Advertisement
E-Paper

পেঁয়াজের উপহাস

প্রচারে গিয়া পেঁয়াজের মালা পাইয়াছেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। মালাটি গাঁথিয়াছেন বীরভূমের লোবা এলাকার এক দরিদ্র চাষি। সাংবাদিকদের তিনি জানাইয়াছেন, পেঁয়াজ ব্যতীত তাঁহার দিবার কিছুই নাই।

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০০
পেঁয়াজের মালা দেওয়া হচ্ছে শতাব্দী রায়কে। নিজস্ব চিত্র

পেঁয়াজের মালা দেওয়া হচ্ছে শতাব্দী রায়কে। নিজস্ব চিত্র

প্রচারে গিয়া পেঁয়াজের মালা পাইয়াছেন তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। মালাটি গাঁথিয়াছেন বীরভূমের লোবা এলাকার এক দরিদ্র চাষি। সাংবাদিকদের তিনি জানাইয়াছেন, পেঁয়াজ ব্যতীত তাঁহার দিবার কিছুই নাই। কথাটি তাৎপর্যপূর্ণ। চাষির ঘরে বস্তাবন্দি পেঁয়াজ পচিতেছে, কারণ তাহার দাম পড়িয়াছে। হুগলির পান্ডুয়া, পোলবা এবং বলাগড়ে রাস্তায় পেঁয়াজ ফেলিয়া বিক্ষোভ দেখাইয়াছেন চাষিরা। বলাগড়ে মাত্র সতেরো দিনের ব্যবধানে দুই চাষি আত্মহত্যা করিয়াছেন। সংবাদে প্রকাশ, তাঁহারা লক্ষাধিক টাকা ঋণ করিয়া পেঁয়াজ চাষ করিয়াছিলেন। এই বিপুল ক্ষতির কারণ, এই বৎসর পেঁয়াজের প্রচুর উৎপাদন। গত বৎসরের তুলনায় এক লক্ষ টন অধিক পেঁয়াজ উৎপাদন হইয়াছে রবি মরসুমে। পেঁয়াজ পচনশীল, তাই দ্রুত বিক্রি করিতে চায় সকল চাষি। ফলে দাম তো পড়িবেই। কলিকাতার পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দর দাঁড়াইয়াছে আট টাকা হইতে দশ টাকা। তদুপরি ভিনরাজ্য হইতে পেঁয়াজের আমদানি অব্যাহত রহিয়াছে, কারণ বাংলায় নাশিকের পেঁয়াজের দীর্ঘ দিনের বাজার স্থানীয় চাষিকে ছাড়িতে নারাজ মহারাষ্ট্রের চাষি ও ব্যবসায়ী। তাঁহাদের আশা, মাসখানেক পরে স্থানীয় পেঁয়াজ শেষ হইলে তাঁহাদের হাতেই বাজারের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়া আসিবে, এবং এখনকার লোকসান তখন পুষাইয়া যাইবে। তাঁহাদের হিসাবে ভুল নাই, কারণ রাজ্যে পেঁয়াজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নাই। চড়া সুদে ঋণ লইয়া, বিঘা প্রতি বাইশ হাজার টাকা ব্যয় করিয়া বাংলার চাষি যে ফসল ফলাইয়াছে, তাহা মাঠেই পচিতেছে।
চাষির এই দুর্ভোগের দায় রাজ্য সরকার এড়াইতে পারে না। বিরোধীরা বলিয়াছেন, পেঁয়াজ-মাল্য উপহার নহে, উপহাস। কথাটি উড়াইয়া দিবার নহে। পেঁয়াজের দামে এই বৎসর পতন হইবে, তাহা আন্দাজ না করিবার কথা নহে। ২০১৩ সালে রাজ্যে পেঁয়াজের চাষ বাড়াইবার লক্ষ্য গ্রহণ করে তৃণমূল সরকার। বর্ষার পেঁয়াজ চাষে উৎসাহ দিবার জন্য উচ্চ মানের বীজ বিতরণ, ভিনরাজ্যে প্রশিক্ষণ, এবং প্রতি হেক্টরে চল্লিশ শতাংশ ভর্তুকি প্রদান করা হয়। রাজ্যে যথেষ্ট পেঁয়াজ উৎপাদন হয় না, অতএব তাহার ফলন বাড়িলে চাষির লাভ হইবে, এই বার্তা প্রচারিত হয়। চাষিরা উৎসাহিত হইয়া বর্ষার সহিত শীতেও পেঁয়াজ লাগান। অতঃপর ফলনে বৃদ্ধি ও দামে পতন। ২০১৭ সালে শীতের পেঁয়াজ উঠিবার পরে কলিকাতার পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দর ছিল সাতাশ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম, ২০১৮ সালে তাহা হইয়াছিল পনেরো টাকা, এই বৎসর তাহাই দশ টাকা। দাম যে পড়িতে বাধ্য, সরকার কি তাহা আন্দাজ করে নাই?
কৃষিমন্ত্রী বলিয়াছেন, ফলনবৃদ্ধি তাঁহার কাজ, চাষির লাভক্ষতি দেখিবে কৃষি বিপণন। কথাটি বিস্মিত করে। ক্ষতি হইবে না লাভ, তাহা না জানিয়াই কী করিয়া ফলনবৃদ্ধির পরামর্শ দিতে পারে কৃষি দফতর? সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করিয়া কেন অধিক ফলনে উৎসাহ দেওয়া হয়? বিশেষ গুদাম নির্মাণে সরকারি সহায়তা মিলিতে পারে, কিন্তু তৎসত্ত্বেও লক্ষাধিক টাকা বিনিয়োগ করিতে হইবে চাষিকে। ক্ষুদ্র চাষির সেই ক্ষমতা নাই। ভিনরাজ্যের বাজার ধরিবার ক্ষমতাও তাঁহাদের নাই। অগত্যা তাঁহারা পরিচিত দাবিটি তুলিয়াছেন— পেঁয়াজ ক্রয় করিতে হইবে রাজ্যকে। দাক্ষিণ্যের রাজনীতি কাঁটার মালা হইয়াছে নেতাদের।

Politics Satabdi Roy TMC Lok Sabha Election 2019
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy