’-এ নীলকর সাহেবদের প্রজা-নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি ইংরেজ এবং ইংরেজ তাঁবেদার জমিদারদের নিয়ে ১৮৫৭ সালের ২০ অগস্ট ‘সংবাদ প্রভাকর’-এ লেখেন: ‘‘জমিদার, পত্তনিদার, তালুকদার, দর পত্তনিদার ইত্যাদি ভূমির উৎপন্নভোগীর সংখ্যা রাজনিয়মবলে যতই বৃদ্ধি হইয়া আসিয়াছে, ততই কৃষকের ক্লেশ বৃদ্ধি হইয়াছে, এতদ্ভিন্ন খোদকস্তা, যোতদার, বীজধান দাতা ইত্যাদি ও ভূমির উৎপন্ন গ্রহণকারী বিস্তর আছে, তাহারা স্বহস্তে ক্ষেত্রকর্ষণ বীজবপন ইত্যাদি ক্ষেত্রের কার্য কিছুই করে না, অথচ কৃষকের উপর কর্তৃত্ব করে।’’

মেয়েদের ইংরেজি ঘেঁষা শিক্ষাকে তিনি বিদ্যাসাগর, মদনমোহন তর্কালঙ্কারের মতো আধুনিক ভাবে সমর্থন করতে পারেননি ঠিক, আবার এটাও ঠিক যে, বেথুন সাহেবের অনুরোধে বালিকাদের জন্য পাঠ্যপুস্তক লিখতে স্বীকৃত হয়েছিলেন। তিনি কখনওই স্ত্রীশিক্ষার বিপক্ষে ছিলেন না। ১২৬৩ বঙ্গাব্দের ১ ফাল্গুন প্রকাশিত ‘সংবাদ প্রভাকর’-এ তিনি লেখেন, ‘‘বালিকারা যাহাতে বিদ্যাবতী হয়, সর্বাগ্রে তাহার সদুপায় নির্ণয় করা অবশ্য কর্তব্য...’’

ঈশ্বর গুপ্ত ইংরেজিয়ানা, মেকি সভ্যতাকে প্রশ্রয় দেননি। প্রখ্যাত পণ্ডিত বিনয় ঘোষের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য: ‘‘ঈশ্বর গুপ্ত ধর্মাত্মা হিন্দু, কিন্তু খাঁটি বাঙালি, এবং কেবল মেকি ধর্ম ও মানুষের শত্রু নয়, তাঁর মানদণ্ডে বিচারিত মেকি প্রগতিরও ঘোর শত্রু। কোন আধুনিক বিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা না পেয়েও তাঁর মানস-প্রকৃতি যে এইটুকু কালধর্মী হতে পেরেছিল, এইটাই আশ্চর্য।’’ অফিস কাছারিতে ইংরেজ চাকরিজীবী এবং স্বদেশি চাকরিজীবীদের মধ্যে বেতন-বৈষম্য নিয়েও ইংরেজদের সমালোচনা করে লেখনী ধরেছিলেন। তাই তাঁকে একমুখী ভাবে বিচার করা সমীচীন হবে না।

১৮৩৮ সালের আগে তিনি রক্ষণশীল দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে আধুনিক শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারের ব্যঙ্গপূর্ণ সমালোচনা করেছিলেন বটে, কিন্তু পরে যে মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তাতে তাঁকে উদারমতি সমাজসেবক বলে গ্রহণ করা যেতে পারে। মূর্খ ব্রাহ্মণ সমাজ, হিন্দু কলেজের ‘ইয়ং বেঙ্গল’-এর যুবজন, রাধাকান্ত দেব, ধর্মসভা, মিশনারিদের ছলে-কৌশলে ধর্মান্তরকরণ, রাজনৈতিক ফক্কিবাজি, যেখানেই তিনি মেকি ব্যাপার প্রত্যক্ষ করেছেন, সেখানেই ব্যঙ্গের চাবুক চালিয়েছেন।

এ ছাড়া ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সবচেয়ে বড় অবদান, তিনি লোকশিল্পের কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করে জনসমক্ষে এনেছেন। তিনিই প্রথম ক্ষেত্রসমীক্ষা করে লোক-কবিকে প্রচারের আলোয় আনেন। তিনি না থাকলে আমরা ভারতচন্দ্র, রামপ্রসাদ, নিধুবাবু, রাম বসু, নিতাই বৈরাগী, হরু ঠাকুর, রাসু নৃসিংহ, লক্ষ্মীকান্ত বিশ্বাস, কেষ্টা মুচি, গোঁজলা গুঁই প্রমুখ সম্পর্কে জানতেই পারতাম না। তাঁর ‘কবিজীবনী’ গ্রন্থ এই কারণেই অমর হয়ে থাকবে। তিনি যে-সমস্ত তথ্য ও গান সংগ্রহ করেছিলেন, তা না করলে বাংলা সাহিত্যের এক মূল্যবান অংশ চির-উপেক্ষিত থেকে যেত।

দীপক বিশ্বাস

খাগড়া, মুর্শিদাবাদ

শিক্ষা নিন

দিল্লি বিধানসভার ফলাফল কয়েকটি শিক্ষা দেয়। কেজরীবাল ‘কেন্দ্র আমাকে এই দেয়নি সেই দেয়নি’ করে রাস্তায় নামেননি, দিল্লির উন্নয়ন করে দেখিয়েছেন। পরিবেশ বাঁচানোর জন্য নিজের দলের কাছে আবেদন করেছেন, বাজি পুড়িয়ে উৎসব করবেন না। ভোটযুদ্ধে অন্য কোনও নেতাকে কটু কথা বলেননি। হয়তো এর থেকে কেউ কেউ কিছু শিক্ষা নিতে পারেন।

মৃত্যুঞ্জয় পুরকাইত

কলকাতা-৪৫

দেশদ্রোহী?

‘দেশদ্রোহিতা’ কাকে বলে? বেঙ্গালুরুর মঞ্চ থেকে অমূল্যা ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ ধ্বনি দিলেন। দেশদ্রোহের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করা হল। ট্রাম্পের ভারত সফরে, কেউ যদি তাঁর গাড়ি যাওয়ার সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে ‘আমেরিকা জিন্দাবাদ’ বলে, সে-ও দেশবিরোধী বলে অভিযুক্ত হবে তো? পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কার নামে জয়ধ্বনি মানে কি ভারতের নিন্দা? পাশের বাড়ির ‘কাকু’কে প্রশংসা করা মানে বাবা-মাকে ছোট করা? আর কত দিন আমরা মুক্ত চিন্তার প্রকাশ চাইব, পাশাপাশি ‘দেশদ্রোহিতা’র উদ্ভট ধারাকেও জিইয়ে রাখব?

দেবাশিস মিত্র

কলকাতা-৭০

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India New Zealand Wriddhiman Saha Rishabh Pant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE