Advertisement
১১ মে ২০২৪
সম্পাদকীয় ২
Mamata Banerjee

অন্য খেলা?

ক্লাবের সমর্থকভিত্তির ভৌগোলিক অবস্থানটিও বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়।

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

বিধানসভা নির্বাচনের খেলায় কি এক গোলে আগাইয়া গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্পনসর খুঁজিয়া দেওয়াকে আপাতদৃষ্টিতে রাজনৈতিক কার্যক্রম হিসাবে দেখিবার কারণ নাই। নিজের ঘোষিত কর্তব্যের গণ্ডি অতিক্রম করিয়া অতীতেও অনেকের পার্শ্বেই দাঁড়াইয়াছেন মুখ্যমন্ত্রী— ধরিয়া লওয়াই যাইত, অর্থকষ্টে জর্জরিত শতাব্দীপ্রাচীন ক্লাবটিকে তিনি সেই ভাবেই সাহায্য করিলেন। কিন্তু, সেই সহজ ভাবনার পথে একটি আলাদা মাত্রা যোগ করিতেছে ইতিহাস। ভোলা যাইতেছে না, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অধিকাংশ সমর্থকের শিকড় বর্তমান বাংলাদেশ, অতীতের পূর্ববঙ্গে। তাঁহাদের অনেকেই পশ্চিমবঙ্গে আসিয়াছেন দেশভাগের পর, বহু ক্লেশ সহ্য করিয়া। ইস্টবেঙ্গল তাঁহাদের নিকট একটি দলমাত্র নহে— তাহা একটি আবেগ। যে পৈতৃক ভিটার সহিত সংযোগ চিরতরে ছিন্ন হইয়াছে, ইস্টবেঙ্গলের লাল-হলুদ জার্সি তাঁহাদের সেই শিকড়ের স্পর্শ দেয়। হিসাব বলিতেছে, পশ্চিমবঙ্গে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকের সংখ্যা অন্তত তিন কোটি। অতএব, দুঃসময়ে ক্লাবের পার্শ্বে দাঁড়াইলে সমর্থকদের মনে বিশেষ জায়গা পাওয়া যাইবে, এই প্রত্যাশা অমূলক নহে।

ক্লাবের সমর্থকভিত্তির ভৌগোলিক অবস্থানটিও বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। র‌্যাডক্লিফের ছুরি যে অঞ্চল ধরিয়া বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করিয়াছিল, পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে স্বাভাবিক ভাবেই সেই অঞ্চলগুলিতে পূর্ব পাকিস্তান হইতে আগত মানুষের ঘনত্ব বেশি। উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল হইতে নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী এলাকা, ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের প্রধান ঠিকানা এইখানেই। গত লোকসভা নির্বাচনে এই অঞ্চলে তৃণমূল কংগ্রেসের ফলাফল অতি শোচনীয়। উত্তরবঙ্গের আটটি আসনের একটিতেও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা জিতিতে পারেন নাই। বিধানসভায় উত্তরবঙ্গে আসনসংখ্যা ৫৬। রানাঘাট বা বনগাঁতেও লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল বিপর্যস্ত হইয়াছে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সূত্রে এই ভোট অন্তত আংশিক ভাবেও যদি ফিরিয়া আসে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুশ্চিন্তা বহুলাংশে লাঘব হইবে।

এক্ষণে গূঢ়তর প্রশ্ন হইল, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কমিয়া বিজেপির ভোট বাড়িতেছে কেন? বিগত কয়েক বৎসরে এই অঞ্চলে বিজেপি যে রাজনৈতিক প্রচার চালাইয়াছে, তাহার কেন্দ্রে আছে সেই আদি ও অকৃত্রিম বিভাজনের রাজনীতি, কিন্তু মোড়কটি অনুপ্রবেশ-বিরোধিতার। দেশভাগ-পরবর্তী পরিযাণ, উদ্বাস্তু জীবনের যন্ত্রণার কথা স্মরণ করাইয়া দেওয়া হইতেছে। বহু বৎসরের চেষ্টায় যে ক্ষতে প্রলেপ পড়িতেছিল, রাজনৈতিক ক্ষুদ্র স্বার্থে তাহাকে ফের উসকাইয়া দেওয়ার অনৈতিকতা প্রশ্নাতীত। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও এই ভয়ঙ্কর রাজনীতির কোনও প্রতিস্পর্ধী ভাষ্য খুঁজিয়া পান নাই। ভোটের ফলাফল তাহা প্রমাণ করিয়া দিয়াছে। এক্ষণে, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সূত্র ধরিয়া তিনি যদি এই উদ্বাস্তু-ভাবাবেগের রাশ ধরিতে পারেন, তবে তাহা রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসাবে বিলক্ষণ তাৎপর্যপূর্ণ। তবে, সেই রাজনীতি যদি ইস্টবেঙ্গল ক্লাবটিকে প্রাণবায়ু জোগাইতে পারে, তবে রাজনীতি-নির্বিশেষেই বঙ্গবাসীর খুশি হইবার কথা। কারণ ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান, এই দুইটি নাম একত্রে উচ্চারিত না হইলে বাঙালিত্ব সম্পূর্ণ হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE