Advertisement
E-Paper

ভোজের বাজি 

আগে যাহা ছিলাম, তাহার তুলনায় ভাল থাকিব, সেই আশা। টেলিভিশন সাক্ষী, ভারতে এখন সর্বাধিক বিজ্ঞাপিত ভোগ্যপণ্যগুলির অন্যতম, নরেন্দ্র মোদী।

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০

একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের সাবান মাখিলেই মুখে অলৌকিক দ্যুতি আসিবে, একটি হেল্‌থ ড্রিঙ্ক পান করিলেই সন্তান হইয়া উঠিবে সকল শিশুর সেরা, একটি সুগন্ধি মাখিলেই নারীরা সর্বাঙ্গে আছড়াইয়া পড়িবে এবং একটি নির্দিষ্ট স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করিলেই ঋতুস্রাব চলাকালীন গিরি লঙ্ঘন করা যাইবে— এমন বিশ্বাসসমূহের উপরই দাঁড়াইয়া আছে বিপণনের দুনিয়া। বিজ্ঞাপন যাহা বেচে, তাহার নাম আশা। আগে যাহা ছিলাম, তাহার তুলনায় ভাল থাকিব, সেই আশা। টেলিভিশন সাক্ষী, ভারতে এখন সর্বাধিক বিজ্ঞাপিত ভোগ্যপণ্যগুলির অন্যতম, নরেন্দ্র মোদী। তাঁহার ব্র্যান্ড ম্যানেজাররা কোন আশার মোড়কে ভোটারদের নিকট তাঁহাকে ‘বেচিয়াছেন’, সেই প্রশ্নের উত্তর সর্বজনবিদিত। তাহার নাম ‘অচ্ছে দিন’। ২০১৪ সালের আগে আকাশবাতাস আলোড়িত হইত একটি স্লোগানে— ‘অচ্ছে দিন আনেওয়ালে হ্যায়’। অস্যার্থ, নরেন্দ্র মোদী নামক ‘পণ্য’টিকে কিনিলেই অপুত্রের পুত্র হইবে, নির্ধনের ধন— গোটা দেশ আগের তুলনায় ভাল থাকিবে। সেই ভাল থাকার নামই তো অচ্ছে দিন। আর পাঁচটি বিজ্ঞাপনের ন্যায় এই বিজ্ঞাপনটিও যে মূলত কথার কথা— তারকাচিহ্নের আড়ালে গোপন আছে প্রযোজ্য শর্তাবলি— দেশবাসী সেই কথাটি ক্রমেই টের পাইতেছিলেন। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সমীক্ষা সঙ্কেত দিল, দেশবাসী ‘জুমলা’টি ধরিয়া ফেলিয়াছেন। আজকের তুলনায় আগামী কাল ভাল থাকিব, দেশের বেশির ভাগ মানুষই আর এই কথাটি বিশ্বাস করেন না। আরও মারাত্মক, পূর্বের তুলনায় এখন ভাল আছি, এই বিশ্বাসটিও ক্রমে ক্ষীণ হইতেছে। দুই এক দিনের কথা নহে, ২০১৪-র জুন হইতে বিশ্বাসের নিম্নগতি অব্যাহত।

সব রাজনীতিকই আশা বেচিয়া খান। তবে, নরেন্দ্র মোদী সেই খেলায় আর সকলকে দশ গোল দিয়াছেন। ‘গুজরাত মডেল’ হইতে ‘সব কা সাথ, সব কা বিকাশ’— তাঁহার রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি মাইলফলকই প্রকৃত প্রস্তাবে বায়বীয়। তাহাতে দুই আনার সার থাকিলে বাকি চৌদ্দ আনাই আশা। দেশের মানুষ যদি সেই আশাতেই বিশ্বাস হারাইয়া ফেলেন, তবে তো তাঁহার মহা মুশকিল। বিশ্বাসটি হারাইল কোথায়, তিনি সন্ধান করিতে পারেন। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সমীক্ষা বলিতেছে, নোট বাতিলের মহাকুম্ভে। ২০১৬ সালের নভেম্বরে ৪৯.৫ শতাংশ লোক বিশ্বাস করিতেন, তাঁহারা পূর্বের তুলনায় ভাল আছেন। ২০১৭ সালের নভেম্বরে অনুপাতটি কমিয়া দাঁড়ায় ৩০.৪ শতাংশে। কত মানুষ মনে করিতেন যে তাঁহারা আগের তুলনায় খারাপ আছেন, সেই অনুপাতটিও এই এক বৎসরের ব্যবধানে একই ভাবে পাল্টাইয়াছিল, ২৩.৯ শতাংশ হইতে বাড়িয়া তাহা দাঁড়াইয়াছিল ৪৭.৩ শতাংশে। ২০১৮ সালের নভেম্বরে— যে সময় নরেন্দ্র মোদী জানাইয়া দিয়াছিলেন যে মানুষ এক বৎসরে পুত্রশোকও ভুলিয়া যায়— ভাল থাকা ও খারাপ থাকায় বিশ্বাসী মানুষের অনুপাত যথাক্রমে ৩৩.২ শতাংশ ও ৪৫.২ শতাংশ। শুধু ডিমনিটাইজ়েশনই এই সামগ্রিক পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করিতেছে, তেমন দাবি করিবার প্রশ্ন নাই। কিন্তু, মোদীর ভাল রাখিতে পারিবার প্রতিশ্রুতির সারবত্তাহীনতাকে নির্ভুল ভাবে পড়িতে সাহায্য করিয়াছিল ঘটনাটি। দোষ স্বীকার করিয়া প্রায়শ্চিত্ত করিলে মানুষের বিশ্বাস ফিরিবে? মোদীজি ভাবিয়া দেখিতে পারেন। বহু বাণিজ্যিক পণ্য কাজটি করে তো।

Narendra Modi Acche Din BJP advertisement
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy