Advertisement
E-Paper

অনিয়মের দুষ্টচক্র

বেমালুম নিয়ম ভাঙিয়া, যাঁহারা নিয়ম মানেন তাঁহাদের ‘বোকা বানাইয়া’ ক্ষণিকের জিত যেন এই ব্যক্তিত্বশালীদের আশ্চর্য উত্তেজনা দেয়। ইহার একটি চমৎকার উদাহরণ হইল কলিকাতার রাজপথে পথচারীর রাস্তা পারাপার।

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৮ ০০:০০

অনেক মানুষের নিকট নিয়ম মানিয়া সমাজজীবন যাপন করা বোধ করি অপমানের সমান। নিয়ম মানিয়া চলিলে যেন তাঁহাদের ব্যক্তিত্ব খর্ব হয়। অপর দিকে, বেমালুম নিয়ম ভাঙিয়া, যাঁহারা নিয়ম মানেন তাঁহাদের ‘বোকা বানাইয়া’ ক্ষণিকের জিত যেন এই ব্যক্তিত্বশালীদের আশ্চর্য উত্তেজনা দেয়। ইহার একটি চমৎকার উদাহরণ হইল কলিকাতার রাজপথে পথচারীর রাস্তা পারাপার। সিগন্যাল মানিয়া এবং জ়িব্রা ক্রসিং ধরিয়া রাস্তা পারাপার করিলে তাঁহাদের অনেকেরই সম্মানহানি হয়। অন্য দিকে, চারটি গাড়ি, তিনটি মোটরবাইক, দুইটি সাইকেল, তীব্র গতিতে ছুটিয়া আসা বাসের জিগস’ পাজ়ল-এর মধ্য দিয়া রাস্তা পার হইয়া যাইতে পারিলে নাগরিক মুহূর্তে সুপার হিরো। কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করিতে হইলে বিরক্ত পথচারী নিয়ম না মানিয়া রাস্তা পার হইয়া যান। যুক্তি দেন: কত ক্ষণ দাঁড়াইয়া থাকিবেন? ওই পারে তাঁহার জরুরি কাজ অপেক্ষা করিয়া আছে। এক-দুই মিনিট দেরি চলে না, এমনই জরুরি? জীবন অপেক্ষাও জরুরিতর? কলিকাতার বাসচালকরা সম্প্রতি পথচারীদের সম্পর্কে অভিযোগ তুলিয়াছেন: পথচারীরা বেয়াড়া ভাবে রাস্তা পারাপার করেন বলিয়া দুর্ঘটনা বাড়ে, পথিকদের শৃঙ্খলা মানাইতে না পারিলে তাঁহারা নাচার।

পথচারী বলিতেই পারেন, রাস্তাঘাটের যে অবস্থা— বহু এলাকায় ফুটপাত বলিয়া কিছু নাই, রাজপথেরও অর্ধাংশ বেদখল, হয় সেখানে আবর্জনা ভর্তি, নয় তাঁবু ফেলিয়া রাস্তায় মানুষ আশ্রয় লইয়াছে, তাহা না হইলে দোকানিরা পসরা সাজাইয়াছেন, ইট, বালি, পাথরের স্তূপ, অপেক্ষারত গাড়ির সারি। হাঁটিবেন কোথায়? তাঁহাদের দাবি, যানবাহনের চালকরা যদি দেখিয়া-শুনিয়া, ধীরে-সুস্থে গাড়ি চালান, তবে দুর্ঘটনার সংখ্যা কম হইবে। উত্তম প্রস্তাব। কিন্তু বাহনচালক বলিবেন, তাঁহার চলিবার পথেও তো বিস্তর জবরদখল, তিনিই বা কী করিবেন? আর, পথচারী বেনিয়ম করিলে, তিনিই বা কেন নিয়ম মানিবেন? বিশেষত তাঁহার নাসিকাগ্রে সর্বদা ‘কমিশন’-এর গাজর ঝুলিতেছে, অতএব ঊর্ধ্বশ্বাসে মরণ হাতে লইয়া এবং বহু যাত্রীকে প্রায়-মরণের অভিজ্ঞতা করাইয়া প্রত্যহ গাড়ি ছুটাইতে হইবে, ইহাই উদ্দেশ্য এবং বিধেয়। আর দুইটি বাসের রেষারেষিতে চালকের মনে ও শরীরে কিছু উত্তেজনাও সৃষ্টি হয়, তিনি হয়তো গতানুগতিকতা হইতে সাময়িক মুক্তি খুঁজিয়া লন। বীরত্বও।

দুই পক্ষের কথা শুনিয়া ও আচরণ দেখিয়া মনে ভয়ের সঞ্চার হয়। দুই পক্ষই নিয়ম মানিতে নারাজ। এবং একের অনিয়ম অন্যের বিশৃঙ্খলার যুক্তি হিসাবে সতত প্রস্তুত। দুই পক্ষই একটি দুষ্টচক্রে পড়িয়াছে, বাহির হইবার উপায় নাই। মুশকিল হইল, এই রূপ চলিতে থাকিলে কোনও দিনই কোনও সমাধানে পৌঁছানো যাইবে না। এই চক্রটি ভাঙিতে পারে সরকার তথা প্রশাসন। সরকার পথচারী এবং চালক, দুই পক্ষেরই সচেতনতা বাড়াইবার চেষ্টা করে না এমন নহে, কিন্তু তাহা যথেষ্ট নহে। নিয়মের শাসন জারি করিতে প্রশাসনকে কঠোর হইতে হইবে। কিছু কাল সেই কঠোরতা অনুসরণ করিলেই অভ্যাস পাল্টাইবে— চালকেরও, পথচারীরও। এবং পাশাপাশি, পথচারীকে তাঁহার হাঁটিবার ফুটপাত দিতে হইবে, চালককে তাঁহার গাড়ির পথ। ব্যাধি যখন সর্বাঙ্গে, তখন খুচরা চিকিৎসায় লাভ নাই।

Traffic Rule Traffic Signal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy