সিউড়ির চাঁদমারি ময়দানের জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনুব্রত মণ্ডল। বৃহস্পতিবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
চতুর্থ দফায় বাংলার যে সব আসনে ভোটগ্রহণ হবে, সেই সব আসনে প্রায় সব বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হবে। জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ৯৮ বা ৯৯ শতাংশ বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে ভোট যদি হয়, তা হলে ভোটকেন্দ্রে অশান্তির আশঙ্কাটা সত্যিই কমে যায়। কিন্তু অনুব্রত মন্ডলের মতো নেতা যদি চমকে, ধমকে ভোট করানোর নির্দেশ বা ছাড়পত্র পান, তা হলে অবাধ নির্বাচন করানো যে খুব বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে, তা রাজ্যবাসীর অজানা নয়। অতএব চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণে বাংলায় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি হয়ে পড়ল।
বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা— বাঘের বাচ্চার মতো লড়তে হবে। প্রয়োজনে একটু ধমক-চমক দেওয়ার ছাড়পত্রও পেয়েছেন অনুব্রত। দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে এই বার্তা পাওয়ার পরে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি ঠিক কী মূর্তি ধরবেন, তা ভাবতে গেলে আশঙ্কা তৈরি হয়।
বাঘের বাচ্চার মতো লড়তে বলার মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। তিনি নিজে বাঘের বাচ্চার মতো লড়েন, এ কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক বার বলেছেন। সুতরাং দলও সে ভাবেই লড়ুক, এও তিনি স্বাভাবিক ভাবেই চাইবেন। কিন্তু যে অনুব্রত মণ্ডল ওই রকম কোনও বার্তা ছাড়াই বার বার বীরভূমে শেষ করে দিয়েছেন অবাধ নির্বাচনের সমস্ত আশা, বার বার নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার অভিযোগ উঠেছে যাঁর বিরুদ্ধে, দলনেত্রীর কাছ থেকে এই বার্তা পাওয়ার পরে তাঁর জেলায় নির্বাচনের হাল কী রকম হতে পারে, তা কল্পনা করাই মুশকিল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের জন্য বীরভূম এ বার অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জের জায়গা হয়ে উঠল অতএব।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
আরও পড়ুন: ‘বাঘের বাচ্চার মতো লড়তে হবে’, অনুব্রতকে নির্দেশ মমতার
অনুব্রত মণ্ডলের স্বভাবসিদ্ধ রাজনীতির সুবাদে বীরভূম জেলায় ভোট এলেই 'চড়াম চড়াম' শব্দ শোনা যায়, 'গুড়বাতাসা' বা 'নকুলদানা' বা 'পাঁচন' এর রমরমা বেড়ে যায়। অনুব্রত মন্ডলের বিশেষ পারদর্শিতার সুবাদে বীরভূম জেলায় ভোটের দিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে 'উন্নয়ন', সাধারণ ভোটারদের জন্য বুথে পৌঁছনোর পথ আটকে যায়। দলনেত্রীর কোনও নির্দেশ তার জন্য দরকার পড়ে না।
এ হেন অনুব্রত যখন বাঘের বাচ্চার মতো লড়ার নির্দেশ পান বা ধমক-চমক দেওয়ার ছাড়পত্র পান, তখন পরিস্থিতি কী রকম হতে পারে, অনেকেই আন্দাজ করতে পারছেন। নির্বাচন কমিশনকেও কিন্তু অভ্রান্ত ভাবে আন্দাজটা করে নিতে হবে।
প্রথম দফার ভোটগ্রহণের পরে কমিশনের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল জনমানসে। পরবর্তী দু'দফায় কমিশন অবশ্য অনেকটাই পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে আস্থা। বীরভূমে গিয়ে সে আস্থা যেন আবার মুখ থুবড়ে না পড়ে। এ কথাটা নির্বাচন কমিশনকে খেয়াল রাখতেই হবে। কী উপায়ে সব দিক খেয়াল রাখতে হয়, নির্বাচন কমিশনের তা জানা রয়েছে বলেই আশা করা যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy