Advertisement
E-Paper

স্বপ্নঘাতিনী

যে ভাষায় মায়াবতী মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস নেতৃত্বকে তুলোধোনা করিয়াছেন, এবং কংগ্রেসকে স্পর্ধিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত দল হিসাবে চিহ্নিত করিয়াছেন, তাহাতে জোটের স্বপ্ন ভালমতো ছিন্ন হইল, নিশ্চিত।

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০০

কে ন তারে ধরিবারে করি পণ— মায়াবতীর সর্বশেষ ঘোষণা শুনিয়া কি কংগ্রেস নেতৃবর্গ হতাশায় ডুবিতেছেন? রাহুল গাঁধীরা বরাবর জানিতেন, তাঁহাদের মহাগঠবন্ধনের স্বপ্নের প্রধান কণ্টক কে এবং কোথায়। বিশেষত যখন মায়াবতীর বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের রাশটি বিজেপির হাতে রহিয়াছে। এখন মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের বিধানসভা নির্বাচনে মায়াবতী কংগ্রেসের সহিত জোট বাঁধিতে অস্বীকৃত হওয়ায় সেই দুঃস্বপ্ন যেন সত্য হইয়া উঠিতেছে। যে ভাষায় মায়াবতী মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস নেতৃত্বকে তুলোধোনা করিয়াছেন, এবং কংগ্রেসকে স্পর্ধিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত দল হিসাবে চিহ্নিত করিয়াছেন, তাহাতে জোটের স্বপ্ন ভালমতো ছিন্ন হইল, নিশ্চিত। এই ছিন্ন স্বপ্নে রিফু করিয়া কাজ চালানো যাইবে না, এতটা হয়তো এখনই বলা যায় না। তবে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতারা স্পষ্টত হাঁপ ছাড়িতেছেন। লোকসভা নির্বাচনের কথা পরে হইবে, কিন্তু আপাতত রাজ্যভিত্তিক কংগ্রেস-বিএসপি জোট সত্যই ঘটিলে যে অন্তত মধ্যপ্রদেশ বিধানসভাটি বিজেপির হাতের বাহিরে চলিয়া যাইবার ঘোর সম্ভাবনা ছিল, এ কথা তাঁহারা বিলক্ষণ জানেন। বিরোধী দল হিসাবে বহুজন সমাজ পার্টির স্থান এই রাজ্যে মন্দ নয়। উত্তরের জেলাগুলিতে, অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশ সংলগ্ন অঞ্চলে দলিত সমাজের মধ্যে বিএসপি গত বারও ভাল ফলই করিয়াছিল। দ্বিতীয় প্রধান বিরোধী দল হইবার মতো আসন সংগ্রহ করিতে পারিয়াছিল। এ বার প্রধান দুইটি বিরোধী দল একত্র হইলে বিজেপির জয়ের আশাপথে ভালমতো কণ্টক প্রোথিত হইত। সুতরাং স্বস্তির শ্বাস স্বাভাবিক।

তবে একটি আশার আলোক এখনও কংগ্রেস নেতারা দেখিতেছেন। মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের ক্ষেত্রে আসন ভাগাভাগিতে ঐকমত্য না হওয়ায় মায়াবতী ও কংগ্রেসের পথ আলাদা হইয়া গেল ঠিকই, কিন্তু পরবর্তী জোটের ক্ষেত্রে পথ কী দাঁড়াইবে এখনও জোর দিয়া বলা যায় না। যে উত্তাপের সহিত মায়াবতী দিগ্বিজয় সিংহদের কথা বলিয়াছেন, প্রায় ততটাই স্নিগ্ধতার সহিত কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের উল্লেখ করিয়াছেন। সনিয়া গাঁধী ও রাহুল গাঁধী জোট বিষয়ে সৎ ও আন্তরিক, দলিত নেত্রীর বক্তব্য। তাই অনতি-অতীতে সনিয়া গাঁধীর সহিত মায়াবতীর গললগ্ন হইবার ছবিটিকে দিগ্বিজয় সিংহদের মায়াবতীর প্রতি উদ্দিষ্ট কুবাক্য এখনও মুছিয়া দিতে পারে নাই। কংগ্রেস মুখপাত্ররা প্রকাশ্যেই বলিতেছেন যে মূল জায়গাটি ঠিক থাকিলে অসমানতাগুলিকে সমান করিয়া লওয়া কঠিন হইবে না। সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদবও একই আশায় ভর রাখিয়াছেন। শেষ মুহূর্ত অবধি এই আশা-নিরাশার দোলাচল জিয়াইয়া রাখিতে মায়াবতী সিদ্ধহস্ত। শেষ চমক বিজেপি দেখিবে না কংগ্রেস, তাহা লইয়া বাজি ধরা তাই অর্থহীন।।

তবে মায়াবতীর পাশার দান বলিয়া দেয় যে, কংগ্রেসকে তিনি একটি বার্তা দিতে চাহেন। আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে নিজের সূচ্যগ্র জমি তো তিনি ছাড়িবেনই না, বরং অন্যের বড় পরিমাণ জমিতে ভাগ বসাইতে চাহিবেন। এই দুই রাজ্যে আগে হইতেই কঠিন দান ফেলিয়া মায়াবতী বুঝাইয়া দিলেন, পরবর্তী খেলায় তিনি ‘হার্ড বারগেনিং’ বা চুলচেরা দর কষাকষি করিতে চলিয়াছেন। মহাগঠবন্ধনের লক্ষ্যে কংগ্রেস ইতিমধ্যেই রাজ্যভিত্তিক কমিটি বানাইয়া ফেলিয়াছে। এখন কাজ, জাতীয় নির্বাচনে রাজ্যভিত্তিক দর কষাকষির আগাম প্রস্তুতি। হাজার হউক, একটি কথা তো মায়াবতী ঠিকই বলিয়াছেন। কংগ্রেসের নিজের জোরে জিতিবার আশা যে হেতু অতি ক্ষীণ, ভুল স্পর্ধা কিংবা অন্যান্য দলের নেতাদের বিষয়ে রঙ্গব্যঙ্গের ভাষা যত তাড়াতাড়ি সংবরণ করা যায়, ততই মঙ্গল।

Mayawati BSP Congress Alliance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy