দক্ষিণ ও বাম, দুই প্রথাগত দল-রাজনীতির ফাঁদ হইতে আলাদা অবস্থান লইয়া নির্বাচনী জয় অর্জনের মধ্যেও একটি নূতনের ইঙ্গিত আছে নিশ্চয়। মাক্রঁ-র ‘অঁ মার্শ’ অর্থাৎ ‘চরৈবেতি’ দল মাত্র এক বৎসর আগে তৈরি হইয়াছিল। বামপন্থার বুলির বাহিরে গিয়া তাহারা কোম্পানি নীতির সরলীকরণের কথা বলিয়াছে, দক্ষিণপন্থার বাহিরে গিয়া বেকার-সমস্যা দ্রুত হ্রাসের প্রতিশ্রুতি দিয়াছে। এই অর্থনৈতিক মতাদর্শ অনেকের কাছে অস্পষ্ট ও অপরিণত ঠেকিয়াছিল। ইইউ-এর প্রতি বিদ্বিষ্ট ফরাসি ব্লু-কলার বা সাধারণ কর্মীসমাজকে তিনি এই মতাদর্শ দিয়া আদৌ প্রণোদিত করিতে পারিবেন কি না, সংশয় জাগিয়াছিল। কিন্তু ঘটনাক্রম দেখাইল, মাক্রঁ-র প্রতিশ্রুতির মধ্যে কোনও একটি স্বর সে দেশের বহু মানুষের মনেই অনুরণন তুলিয়াছে, ৩৯-বৎসর বয়সি এই উদ্যমী তরুণকে একটি সুযোগ দিতে চাহিয়াছে। বাঁধা প্রথার বাহিরে গিয়া ভাবিবার মতো সাহস ও প্রত্যয় যে ফরাসি জনতা দেখাইতে পারিয়াছেন, ইহা অতি সদর্থক বার্তা বইকী।
আবার, এই বার্তার গভীরেই নিহিত মাক্রঁ-র চ্যালেঞ্জসমূহ। ভোটের ফল ইহাও বলিতেছে, সে দেশে ল্য পেন-সুলভ আগ্রাসী রক্ষণশীলতা যথেষ্ট ছড়াইয়া পড়িয়াছে। ল্য পেন ইতিমধ্যেই নবোদ্যমে তাঁহার দল ও তাঁহার রাজনীতি মেরামতের অভিপ্রায়ে নামিয়া পড়িয়াছেন। এই বিমুখ বিরোধীদের আক্রমণের মুখে দাঁড়াইয়া মাক্রঁকে এ বার প্রমাণ করিতে হইবে, তাঁহার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলি অসার ছিল না। প্রমাণ করিতে হইবে, ইউরোপের সহিত ফ্রান্সের বন্ধনের মধ্য দিয়াও ফরাসি অর্থনীতি এবং সমাজের যথেষ্ট কল্যাণসাধন সম্ভব। এবং এই কল্যাণ কেবল বায়বীয় আদর্শভিত্তিক নয়, বাস্তব সংখ্যাতত্ত্বের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। ফ্রান্সের পরিবেশ অনেক কালই বিনিয়োগসুলভ নয়। অথচ সেই পরিবেশের পরিবর্তন ছাড়া মাক্রঁ-র লক্ষ্যসাধন বেশ দুরূহ। গণতন্ত্র ও উদারতন্ত্রের বিপন্নতার দিনে গভীরবিভক্ত সমাজ ও স্থবির অর্থনীতিকে কী ভাবে তিনি সামলান, কিংবা আদৌ সামলাইতে পারেন কি না, সেই দিকে উৎকণ্ঠিত দৃষ্টিতে তাকাইয়া থাকিবে পৃথিবীর অন্যান্য গণতন্ত্রগুলি, ব্রিটেন কিংবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিংবা ভারত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy