Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Editorial News

নিরপেক্ষতার এই রকম নমুনা আগে কখনও দেখা গিয়েছে কি?

সিবিআই, ইডি, আয়কর বিভাগের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে সাঙ্ঘাতিক ভাবে মাঠে নামানো হয়েছে বিরোধী দলগুলোকে খতম করার জন্য—নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ অধিকাংশ বিরোধী দলের।

বেঙ্গালুরুতে আয়কর দফতরের সামনে কংগ্রেস-জেডিএস কর্মীদের বিক্ষোভ। ফাইল চিত্র।

বেঙ্গালুরুতে আয়কর দফতরের সামনে কংগ্রেস-জেডিএস কর্মীদের বিক্ষোভ। ফাইল চিত্র।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৪১
Share: Save:

প্রতিহিংসার রাজনীতি সংক্রান্ত অভিযোগ গত পাঁচ বছর ধরেই উঠছিল। নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরেও উঠছে সেই একই অভিযোগ। কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে ব্যবহার করে বিরোধী শিবিরে থাকা দলগুলোকে প্রবল চাপে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে দাবি করছে একের পর এক বিরোধী দল। সরকার বলছে, এজেন্সি এজেন্সির কাজ করছে, এর সঙ্গে প্রতিহিংসার কোনও সম্পর্ক নেই, নির্বাচনেরও নেই। কিন্তু আদৌ বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে কি সে সরকারি বয়ান?

সিবিআই, ইডি, আয়কর বিভাগের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে সাঙ্ঘাতিক ভাবে মাঠে নামানো হয়েছে বিরোধী দলগুলোকে খতম করার জন্য—নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ অধিকাংশ বিরোধী দলের। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে সবচেয়ে বড় সঙ্ঘাতের পথে সম্ভবত হেঁটেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিস্থিতিটা কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাতের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু তাতেও বদলায়নি ছবিটা। নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরেও আয়কর হানা চলছে বিরোধী শিবিরের একের পর এক নেতার বাড়িতে বা তাঁদের ঘনিষ্ঠদের বাড়িতে। বিরোধী শিবির থেকে তীব্র নিন্দা করা হচ্ছে এই পরিস্থিতির। কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোর এমন নির্লজ্জ অপব্যবহার আগে কখনও দেখা যায়নি বলে অভিযোগ উঠছে।

কেন্দ্রীয় সরকার কিন্তু অভিযোগের স্রোতের মুখে দাঁড়িয়েও অবিচল। অর্থমন্ত্রকের তরফ থেকে সাফাই দেওয়া হয়েছে যে, কারও প্রভাবে নয়, স্বাধীন ভাবেই কাজ করছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহও প্রায় একই কথা বলেছেন। এই সব হানাদারি বা তল্লাশি অভিযান সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভাবেই পরিচালিত হচ্ছে বলে তাঁর দাবি।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সরকারের তরফে উচ্চপদস্থ কর্তাব্যক্তিরা যে বয়ান দিচ্ছেন, তাতে ভরসা রাখতে পারলেই সবচেয়ে ভাল লাগত। কিন্তু ভরসা রাখার মতো কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সম্প্রতি যাঁদের বাড়িতে বা দফতরে আয়কর হানা হল, তাঁরা প্রত্যেকেই বিরোধী শিবিরের লোক! মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথের ঘনিষ্ঠকে কখনও ঘিরে ফেলল আয়কর, তো কখনও ঘিরে ফেলা হল কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামীর চারপাশে থাকা লোকজনকে। কখনও কেন্দ্রীয় সংস্থার কোপে পড়ল তামিলনাড়ুতে বিজেপি বিরোধী শিবিরে থাকা ডিএমকে, কখনও অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবুর ঘনিষ্ঠ। সাম্প্রতিক হানাদারিগুলোর আওতায় চলে এসেছেন এক বিজেপি নেতাও, কিন্তু তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে তাঁর সঙ্গে দলীয় নেতৃত্বের দূরত্ব বাড়ছিল অনেক দিন ধরেই।

আরও পড়ুন: ভোটের আগে আয়কর দফতরের নিশানায় শুধু বিরোধীরাই? জানতে চাইল কমিশন, অভিযোগ ওড়াল কেন্দ্র

এই ছবিটা দেখার পরেও কীভাবে বিশ্বাস রাখা যাবে সরকারি বয়ানটায়? নিরপেক্ষ এবং স্বাধীন ভাবে কাজ করছে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলো, কোনও রাজনৈতিক স্বার্থ বা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার চেষ্টা চলছে না, এমনটা সত্যিই কাউকে বিশ্বাস করানো যাবে তো? নির্বাচনী প্রক্রিয়া দেশ জুড়ে শুরু হয়ে যাওয়ার পরেও যে ভাবে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোর হানাদারি বিরোধী শিবিরকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখছে, সে ছবিটা খুব চেনা ছবি কিন্তু নয়। সরকারের বয়ান খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছে না। পরিস্থিতিটা গণতন্ত্রের জন্য সুখকর বলেও একেবারেই মনে হচ্ছে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE